Skip to main content

Full text of "Bangla sahityer itihas"

See other formats


রর মহাপাপ 
ণাসাহত্যত 
ও 


আদি 
ও মধ্যযুগ 


= 


২১ 


G2 


রর 1" উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাসংসদ প্রবর্তিত নূতন পাঠক্রম (১৯৮৪-৮৬) অনুযায়ী লিখিত 


বাংল! মাহিত্যের ইতিহাম 


* একাদশ-ছাদশ শ্রেণীর জন্য * 


<: RAL 


৩৭ তুষারকান্তি মহাপাত্র, এম. এ. পি-এইচ. ডি. 


আধুনিক ভারতীয় ভাষা বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় 


১৯৮৪ 


লক 
৯/১, বঙ্গিম চ্াটাজি দুট্রীট, কলিকাতা-৭০০০৭৩ 


প্রকাশক ৪ 
শ্রীপরেশচন্দ্র ভাওয়াল 
ক্যালকাটা বুক হাউস 
১-১, বঙ্কিম চ্যাটাজি স্ট্রীট 


কলিকাতা__৭০০০৭৩ ৭ 1. ul ০৭ 
TUS 
3S.C.ERT., West Benga) 


Dute CLE LL. is 
Loc. No 0022. 


প্রথম প্রকাশ £ আগস্ট, ১৯৮৪ 
1২ সবশ্বত্ব সংরক্ষিত 
সস 


১) 
১ 


ভারত সরকার প্রদত্ত স্বল্পমূল্যে প্রাপ্ত কাগজে মুদ্রিত 


মুদ্রাকর ৪ ? 

পাইও প্রিন্টিং ওয়াকস 
৪৭-এফ, শ্যামপুকুর স্ট্রীট 
কলিকাতা-৭০০০০৪ 


বাঁধাই ঃ দাশগুপ্ত এণ্ড কোং 


নিবেদন 


“বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস? উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাসংসদের নূতন পাঠক্রম (১৯৮৪) অনুযায়ী 
লিখিত। পাঠক্রমটিকে যথাযথ অনুসরণ করা হয়েছে। পাঠ্যতালিকার বাইরে কোনো কবি 
সম্পর্কেই আলোচনা করা হয়নি; কারণ তাতে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে বিভ্রান্ত করা 
হবে। সুতরাং মনসামঙ্গলের আদি কবি কানা হরি দত্ত, চণ্তীমলের আদি কবি মানিক দত্ত, 
ধর্মম্গলের আদি কবি ময়ূর ভট্ট অথবা অন্য কোনো পাঠক্রম-বহির্ভত কবির সম্পর্কে আলো- 
চনা এগ্রন্থে নেই। ATS 

গ্রন্থটি যেহেতু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, স্বভাবতই শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ডঃ সুকুমার সেনের 
“বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’ এবং ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের “বাংলা সাহিত্যের ইতিরৃত্ত’ 
গ্রন্থ দুটি থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে। আলোচনা অংশের কোনো উদ্ধৃতির উৎসের উল্লেখ 
না থাকলে বুঝতে হবে তার উৎস এই দুটি গ্রন্থের যে কোনো একটি । 

একটি যুগ অথবা একটি কালপর্ব সামাজিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে চিহ্নিত হয়। সাহিত্যের 
ইতিহাসের ক্ষেত্রেও একথা অন্তত আংশিক সত্য; কারণ, কবিমানসও সমকাল দ্বারা অন্তত 
আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রিত। বর্তমান পাঠক্রমে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের উপর গুরুত্বও 
দেওয়া হয়েছে। ফলত, বর্তমান আলোচনায় সামাজিক প্রেক্ষাপট অভিপ্রেতপ্রাধান্য লাভ করেছে। 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের অনেকখানি অংশ জুড়ে শুধু সন তারিখের সংশয়। বর্তমান 
আলোচনায় অপ্রয়োজনীয় চিন্তা করে তার দীর্ঘ আলোচনা থেকে বিরত থাকা হয়েছে। স্বীকৃত 
মতটিকে মাত্র গ্রহণ করা হয়েছে। 

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (প্রাক্তন) ও অধ্যাপক এবং 
বঙ্গীয় জাতীয় শিক্ষাপর্যদ প্রকাশিতব্য “জাতীয় অভিধান'-এর প্রধান সম্পাদক ডঃ জগন্নাথ 
চক্ৰবৰ্তী, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, বাণিজ্য ইত্যাদি বিভাগের সচিব ডঃ সুভাষ বন্দ্যো- 
পাধ্যায়, গ্রস্থগার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ডঃ পীষ্ষকান্তি মহাগান্র, পালি বিভাগের অধ্যাপক 
ডঃ দীপককূমার বড়ুয়া, বহরমপুর কে. এল. কলেজের অধ্যাপক শক্তিনাথ ঝা এবং মধ্য 
হাওড়া শিক্ষালয়ের শিক্ষক রোহিণীরঞ্জন চৌধুরীর উপদেশ ও পরামর্শ খাণস্বীকারের অপেক্ষা 
না রাখলেও কৃতজ চিত্তে মরণ করি। 

এই সুযোগে ক্যালকাটা বুক হাউসের শ্রীযুক্ত গরেশচন্দ্র ভাওয়াল, চঞ্চলকুমার ভাওয়াল, 
কুপাসিন্ধু দাশ এবং নরেশ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজতা জানাই। 

যাদের জন্যে এই বইটি লেখা সেই উচ্চমাধ্য মিকের ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হলে পরিশ্রম 
সার্থক হবে। 


আধুনিক ভারতীয় ভাষাবিভাগ 


কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তুষারকান্তি মহাপান্ত্র 
১৫ই আগস্ট, ১৯৮৪ 


SYLLABUS—(Class XI & XII) 
H.S. Examination—1986 
History of Bengali Literature 


আদিষূগ আদিযুগ ও মধ্যযুগ পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬০ 


শু 
২ 


~~ 


বাঙালী জাতি ও বাংলা ভাষার উদ্ভব; বাংলা সাহিত্যের গোড়াপত্তন ও যুগবিভাগ 
বাংলা সাহিত্যের আর্দিযুগ- চর্যাপদ 8 সমাজচিন্র ও সাহিত্য সম্পদ। 


মধ্যযুগ 


১ 


তুকী বিজয় ও তার ফলশ্র.তি-_সামাজিক অবস্থা 


২ বড় চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের পদাবলী 


বি. দ্র.---চণ্ডীদাস সমস্যার বিষয় আলোচনার প্রয়োজন নেই। 

কে) কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ। (খ) মালাধর বস্‌র শ্রীকৃষ্ণবিজয় 
(সংক্ষিপ্ত পরিচয়) 

মঙ্গলকাব্য রচনার সামাজিক কারণ এবং মললকাব্যে তৎকালীন সমাজজীবন 


৫ মনসামঙ্গলের সংক্ষিপ্ত কাহিনী ও প্রধান কবিসহ কাব্যালোচনা। 


১৩ 
৩৪ 


(বিজয় গুপ্ত, নারায়ণদেব এবং কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ) 

সাহিত্যে ও সমাজজীবনে চৈতন্যদেব 

চণ্ডীমঙ্গলের সংক্ষিপ্ত কাহিনী এবং প্রধান কবিসহ কাব্যালোচনা। 

(দ্বিজমাধব ও মুকুন্দর।ম) 

চৈতন্যজীবনী সাহিত্যের প্রধান কবি ও কাব্যের পরিচয় 

(চৈতন্যভাগবত, চৈতন্যমঙগল, শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত) 

বলরাম দাস, জান দাস, গোবিন্দ দাসের পদাবলী 

ধর্মমদলের সংক্ষিপ্ত কাহিনী এবং প্রধান কবিসহ কাব্যালোচনা__রূপর।ম চক্রবতী 
(সংক্ষিপ্ত পরিচয়) প্রধানতঃ ঘনর।ম চক্রবতী 


কাশীর।ম দাসের মহাভারত, সংক্ষেপে কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দীর,পরিচয় 


আরাকান র।জসভায় প্রধান কবিসহ কাব্যালোচনা £ দৌলত কাজী ও 
সৈয়দ আলাওল 


ভারতচন্দ্র ও অনরদ।মঙ্গল 


সামাজিক পটভূমিতে শাক্ত পদাবলী (রামপ্রসাদ ও কমলাকান্ত) এবং 
বাউল লালন ফকির 


ঙপু 
ঙপ্‌ 


আদিযুগ £ 
প্রথম অধ্যায় 8৪ 


দ্বিতীয় অধ্যায় ৪ 


মধ্যযুগ ৪ 
প্রথম অধ্যায় ৪ 
দ্বিতীয় অধ্যায় ৪ 
তৃতীয় অধ্যায় ৪ 
চতুর্থ অধ্যায় 8 
পঞ্চম অধ্যায় ৪ 


ষ্ঠ অধ্যায় ৪ 


সপ্তম অধ্যায় ৪ 


অষ্টম অধ্যায় 8 


নবম অধ্যায় 8 
দশম অধ্যায় ৪ 
একাদশ অধ্যায় ৪ 


দ্বাদশ অধ্যায় ঃ 
ভ্রয়োদশ অধ্যায় ৪ 


চতুর্দশ অধ্যায় ৪ 


বিষয়সথচ 


বাঙালী জাতি ও বাংলা ভাষার উভ্ভবঃ দেশ ১; জাতি ১; বাংলা 
ভাষার উদ্ভব ৪; বাংলা সাহিত্যের উদ্ভব ও যুগবিভাগ ৫; বাংলা সাহিত্যের 
আদিপর্বের সমকালে সামাজিক পটভূমি ৭; বাংলা সাহিত্যের আদিপবে 
রচিত সাহিত্য ৭। 

বাংলা সাহিত্যের আদিযূগ 8 চর্যাপদ ৯; চর্যাপদে চিন্রিত সমাজচিত্র ১০; 
চর্যার সাহিত্য সম্পদ ১১। 


তুকী বিজয় ও তার ফলশ্ুতি ১৫; 

বড়, চণ্ডীদাস ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ১৯; পদাবলী ২১; বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস ২৩, 
চণ্ডীদাস ২৬ ; বিদ্যাপতি-চণ্ডীদাসের উত্তরাধিকার ২৮। 

কৃত্তিবাস ওঝা ও তাঁর রচিত রামায়ণ ২৯ কবিপরিচয়---কাব্যকথা ২৯ ঃ 
মালাধর বস্‌ ও তাঁর শ্রীকুষ্ণবিজয় ৩১; কবিপরিচয়---কাব্যকথা ৩১। 
মঙ্গলকাব্য ৩৪: মজলকাব্য রচনার সামাজিক কারণ ৩৪; মঙ্গলকাব্যে 
তৎকালীন সমাজজীবন ৩৬। 

মনসামঙ্গল 8৪০; কাহিনী ৪০+ বিজয় গুপ্ত ৪২; নারায়ণ দেব ৪৩, 
কেতকার্দাস ক্ষেমানন্দ ৪৬; কবিপরিচয়---কাব্যকথা ৪৬। 

সাহিত্যে ও সমাজজীবনে চৈতন্যদেব ৪৮ $ বাঙালী সমাজজীবনে চৈতন্যের 
প্রভাব ৪৮; বাংলা সাহিত্যে চৈতন্যের প্রভাব ৫০। দা 
চণ্ডীমন্পল কাব্য ৫৩ £ কাহিনী ৫৩; দ্বিজমাধব ৫৬ ; কবিপরিচয়---কাব্য- 
কথা ৫৬; মুকুন্দরাম ৫৮; কবিপরিচয় ৫৮; কবি মুকুন্দরামের কাব্যে 
সমসাময়িক সমাজ ৫৯। 

চৈতন্যজীবনী ও জীবনচরিত কাব্য ৬৩$ চৈতন্যজীবনী ৬৩; বৃন্দাবন 
দাস ও চৈতন্যভাগবত ৬৪; চৈতন্যমঙ্গল, লোচন দাস ৬৭; চৈতন্যমন্গল, 
জয়ানন্দ ৬৭; কৃষ্ণদাস কবিরাজ চৈতন্যচরিতামূত ৬৮। 

বৈষ্ণব পদাবলী ৭২; বলরাম দাস ৭৩; জানদাস ৭৪; গোবিন্দ দাস ৭৫। 
ধর্মমঙ্গল ৭৮; কাহিনী ৭৮; রূপরাম ৮০; ঘনরাম ৮১। 

মহাভারত ৮৪; কবীন্দ্র পরমেশ্বর ৮৪; শ্রীকর নন্দী ৮৫; কাশীরাম 
দাস ও তার মহাভারত ৮৫। 

আরাকান রাজসভার কবি ৮৮; দৌলত কাজী ৮৮; আলাওল ৮৯। 
ভারতচন্দ্র ও অন্নদামঙ্গল ৯২। ভারতচন্দ্র ৯২; অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধের 
সমাজ ও অন্নদামন্গলে চিত্রিত সমাজ ৯৫। 

শাক্তপদাবলী ও বাউল সঙ্গীত ৯৮; শাক্তপদাবলী ৯৮, রামপ্রসাদ ১০০; 
কমলাকান্ত ১০৩; আগমনী বিজয়ার বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক পটভূমি ১০৩; 
বাউল সঙ্গীত ১০৬; লালন ফকির ১০৮; অনুচচা ১১১-১১৫ ৷ 


তীর 


মাছ RY ৯ fe ienamt oe nl 
7 "s t FER 
Ml 
' ০, এ রথ ছক ৮ ও লক পি ত চাস ঢা 
মর EONS 1 2 SB HO সর BRINN IGS Eto ৮5৪ 
পা MESES if Te SHARIR ০০ VIED 
কা ‘stelle 
ত পক শ্ব কপ । ০ সলা 100s tgs ess: Eye MTT 
৮৮, dE য়ন মাত 
- | 5 GT 
a AER (লাগ, © Df 5 Bb wl: : 


Fe ও ক আজি. 2 Bie WE । 
REY । d's 7০15 
উস মিটি লা 


Ch All deh SelM 


En fn ১১০০০ 40 WIFPGE L&C Hew 
Tat Tims ay 


মস ক... E22 EE ০.2+১৮.০- 


২২" ২ NPT wie 4 
টাটা 7 ভা ৮০5৮: সার, 75 চান ৪ 


1 আচ SEVER TASC NIE FNS । 7 রানা | 
ERR FN । ug BHAT CSF RET ye frets BYE. £ 

10d জি ॥ or; my সির ০ লা = সাপ গাও, 

MEME ১2. 18 চি ১৮৭ হাচি পর ভিডি ন ৮ রর 


Ez 


feu Boy ey টা তাক্াসি!, প্রথা চাগ খাপ শাক 15 | 

80৯) 1০০] ০ ও XUN Cen Resets 2 vg UIE জাবাত 
' , ০০০ নামায © আতা 

কিমা ৬৫ শি st +a IE. 11 ত Hen ne & MED PFET 

1) € FY +। OA Fyre ce 7 ০.2 WTEC 

ক Rare Moa Thr oUt 
pl চা 


বা. সা. 1.1 


আদি যুগ 


আদি যুগ 


Ln i ৮২৯ 


প্রথম অন্যান্য 
বাঙালণ জাত ও বাংলা ভাষার উদ্ভব 


দেশঃ 

পাঙ্গাহাঁদ বঙ্গভাঁম”॥ উত্তরে তার মালয়, পূর্বে ও পশ্চিমে কঠিন শৈলভহাম, 
দাঁক্ষণে সমদ্র_মধ্যবত্ণ বিস্তীর্ণ শ্যামল সমতলভ্বাম বঙ্গদেশ নামে খ্যাত । বঙ্গ নাম 
এতরেয় ব্রাহ্মণেও আছে, বিক্তু প্রাচীন যুগে সমগ্র বাংলা দেশের নাম বঙ্গ ছিল না; 
বস্তুত কোনো 'বাশষ্ট নামেই বর্তমান ভৌগোলিক সীমাটি পরিচিত ছিল না। 
বঙ্গ, পণ্ড, বরেন্দ্র, রাঢ় ইত্যাদি নামে এক একাঁট জনপদ বা অণ্চল আঁভাঁহত হত । 
মুসলমান আমলেই ‘সুবা বাংলা’ অথবা ‘বাঙ্গালা’ নামে সমগ্র প্রদেশাট পারচিত হল । 
পতগোঁজদের কাছে ফারসী 'বঙ্গালহ একটু বিকৃত হয়ে দাঁড়াল “বেঙ্গলা' যার থেকে 
ইংরেজরা “বেঙ্গল” নামাঁট খঃজে পেল । একাদশ-দ্বাদশ শতক থেকে “গৌড় নামেও 
অবশ্য দেশাটি আঁভাঁহত হত। 

জা!ত £ 

কোন স:দরে কালে বাংলায় মনংয্য বসাঁতর সূচনা হয় সে সম্পর্কে নিশ্চিতরুপে 
শিক জানা যায় না। বাৎলার ইতিহাস চতুর্থ দশকের আগে রচিত হয় নি। তব 
ীকছু সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে, যার থেকে অনুমান করতে কণ্ট হয় না যে সভ্যতার 
আ'দযুগেও বাংলা দেশে জনবসাঁতা ছল । 

আঁদম মানুষের ব্যবহৃত অস্ত দিয়েই পাঁথবীর সর্বত্র মানুষের আস্তত্ব প্রমাণিত 
হয়। আন:মানক দশ হাজার বছর আগে আঁদযুগ, প্রত্ন-প্রচ্তর যুগের পারসমাপ্তি 
ঘটে । সে-যুগেরও পাথরের তৈরি নানা হাতিয়ার পাওয়া গেছে বাঁকুড়া মোদনীপুর 
ও বর্ধমানের নানা অণ্চল থেকে । সতরাৎ অনুমিত হয়, বাংলায় তখনো ছিল 
মানুষের বসবাস। 

নব্যপ্রপ্তর যুগের অস্ত্র পালিশ করা। এযগের মান্য জানত আগুনের 
ব্যবহার। সূতরাৎ রদ্ধনকৌশল যেমন আয়ত্ত ছিল তেমাঁন মাটি পাুঁড়য়ে বাসন 
তৈরির কৌশলও অজ্ঞাত ছিল না । ক্রমে তারা তামা (তামুযুগ ) ও লোহার ব্যবহারও 
বশিখেছিল । এই যুগের আস্ট্রক ভাষাভাষী নরগোণষ্ঠী বারা 'নিষাদ' জাতি নামেও 


2 ংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


পরিচিত, তারাই বাঙালীর পৃবপপুরুষ । কোল শ্রেণীর শবর, মুস্ডা, সাঁওতাল এব 
হাড়ি, ডোম, চণ্ডাল এদেরই বংশধর ৷ 

অশস্ট্রিক ভাষাভা্ষারা ছিল কাৃঁষজীবী এবং শিকারোপজাবী। ধান, কলা, 
লেবু, পাট, বেগুন ইত্যাদি বাঙালীর প্রিয় খাদ্য এবং তুলার চাষ বাংলা দেশে শহর 
করোছিল এরাই । 

নিষাদ জাতির পরে আসে দ্রাবিড় ও ব্রহ্মতিব্বতাঁয় ভাষাভাষীরা ৷ দ্রাবড়রা 
নগরসভ/তার সাষ্টকতাঁ এবং বর্শা ছার ইত্যাদি লৌহ-ীনর্ণিত অস্ত্র ও তামার 
রকমারি জানিসের আবৎকতাঁ। বাঙালীর নরতত্তের এই দুই ভাষা-গোম্ঠীর প্রভাব 
আজও পূর্ণরূপে নিরাঁপত হয় নি। তবে বর্ধমান ও বীরভূম জেলার অজয় 
কনর ও কোপাই নদের তারে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। সম্ভবত, 
আর্য আগমনের (খতরীঃ পৃঃ ১৫০০ ) আগেই এই সভ্যতার আবিভবি ঘটেছিল । 
অসম্ভব নয়, এই সভ্যতা দ্রাবড়দেরই দান । 


দ্রাবড়ভাষাঁর পর এল আলপাঁয় আর্য'রা । এরা আর্য হলেও রৈদিক আয বা 
নাঁ্ডক শাখা থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ব্র। ংলার ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়স্থ ইত্যাদি ব্ণভুন্ত 
হিন্দুর পূর্বপুরুষ এরাই। ফলত, সমগ্র আববিতের ব্রাহ্মণেরা নার্ডউক শাখার 
বংশধর বলে দীর্ঘশর হলেও বাঙাল ব্রাহ্মণ প্রশস্ত-শির। 


খনীস্টীয় প্রথম শতকে অথবা তারও আগে বাঙালী তার স্বতন্ন, মযদা রক্ষা 
করেও বথ্ৰাযান্রা, বাণিজ্য ও ধমপ্রচার ইত্যাদি উপলক্ষে বৈদিক আয“ অথবা 'নাঁডক” 
শাখার সংস্পর্শে আসে। বাংলা ছাড়া সমগ্র আযবিতে” ছিল তাদের বসবাস। 
বাংলাদেশে তাদের বসবাস নিষিদ্ধ হলেও রুদ্ধ হয় নি। বাংলাদেশ গুষ্তসাম্রাজ্যের 
অন্তভন্ত হলে (৪থ শতক ) এই আগমন হল অবাধ । বাংলা ও বাঙালীর সামাজিক 
ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্ৰে ঘটল আধাঁভবন, বৈদিক আর্য-প্রভাব বাংলাদেশে দড়তর হল ॥ 


অস্ট্িক ভাষাভাবারা ছিল খবকার। এদের নাক চওড়া ও চ্যাপ্টা, গায়ের রং 
কাল, মাথার চুল ঢেউ খেলানো । সাঁওতাল, লোধা ইত্যাদি উপজাতির লোকেরা 
এই গোষ্ঠীর অস্তভন্তে। দ্রাবিড়-ভাষা জনসমাজের গড়ন পাতলা, রং ময়লা এবং নাক 
ছোট। দক্ষিণ ভারতে এই গোষ্ঠীর লোক দেখা যায় আলপাঁয় আযদের নাক 
লম্বা, রং ফস মখ গোলাকার এবং উচ্চতা মধ্যম । তথাকাঁথত উচ্চ শ্রেণীর বাঙালী 
এই গোষ্ঠীর লোক। নর্ভিক-আয" দীর্ঘকায়, ফগাঁ সরু ও লম্বা নাকবিশিষ্ট। 
এরা যথেণ্ট বলিষ্ঠ । খু. পূঃ পনের শ' অব্দের কাছাকাছি সময়ে এদেরই একটি: 
শাখা উত্তর-পশ্চিম ভারতে গঞ্জনদের তাঁরে এসে বসবাস করে। ক্রমে এরা সমগ্র 
আযবিতে ছড়িয়ে পড়ে। খণ্বেদ রচনার কৃতিত্ব এদেরই । বাংলাদেশে এরা 
দীর্ঘকাল প্রবেশ লাভ করতে পারোনি। একসময়ে এই প্রবেশ ছিল নাষদ্ধ। প্রবেশ 


আদ যুগ 3 


করলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হত, নতুবা হত সমাজচ্যুত। কারণ, বাংলাদেশে তখন ছল 
স্বতন্ম সংস্কৃতি এবং স্বতন্ত্র ভাবা । অবশেষে গৃপ্তযুগে আযবিতের বিভিন্ন অঞ্চল 
থেকে বৈদিক ব্রাহ্মণেরা এসে বাংলায় চ্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন । সেজন্যে 
তাঁদের জমিজমাও দান করা হয়েছিল । এভাবে ঘটল বাংলায় আযাঁভবন । এর 
আগে বাংলা দেশে বৃত্তিভিত্তিক চভন্র্বর্ণ ছিল না। কিন্তু 'বৃহঙ্ছর্ম পুরাণে'র সাক্ষ্যে 
জানা যায়, সেন আমলে বা তারও কিছু আগে বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের স:ম্ট হয় । 
[তনভাবে এই জাতপ্রথা গড়ে ওঠে পেশা, কর্ম ও নৃতাতিবক গোহ্ঠীগতভাবে । 
বর্তমান বাঙালী সমাজের জাতাবন্যাস গড়ে উঠল এভাবে । সেইসঙ্গে জাতি ভেঙে 
বিভিন্ন 'জাতে'রও (কথায় বলে ছাত্রশ জাত) সমষ্ট হল। পুরুযান:ক্রামক কৃত্তি 
অনুসারে আভিজাত ও অন্ত্যজ দুটি শ্রেণীতে [ভক্ত হল সমাজ । 


জাতর পাঁরচয় নরতত্তৰ, জনতত্তর, সমাজতত্তেরর মতো ভাষাতত্তেবর সাহায্যেও 
জানা যায়। 


বাঙালীর কৃষি ও তার পদ্ধাত আস্ট্রকভাষাদের দান। তাই বাঙাল?র প্রিয় 
ক্‌খিসম্পদের নাম আস্ট্রিক ভাষা থেকেই আগত । ধান, তুলা, পান, হলুদ, নারকেল 
ও নানা জাতীয় সবজির সঙ্গে লাঙল, কাপসি কম্বল সব শব্দের মূলে আস্ট্রক শব্দ । 
কড়ি, গণ্ডা ইত্যাদি সংখ্যাগণনারীতিও আস্ট্রকভাফীদের কাছ থেকে পাওয়া । 
দ্রাবড় ভাষার শব্দ, পদরচনা ও ব্যাকরণরীতি বাংলাভাষায় প্রবেশলাভ করেছে । 
আর বাথলা ভাষার অধিকাংশ শব্দই তো সংস্কৃতমূল । সুতরাং ভাষার ক্ষেত্রে 
বৈদিক আর্যদের দান আবসংবাদিতরুপে প্রমাণিত । 


জাতির গরিচয় জানার আর একটি উপায় গ্রন্থাদির নানা উল্লেখ । বৈদিক 
আর্ধরা মনে করতেন বঙ্গভূমি "দেশোহনার্যানবাসঃ'অনার্ধদের বাসস্থান ৷ 
বাঙালীদের সম্পকে" তাঁদের দঘ্টিভঙ্গি ছিল অবজ্ঞার। “আচারজরসতত্রেণ মহাবীরের 
(খতীঃ পৃঃ ৬০০) এদেশে এসে বিপাঁত্ততে পড়ার কথা বলা হয়েছে । বৌধায়নের 
ধর্মসত্রে পন্ড্র ও বঙ্গ জনপদে কিছুকালের জন্য থাকলেও প্রায়াশ্চিন্তের (ব্রাত্যত্টোম ) 
বিধান দেওয়া হয়েছে । রামায়ণ মহাভারতে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ স্বীকৃতি পেল । 
মনুসংহিতার কাল থেকে (খঃ পুঃ ২০০-_খীঃ ২০০-এর মধ্যে) নজদেশ 
আধাঁবতের অন্তভক্ত বলে পারগাঁণত হল। আলেকজাণ্ডারের ভারত আক্রমণের 
কালে (খতীঃ পঃ ৩২৭ ) গাঙ্গরিদাই' নামে এক সাহসা জাতির বঙ্গদেশে অবস্থানের 
কথা বলেছেন গ্রীক এীতহাসিকগণ । “আযমঞ্রঃগ্রীমূলকল্পে (অণ্টম শতক) 
বঙ্গবাসীকে বলা হয়েছে অসুর ভাষাভাষী । 

জিনপ্রবাহ তো একটি আঁবাচ্ছন্ন ধারা ; তাহার ইতিহাস কোথাও শেষ হইয়া যায় 
সা)” তবু প্রত্ন-নর-জন-সমাজ-ভাষাতত্তৰ বিচারে ও নানা উল্লেখে জানা যায় 
যুগপ্রবাহের বিভন্ন চ্তরে অনৃ-আর্য ও আর্যে'র মিলনে বর্তমান বাঙাল? জাতির 


4 খলা সাহিত্যের ইতিহাস 


উদ্ভব সম্ভব হয়েছিল। আধাঁভবনের পরে তা স্পণ্টত দূশ্য না হলেও বাঙালপর 
সে-পরিচয় গোপন থাকে নি। 


বাংল! ভাষার উদ্ভব 
ভাষা £ 
বাঙালীর মনের ভাব প্রকাশের ভাষা বাংলা ভাষা । বাঙাল জাতির উদ্ভব 
য্গপরম্পরায় কয়েকটি ভাবাগোম্খীর লোকের মিলনে, বাংলা ভাষাতেও স্বভাবতই 
সেই ভাবাগদালর প্রভাব ব্তমান। তবে, আর্য-আগমণের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার প্রাচীন 
অধিবাসীরা যেমন আর্য সভ্যতা-সংস্কৃতিকেই বরণ করে নিয়েছিলেন, তেমাঁন ভাষার 
ক্ষেত্রেও আর্য ভাষাই হয়োছল বাঙালশর ভাবা; আ্ট্রক দ্রাবিড় ইত্যাদ ভাষাগুল 
শব্দ ও ব্যাকরণরীতিতে তাকে সমদ্ধ করেছিল মান্র ॥ 
আর্ধজাতি (নর্ডক গোহ্ঠী) খনীস্টজন্মের দেড় হাজার বছর আগে ইরান 
ছেড়ে ভারতে প্রবেশ করেন। প্রথমে তাঁদের বসত ছল পশ্চিম পাঞ্জাবে। হাজার 
বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া সমগ্র আযবিতে” তাঁদের বসত বিস্তৃত হয়। এই 
আর্যরা রচনা করেন বেদ এবং বাভিন্ন উপনিষদ ও পুরাণ । বৈদিক ও সথদ্কৃত 
ভাষার এ স্তরাঁটকে বলা হয় আঁদ-ভারতীয় আর্য ভাষা (01d Indo Aryan ) 
এ ভাষার কালসামা খণীস্টপূর্ব পনের শতক থেকে খণীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক পৰ্যন্ত । 
তখনো লিপি আবিষ্কৃত হয়নি । সবই ছিল শ্রুতিনভ'র । লিপি আঁবচ্কারের 
পর এগুলি লিপিবদ্ধ হয় বলে এগুলিকে লেখ্য আখ্যা দেওয়া হয়েছে। 
এই লেখ্য বৈদিকের সঙ্গে প্রচালত ছিল জনসাধারণের মুখের ভাষা ‘কথিত 
বৈদিক’ ৷ এই কথিত বৈদিক ভাষা ধ্বীন পাঁরবতণনের নিয়ম অনুসারে ক্রমে পারবা 
হতে থাকে। তার ফলে সংণ্টি হয় কয়েকটি প্রাকৃত ভাষার । মাগধী প্রাকৃত 
তাদেরই অন্যতম । প্রাকৃত ভাষাও ক্লমরুপাস্তরের মধ্য দিয়ে অপভ্রংশ ভাষার সৃষ্টি 
করে। প্রাকৃত ভাষার নাম অনঃসারে অপভ্রংশ গুলিকে চাহত করা হয়। যেমন, 
মাগধ! প্রাকূত-মাগবা অপজ্রংশ ইত্যাদ। বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকেই আর্ধাবতে'র 
বিভিন্ন ভাষার জন্ম । বাংলাভাষার জনন! মাগধা অপন্রথশ | 
ভাষার বিবর্তনের তিনটি স্তরকে নিম্নলিখিতভাবে উপস্থিত করা যেতে 
গারে £ 
প্রথম স্তর £ আদি ভারতীয় আর্যভাষা ?ঃ খ্ীঃ পূঃ ১৫০০-খএরঃ পঃ ৬০০ 
দ্বিতীয় স্তর £ মধ্য ভারতীয় আয'ভাষা £ পাঁল-খঃ 8 ৬০০-খত্ীঃ পৃঃ ২০০ 
প্রাকৃত_খনীঃ পূঃ ২০০-খঢরীঃ ৬০০ 
অপভ্রথশ- খতীঃ ৬০০-_খতীঃ ১০০০ 
তৃতীয় স্তর £ নব্যভারতীয় আরভাষা £ বাংলা ও অন্যান্য ভাষা_ খনঃ ১০০০ 


আদি যুগ 5. 


| 
| 
৷ বাংলা দেশে প্রথমে প্রচালত ছিল আসক, দ্রাবিড় ও আলপায় আর্যশাখার ভাষা । 
কালক্রমে বৈদিক ধৰ্ম ও সহস্কৃতির অনুপ্রবেশের আগেই বণিক ও সাধুদের মাধ্যমে, 
৷ বাহলায় সংস্কৃত ভাষার প্রবেশলাভ ঘটল । চাও চলল [বশেষ যত্বের সঙ্গে ৷ 
 পরব্তর্ণকালে আবাবতের ব্রাহ্মণদের বাংলাদেশে বাধাহীন আগমনের ফলে €খণীপ্টায় 


চতুর্থ শতক থেকে ) এই চচয়ি আগ্রহ দেখা দিল অনেক বোঁশ পরিমাণে । বস্তুত, - 


আর্ধভাষাই হল বাঙালীর ভাষা, তা-ই ক্লমপাঁরবার্তত হয়ে জন্ম নিল বাংলা ভাষা ৷ 
আদিতে বাংলা, গুঁড়য়া, অসমীয়া ভাবা ছিল আভন্ন । কালক্রমে তারা আপন 


 স্বাতন্দ্য অর্জন করে। 


ভাবাস্তরকে [নম্নীলিখিতভাবে উপস্থিত করা যেতে পারে £ 


ইলা 
| 
লেখ্য Hi কাঁথত বৈদিক 
টি 
| অপভ্ৰংশ 
ওাঁড়য়া মা 
| | 
অসমীয়া বাংলা 


সুতরাং, কথিত বৈদিক ভাষার আদ মধ্য ও নব্য তনাঁট স্তরে ব্রমাববর্তনের 


ফলেই জন্মলাভ করেছে আর্যাবর্তের অন্য সকল ভাষার মতোই বাঙালীর ভাষা, 


বাংলা ভাষা । 


বাংল! সাহিত্যের উদ্ভব ও যুগ-বিভীগ 


কাঁথত বৈদিক ভাষার ব্লম-পাঁরবর্ত'নের ফলে বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটে খদীস্টায় 
দশম শতকের কাছাকাছি সময়ে । বাঙালীর সৌভাগ্য ভাষার জন্ম লগ্নেই বাংলা- 
ভাষায় সাঁহত্য রাঁচত হয়েছে । তার ফলেই বাংলা কাব্য-সাহিত্যের উন্নাত 
ঘটেছে দুত । 


ভাষাগত পাঁরবর্তনের সূত্র ধরে বাংলাভাষাকে তিনটি পর্যায়ে বিভন্ত করা যায়_ : 


আঁদ, মধ্য ও আধুনিক যৃগ। আঁদিস্তরের কালসামা দশম থেকে দ্বাদশ শতক, 


ম 


৬ ংলা সাহত্যের ইতিহাস 


মধ্যস্তরের ত্রয়োদশ থেকে অষ্টাদশ শতক এবং অন্টাদশ শতকের শেষার্ধ' থেকে 
আধ্বানক যুগের সূচনা ৷ 
আদিযগের একমাত্র সাঁহাঁত্যক নিদর্শন বৌদ্ধ সদ্ধাচার্যদের রাঁচত ‘চর্যাগীত' বা 
“চ্যপদ’ । গত বা পদ গান অর্থেই ব্যবহৃত । বাংলা ভাষা তখন সবেমাত্র মাগধী 
অপত্রংশের খোলস ছাড়িয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাছাড়া খৌরসেন অপভ্রথণ তখন 
হলা দেশের িষ্ট সমাজে প্রচ্লত। ফলে, চর্ধার ভাবায় আছে অপল্রংশ ও 
বাংলা ভাষার "শ্রণ । বাংলা ভাষার প্রাচীনতম রপটিকে তাই সহজে বাংলা বলে 
মনে হয় না। কিন্তু চ্াগানের অনেক শব্দ বতণমানেও প্রচীলত, যেমন-_ জান, নিল, 
গেল, কার, ছাড়, চাঁড়লে ইত্যাদি ক্রিয়াপদ, বাত, ঘরে ইত্যাদি বিশেষ্যপদ এবং দুই, 
1বনহ, মাঝে ইত্যাদি পদ । চর্যার ভাষা যে বাংলা সে বিষয়ে তাই সন্দেহ থাকে না । 
মধ্যযুগের বাংলা সাহত্যের ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতকের গোড়ার দিকের কোনো 
সাহাত্যক নিদর্শন আজও পাওয়া যায়নি । একে বলা যায় বাংলা সাহিত্যের 
'অন্ধকারময় যূগ । 
মধ্যযৃগায় বাংলা সাহিত্যের প্রথম পধাঁয় চতুদর্শ-পণ্চদশ শতকে । বড়ু চণ্ডী- 
দাসের শ্রীকৃষ্ণকীতন এই কাল পর্বের প্রথম ও স্মরণীয় সাহাত্যক নিদর্শন । বাংলা 
ভাষার বিবর্তনের রুপাঁট এখানে স্পস্ট । অপত্রংণের ব্যবহার প্রায় নাই, পারবর্তে 
দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ তৎসম শব্দ ; ব্যাকরণ ও ধ্বানতত্তেরও বিশেষ পাঁরবর্তন দেখা 
দিয়েছে। 
বাংলা সাহত্যের মধ্যযুগে রচিত হয়েছে ভাগবতের অন[বাদ, রামায়ণ মহাভারতের 
মুক্তানুবাদ, মনসা-চণ্ডী-ধর্ম ইত্যাদি দেবদেবীর প্রশাস্তসূলক মঙ্গলকাব্য, বৈধাব- 
“পদাবল? ও জীবনী সাহত্য । 
যোড়শ থেকে অন্টাদশ শতকের মধ্যভাগ মধ্যযুগের শেষ প্ায়ি। বাংলা ভাষা 
তখন আধুনিক কালের কাহাকাছি। বৈষ্ণব ও পৌরাণক সাহত্যের অনুবাদের 
সুবাদে প্রচুর পাঁরমাণে তৎসম শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে, ইসলামী সভ্যতার সঙ্গে মিশ্রণের 
ফলে ভাষায় এসেছে তুকাঁ, আরবা, ফারসী ইত্যাদি শব্দের প্রচুর ব্যবহার । বৈষ্ণব 
পদাবলী রচনায় বাংলা-মৈথল' মিশ্রিত ব্রবূলি ভাষার ব্যবহার ঘটেছে সাহত্যে ৷ 
অল্পদ্বলপ পাশ্চাত্য শব্দেরও অন:প্রবেশ ঘটেছে বাংলা ভাষা ও সাহত্যে । 
খলা সাঁছত্যে আধুনিক যুগের সূচনায় ঘটল গদ্যমাহত্যের আবিভবি ও 
বিকাশ । ইংরেজি, ফরাপা ইত্যাদি পাশ্চাত্য শব্দসম্পদে পঢণ্ট হল বাংলার শব্দভাপ্ডার ৷ 
ব্যাকরণ, পদাবন্যাম, প্রবাদ-প্রবচনে পাশ্চাত্য ভাষার ছায়াপাত ঘটল । সাধু ভাষার 
সঙ্গে চালিত রীতিতেও সাহত্য রচনায় কৃতিত্ব দেখা দিল । সবোপাঁর ধর্ম ও সঙ্গীতের 
সাঁমিত ক্ষেত্র ছাড়িয়ে সাহিত্যের অঙ্গন প্রসারিত হল নানা দিকে-রাঁচত হল 
প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোট গল্প, নাটক এবং সনেট ইত্যাদি। পয়ারের ছন্দ-সাগ্রাজ্যে 
প্রবেশ করল প্রাচ্য-পাণ্চাত্য নানা ছন্দ । বিদ্যাসাগর, মধুস:দন, বঙ্িমচন্ত্র 


আদি যুগ Tq 


রবান্দরনাথের প্রাতভায় বাংলা সাঁহত্য বিশ্বের দরবারে [বিশিষ্ট আসন. সংগ্রহ করে 
বাঙাল'র মর্যাদাকে প্রাতাষ্ঠত করল বিশ্বে । স্বাধীনতা লাভের লগ্নে দেশ বিভাগের 
ফলে বাংলাদেশ হল দ্বিখণ্ডিত । অন্রচূড় বনম্পাঁত বাংলাসাহত্য তবু তার 
শাখা-প্রশাখা বস্তার করে চলেছে উনিশ শতকায় বাঙালী মনীষার নির্দোশত 
পথেই, যার ভাত্ত উদার মানবপ্রেম । 


বাংল। সাহিত্যের আদিপর্বের সমকালে সামাজিক পটভূমি 
খলা সাহিত্যের আঁদ পর্ব দশম থেকে দ্বাদশ এই দুই শতক জুড়ে বিস্তৃত । 
এই কালসীমায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল বংশীয়েরা এবং ব্রাহ্মণ্য ধমবিলম্বী সেন রাজারা 
খলায় রাজত্ব করতেন । পাল যুগে বাংলাদেশে বর্তমান জাতীবন্যাস দেখা দেয়া, 
দেখা দিল সেন আমলে । সেন রাজারা ব্রাহ্মণ্যধর্মের পোষকতা করায় সমাজশাসনে, 
রগাতিনগাঁতপালনে ব্রাহ্মণদের বিধান আতীরন্ত মূল্য পেল। কাঁথত আছে সেনরাজ 
বন্লাল সেন বাংলাদেশে কৌলীন্য প্রথা প্রবর্তন করেন। ফলত, ব্রাহ্মণ সমাজ 
নৃতেনভাবে সংগাঁঠত হয়। এইসব কারণে বাধ্লাদেশে সেন আমলে নানা জাত ও 
উপজাতির স[ষ্ট হয় । এই সময়ের কিছু পরে রাঁচত 'বহেদ্ধর্মপু্রাণে' তার বিস্তৃত 
তালিকা আছে। সেনআমলে শুধু কৌলীন্য প্রথার প্রবর্তন-ই হয়নি, সমাজে 
{বাভিন্ন জাতি ও উপজাতির স্থানও নির্দিষ্ট হয়েছে । ফলে উত্তম সংকর, মধ্যম সংকর, 
অধমসৎকর ইত্যাদি জাতাবন্যাস দেখা গেল। আমাদের পঢ্ব'বর্তী দান ছিল 
জাতাঁবভাগ, তার সঙ্গে যুন্ত হল জাতপাত-বিচার । 

সমাজের উচ্চবর্ণ অন:র্ত ছিল ব্রান্গণ্যধর্মের প্রাত। তথাকাঁথত, নিন্দবর্ণ ও 
অনাভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে লক্ষ্য করা গেল দুটি অবৈদিক লোকায়ত ধর্মের প্রভাব । 
তাদন্তিক বৌদ্ধধর্মের রূপান্তীরত শাখা সহজযান এবং শৈবগল্থী নাথধর্ম শংধং সমাজেই 

স্থান সংগ্রহ করল না, সা'হতারচনাতেও কাঁবকে অন:প্রাণিত করোছিল। 


বাংল। সাহিত্যের ভািপর্বে রচিত সাহিত্য 


হলা সাঁহত্যের আদিপর্বের একমাত্র সাহীত্যিক নিদর্শন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য'দের 

রচিত গান বা পদাবলী । নিজ ধর্মমত প্রচারের উদ্দেশ্যে তাঁরা এই গানগথাল রচনা 

করেনান, কারণ ধর্মমতকে গোপন রাখাই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য । সেজন্য গানগাঁল 
রচনা করেছিলেন একটি সাংকেতিক ভাষায়, যার নাম সন্ধ্যা ভাষা । 

সমাজ ব্যবস্থায় উৎকণ্ঠিত হয়ে অথবা কবিসুলভ আন্তারক প্রেরণাতেও গানগীল 

রাঁচিত হয়ান। নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে সাধকেরা নিগ.্ট সাধনপন্ধাতর কথা ব্যস্ত করতে 


৪ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


চেয়োছলেন গানে । বস্তু সেই সুযোগে বাঙাল সংস্কৃতির হয়েছে অকল্পনীয়? 
উপকার । বাঙাল পেয়েছে বাংলা ভাষার আদি লগ্নের ভাবার নিদর্শন, সেই সঙ্গে 
সাধনপ্রাক্রয়া বর্ণনার আড়ালে তথ্যাভীত্তক সমকালশন সমাজাঁচত্র । ধমণভাত্তক সাধন 
সঙ্গীত প্রাক-আধুনিক যুগের বাংলা কবিতার বৈশিষ্ট্য । তারও সূচনা চযগ্িশীতিতে ৷ 
বাংলা সাহত্য তার প্রকৃতির সন্ধান পেল সূচনালগ্নে__বাৎলা সাহিত্যের পক্ষে এ 
কম গৌরবের কারণ নয়, তার শুভ ফলও দেখা গেছে পরবতর্ণ সাহিত্যে। 

দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে নাথধ্মের প্রভাব বিস্তৃত থাকলেও তার সেকালের 
কোনো সাহিত্যক নিদর্শন আজও আঁবচ্কৃত হয়ান। এই সাহত্য লোকসাহত্যের 
অনস্তভ:ন্ত হয়ে মুখে মুখে যুগ পরম্পরায় আত্মরক্ষা করেছে, সেইসঙ্গে ভাষাগতভাবে 
পারবর্তিতও হয়ে গেছে ॥ (বস্তুত, 'মনচেতন', গোরক্ষ বিজয়, “গোখ" বিজয় 
'গোবিন্দচন্দরের গীত”, 'গোপাঁচন্দ্রে সন্ন্যাস' অথবা “গোপণচন্দ্রের পাঁচালগ' ভাষা 
বিচারে সপ্তদশ শতকের পূ্ববতাঁ হওয়া সম্ভব নয়)]। কিন্তু দশম-দ্বাদশ শতকে. 
উত্তর-পশ্চিম ভারতে নাথ ধর্মের গর গোরক্ষনাথের মাহমার, কাহিনী প্রচালত ছিল । 
সুতরাৎ অনামত হয়, বাংলা দেশের কাহনশগালও সমকালে রাঁচিত ॥ 


ছ্িতীক্ অন্যান 
বাংলা সাহত্যের্ আদি যঃগ 


চযাঁগদ ৪ 

বাংলা ভাষা ও সাহত্যের প্রাচীনতম দর্শন চযপিদ । চা অর্থ আচরণ ।' 
চরাপদ বা গানগুলির মাধ্যমে সহজযান ( মহাযান বৌদ্ধধর্মের শাখা বজ:যানের' 
অন্যতর শাখা ) মতাবলম্বী গুরুরা অর্থ-গোপন'য়তার- সাহায্যে নিজ সম্প্রদায়ের 
শিষ্যদের কাছে আচরণ বা সাধন-উপায় ব্যন্ত করেছেন। অর্থের গোপনীয়তার, 
কারণ ব্রাহ্মণ ইত্যাদি 'বধমর্ঁদের সাধন-পদ্ধতি জানানোয় অনীহা । 


চযগান সাধন সংগত । এতে আছে বৌদ্ধ সহজিয়াদের ভাবধারা ও যোগসাধনার" 
পরিচয় । বাংলা ভাষা তখন সজ্যমান । সেই অপাঁরণত ভাষাস্তরে শৌরসেনী ও 
মাগধী অপদ্রংশের ছাপ আছে ভাষায় । তার উপর ‘সন্ধ্যাভাষা’ নামে একট রহস্যময় 
হে'য়ালিপূর্ণ ভাষায় গানগাল রাঁচিত। সুতরাৎ গানগহির অর্থ সহজে উদ্ধার সম্ভব 
নয়, অথবা সে-ভাষা আমাদের পাঁরচিত বাৎলাভাষাও নয় । তব বাংলা সাহত্যের 
এই আঁদস্তরে বাংলা ভাষার আঁদর:পটি মূর্ত হয়েছে চযগানে । 


চযগিসীতর একাঁট সংকলন 'চযচির্ধাবানশ্য়' । মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী; 

নেপাল রাজের পাঁথশালা থেকে এট আঁবচ্কার করেন ১৯০৭ খীস্টাব্দে ). 
কলনাটি একাঁট অনীলীখিত পথ । সম্ভবত চতংদণ শতকে এট নকল করা হয়। 

পাট প্রাচীন বাংলা ও নেপাল? অক্ষরে লাখত। পাথটিতে সর্বমোট পণ্টাশাঁট: 
পদ থাকার কথা। কিন্তু পথ 'ছন্ন হওয়ায় িচাঁল্লশাঁট পূর্ণপদ ও একটি খণ্ডিত 
পদ পাওয়া গেছে । পণ্ডিতেরা ভাষাবিচার করে এগাল দশম থেকে দ্বাদশ শতকের 
মধ্যে রচিত বলে সিদ্ধান্ত করেছেন । [ ষাটের দশকে ডঃ শশিভুষণ দাশগুপ্ত নেপাল 
ও তরাই অণ্চল থেকে আরও ৯৮টি চযপিদ সংগ্রহ করেন যার অন্তত ১৯টি এইকালে 
রচিত বলে অনুমিত ৷] প্রাতাটি পদের উপরে আছে রাগ-রাঁগণীর উল্লেখ । নিচে” 
আছে বৌদ্ধ পাঁণ্ডত মৃনিদত্ত-কৃত সংস্কৃত টীকা । চযরি অর্থ উদ্ধারে এই টীকা 
বিশেষ সহায়ক ৷ 


পদগুলির রচাঁয়তা লুইপাদ, ভুসুকপাদ, কাহৃপাদ, সরহপাদ, শবরপাদ প্রমদ্থ 
চাব্বশ জন সিদ্ধাচার্য। এ'রা ছিলেন বাংলা, মাথলা, উাঁড়য্যা, কামরুপের। 
আঁধবাসী। সুতরাহ চর্ধাপদে আছে পূর্ব ভারতের সমকালীন: জীবনচিন্ন। কবিরা: 


10 বাংলা সাহত্যের ইতিছাস 


'হুদ্মনামই ব্যবহার করেছেন, কিন্তু বুঝতে অসংবিধা হয় না যে তাঁরা ছিলেন তথাকথিত 
নিম্নবর্ণের লোক । 


ফলে, চযয়ি বে জীবনচিত্র চিত্রিত তা মূলত অন্তাজ শ্রেণীরই । তবু তৎকালীন 
বাংলাদেশের সামাগ্রক জীবনযাপন-রীতির ইঙ্গিত গানগীলতে লভ্য। সে-দমাজে 
ছিল ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য । নিজের জামির আয় ও রাজানঃগ্রহ ভোগ করতেন তাঁরা ৷ 
'আভজাতেরা ছিল অর্থবান, অনভিজাত শ্রমজীবশ মানুষ দারিদ্র্যপগড়িত। 
কাঁষাভীততক বাংলাদেশে ধান ও তুলার চাষ হত। কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তোর হত 
দৈনন্দিন জীবনের নানা উপকরণ । শিকারে জীবকানিবহি করত শবরজাতির 
লোকেরা । যৌথ পরিবারে. বিশ্বাসী ছিল সমাজ । চোর-ডাকাতের উপদ্রব ছিল, 
'্বারোগা-কাছারিও ছিল! বিবাহে যৌতুক গ্রহণ ও আড়ম্বর হত। নিম্নবর্ণের 
মধ্যে ছিল িধবাবিবাছের প্রচলন । অবসর বিনোদনের উপায় ছিল দাবাখেলা, 
নত্যগীঁত ও অভিনয় । ব্রাহ্মণেরা বেদানৃকূল ধরমচচা করতেন-__মন্ত্র-পুজা-জপতপ 
{ছল তাঁদের দেব-আরাধনার অঙ্গ । নিম্ন বণেরি মধ্যে লোকায়ত ধর্ম বিশেষ প্রভাব 
ববস্তার করে_বৌদ্ধ সহজঘানের প্রাতণ্ঠা ও বিস্তারে তার পরিচয় । 


চষর্পিদে চিন্রত সমাজচিন্র ৪ 


নদীমাতৃক বাংলার চারদিকে খালাবিল, ‘বাম দাহিন জো খালাবখলা' ৷ তাছাড়া 
কোথাও কোথাও আছে উ'চা উণচা পাবত" | সেখানে বাস করে অস্পৃশ্য শবর জাতি। 
তাদের 'হাঁড়ীত ভাত নাহ'। তব বাঙালশ চিরকালই আঁতাঁথ পরায়ণ। সেজন্যই 
আছে নিত্য আঁতাথ সমাগম নাতি আবেশা'। বাঙাল'র প্রধান খাদ্য ধান যখন 
পাকে আনন্দের সীমা থাকে না বাঙালীর মনে কঙ্গচিনা পাকেলা রে শবর 
শবরা মাতেলা’। আনন্দ প্রকাশের উপায় নাচ-গান-বাজনা--“নাচান্ত বাঁজল গান্তি 
"দেবা ।” সাজসদ্জাতেও বাঙালগর বড় অনুরাগ । বন্দরের উপকরণ কাপাস তুলার 
অভাব নেই--যুকড় এবেরে কপাস ফুটিলা ৷” জাবিকার জন্য ব্রাহ্মণদের চিন্তা কম৷ 
তাম্নশাসন ( শাসনপড়া' ) দ্বারা রাজা তাদের নঙ্কর জমি ভোগের সুযোগ দেন। 
হরি, ব্রহ্মা, আগম-পথপাঠ নিয়ে কাটে তাদের সময়। কিন্তু আছে চোর ডাকাতের 
ভয়--অদঅ বঙ্গালে ল:ড়িউ, 'চৌকড়ি ভণ্ডার মোর লইআ সেস ।' ডাকাত ছাড়া 
আছে চোর--কানেট চোরে নিল অধরাতাী'। অবশ্য চোর ডাকাতের উপদ্রব থেকে রক্ষা 
করতে ছিল প্রহরী 'তথতা পহারী'। তালাচাবিরও ব্যবস্থা ছিল-_কোন্টা তাল'। 
আর ছিল দারোগা--দৃযাধী', থানা ছিল, কাছারিও--উআরি'। সবেপিরি ছিল 
সংখা দাম্পত্য জাবন-_“জোইনি জালে রজনী পোহাঅ। 


চযাটীতি ধর্ম-সংগণত-_যে ধর্মে“ বলা হয়েছে জীবন ও জগৎ অসার, অলীক, 
আয়া, মিথ্যা । চ্যা-রচাঁয়তা বৌদ্ধাসদ্ধাচার্য এ-জগতকে ভালবাসতে পারেননি । 


আঁদ যুগ 11 


জাগতিক দুখ থেকে মধান্তই ছিল তাঁদের কামনা । সুতরাং জীবনানুরাগ অথবা: 
জগৎ-প্রীত তাঁদের রচনায় আশা করা অনহচিত। কিন্তু তত্তকথাকে তাঁদের রুপ 
দিতে হয়েছে এই তথাকথিত অস্তিত্বহীন জীবনের উপমানে । ফলত, সমাজ-চিত্র ও. 
সাহিত্যসম্পদ সেখানে উদ্দেশ্য না হয়েও অদৃশ্য থাকোনি। 


চঘপিদে ডোম, শবর, চণ্ডাল, কাপালিক ইত্যাদি নিম্নবর্ণের লোকের কথাই বেশ । 
ব্রাহ্মণেরা তাদের অস্পৃশ্য মনে করত । ডোমেরা থাকত গ্রাম বা নগরের বাইরে, তাদের" 
বৃত্ত ছিল তাঁত বোনা, ঝাঁড়-চগড়ি তৈরি ও খেয়া পারাপার । নৃত্যে তারা ছিলি 
বিশেষ পারদ । শবরেরা পাহাড়ে, বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়াত, পশু শিকারে অভ্যস্ত 
ছিল। গলায় গুঞ্জাফলের মালা, মাথায় ময়ুরপুচ্ছ ও কানে বজকুণ্ডল ধারণ ছিল 
তাদের বিলাস। সঙ্গীতে তারাও পারদ ছিল। কাপালিকদের স্থান ছিল সবার 
নিচে। তারা নরকঙ্কালের মালা পরে নগ্ন অবস্থায় ঘুরেবেড়াত। 


অন্তাজ শ্রেণীর বৃত্তির মধ্যে ছিল ধান ও তুলার চাষ, কাপড় বোনা, মদ তৈরি, 
কাঠের কাজ। অথ এই শ্রেণীর লোকেরা ছিল শ্রমজীবা, কায়িক শ্রমই ছিল তাদের' 
সম্পদ। শ্রমের বিনিময়ে জুটত না উপযু্ত অর্থ । সুতরাং অন্তযজ শ্রেণীর জশবন- 
যাপনও ছিল অনুন্নত । অন্যপক্ষে, ব্রাহ্মণেরা রাজানগগ্রহে নিত্কর ভূসম্পান্ত ভোগ 
করত, সোনা-রুপাও দান হিসাবে গেত। তাদের বাঁত্ত ছিল বেদানৃকল শান্তা 
ফলে কায়িক শ্রমের উপর নির্ভর করতে হত না, অর্থেরও অভাব ছিল না। সেই- 
সমাজে চোর-ডাকাতের উপদ্রব অজানা ছিল না, সেজন্য তালাচাঁ, প্রহরণ, দারোগা ও 
কাছাঁরর ব্যবস্থাও ছিল। 

শবশত্র-শাশবীড়-ননদ, শালী-তরী-ছেলের বৌ নিয়ে ছল সেকালের যৌথ পরিবার, 
সেখানে ব্যান্তগত স্বেচ্ছাচারের সুযোগ ছিল না। বিবাহ ইত্যাঁদ সামাজিক অনুষ্ঠান 
ছিল এ-কালের মতোই । বিবাহে যৌতুক গ্রহণ করা হত, নিম্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে 
বিধবা বিবাহ প্রচলিত ছিল। অবসর বিনোদনের অন্যতম উপায় ছিল দাবা খেলা,, 
নাচগান ও অভিনয়। 


চযয়ি সাহিত্য সম্পদ ঃ 


বৈচিত্র্যময় জীবনের খণ্ডচি্রই চযায়ি লভ্য। সে চিত্রে যেমন আছে সমাজ-পাঁরচয় 
তেমান আহে সাহিত্যসম্পদ। চষাগানে প্রধানত জীবনের দুটি অনুভবের প্রকাশ 
বিষাদ ও শঙ্গার। নিসগরপ্রীতও অলক্ষ্য থাকেনি । 
বিষাদবোধ ফুটে উঠেছে সামাজিক অভাব, অত্যাচার ও অসঙ্গাতকে কেন্দ্র করে।। 
টালত মোর ঘর নাহি পাঁড়বেশন। 
হাঁড়ীত ভাত নাহি নাতি আবেশ ॥ 


J12 ংলা সাহত্যের ইতিহাস 


লোকালয়ে বাস অথচ নাই প্রীতবেশী,। ঘরে নাই অন্ন অথচ আঁতাঁথর নিত্য সমাগম | | 
একটি গানে বলা হয়েছে নির্দয় জলদস্যু দেশ ল:ষ্ঠন করল, নিজের গহিণীকে | 
"অপহরণ করল চণ্ডাল । আগে পাবার নিয়ে ছিলাম মহাসংখে ; এখন সোনারূপা 
শীকছুই থাকল না-জীবত্তে মইলে নাহি বিশেষ-_এখন মরা বাঁচা দুই 
সমান । | 

শঙ্গারের প্রকাশ প্রধানত গুণ্ডরীপাদ ও শবর পাদের রচনায় । শবরপাদ প্রোমকার : 
রুপবর্ণনায় বলেছেন “মোরঙ্গী পাচ্ছ পরাহণ সবরী গিবত গুঞ্জরশ মাল?-শবরীর : 
“পরণে ময়রের পালক, গলায় গুঞ্জাফলের মালা, তাকে দেখে_-'উমতো শবরো"_ 
"শবর উন্মত্ত । 


নিসর্গসৌন্দর্য চযাগানে প্রাধান্য না পেলেও সৃচাত্রিত । নানা তরুবর মউলিলরে 


“গঅণত লাগেল? ডালী"_-নানা তরুবর মুকুলিত, তাদের প্াথ্পত শাখা আকাশে 
লেগেছে; অথবা 


তইলা বাড়ীর পাসে'র জোহা বাড়ী উএলা । 
ফিটোল অন্ধাররে আকাশ ফুঁলআ ॥ 


“সেই বাঁড়র পাশের জ্যোৎস্নায় বাড়ি উজ্জ্বল, অন্ধকার কেটে যাওয়ায় মনে হচ্ছে 
আকাশ জংড়ে ফল ফুটেছে । এ তো যেন সাধনসঙ্গীত নয়, কোনো কাঁবমনের অন্তরঙ্গ 
প্রকাশ । এই পরিবেশের সঙ্গে যু্ত হয়েছে পাকা কঙ্গ:চিনা ধানের ঘ্রাণ, তাতে মিলনমত্ত 
হয়েছে শবর-শবরী--এ চিত্রে “সন্ধ্যাভাষা'র রহস্যময়তার অন্তরাল ভেদ করে বেরিয়ে 
আসে জীবন-রহস্য__সাহিত্য-সম্পদ। 

বিষাদ, নিসর্গ ও প্রেম_ রোম্যান্টিক কবিতা তথা বাংলা কবিতার তিন মুখ্য 
উপাদান_ চযাগানকেও সাহিত্যসম্পদে ভাঁরয়ে তুলেছে । বস্তুত চধরি 
মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের উদ্ভবলগ্নেই বাংলা সাহিত্যের মূল প্রকৃতি 


পরিস্ফুট হতে পেরেছে । বাংলা সাহিত্যের উন্নতির প্রধান কারণ এই শৈশবে 
'আত্ম-আবিচ্কার | 


পদকতরি নানা প্রকার নিগচ তান্ত্রিক ধর্মচিরণের কথা বলেছেন গানগিতে 
এবং সেটিই ছিল গাঁত রচনার মুখ্য উদ্দেশ্য । কিন্তু তারই ফাঁকে পাওয়া গেছে 
'তাঁদের কবিপ্রাতভা, ছন্দ ও র্‌পনিমণি পদ্ধতির পরিচয়। বাংলার বিশিষ্ট ছন্দ এবং | 
প্রাক-আধুনিক যুগের কবিতায় সবন্ধ ব্যবহৃত ছন্দ পয়ার ও ভ্রিপদীর আদ নিদর্শন | 
পাওয়া যায় পদগলিতে । নিবণিতত্ৰকে অনেক পদে দয়িতারুপে বর্ণনা করা 
হয়েছে। পরবতাঁকালে বৈষ্ণব সাহিত্যেও দাঁয়ি-দাঁয়তার রূপক বিশেষ মরাদা পায়! 
] 

| 


আদি যুগ 13 


=সৃতরাং চয্পদ বাংলা ভাষার আঁদ-সাহত্যের পরিচয়ই শুধু নয়, বাংলা কাব্য- 
-রণীতরও পরিচয় । কামালপাদের একটি গানে আছে_ 


সোনে ভরিতী করুণা নাবী । 
রুপা থোই নাহকে ঠাবী ॥ (৮ নং চর্যা ) 


'করুণারূপ নৌকা সোনায় ভাত রূপা রাখার স্থান নাই শুন্যতা-জ্ঞানে (সোনা ) 
করুণা নৌকা পণ হীন্দ্রয় জগতের মিথ্যা জ্ঞান (রূপা) রাখার জায়গা 
-নাই সেখানে । একথা হয়ত নিবণিতত্তৰ সম্পকে সত্য ; কিন্তু চর্ধাগানে আমরা পাই 
-সহজযানের ধর্মদর্শন-সাধনরীতিরূগ সোনার সঙ্গে দশ্যমান' রৃপ-জগতের রূপকায়িত 
-পারচয়ও ।' 


HSA Je 


IE তা 1 ll 


মধ্যযুগ 


প্রথম্ম অন্যাক্র 


তকাীবজয় ও তার ফলগ্রনীত 
ত্রয়োদশ শতকের শুরুতেই মুহম্মদ বখৃতিয়ার খিলজির নদীয়া" জয়ের মাধ্যমে 
খলাদেশে তক শাসন প্রাতিষ্ঠত হল । ইতিপূর্বে আর্ধাবর্তের অন্য অংশে শক 
হুণদল পাঠান মোগলে'র প্রাতিপাত্ত প্রাতাষ্ঠত হলেও বাংলা দেশ ব্যতিক্রম হিসাবেই 
আপন স্বাধীনতা অক্ষ রাখতে সমর্থ হয়োছল । ইসলাম ধমবিলদ্বী জনৈক শেখ 
লক্ষ্মণ সেনের সভাসদ হলেও ইসলাম “ধর্ম বাংলাদেশে প্রচার অথবা প্রসার লাভ 
করোনি । তুুকাঁ বিজয় আধাঁভবনের পরে বাংলা দেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে এক 
[বিরাট রূপান্তরের সৃচনা করল, যা কেবল আয ও ইংরেজ আগমনের প্রভাবের সঙ্গেই 
"তুলনীয় ॥ 


তুকাঁ আক্রমণের সামাগ্রক ফলাফল বিচার করে তুকাঁ আমলকে ‘তামস যুগ’ 
(The Dark Age) নামে অভিহিত করা হয়েছে । বস্তৃত শাসককৃলের অন্তার্নাহত 
প্বন্দৰ, পারস্পরিক হত্যালীলা, নৃশংসতা, ধ্মান্ধতা, পরধর্ম বিদ্বেষ এবং সভ্যতা ও 
সংস্কৃতির চিহগৃলিকে নিশ্চিহ্ন করার উদগ্র প্রবৃত্তি সমাজ, ধর্ম ও সংস্কাঁতর উপর 
যে আঘাত হেনেছিল তাতে বাংলার জীবন-আকাশ পর্ণ“ তমসাবৃতই হয়ে গিয়েছিল । 
ধঁকন্তু কালক্রমে এই 'দুঃস্বখ্নের দিনগীল আতক্কান্ত হয়ে নবযুগের উষাকিরণপাতও 
সম্ভব হয়েছিল । 'রান্রির তপস্যা' ঈসত দিনের শুভ সূচনা না করলেও নবাদবসের 
আরন্ত স:চিত করোছিল ॥ 

যে ঘণ্যে চক্রান্তে রাজপ্রাসাদ কলুষিত ছিল তার বিষবাষ্প অবশ্য প্রাসাদের বাইরে 
সাধারণ জনজীবনে বিশেষ কোনো ছায়াপাত করতে পারেনি । -রাজশন্তির সঙ্গে জন- 
জীবনের বিচ্ছিন্নতার জন্য সমাজ ছিল এই নশংস পাশাবকতার মুক সাক্ষী মাত্র । 
সুতরাৎ সে-ইাতিহাস শুধু রাজার ইতিহাস, বৃহত্তর বাঙালী সমাজের পরিচয় 
তাতে নেই । 


এতকাল বাঙালী ছিল স্বাধীন, কিন্তু আপন সীমায় বন্ধ । তুকাঁ শাসকের 
আঁতীরন্ত ক্ষমতার লোভ ও অর্থলোলুপতা এবং স্বাধীন রাজা হওয়ার বাসনা দিল্লির 
সম্রাটের দৃষ্টি এই প্রান্তীয় রাজ্যাটির উপর নিপাঁতত করল । দিললর সম্রাটের সঙ্গে 
বিবাদে ও যুদ্ধের পরিণামে বাঙাল’ জীবনের ক্ষুদ্র গণ্ডি রাষ্টনৈতিকভাবে ভারতীয় 
জনজীবনের বৃহৎ পাঁরসরের অঙ্গীভূত হয়ে গেল । 


16 বাংলা সাহিত্যের ইীতহাস 


প্রাক্‌-তুকাঁ আক্রমণকালে বাঙালী ধর্মপ্রাণ, কাঁষীনভ'র জাতি হিসাবে নিশ্চিন্ত 
জীবনযাপন করছিল । সে-সমাজে দারিদ্র্য হয়ত ছিল, কিন্তু অভাব-অনটনের তীব্রতা 
ছিল না। বাংলার কৃষিজ সম্পদও শিল্পজাত দ্রব্য বরং বাঙালকে সুখের মৃখই, 
দেখিয়েছিল । তুকাঁ আক্রমণের পরে ভারতীর জনজ'ীবনের সঙ্গে যোগসূত্রে বাংলার 
অর্থনীতিতে নৃতন দিক সাঁচত হল । বাংলার কৃষিজ, শিল্পজাত সম্পদ 
(বিশেষভাবে রেশমা কাপড়, কাগজ ইত্যাদি ) বাংলার বাইরে বিক্লত হয়ে অথগিমের 
নবাঁদগন্ত উন্মোচন করল । কিন্তু এর ফলে বাঙালী শুধু লাভবানই হতে পারোন। 
বাঙালীর অর্থ শাসকগ্রেণীর দ্বারা বাংলার বাইরেও প্রোরত হল । যুদ্ধাবিগ্রহে 
অর্থনাণ ছাড়া দিল্লির সুলতানের বশ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপও-বাথলার অথ দিল্লির 
সংলতানের কোষাগারে জমা পড়ল । ইলতৎমিসের সঙ্গে গয়াসউাদ্দন ইয়াজ খিলজির 
যুদ্ধের পারণামে জরিমানা স্বরুপ আশি লক্ষ টাকা দিল্লির সুলতানকে দিতে হর । 
ফলত অথগিম ও অর্থক্ষতি দুয়েরই কারণ হয়েছিল তুকাঁ আক্রমণ ও শাসন । তথাঁপ 
খলাদেশ সেকালে ছিল যথেষ্ট সমৃদ্ধিশালী । মাকেপোলা (১৩শ শতকে বাংলায় 
আসেন) এবং ইবনে বতৃতার (১৪শ শতকে আসেন) বিবরণ থেকে তার পাঁরচয় 
পাওয়া বায়। বতুতার তথ্য কজ্পিত নয়। [তান জানিয়েছেন তৎকালে সাত টাকায় 
২৮ মণ ধান বা প্রায় ৯ মণ চাল, সাড়ে তিন টাকায় ১৪ সের ঘি, অথবা ১৪ সের চিনি 
পাওয়া যেত। এই তথ্য বাঙালীর সচ্ছলতারই নিদশ‘ন। 


তুকাঁ আক্রমণের ফলে গ্রাম-নিভ'র বাঙাল সমাজে নগরের সূত্রপাত ঘটল ৷ 
রাজ্যশাসনকে বেন্দ্র করে, ব্যবসার কেন্দ্ররুপে বাধ গ্রাম গৌঁড়, লক্ষনরণাবত৭, তাণ্ডা, 
দেবকোট, পাণ্ডয়া ইত্যাদি নগরে পরিণত হল । 


তুকাঁ আরুমণের ফলে বাঙাল সমাজ নবভাবে গঠিত হল। তুকাঁ শাসকের 
আমন্ত্রণে পার, ফকির, আউলিয়া, মুরশিদ ইত্যাদি ধর্মগুরুরা বাংলা দেশে এলেন । 
প্রলোভন ও উৎপাঁড়ন দুই পদ্ধাততেই তাঁরা {হন্দদের মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত করতে 
লাগলেন | হিন্দু সমাজের অনুদার নীতিও এব্যাপারে তাঁদের কম সহযোগিতা 
করোনি । অজ্তযজ শ্রেণীভুন্ত করে বাঙালীর এক বৃহ গোচ্ঠীর জন্য ইীতিপৃবেহই 
মন্দিরদ্বার রুদ্ধ করা হয়োছিল। তাছাড়া বৌদ্ধরাও ব্রাহ্মণদের হাতে কম উৎপণীড়িত 
হননি। ফলত এই দুটি বাঙালগগোষ্ঠ দলে দলে ইসলাম ধৰ্মে দীক্ষিত হয়ে 
হয়ে সামাজিক বিনযাসের নূতন দিক স[চিত করল। ইসলাম ধমে'র প্রসারে হিন্দ ও 
মংসলমান এই দুই ধর্মমত বাংলাদেশের প্রধান দুই ধর্মমতে পাঁরণত হল। শাসক- 
কলের দ্বারা আমন্ত্রিত পার, ফকির, দরবেশ সম্প্রদায় এবং ধ্মান্তারত হিন্দ: অর্থাৎ 
নব ম:পলমানরা মিশে বাংলাদেশে সৎখ্যাগতভাবে উল্লেখযোগ্য একটি মুসলমান 
সম্প্রদায় সৃষ্টি করল। 


তুকাঁ আগমনের প্রথম পায়ে হিন্দু নিধন ও নিতিনই ছিল শাসকদের লক্ষ্য। 


মধ্যযুগ 17 


সৃতরাৎ উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার ভেদরেখা গড়ে উঠোঁছল। কিন্তু 
পরবর্তীকালে সম্প্রদায় নির্বিশেষে যোগ্য ব্যান্তিফে রাজকার্ষে নিযুন্ত করায় সামাজিক 
এই বিভেদের রেখা অনেকটা দূরীভূত হয়। 

তৃকণ আক্রমণের ফলে প্রধানত তনাঁট কারণে ?হন্দু ও মুসলমান ধর্ম পরস্পরের 
কাছাকাছি আসতে পেরৌছল । তুকাঁ আক্রমণকে বাঙালী তার পাপের ফল হিসাবেই 
গ্রহণ করোছল.। হিন্দুর কর্মদোষে যবনরূপী কল্কিসবতার তাকে শাস্তি দিতে 
আবির্ভত হয়েছেন, এই ছিল তার ধারণা । সুতরাং ‘ধর্ম হইল যবনরুপী' অথবা 
“ব্ৰহ্মা হৈলা মহম্মদ, বিষ্ণু হৈল পেগণ্বর' চিন্তা করতে সে এতটুকু কণ্ঠত হয় ি। 
এই মানাঁসক প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তার এঁত্হ্যনিণ্ঠা ও সৎস্কারপ্রবণতা ৷ 
যে দেবমান্দর মসজিদে রূপান্তরত করা হয়েছে হন্দ'রা পূর্বতন সংস্কারবশে 
সেখানেই শিরনি দিত। এতে যেমন মুসলমান ধর্মের প্রত তারা আকড্ট হত, 
তেমাঁন সেই মসাঁজদের পাশে বসা ফাঁকরদের নানা তুকতাক, তাবিজ, ঝাড়ফ*ক 
ইত্যাদি তাদের ইসলাম ধর্মের প্রাত আকর্ষণ বাড়াত। তাছাড়া ফাঁকররা হিন্দু 
ও বৌদ্ধধর্মের নানা গল্প কাহনীকে মুসলমান রুপ দিয়ে হিন্দঘদের ম.সলমান 
ধর্মের প্রাত অনুরন্ত করে তুলত ফলে পরবতাঁকালে সত্যপীরের সত্যনারায়ণ হয়ে 
ওঠার পথে সকল বাধা আস্তে আস্তে, দুর হয়ে গেল । 

তক আক্রমণের কালে বাঙালী ছিল অলস, শাতিপ্রিয়, ধর্মপ্রাণ একটি 
জাতি । 

গ্‌প্ত রাজাদের আমল থেকে শাদ্রাবাধ বাংলা দেশেও প্রভাব বিস্তার করোঁছল। 
তার আগেও এদেশে ব্রাহ্মণ ছিল, কিন্তু বৈদিক ধমচিরণ প্রচালত ছিল না। নবাগত 
বেদজ্ঞ ৰাহ্মণেরা শাসকশ্রেণর আনুকুল্যে বাংলাদেশে সমাজপাঁতর আসন গ্রহণ - 
করোছল, আর পুরনো ব্রাহ্মণেরা বর্ণন্রা্গণে অথবা ব্রাহ্মণ্তের জ জাঁতর অন্তভধ্ত 
হয়োছল। লোকায়ত ধম€ ছিল আচার-অনষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ সামাজিক ব্যাপার 
এবং প্রধানত নিম্নবর্ণের বাঙাল'র ধর্ম চচার উৎস । ফলে তুকাঁ আক্রমণের কালে 

খলাদেণে প্রধানত চারাট ধর্মমত প্রচলত ছিল £ প্রাচীন এঁতিহ্য অনুসারী ধর্ম 

প্রোক-আর্যযৃগ থেকে নব-গ্‌হণঁত নানা দেবদেবী এই ধর্মের অস্তর্ভ'ন্ত ), বৌদ্ধ-মহাবান 
ধর্মের রূগান্তর সহাঁডয়া ধর্মমত, নাথধর্ম ও পৌরাঁণক ব্রাহ্মণ্যধর্ম (বিষ, শিব, 
চণ্ডী এই ধর্মমতের প্রধান দেব-দেবী )। তুকর্ণ আক্রমণের দুঁতন শতকের মধোই 
চারটি ধারা পৌরাণিক ও অপোৌরাণিক (অর্থাৎ লোকায়ত ) এই দুটি ধারায় পরিণত 
হল । মধ্যযুগের বাংলা সাহত্যে আবার এই উভয়াথধ ধারার দেবদেবী স্বাতন্ত্য 
সন্তেবও আভন্ন বলে পাঁরগাঁণত হলেন । চণ্ডী ও দুগি ভাঙড় ভোলানাথ ও 
মহাদেবের মিলন ঘটল এভাবে । 

‘যুত মত তত পথের" প্রবন্তা রামকূষ্, জন্মেছিলেন উনিশ শতকে, কিন্তু প্রাক্‌- 
দ্বাদশ বাঙালী সমাজে এই নীতরই অভ্যাস লক্ষ্য করা যায়। যাঁদও বৌদক 


18 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


ব্রাহ্মণেরা অবৈদিক ধমচিরণে ব্যাপতত ছিলেন না. কিন্তু সমাজের বৃহত্তর অংশে বৌ, 
জৈন বা নাথধর্ম গ্রহণের কোনো বাধানিষেধ ছিল না। একই পাঁরবারে একাধিক 
ধর্মপালন দুষণীয় ছিল না, স্বামী-দ্রীর পৃথক ধমবিলম্বী হওয়াতেও বাধা ছিল না। 
এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটল তুকাঁ আক্রমণের পরে। বোধ ও লোকায়ত দেবদেবী 
হিন্দ দেবদেবীর সঙ্গেই সমণকৃত হয়ে গ্রামের দেবদেবীরৃপে সর্বসাধারণের দ্বারা 
পুৰিত হলেন। বাভিন্ন দেবদেবীর মিশ্রণ তুকর্ আক্রমণের একটি উল্লেখযোগ্য 
ফলশ্রৃতি। মনসা, শতলা ধর্ম ঠাকুরের আবিভরবি এভাবেই সম্ভব হল ৷ 


মন্দির যখন মসাজিদে পারণত, হিন্দু বিস্মৃত হতে পারেনি তার পুরাতন এঁতিহায 
ও সংস্কারকে । নবাক্‌ৃত মসজিদেই সে দিয়েছে শিরাঁন, যেখানে আল্লার নাম স্মরণ 
করেছেন মুসলমান ভন্ত । ফলে উচ্চ শ্রেণীর ধর্মীববাদ উপেক্ষিত হয়ে হিন্দু-মুসলমান 
ধর্ম পরস্পরের কাছাকাছি আসার সৃধোগ পেয়েছে বৃহত্তর জনমানসে ৷. পরবর্তীকালে 
হিন্দুর দ্বারা পীরপয়গম্বরের আরাধনার শুভ সুচনা এভাবেই সম্ভব হয়েছিল । 
মন্দির লুণ্ঠন করে মসাঁজদ বানানো, হিন্দঃধমপ্রন্থ, নষ্ট করা ছিল তুকর্ণ আক্রমণের 
প্রাথমিক পাঁরণাম। তারপর মুসলমান শাসক অনুভব করেছে ধর্মান্ধতা নয়, ধর্মের 
প্রাত উদারতাই রাজার ধর্ম এবং নিরাপদ রাজ্যসুখের উপায়। অনেকে আবার 
পুরাণের এশ্বর্যময় কাহিনীতে আক্‌ণ্ট হয়েছে ॥ ফলে মুসলমান রাজন্যবর্গের 
আনুক.ল্যে অনুদিত হল হিন্দুর ধর্মগ্রন্থ ও পুরাণকথা। সামস্দপ্দন, জালালুদ্দিন 
ও রুকনহদ্দিন বারবক শাহের নাম সংস্কৃতির পচ্টেপোযকতার জন্যই স্মরণীয় হয়ে 
আছে। শেষোত্তজনের আনুকূল্য গুণরাজ ‘খান মালাধর বসু “শ্রীক্‌ফাবজয়’ কাব্য 
রচনা করেল। 'পরাগলী মহাভারত’ পরাগল খাঁর উদারতা ও সাহত্যস্পহারই 
নিদর্শন বহন করে। ছ:টি খাঁর উৎসাহেই শ্রাঁকরনন্দী অশ্বমেধ পর্ব অনুবাদ করেন । 
_ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য মুসলমান শাসক দ্বারা নানাভাবে উপকৃত হয়েছে। 
ত্বকাঁ আগমন ও শাসনের ফলে বাংলা ভাষায় আরবা ফারসাঁ শব্দের অনুপ্রবেশ 
ঘটল । তক রাজন্যবগেন্র ভাষা ছিল ফারসী । রাজভাষা হিসাবে ফারসী ভাষা 
ংলা ভাষার উপর প্রভাব বিস্তার করল। বস্তুত ইংরেজ শাসনের সূত্রে ইংরেজি 
ভাষার প্রভাব যদি বাংলা ভাষায় দেখা না দিত তবে হয়ত সাত শতকের বাখলা- 
ফারসার সানিধ্যের ফলে ‘বাংলা ভাষাকে উরদহ ভাষার ভগন'রূপেই'’ পাওয়া যেত। 
অবশ্য, বাঙালী মন তুকাঁ অপশাসন ও ধমান্ধতাকে সহজ মনে মেনে নিতে 
পারোনি। যে বিরূপতা ক্ষমতার অভাবে জাবনে বা বাস্তবে দেখা দেয়নি, তারই 
প্রতিফলন ঘটেছে সাহিত্যে । মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে ত.কর্ণ শাসকের অত্যাচারকে 
কটাক্ষ করা হয়েছে। মুসলমান শাসকের ধর্মের ব্যাভিচার বাঙালী অন্তঃকরণের 
গভাঁরে যে বেদনার ছায়াপাত ঘটিয়েছিল তারও প্রমাণ মধ্যযুগীয়, বাংলা সাহিত্য ॥ 


S.CE.R.T., West Benga) 
/~ i ই J 


RE এ 
85০. Ho. ACB. ০০০ 
দ্বিতীস্ব অপ্যাস্ম 
বড়; চণ্ডাঁদাস ও শ্রীক্‌ফ্ককীতন 


শ্রক্ণকীর্তন কাব্যের রচাঁয়তা বড়? চণ্ডাঁদাস। বাংলাভাষায় ক্চকথা নিয়ে রচিত 
প্রথম কাব্য 'শ্রকফ্চকীর্তন" 

ধ্রীকৃফবপর্তনের মূল পুথি পাওয়া যায়ান, অনবীলখিত যে একটিমাত্র পাঁথ আজ 
পর্যন্ত আব্কৃত হয়েছে তা-ও খা্ডত-__আদি এবং অন্ত ও মধ্যের কয়েকটি পাতা, 
নাই। তেরাঁট খণ্ডে বিভন্ত এই কাব্যের খণ্ডিত সহ মোট চারশ আঠারাটি পদ বা 
গান পাওয়া গেছে। প্রাতাট পদের উপরে রাগের উল্লেখ আছে। মুখ্য চারত্র 
তিনটি-_কঞ্চ, রাধা ও বড়াই । গৌণ চারনও 1তনাঁট__যশোদা, আয়ান ঘোষ ও তার 
মা। কাহিনীর বিস্তার কৃষ-রাধার জন্ম থেকে কৃষ্ণের দ্বারকায় গমনহেত, রাধাবিরহ 
পর্যন্ত শবস্তৃত। মুখ্য তন চরিত্রের গীঁতবদ্ধ কথোপকথনের মাধ্যমে কাহনী বর্ণিত 
হয়েছে। সেজন্যে কাব্যটিকে অনেকে নাট্যগীতর মৰ্যাদা দান করেন। । 


বড়; চণ্ডীদাস ছিলেন সংস্কৃতজ্ঞ। তান কাঁহনীসত্রের সন্ধান করেছেন 
ভাগবত, হাঁরবংশ ইত্যাদি পুরাণ ও জয়দেব রাঁচত 'গতগোবিন্দে'র মধ্যে । কিন্তু 
শুধু সেগুলির উপর নির্ভর না করে তান প্রচালত লোককথা, লোকগাথাকেও 
কাঁহনীতে গ্রহণ করেছেন; বরং একটু অধিক পাঁরমাণে। ফলত বড় চণ্ডীদাসের 


কু ইন্দিয়পরবশ গোঁয়ার রাখাল_নিজ উদ্দেশ্যাসাদ্ধর জন্য কোনো পন্থাকেই সে. 


অনুচিত মনে করে না। তার আকর্ষণ রাধার প্রীত, এগার বছর বয়সেই যে 
ব্যন্তিত্ব-সম্পন্না এবং সামাজিক গুঁচত্য সম্পকে“ সচেতন । সে যখন কের বাঁদ্ধর কাছে 
পরাজতা, প্রেমের রহস্যে কফপ্রেমে ব্যাকৃলা-_ সমাজ-সংসার তুচ্ছ করে যোগিনী 
বেশেও কফসান্নিধ্যে অন:রাগিণী। বস্তুত, এ কাব্যে কাঁব প্রেমের সমস্ত দিকই 
উপস্থিত করেছেন এবং রাধাকফে৷ প্রেমের আধ্যাতিকতার পাঁরবর্তে স্থান দিয়েছেন 
প্রেমের বাস্তবতাকে । ফলে মনে হতে পারে কাব্যাট অশ্লীল ; কিন্তু যুগের কথা 
চিন্তা করলে, বিশেষ, রাধাপ্রেমের ব্যাকুলতা চিন্রণে কাঁবর আশ্চর্য দক্ষতার কথা মনে 
রাখলে কাব্যাটর সাহিত্যিক মূল্য অস্বীকার করার উপায় নাই । চৈতন্যের আবভাঁবের 
পূর্বেই ক্ষপ্রেম বিভোরতাকে তিনি কাব্যে স্থান দিয়েছেন; এ কৃতিত্বও কম নয়। 
সেজন্য চৈতন্য নিজেও ছিলেন এ-কাব্যের বিশেষ অন:রন্ত ৷ 


এ শ্রীকফবঈর্তনের পুরথ্থাটি আঁবৎকার করেন বসন্তর্জন রায় ১৯০৯ খটস্টাব্দে 
বাঁকুড়ার কাঁকিল্যা গ্রাম থেকে । ভনিতা থেকে কাঁবর নাম জানা গেলেও আদ্যন্ত না 


20 8 হলা সাহিত্যের ইতিহাস 


থাকায় পুথির নাম বা রচনাকাল জানা যায় না। ইতিপূর্বে চৈতন্যজীবনচারত 
কাব্য থেকে জানা গিয়েছিল চৈতন্য শ্রীকৃষ্চকীর্তন নামক কাব্যের অংশবিশেষ পছন্দ 
করতেন সেই সুত্র ধরে বসস্তরঞ্জন এই কাব্যটিকেই উল্লিখিত কাবা ধরে নিয়ে 
সম্পাদন ও প্রকাশের সময় (১৯১৬) নামাদিলেন “্রীকৃষ্কণর্তন । কাবাটির ভাষা ওশব্দ 
এবং পাথাটর লিপি ও কাগজ বিচার করে পাণ্ডতেরা সিদ্ধান্তে এসেছেন যে কাব্যটি 

. রচিত হয় পণ্চদশ শতকের প্রথমার্ধে এবং পুথিটির অনলিখনের কাল যোড়শ 
শতক । 


শ্রীকঝেকীতনের প্রাপ্ত পৃথিটিতে কাব্যটির কোনো নামোল্লেখ নাই । তবে 
পর্থাটর মধ্যে প্রাপ্ত একটি চিরকৃটে (যেখানে পাথাঁটর করেকাঁট পাতা ধার নেওয়া 
ও ফেরত দেওয়ার তথ্য লিপিবদ্ধ) শীক্‌ফসন্দর্ব (অর্থাৎ প্রীক্ষসন্দর্ত) নামা 
উল্লিখত। সুতরাং কাব্যটির প্রকৃত নাম '্রীকৃষঃসন্দভ হওয়াও অগন্তব 
নয়। ক 

প্রেম-আখ্যানের ফাঁকে ফাঁকে কাব্যটিতে সমসামারক জীবনচিত্র ধরা পড়েছে। 
সামাজিক নণীতবোধ, সংস্কার ও আচার, পালনীয় রীতিনীতি, ঘাটিয়ালের দৌরাত্মা, 
গোয়ালা-জীবন, আত্মীয়তাবন্ধনের রাত, বেশ-অলৎকার-রদ্ধনপ্রাক্য়া, লোকাবিদ্বাস 
ইত্যাদি জীবনের খুপটনাটি ইতস্তত প্রকাশ পেয়েছে কাহনীর মধ্যে। তার দ্বারা 
টে উঠে না, কিন্তু পাওয়া যায় তার 


- শ্রীকৃষণকীর্তন আদি মধ্যযুগের বাংলাভাষার একট প্রামাণিক দলিল । চযপিদের 

২ পর (দ্বাদশ, শতক) ভ্রিককীর্তন বাংলা ভাষার পরিবর্তনের ধারাটি সম্পর্কে 

আমাদের অবহিত করে চর্যার ভাষা যে বাংলা সে কেবল পণ্ডিত ও গবেষকেরই 

বোধগম্য । বাংলা ভাষার প্রকৃতি তার প্রব্াদপ্রবচন সমেত পার্ফুট হল 
শ্রীকুষ্চকীতনে । 


চধরি ভাষায় ছিল অপদ্রংশের প্রভাব। শ্রকষেকীরতনে তৎসম শব্দের ব্যবহার 


লক্ষ্য করা গেল। অনেক ক্ষেত্রে সে-ভাষা যোড়খ শতকের সংস্কৃত সাহিত্যে 
সুপণ্ডিত বৈষ্ণব কবিদের রচনার মতোই দ্‌টপিনিদ্ধ £ 


তানভুবনজন মোহিনী 
কিন্তু শ্রীকূফকীতনের প্রকৃত গৌরব রাধাচরিরের বিকাশে, তার মনোভাঁ্গর 


ক্রমাখবর্ত'নের প্রকাশে । কাব্যটির আরন্তে রাধা ছিল কের প্রতি বিত্ষফ৷ ৷ তার 
বিভ্ষগা ক্রমে রংপাস্তরিত হয়ে অনুরাগে পরিণত হল। কৃষের ক্ষণাবিচ্ছেদেও তখন 


মধ্যযুগ 21 


"তার অন্তরে দেখা দেয় বিরহের হাহাকার । কবি তার দুঙ্খাতিকে অপরূপভাবে 
প্রকাশ করেছেনঃ 


কে না বাঁশী বাএ বড়ায় কাঁলনী নই কূলে । 
কে না বাঁশী বাএ বড়ার এ গোঠ গোকুলে ॥ 
কে না বাঁশ বাএ বড়ায় সে না কোন জনা ৷ 
দাসী হআঁ তার পাও নাশবোঁ আপনা ॥ 


কষে বাঁশর শব্দে রাধার রান্না নঘ্ট হয়েছে, আকুল হয়েছে তার প্রাণ । যে-ভাষায় 
কবি তার মনের ভাব ব্যন্ত করেছেন তা যে কোন্‌ সাহিতোর পক্ষেই গৌরব । 


পদাবলা 
পদ অর্থে গান। পদ শব্দের ব্যবহার আছে কালিদাসের মেঘদুতে । জয়দেব 
রচিত গীতগোবিন্দে গানকে বলা হয়েছে 'পদমত। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে যে- 
সব গান রচিত হয় তার সাধারণ নাম পদ এবং পদের সমণ্টি পদাবলী-__যেমন বৈষ্ণব 
পদাবলী, শান্তপদাবলণ । এইসব পদ প্রধানত গান হলেও কাব্য ও পল্পরপীতর উৎকর্ষে 
সাঁহত্য পদবাচ্য-ও। তাই বাংলা সাহিত্যের আলোচনায় পেগুলির স্থান অপারহার্য। 


বিদ্যাপতি ৪ 

বিদ্যাপাত ছিলেন মিথিলার অধিবাসী, তিনি তাঁর মাতৃভাবা মোৌথলীতে 
রাধাক্‌ফ। [ববয়ক পদরচনা 'করেন। মিথিলা তখন ন্যায়গাস্ত চচরি একাটি প্রধান 
কেন্দ ছিল। যে-সব বাঙাল? ন্যারে পাঁণ্ডত্য অর্জনে মাঁথলায় ঘেত তাদের দ্বারাই 
ব্দ্যাপাঁতির পদ বাংলাদেশে সপারিচিত হয়। কিন্তু লীখত রুপে না এসে এগ্লি 
এসোঁছল কণ্ঠস্থ হয়ে । ফলে কালক্রমে পদগাীলতে বাংলা ভাষা মিশ্রিত হয়ে যায়। 
এই মৈথিলী বাংলা মিশ্ৰিত ভাষার লাম ব্রজকুলি। বাংলায়. প্রচানত বিদ্যাপাতর 
পদের মধ্যে এই মাশ্রিত ভাষার লক্ষণ দেখা যায়। 

বিদ্যাপাতির জন্ম বিহারের মধুবন মহকুমার অন্তর্গত িসফাী নামক গ্রামে। 
তানি এক প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণ বংশের সন্তান ছিলেন৷ তাঁর পিতার নাম গণপতি ঠাকুর । 
তাঁর পুব্পুরুষেরা মিথিলা রাজবংশের সঙ্গে কর্মসূত্রে জড়িত ছিলেন, কেউ ছিলেন 
-সভাগাণ্ডত, কেউ সেনাপতি ॥ বিদ্যাপাঁতর জন্মকাল সাঠকভাবে জানা যায়ান। 
তবে অন্য সূত্র থেকে জানা যায়, চতুদর্শ শতকের শেবার্ধ থেকে পণ্চদশ শতকের 
দ্বতীয়ার্ধ পর্যন্ত ছিল তাঁর জীবনকাল । সম্ভবত ১৪৬০ খীপ্টাব্দের অল্প কিছু 
পরে তাঁর তিরোধান -ঘটে। বিদ্যাপাত সংস্কৃত কাবা, অলংকার ও নানা শাচ্দে 
সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি মিথিলার একাধিক রাজার সভাকাবর পদও অলংকৃত 


চে 
22 ংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


করেন। কৃলধমে" কবি ছিলেন শৈব ; কিন্তু শৈব, শান্ত, বৈষ্ণব, সৌর, গাণপত্য সব. 
ধর্মের প্রতিই ছিল তাঁর সমদার্শতা। সংস্কৃত, অবহট্ট, মৈথিলী ভাষায় তিনি 
অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করেন। বাংলা দেশে রাধাক্‌ষ্ণ লীলা বিষয়ক পদরচীয়তা 
হিসাবেই তান সমাদৃত, কিন্তু মাথলায় তাঁর খ্যাত ন্যায়স্মৃতি ইত্যাদিতে সুপাণ্ডত 
এবং স্মৃতিসধাহতার রচাঁয়তা হিসাবেও ৷ 
বিদ্যাপাতির মাত্‌ভাষা মৈথিলী, সংস্কৃত ও অবহট্‌টে সাহিত্য রচনা করেন । 
খলাভাষায় তাঁর কোনো পদ না থাকা সত্ত্বেও বাংলা দেশেই কবি হিসাবে তাঁর 
খ্যাতি সবাধিক । তার কারণ, মৌথলা ভাষায় রচিত তাঁর সুলালিত রাধা বিষয়ক 
পদ । ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়নে 'মাঁথলায় গিয়ে বাঙাল! ছাত্র অধ্যয়নসমাপনে দেশে ফরত 
ন্যায়াবদ্যার সঙ্গে কণ্ঠে নিয়ে বিদ্যাপাতির পদ। এভাবে বাঙাল পাঁরচিত হল 
তাঁর অপূর্ব কীবপ্রাতভার সঙ্গে । ভ্রীচৈতন্যও আনন্দস্নাত হতেন তাঁর সৃমধূর 
পদমাধুর্যে* । এর ফলে বৈষ্ণব পাঁরমণ্ডলে তাঁর পদ আরও পাঁরাঁচত ও সমাদৃত হল । 
1তাঁনও পাঁরচিত হলেন বৈষ্ণব পদকতাঁ হিসাবে । বাঙালীর কণ্ঠবাঁহত হয়ে তাঁর 
মৌথলী পদগহাীল িশযদ্ধতা রক্ষা করতে পারল না। স্থানীয় ভাষা ও শব্দ মিশ্রিত 
হয়ে তা এক নবীন রুপ পেল--যে মিশ্রভাষার নাম ব্জবুলি। ফলত বিদ্যাপাঁত হয়ে 
গেলেন ব্রজবাাল ভাষার বাঙালী কাঁব। চণ্ডীদাসের পদ যাঁদ হয় বৈষ্ণবপদগঙ্গার 
অলকানন্দা, তবে বিদ্যাপাতির পদ মন্দাকনী। উভয়ের মিলিত কাব্যধারায় বৈষাবের 
শ্রেষ্ঠ অবগাহন ৷ কাঁবখ্যাঁততে অক্ষম কাঁবরাও অন:প্রাণিত হয়েছেন নিজেদের পদ 
তাঁদের ভণিতায় প্রকাশে । এমনকি, অনেক 'বিশিণ্ট বৈষ্ণব পদকর্তা (বিশেষ 
গোবিন্দ দাস) ব্জবুলির ছন্দ ও সুরত্রঙ্গে প্রাণত হয়ে তাতেই পদরচনায় অভ্যস্ত 
-- হয়েছিলেন । ফলত মিথিলার কবি হয়েও বিদ্যাপাঁত বাংলা সাহিত্যকে প্রভাবিত 
করেছেন নানা ভাবে । বাংলা সাহিত্যে তাঁর প্রভাব এবং বাঙালী কতক তাঁর 
পদগুলিকে বাঙালীর সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করায় বাংলা সাহিত্যের আলোচনায় 
বিদ্যাপতি হলেন অপরিহার্য । 
বিদ্যাপতি সংদ্কৃত কাব্য ও অলংকারশাদ্তে সুপশ্ডিত ছিলেন। গণতগোবিন্দের 
ললিতকলামাধুরীর তিনি অন:রন্ত ছিলেন। তাঁর পদাবলশতে এই দই প্রভাব 
স্বতোৎসারিত। কার শাম্ত্ানসারে তিনি রাধাকষের পূব্রাগ, প্রথম মিলন, 
বাসকসঙ্জা, অভিসার, বিপ্রলন্ধা, খণ্ডিতা, কলহান্তারতা, মান, বিরহ, মিলন প্রভৃতি 
লীলা পায়ে তাঁর পদগুলিকে সচ্জিত করেছেন। ফলে তাতে আছে ঘটনার একটি 
ধারাবাহিকতা । অন্যপক্ষে ভাষা, পদবন্ধ ও চিন্রুকল্গ বয়নে তান ছিলেন অপরূপ 
রুগকার। মণ্ডনকলায় জয়দেবের সঙ্গেই তিনি তূলনীয়। এই “কবি সার্বভৌমে'র 
কাব্যকূতির দুটি স্তর লক্ষ্য করেছেন সমালোচক। একটিতে মনোভাঈর প্রাধান্য, 
অন্যটিতে প্রাণভাঙ্গির । ছন্দ ব্যবহারে তানি ছিলেন নিপুণ শিল্প, অলংকার রচনায় 
দক্ষ কাঁরগর । সব মিলিয়ে বদ্যাপাঁতির পদ সাহত্যের অনন্য সম্পদ ॥ 


মধ্যযৃগ 23 


তবু বিদ্যাপাঁত পদ নিখুত নয় । তাঁর রচনায় বিলাসের বীণা যত বেজেছে, ছন্দের 
নিরূণ যত ধ্বানত, বেদনার বাঁশি তত বাজোন । তাতে যত আছে এশ্বর্য, তত নাই 
গভীরতা । বাস্তবতা ও রমণীয়তার প্রাত .অ্তারন্ত অনুরাগে উপোক্ষত হয়েছে 
আধ্যাত্মিকতা ৷ দেহাতীত নয়, রুপজ প্রেমেই তাঁর দৃঘ্টি আবদ্ধ ৷ 

অভিসার, রহ ভাবসম্মিলন ও প্রার্থনার পদরচনায় বিদ্যাপতি অনন্য 
{বরহাতুরা রাধা যখন বলেন ঃ 


শুন ভেল মন্দির শুন ভেল নগরী । 
শন ভেল দশ দশ শুন ভেল সগরাী ॥ 
অথবা কব যখন প্রার্থনা করেন 


মাধব, বহুত মিনতি করি তোয়। 
দেই তুলসী তিল এ দেহ সমা্পলঃ 
দয়া জন্‌ ছোড়াব মোয় ৷ 


*. হয়ত খং'জে পাওয়া যায় না কোনো সাধক বৈষ্ণব কাবিকে, কিন্তু পেতে অস্াবধা হয় 


না অনুভব-গাঢ় একটি শ্রেষ্ঠ কাব-আত্মাকে। প্রেমের রহস্য, প্রোমকার মনস্তত্তৰ, 
ভাষার দীপ্ত, ছন্দ-অলৎকারের সৌকর্য প্রকাশে বিদ্যাপাত সেষগেও ছিলেন 
অতুলনীয় ৷ 

পরের যুগে যে বাঙাল কাঁবর উপর তাঁর বিশেষ প্রভাব পড়েছিল তাঁর নাম 
গোবিন্দদাস। তিনি ষোড়শ শতকে জন্মগ্রহণ করেন। 


বিদ্যাপাঁত ও চণ্ডীদাস £ ৫ 


বাঁবখ্যাতিতে চণ্ডাদাস বিদ্যাপাঁতর সঙ্গেই তুলনীয়, যাঁদও উভয়ের কাব্যরীতিতে 
কোনো মিল নাই ৷ বিদ্যাপাঁতর কবিতায় নাগাঁরক এশ্বর্য_ছন্দ, অলংকার ভাষা- 
চাতূর্যের সমাবেশ এবং তা সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রের নিয়ম মেনে । চণ্ডীদাসের 
কবিতায় কাব্যকথা নিমাণে কোনো সচেতন প্রয়াস নাই। প্রাচীন কাব্য-রীতির পযয়ি 
পরম্পরাও তাই সেখানে নাই । হৃদয়োৎসারিত মর্মবেদনা সেখানে ভাষা পেয়েছে যেন 
অনায়াস চেষ্টায়, কেবল একান্ত আন্তারকতায়। গভীরতা তার আশ্রয়, ভাষার সহজ 
সরলতাই মার্জত এ*বর্য। বিদ্যাপাঁতর কবিতার মতো পাণ্ডিত্য সেখানে প্রকাশিত 
নয়, ভাব-গভীরতার মধ্যে অদূশ্য । প্রেমে ও মিলনে বিদ্যাপতির.কবিতায় সুখের: 
উল্লাস, চণ্ডীদাসের কাঁবতায় কেবল-ই আর্তি, বিষাদ ও বেদনা । পূর্বরাগ, 
আক্ষেপানুরাগ ও ভাবসম্মিলনের পদে বিদ্যাপাত অনন্য। যাঁদ আলংকারক' 
অনঃশাসন কাব্যবিচারের মাপকাঠি হয় বিদ্যাপাতি আঁদ্ব্তীয় কাঁব। কিন্তু হৃদয়ের 
মাঁস্টক-ব্যঞ্জনার বিচারে চ'ডীদাস দ্বিতীয়-রাহত। তাঁর কাঁবতায় প্রেম হয়েছে সাধনা 


24 বাংলা সাহিত্যের ইীতহাস 


এবং দুঃখ তার অনুধন্গ। 1শব-কাঙ্কিতা উমা অপর্ণর মতোই তাঁর রাধার প্রেম- 
তপস্যা । কবি নিজেই বলেছেন ‘রাধার বিরাত আহারে রাঙা বাস পরে ধেমতি 
'যোগনী পারা ৷’ দ্বিধাহীন আত্মীনবেদনেই চণ্ডাদাসের রাধার তপস্যার পরিসমাপ্তি ৷ 


ভাবাবহবল রাধা কৃষ্ণের মুরলশধ্ান শুনেই পাগাঁলন 
সই, কে বা শুনাইল শ্যাম নাম । 


কানের ভিতর দিয়া মরমে পাশল গো 
আকুল কাঁরল মোর প্রাণ ৷ 
কষের দেহ-বর্ণ স্মরণেও সে উদাসিনী। তার অবস্থা কবর ভাষায় 
বসিয়া বিরলে থাকয়ে একলে 
না শুনে কাহারো কথা ॥ 
সদাই ধেয়ানে চাহে মেঘ পানে 
না চলে নয়ান তারা । 
এই ধ্যানমগ্না যোগিনণ ক্‌ষ্ণ-মিলনে প্রার্থনা করেছে 
জীবনে মরণে জনমে জনমে প্রাণনাথ হৈয়ো তুমি ॥ 
সেটাই চণ্ডীদাসের রাধার পক্ষে স্বাভাবিক । কারণ প্রেম তার কাছে ক একাট 
বাক্যের স্বল্প পারসরেই সে তা ব্যন্ত করেছে বধু সে আমার প্রাণ'। প্রেমের 
অতলান্ত চিন্তায়, পে বুঝেছে ক্প্রেম ব্যাখ্যার অতীত । তাই ঘোষণা করেছে 
রাত কৈন; দিবস দিবস কৈনু বাতি । 
বুঝিতে নারনু বধ তোমার পণরিতি ॥ 
 সদ্ডাঁদাসের রাধা'সরলা গ্রাম্য বালিকা, চণ্ডীদাদের কাব্যেও গ্রাম্য সরলতা । চাঁরত্রের 
পযোগা ভাষা, উভয়ে উভয়ের সহযোগী । এই দ্বতঘিলনই চণ্ডাদাসের কাঁবতার 
শ্রেচ্ত্বের রহস্য । কবিও মানতেন নিখাদ প্রেম উচ্ছ্বাসের বৈরী । তাই লিখেছেন 


“শুন বিনোদিনী পিরীত না কহে কথা’ 
বিদ্যাপাতি ও চণ্ডীদাস উভয়েই চৈতন্যঘূগের পুববতাঁকালের কাঁব। সুতরাহ 


চৈতন্য প্রবর্তিত ধর্গের প্রভাব তাঁদের কবিতায় নাই। তাঁরা ভন্ত নন, কব; সাধক 
বাদি হন, তবে সে কাবাসরস্বতার। রাধাক্‌ফ প্রেম প্রসঙ্গে গৌড়ীয় বৈষ্ণব তত্ত্ব 
প্রাতণ্ঠিত হয়েছে চৈতন্যের আবিভববের পরে। তাঁদের রাধা শুধু প্রেমের বশেই কৃ 
অনুরাগণী। উভয়ের আবিভাবে কালগত সদশতা থাকলেও উভয়ের মনোধর্মে 


ছিল প্রচুর বৈপরাত্য। 
বিদ্যাপতি ছিলেন সংস্কৃত সাতে প্রগাঢ় পণ্ডিত এবং মিথিলার রাজসভাকাব ৷ 


তার চিহ্ন আঁছে তাঁর চিত্রিত রাধাচারত্রে। সংস্কৃত অলৎকারণাস্তে নায়িকার প্রেমের 
সানা গযয়িরম আছে। পর্বেরাগ, অভিমার, মান ইত্যাদি সেই পবয়িগুি যথারীতি 


মধ্যযুগ 25. 


অন:সৃত বিদ্যাপাতর পদে । তাছাড়া, অলংকার ও ছন্দ কৃশলতায়ও তান সংস্কৃত 
সাহিত্য ও শাস্ত্র এবং গীতগোবিন্দের অনুগামী । তাঁর বৈদগ্ধ্যের ছাপ তাঁর চান্রত 
রাধাচরিন্রে। সে রূপসচেতন, এমনকি প্রেমের প্রকৃতি সম্পর্কেও আভজ্ঞ । সখদের 
সে বলেছে 
সাঁখ কি পুছাঁস অনুভব মোয়। 
সোই পীরাভতি অনুরাগ বখানিএ 
তিলে তলে নূতন হোয় ॥ 


অন্যপক্ষে, চণ্ডঈদাসের কবিভায় পাণ্ডিত্যের পায় নাই, তান সংস্কৃত সাহত্যে 
[বিদগ্ধ ছিলেন এমন কোন প্রমাণও নাই। তাঁর কবিতার ভাষায়. আশ্চর্য সরলতা, 
রাধাচাঁরত্রেও সারল্য ৷ সে প্রেম অনুভব করে, কিন্তু তার ব্যাখ্যায় সম্পূর্ণ অপারগ-_ 
‘বসিয়া বিঃলে থাকয়ে একলে না শুনে. কাহারো কথা'__এই ভাঙ্গিতেই তার প্রেমানু- 
ভাতর প্রকাশ । আপন অনুভুতি সম্পর্কে তার বন্তব্য 


বদন থাকতে না পারে বলিতে 
তেই সে অবলা নাম। 


“দেহসোন্দর্যের ললাচাণল্য' প্রকাশে বিদ্যাপাঁতর দ:ঘ্টি দেহেই নিবদ্ধ, চণ্ডীদাসের' 
দৃঘ্টিভঙ্গি কাব্যিক ব্যঞ্জনায় প্রকাশিত £ 


চলে নীল শাড়ী নিঙাড় নিঙাড়ি 
পরাণ সাহত মোর । Hs 


৮ 


কৃষের এ-উন্ডিতে নাই কোন বাস্তব বর্ণনা, এ-ভাষার সক্ষম বাঞ্জনা শুধুই 
অনুভববেদ্য । বিদ্যাপাতিতে আছে দেহের তপসাা, চণ্ডীদাসে বেদনার সাধনা । 
বেদনায় চণ্ডাঁদাস যদি একট, কটাক্ষ মেশান, তবে তা হয় যে কোন শ্রেষ্ঠ কাঁবর পক্ষে 
ঈর্ষণীয় সাহত্য। পুনর্মিলনে রাধার প্রশ্ন 


দঁখনীর দিন দুখেতে গেল । 

মথুরা নগরে ছিলে তো ভাল ॥ এ এ 
আমি এতেক সাহন্‌ অবলা বলে। : ক 
ফাটিয়া যাইত পাষাণ হলে ॥ 


এমান একটি কাব্যক নিদশন। 

প্রার্থনার পদেই 'বদ্যাপাত চণ্ডীদাসের একটু কাছের মানূষ। “তাতল, 
সৈকতে বারি বিন্দুসম সুত-মিত-রমণ সমাজে" বীঁতষ্পৃহ হয়ে যখন তান 'দেহি 
তুলসী তিল’ দেহ-নিবেদন করেছেন ভগবৎ-কৃপার অপেক্ষায়, তখন তিনি পাণ্ডিত্যের 
অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিতে না পারলেও চণ্ডদাসের মতোই ভীন্ত-নিবোঁদত্- 
প্রাণ কাব হয়ে উঠেছেন । 


26 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


রবান্দ্নাথ বলেছেন, চণ্ডীদাস গভীর এবং ব্যাকুল, ববদাপাঁতি নবীন এবং 
মধুর । একের উপকরণ হৃদয়ের প্রগাঢ় উপলব্ধি, অন্যের উপাদান মহৎ সৃষ্টির 
উত্তরাধিকার । এখানেই দুই শ্রেষ্ঠ কবির চেতনা ও প্রকাশ রীতির বিশেষত্ব, এভাবেই 
বর্বান্দ্-উন্তির যথার্থতা অনুধাবন করা যায় । 


'চণ্ডীদাস £ 


পদাবলী রচাঁয়তা চণ্ডাদাস বিদ্যাপাঁতর সমকালগন অথবা সামান্য পরবতাকালের 
কাঁব। চৈতন্য তাঁর গান আস্বাদনে বিহ্বল হয়ে যেতেন, সুতরাৎ তান অন্তত 
ৈতন্যপরবতাঁকালে জন্মাননি । তাঁর কাবখ্যাতিতে মুগ্ধ অনেক কবিই এই ভণিতায় 
পদরচনা করেন। জানার উপায় নাই, আমাদের আলোচ্য চণ্ডীদাসের পদ ঠিক 
কতগবীঁল এবং ঠিক কতজন চণ্ডাঁদাস বাংলার কাৰ্যাকাশ আলোকিত করেছেন । 
তবে দুঃখের পদাবলাকার চণ্ডাদাস তাঁর কাব্যমাধুর্যে শুধু শ্রীতচতন্য বা বৈষ্ণবজন- 
সমাজকেই নয়, আপামর বাঙালীর হৃদয় আলোড়িত করেছেন 'বগত প্রায় পাঁচশ 


বছর ধরে। অন্য কোনো কাব কেবল ভাণতাট€কু ছাড়া আর কোন ব্যাপারেই তাঁর 
সমকক্ষতা অর্জন করতে পারেননি ৷ 


সরলতা ও গভীরতা চণ্ডীদাসের পদাবলসর বৈশিষ্ট্য । সরলতা যেমন কাঁবর 
ভাষায়, তেম্‌নি। তার চিত্রিত রাধা চাঁরতরেও। বলাবহূল্য, চপ্ডশদাসের পদরচনার বিষয় 
প্রেম। রাধা নানক একটি গ্রাম্য বালিকার সরল ও অকপট' অন্তরে কৃষপ্রেমের প্রবাহ 


স কখনো তাকে বিদগ্ধা করে তোলেন নি। তার বৈদধ্য যা কিছু জন্মেছে 


চা ঘটাল, তারই অসাধারণ প্রকাশ তাঁর রচনায়। রাধা চাঁরত্র বর্ণনায় 


- 


চি 


শুধু কফোপ্রেমের অভিজ্ঞতায় ও প্রেমের রহস্য-উপলা্ধতে। বিদ্যাপাতর মতো 
রসশাস্ত্র অনুযায়ী প্রেমিকার প্রেম-উপলব্ধির বিশ্লেষণ চণ্ডীদাস চিত্রিত করেন নি, 
তবু তাঁর রচনায় রাধার প্রেম-আভিজ্ঞতার নানা পরায় ব্যাখ্যাত হয়েছে। 


প্রথম প্রেম-অনুভবে সে সলঙ্জা, যথেণ্ট চণ্চলাও £ 


ঘরের বাহিরে দণ্ডে শতবার 
তিলে তিলে আইসে যায়। 


কূষের অঙ্গ-সাদণ্যে প্রকৃতির মধ্যেও সে খুজে পায় প্রেমের উপাদান ঃ 


সন উচাটন বিশ্বাস সঘন 
কদম্ব-কাননে চায় | 


মধ্যযুগ 27 


-সখাঁদের সঙ্গে যমুনায় জল আনতে গেছে সে। কিন্তু সেখানেও কষ প্রেম পরকূতিত 
-আঁন্বত হয়ে ধরা দেয় তার কাছে 
সখীর সাঁহতে জলেতে যাইতে 
সে কথা কাহবার নয়। 
যমুনার জল করে ঝলমল 
তাহে কি পরাণ রয় ॥ 
এয়নে-দ্বপনে-জাগরণে সর্বত্রই তখন প্রেম তার হৃদয় জখড়ে অবাস্থত। কষ্প্রেম 
ও 'নজের অন্তরকে বিশ্লেষণ করতে না পারলেও আপন উপলান্ধকে সে সরলবিশবাসে 
প্রকাশ করতে পারে 
বধু সে আমার প্রাণ । 
.এই আপাতসাধারণ উক্তির মধ্য দিয়েই তার প্রেমের গভীরতা অনন্যসাধারণ হয়ে 
ফুটে উঠেছে । 
রাধার 'বশ্বস্ত প্রেম প্রাতহত হয়েছে কৃষের প্রদত্ত বিরহদশায় । যাকে সে এত 
‘ভালবাসে তার কাছে প্রেমের যোগা প্রাতদান লাভ সম্ভব হয়ান রাধার পক্ষে । অথচ 
কৃফ-অন:রাগ ভিন্ন অন্য চিন্তাও তো নাই রাধার । ফলে তার অন্তরের জালা প্রোমকের 
মধ্যেও সঞ্চারিত হয়ে তার চৈতন্যোদয় ঘটাক এই কামনায় রাধা উচ্চারণ করেছে 
আমার পরাণ যেমাঁত কারছে ই 
তেমতি হউক সে । 
সম্পূর্ণ নিরাভরণ তার ভাষা । কিন্তু প্রেমিককে সচেতন করে তোলার 
'উপায়ট্‌ক্‌ ব্যঞ্জত হয়েছে এই আপাতিসরল কামনার মধ্যেও ৷ 
অবশেষে কামনায় সিদ্ধি । কের সঙ্গে প.নার্মলন ঘটেছে রাধার । কিন্তু ত’ 
তো 'বরহানলে দগ্ধ-অন্তর রাধা মিলনের মাধূর্ধের সঙ্গে বিরহের ব্যাকৃলতার সঙ্গেও 
পাঁরাঁচিতা। প্রেমোন্েষের প্রথম আঁভজ্ঞতার সরলতার সঙ্গে যত হয়েছে 1 
তিন্ত আভন্ঞতাও। সরলা হলেও রাধা তার সেই আঁভজ্ঞতীকেও তো ভুলতে পারে 
না। সহজ অথচ মম‘স্পশণ ব্যঙ্গের মধ্য দিয়ে সে প্রকাশ করে আপন অনুভব £ 
দুখিনীর দিন দুখেতে গেল। 
মথুরা নগরে ছিলে তো ভাল ॥ 
রাধা জানিয়েছে সে ‘অবলা’ বলেই এত কণ্ট সহ্য করতে পারল, পাষাণ হলে কিন্তু 
এ দুঃথভার সহনীয় ছিল না__ফাটিয়া যাইত পাষাণ হলে’ । 
তবু ক্ণাভন্ন অন্যতর চিন্তা তো রাধার অন্তরে নাই। কষ তাকে যত দুঃখ 
দিক, কফপ্রেমে মগ্ন হয়ে সে যত কণ্ট পাক, তার কষ-অনুরাগ তো কখনো ীনবৃত্ 


28 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


হবারনয়। সুতরাং আত্মনিবেদনের বেলায় সে শুধু এ জন্মেই কৃষককে দয়িতরূপে 
কামনা করেনি, জন্মজন্মান্তরেও তাকে পাওয়ার বাসনা ব্যস্ত করেছে 
বধ কি আর বলিব আমি । 
জনমে জনমে জীবনে মরণে 
প্রাণনাথ হয়ো তুমি ॥ 
এই চিরকালীন সমা্পতচিত্ততাই চণ্ডদাসের রাধা চারত্রের বৌশিঘ্ট্য । চণ্ডীদাসের 
ভাষা কোন সচেতন প্রয়াসের ফল নর, আত্মগত উপলান্ধর বাঙময় রূপ । সে ভাষার 
দক্ষতায় সংস্কৃত সাহিত্যের বিরাট এতিহ্যের, দর্ধাদনের অধ্যয়ন-তগশ্চর্যার প্রয়োজন: 
নাই, অপরিহার্য কেবল অলোকসামান্য হদয়াননভণঁতর । চণ্ডীদাস সেই সম্পদেই 
বলীয়ান। তাই তাঁর রচনা নিসর্গের স্নিগ্ধ সৌন্দযের মতো আমাদের মনকে আবিষ্ট 
করে; জানায় এক কাঁবর কথা হৃদয়ের অনাবিল ভাবপ্রকাশে খান সরল অথচ 
ব্/ঞ্জনাধমঁ ভাষাশ্রয়ী । 
বিদ্যাপতি-চণ্ডীদানের উত্তরাধিকার £ 
বৈষ্ণব পদসাহত্যের দুটি ধারা। একটি বিদ্যাপতি-প্রবর্তত ভাষা-ভাবানুষঙ্গের' 
বণট্যিতায় উচ্ছল ধারা; গোঁবন্দদাসে তার অনংক্রমণ। অন্য ধারা সহজ ভাষার 
ভাবগভীরতার পরিচয় । সে-অব্দান চ"্ডীদাসের, জ্ঞানদাস প্রমুখের পদে তারই 
অননশীলন॥ “সহজ কথা যায় না কহা সহজে', রবীন্দ্রনাথের এ উত্তকে অযথার্থ 
প্রমাণ করোছলেন চণ্ডীদাস, আধ্যাত্মিকতাকেও সহজ ভাষায় [তিনি ব্যন্ত করেছিলেন 
চণ্ডীদাস সাধক, জ্ঞানদাস সচেতন শিল্পী । পদরচনায় তান [বদ্যাপাঁত ও 
চাল উভয়ের পথই অনুসরণ করেছেন । কিন্তু তাঁর মানসিকতার সঙ্গে 
_ চ্ডাঁদাসেরই ছিল আশ্চর্য সংযোগ । তাঁর শ্রেষ্ঠ পদগহীল চণ্ডাঁদাসকেই স্মরণ করায় ৷ 
সারল্য ও আস্তরকতায় যখন তাঁর কাব্যবীণা বাঁধা, তখনই তান অকান্তরিম ও যথার্থ 
শিল্পী । মনোভা্গিতেই এই দুই কাব এক । চণ্ডীদাসের রাধার উীন্তি 'ব'ধ্‌ দে. 
আমার প্রাণ । জ্ঞানদাসের রাধা বলেছে 
তোমায় আমায় একই পরাণ 
ভালে সে জানিয়ে আমি। 
এবং তোমার গরবে গরাবনী হাম 
রূপপী তোমার রূপে । 
ভাবনা ও ভাষায়, কবি-চেতনায় ও প্রকাশে এই একাত্মতার কারণে একই ‘পদে উভয়ের 
ভণিতা দেখা যায়। রসজ্ঞ বৈধবের পক্ষেও সম্ভব হয় না প্রকৃত পদকতার নাম 
নিধারণ করা, যদিও সর্বজনস্বীকৃত মত এই যে চণ্ডীদাস জ্ঞানদাস অপেক্ষা বড় 


কাব ছিলেন। ? 
এই সকল কারণে চণ্ডাঁদাসের উত্তরসূরী অথবা ভাবশিষ্যরূপে জ্ঞানদাসকে গ্রহণ 


করা হয়। 


তৃতীন্্র অন্যাক্র 
কৃত্তিবাস ওবা ও তার রচিত রামায়ণ 


কাঁব পাঁরচয় ৪ 

কাব ক্‌ঁত্তবাস ওঝা ছলেন বাংলা রামায়ণের আদি কবি। তান সমগ্র ভারতীয় 
সাহিত্যের আদ কাব বাল্মীকি রচিত সগ্তকাণ্ডে বিভন্ত ও চাঁব্বশ হাজার শ্লোকে 
গ্রাথত সংস্কৃত রামায়ণের বাংলাভাষায় ভাবানুবাদ করেন। | 

ক্‌ত্তিবাসের কাব্যেই তাঁর একটি ‘আত্ম-পারচয়' আছে । তার সাহায্যে কবির 
ব্যান্তজীবন সম্পর্কে কিছু 'অপরূর্ণ তথ্য জানা যায়। এই ‘আত্মপাঁরচয়’ অনুসারে 
কবর পূর্বপুরুষ নরাঁসংহ ওঝা পৃর্ব“বঙ্গ নিবাসী ছিলেন। সামাজিক বিশঙ্খলার 
কারণে তিনি সে দেশ ত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গাতীরে ফুলিয়া গ্রামে এসে বসবাস 
করেন । কত্তিবাস ছিলেন নরসিহহ ওঝা থেকে পচম পুরুষ । তাঁর পিতার নাম 
বনমালী, মাতার নাম মালিনী । এ'রা ছিলেন মুখোপাধ্যায় উপাধিক । 
কৃত্তিবাসেরা ছ'ভাই এক বোন। জের জন্মকাল সম্পকে কবি বলেছেন 


আ'দত্যবার শ্রীপণমী পুণ্য মাঘ মাস। 
তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কাঁত্তবাস ॥ 


অর্থত মাঘ মাসে শ্লীপণ্তমী তিথিতে রবিবারে তাঁর জন্ম হয়। জ্যোতিষ ও কুলজ" 
.শাস্বান_যায়ী ব্যাখ্যা করে পণ্ডিতেরা এই ইঙ্গিত থেকে শুধু এটুক সিদ্ধান্তে আসতে 
সমর্থ হয়েছেন যে ক্‌ত্তিবাস চতর্ঘদশ শতাব্দীর শেষের দিকে জন্মগ্রহণ করেন । বয়স 
এগার পার হলে কাব বিদ্যার্জনের জন্য পদ্মা পার হয়ে উত্তরে গেলেন এবং গুরুগূহে 
বেশ কিছুদিন থেকে পাণ্ডিত্য অর্জন করে উপস্থিত হলেন গৌড়েশবরের সভায় । 
কাঁব এই সভার খপুিন।ট বর্ণনা দিলেও রাজার নামোল্লেখ করেনান। তা নিয়েও 
পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে । কাঁবর পাশ্ডিত্যে মুগ্ধ রাজা কাঁবকে অর্থ দান 
করতে চাইলে নিলেভি কবি পরিবর্তে চাইলেন কাঁবখ্যাঁত £ 
আর কছ? নাঁঞ চাই করি পরিহার ৷ 
যথা যাই তথায় গৌরব মাত্র সার ॥ 
যশ য়েই তানি ফিরে এলেন নিজগ্রাম ফুলিয়ায় এবং সেখানে বসে রচনা করলেন 
তাঁর অনন্য কাব্য রামায়ণ পাঁচালী । 
কাব্যকথা ৪ 
ক্‌ত্তিবাসের রামায়ণ সাতটি কাণ্ডে বিভন্ত । আদ, অযোধ্যা, আরণ্য, 'কাত্বষ্ক্যা, 


সুন্দরা, লঙকা ও উত্তরা পরপর এই কাণ্ড সাতাঁট সাঁত্জত। এটি বাল্মীকি রামায়ণের 
বাং সা: 407৩) 


30 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


আক্ষরিক অনুবাদ নয়। মুল রামায়ণের বাঁশষ্ঠ-বিশ্বামিত্র বিরোধ, [ব*বামিরের 
কথা ইত্যাদি প্রসঙ্গ তিনি বর্জন করেছেন । আবার দসয রত্বাকরের মহাতাপস বাল্মশীকতে 
রূপান্তর, রাবণহত্যার জন্য রামের অকালে দেবীপ্জা__'অকালবোধন', তরণীসেন 
প্রসঙ্গ, হনুমানের রাবণের মৃত্যুবাণ হরণ ইত্যাদি প্রসঙ্গ সংযোজন করেছেন । আসলে, 
বাল্মীকর রামায়ণের মূল কাঠামেটিকে অক্ষ রেখে 'ঁতান স্বাধীনভাবে একটি 
রামকথা রচনা করেছেন । আবার কৃতিবাসের সৃম্টর যথাযথ রূপও আমাদের হাতে 
আসে নি। নানা কাঁব ও পালাগায়কের নানা মার্জনার চিহ্ন নিয়ে রামায়ণ পাঁচালী 
আমাদের হস্তগত স€তরাৎ জানার উপায় নাই কূত্তিবাসের রচনার আসল রূপ 
ক ছিল। 


ক্যাত্তবাসী রামায়ণ ছিল মধ্যযুগে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে । মধ্যযুগীয় জাতীয় 
সাঁহত্যের সম্মানও কৃত্তিবাসের রামায়ণের প্রাপ্য । কারণ, সমগ্র জাত এ কাবাকে 
. সাদরে গ্রহণ করোঁছল, কৃত্তবাসী রামায়ণের বর্তমান রুপে ব্যান্তাবশেষের হাতের 
ছাপ না থেকে আছে বহংকাঁবর বাণীর ছাপ, কার 'চান্রত চারন্রগ:ীল আঁবকল বাঙাল? 
চাঁরন্র এবং এ কাব্যে আছে বাঙালীর জাতীয় হীতহাসের বিভিন্ন স্তরের স্বাক্ষর | 
কাব্যের বিষয় ও কবির কটঁতত্বে কৃত্তিবাসী রামায়ণ অসামান্য জনাপ্রয়তাও লাভ 
করোছল । 


রামায়ণ কাহিনীতে আছে ধর্মের কথা ও একাঁট সবজনশনতার ভাব । ব্রাহ্মণ্য 
ধর্ম তখন সমাজে সংপ্রাতাম্ঠিত অথচ এই ধর্মের গ্রন্থগীল সংস্কৃতে রচিত। সংস্কৃত 
জ্ঞানহীন আপামর গোঁড়জন ধর্ম সংখা পানে উচ্গ্রণব, কিন্তু তার প্রয়োজনানুরূপ উপায় 
. ছিল না। জনচিন্তের সে আশা পূর্ণ হয়েছিল ক্‌াত্তবাসের ধর্মগ্রন্থ তথা ভাঁন্তগ্রন্থ 
রামায়ণ রচনার । রামায়ণের অসাম্প্রদায়িক আখ্যান মুগ্ধ করেছিল ধর্মপ্রাণ হিন্দ 
প্রজার মতো মুসলমান শাসক গোচ্ঠীকেও। তাঁরা সর্বমানবিক আবেদনের জন্য 
রামায়ণ অনুবাদে উৎসাহও দিতেন। রাজার কাছে যা-ছিল অবসর বিনোদনের উপায়, 
প্রজার কাছে যা ধর্মের অনুশাসন তথা হৃদয়ের বাণী, তার জনাপ্রয়তায় বাধা ছল 
একমাত্র ভাষা_ক্ত্তবাস সে বাধা অপসারণ করোছিলেন। তাঁর কাঁতত্বে জাঁত-ধর্ম 
নার্বশেষে বাঙালীমান্রেই পান করতে পেরেছিল রামায়ণের কাব্যসূধা । 


কাঁ্তবাস বাল্মীকি রামায়ণের আক্ষরিক অন:বাদ করেনান, সে-কাহিনীকে 
অবলম্বন করে এবং অন্যান্য রামায়ণ ও সংস্কৃত কাব্য থেকে কাঁহনণ চয়ন করে, 


এমন কি, প্রচলিত কাহিনীকে স্থান দিয়ে এবং নিজে কাহিনী বানিয়ে তাঁর কাব্যকে 
করেছেন একটি সার্থক বাঙালী রামায়ণ। তাঁর চিত্রিত রাম, সীতা ইত্যাদি চরিত্রে 
নাই মূল রামায়ণের চরিত্রের দড়তা--সেখানে রাম সব পৌরুষদীগ্ত নন, সাঁতা 
নন অন্যায়ের প্রাতবাদে ফণিনী__রোদনপ্রবণ, নিরুপায় রাম এবং পাঁতব্রতা পাতা | 
বাঙালীয়ানারই আদর্ণ রূপায়ণ। ্‌ 
্‌ 


মধ্যযুগ 31 


কৈকেয়ীও নন স্বার্থমগ্না নারী মাত্র তানও বাঙালী মা-রুপেও চিত্রিত ৪ 


যাঁদ রাম মা বলিয়া না ডাকে আমারে ৷ 
ত্যজব এ পাপ প্রাণ বিষ পান করে ॥ 
পরশরথ এখানে দূুর্বলাঁচন্ত বাঙালী বৃদ্ধ । মন-খাবরা ভোজনীপ্রয় বাঙাল? ব্রাহ্মণ ৷ 
অল রামায়ণের ক্ষান্রতৈজ ব্রান্গণ্য বিশিষ্টতা কত্তিবাসের রামায়ণে দুলভ। অলস, 
ভোগপরায়ণ, দোষেগহণে মিশ্রিত বাঙালী চিতই এঁকেছেন কাঁত্তবাস এবং বাঙালী 
ক্বভাবের এমন যথার্থ প্রাতচ্ছাব মধ্যযুগের আর কোন কাব্যে নাই। 
ভন্তিরস ও গাহ“স্থ্য চিত্র কৃত্তিবাসী রামায়ণের মুখ্য দুই সম্পদ । রামনাম 
কাঁত‘নের মাহাত্ম্য সম্পকে“ মহাকাবির উাঁন্ত £ 
রাম নাম লইতে-না কর ভাই হেলা । 
ভবাসিন্ধ; তাঁরবারে রাম নাম ভেলা ॥ 
তরণীী সেন তো আমরণ রামের প্রত ভন্তিগদগদ ; এমনাঁক তার কাটা মুণ্ডও ‘রাম’ 
নাম উচ্চারণ করে। রাবণ পরস্ত্লোলুপ । কিন্তু তার অন্তরেও প্রবাহত রামভন্তি ॥ 
রামের সঙ্গে যুদ্ধকালে সে করে রামের স্ত্ীত। িষপ্ন রামের খেদোক্তি না করে উপায় 
শ্মাকে না “কেমনে এ ভন্তে করিব সংহার ।' 
পিতা ও পাঁতর প্রতি ভক্তি, পত্রবাৎসল্য, ভ্রাতূ্‌ ও পড়ীপ্রেম__বাঙালী জীবনের 
আদর্শগৃলি, কৃত্তিবাসের রামায়ণে নিপৃণভাবে চীন্রত। বাঙালী পাঁরবারের 
জশীবনযান্রাপ্রণালী কৌশল্যামাতার সহনশীলতায়, সীতার পাঁতগতপ্রাণতায়, লক্ষণ ও 
ভরতের ভ্রাতৃপ্রেমে, সুগ্রীবের বন্ধত্বে, হনুমানের দাস্যে, অপুর্ব দক্ষতায় আঙ্কত। 
খাঁষ ভরদ্বাজ বানর বাঁহনীকে যে খাদ্য পরিবেশন করেছেন সেই মিষ্টান্ন ও পিণ্টকাদি 
বাঙালশরই একান্ত 'প্রয় খাদাপামগ্রী। ক্‌ত্তবাসের রামায়ণে বাঙালী পেয়েছে তার 
আরাধ্য আদর্শ চাঁরন্র এবং প্রয়োজনীয় সামাজিক অনুশাসন-সাদরে সে বরণ করেছে 
এ-কাব্যকে । কৃত্তিবাসের অতুলনীয় ভাবসম্পদে, চরিব্রীনমা্ণ-কৃশলতায়, ছন্দ- 
অলংকার প্রয়োগে দক্ষতায় এবং সবেপিরি অসামান্য প্রাতভায় মুগ্ধ বাঙালী ধমচিচয়ি 
ও অবসর বিনোদনে সর্বাধক আকৃষ্ট হয়েছে কত্তিবাসী রামায়ণ দ্বারা । 
কাব্যসৌন্দর্ও ৰুত্তিবাসী রামায়ণের জনপ্রিয়তার একটি মুখ্য কারণ ৷ 


মালাধর বসু ও তার শ্রীরুঞ্চবিজয় 


কাঁবপারচয় ৪ 
সংস্কৃত ভাগবত পুরাণের প্রথম অনুবাদক মালাধর বস: । আধুনিক ভারতীয় 
ভাষায় ভাগবতের প্রথম অনুবাদের কৃতিত্বও তাঁর-ই। অনহবাদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে 


কাব বলেছেন 
ভাগবত কথা যত লোক বুঝাইতে । 
“লৌকিক করিয়া কাহ লৌককের মতে ॥ 


32 খলা সাহিত্যের ইতিহাস, 


মালাধরের শ্রীকণাবজয়.( কোনো কোনো পিতে গোবিন্দবিজয় অথবা গোবিন্দ 
মঙ্গল ) বিখ্যাত গ্রন্থ হলেও বৈষ্ণব সমাজের বাইরে বিশেষ পাঁরচিত ছিল না ॥ 
শ্রীচৈতন্য অবশ্য এ-কাব্যের ভুয়সন প্রশংসা করেছেন 


তাঁথ এক বাক্য আছে অতি প্রেমময় ৷ 
নন্দের নন্দন কৃষ্ণ মোর প্রাণনাথ । 
এই পদ্যে বিকায়িন্‌ তাঁর বংশের হাথ ॥ 


মালাধর বস: ছিলেন বর্ধমান জেলার কুলীন গ্রাম নিবাসী । তাঁর পিতার নাম 
ভগারথ, মাতার নাম ইন্দমতী। আদিশুর কান্যকৃব্জ থেকে যে পাঁচজন সং কায়স্থ 
আনেন মালাধরের পর্ববপুর্ষ দশরথ নাক. ছিলেন তাঁদের অন্যতম । গৌড়ে*বর 
(সম্ভবত রুকনুদ্দীন বরবক শাহ.) ছিলেন তাঁর গণমহগ্ধ এবং তাঁকে ‘গুণরাজ খান” 
উপাধি দান করেন । (“গৌড়েশ্বর দিলা নাম গুণরাজ খান' ) শোনা যায়, রাজান:গ্রহে 
তান উচ্চ রাজকর্মচারীর পদেও বৃত ছিলেন । আপন জন্মকাল' সম্বন্ধে নীরব 
থাকলেও কাব তাঁর কাব্যরচনা কাল সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন ঃ 


তেরশ' পচানব্বই শকে গ্রন্থ আরম্তন। 
চতুৰ্দশ দুই শকে হৈল সমাপন ॥ 


১৩৯৫ থেকে ১৪০২ শক অথত্ ১৪৭৩ থেকে ১৪৮০ খ্রীষ্টাব্দ ছিল কাব্যরচনা- 
কাল । সোজাসুজি এভাবে তারিখের উল্লেখ বাংলায় প্রথম মালাধরের কাব্যেই পাওয়া 
গেল। 


মালাধরের প্র সত্যরাজ খান এবং পন রামানন্দ বস: । রামানন্দ [ছিলেন 
চৈতন্যের অন্যতম ভন্ড ও পার্দ। চৈতন্যের আবিভাবের (১৪৬ খ:সঃ) কিছ; 
আগে মালাধর তাঁর কাবা শেষ করেন। 


কাব্যকথা £ 

ভাগবতে আছে দ্বাদশ স্কন্ধ ও আঠার হাজার শ্লোক । মালাধর শুধু দশম ও 
একাদশ দুটি মাত্র স্কদ্ধের (এবং দ্বাদশ কদ্ধের আখাশক) সংক্ষিগ্ত অনুবাদ করেন ॥ 
অথাৎ তাঁর বর্ণিত বিষয় কৃষ্ণের জন্ম থেকে দ্বারকালীলা পর্যন্ত । কাব ভাগবতের 
তন্তৰাংশকে বর্জন করে কাঁহনীর উপরই গুরুত্ব আরোপ করেন। কাহিনীকে 
‘লোঁকিক’ করার জন্যই বোধহয় এই প্রচেষ্টা । প্রয়োজনবোধে তান হারবংশ, বিফ 
পুরাণ থেকেও উপকরণ সংগ্রহ করেছেন । সোঁদক থেকে তিনি প্রশৎসারই যোগ্য। 
কিন্তু সরল ভ্রিপদী ও পয়ারে ঘটনার বিবরণ ছাড়া এই কাব্যে অন্য কোনো কাব্যগঞণ 
বিশেষ দেখা যায় না। মাঝে মাঝে কবির আবেগ ও আন্তারকতা প্রকাশ পেলেও তার 


মধ্যযুগ 33 


স্থান কাব্যাটতে সংকীর্ণ । কাব্যাঁটতে শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্যগুণ অপেক্ষা রাজসিক ভাবের 
উপরই বোশ জোর দেওয়া হয়েছে। ভাষার প্রাঞ্জলতা কাব্যাটর অন্যতম সম্পদ । 
মালাধর ভাগবতের যথাযথ অনুবাদ করেননি, তত্তৰাংশ বর্জন করেছেন। তবু 
এই বাত অংশকে বাদ দিলে তাঁর অনুরাদ ছিল মোটামুটি মুলানুগ । এ-বিষয়ে 
কৃত্তিবাসের মত স্বাধীনতা তিনি গ্রহণ করেন নি। ফলত তাঁর কাব্যে নাই 
ামায়ণের মতো গাহস্থণ্য চিত্র ॥ মাতা যশোদা ক্লীড়ারত পুত্র কষ্ণকে “ভাত খ্যায়্যা 
পুনরাঁপ খেলহ আসিয়া’ এই উপদেশ দিয়ে বাঙালী মাতম্ত'র যে পাঁরচয় দিয়েছেন 
শ্রীকূষ্ণাবজয়ে তার স্থান সংক্ষিপ্ত । তবু চৈতন্যের আবিভবি ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের 
আগেই মালাধর ভাগবত কাঁহনীকে জনসাধারণের গোচরে এনে ভাবা মহীর€হের বাজ 
উম্ত করোছলেন, রাঁবর এ কৃতিত্ব বাঙালী সমাজে ও বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয়। 


. ১৯ 


৯1 


১ 
২২৯ প্র, 0, ০১৮ 
২ 6০ 


চতুর্থ অন্যান 


মঙ্গল কাব্য: 

মঙ্ঈলসচক গান, ব্রতকথা ও লোককাহন যখন কাব্যাকারে লিখিত হল তখন 
] তার সাধারণ পরিচয় হল মঙ্গলকাব্য। ঠিক কবে থেকে এই লিখিত রুপের আবিভ্ 
ঘটেছিল তা জানা যায় না। পঞ্চদশ শতক থেকে তার সাক্ষাৎ মেলে । সুতরাং 
আশা করা যেতে পারে, আরও দু-একশ বছর আগে থেকেই এর প্রস্তুীতপব* অথবা 
কৈশোর কাল দেখা দিয়েছিল । বিশেষ, তকাঁ আকুমণের ফলশ্রুতিতেই অপোরাণিক 
ও পৌরাণিক দেবদেবীর মিলন সন্তব হয়েছিল এবং মঙ্গলকাব্য এই নবসষ্ট দেবদেবশরই 
বন্দনাগান। ফলত, ত্রয়োদশ শতকেই তার সচনা হওয়া, সম্ভব । লক্ষণীয়, মঙ্গল- 
কাব্যের আখ্যানের কাঠামো সুদুর অতাঁত থেকেই গ্রামীণ সমাজে মৌখিক সাহিত্যে 


কাব্যকাহনীতে। 

মঙ্গলকাব্যের দেবদেবাঁদের প্রাথমিক রূপ আঁশক্ষিত জনের ভয়-ভান্ত-সংস্কার- 
বিশ্বাসে সন্ট। প্রাকৃতিক বিপথয়, হিংস্র জন্তুর আক্রমণ ও রোগভখত এই সৃষ্টির 
মলে কাজ করেছিল । বাংলার আর্য-আগমনের আগেই বাঙালীরা এই দেবদেবাীড় 
রপের কল্পনা করে। ফলত, এই দেবদেবাঁগুলি সভ্য সমাজের মার্জিত রুচির 
দেবতা নন ; ক্রোধ ও প্রাতহিংসাপ্রবৃত্তির মানুষ দুর্বলতা দিয়ে গড়া তাঁদের রুচি। 
অকল্যাণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলেই তাঁদের মাহাত্ম্যকথায় ভস্তের আগান্ত। 
মঙ্গল অথথ কল্যাণ । মঙ্গলসাধন করেন বলে এ'রা মঙ্গল দেবদেবণী এবং এ'দের নিয়ে 
রচিত আখ্যান মঙ্গলকাব্য। মঙ্গলকাব্য নামের আরও কারণ ব্যাখ্যা করেছেন 
এঁতিহাপিক । এই কাব্য গীত হত মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী মঙ্গলবার পযন্ত; মঙ্গল সরে 
গাঁত হত এই গান বা আখ্যান ; মঙ্গল নামক অসুর নিহত হয়েছিল দেবীকর্তক এবং 
এই জাতীয় কাব্যকাহিন? গলিতে দেবদেবীর বিজয় অর্থাৎ মাহাত্ম্য বাঁণ'ত। এই 
চতু্ব'ধ কারণেও নাকি মঙ্গলকাব্য নামে আখ্যাত হয়েছে কাব্যগুলি। মূলত, 
মনসা, চণ্ডী ও ধমঠাক;রের মাহাত্ম্য মঙ্গলকাব্যে বার্ণত। 


মঙ্গলকাব্য রচনার সামাজিক কারণ 


তুকাঁ আমলের ‘তামস যুগের" অবসানে বাংলা সাহত্য যখন আবার 
আত্মপ্রকাশের সংযোগ পেল তার অন্যতম মুর্য ধারা হয়ে উঠল মঙ্গলকাব্য-ধারা । 
মঙ্গলকাব্য নামটি প্রাচীন নয়, মঙ্গল গানের কথা যদিও অশোকের সময়েও অজান? 


মধ্যযুগ 35- 


ছিলনা । গৃহ ও গোষ্ঠী-কল্যাণমলেক গণীতই মঙ্গল গান আর ব্রতকথা ও: 


লোকগাথার ক্ষুদ্র পারসর ছাঁড়য়ে যখন তা ছন্দ অলৎকারে সম্‌দ্ধ বিশাল কাব্যে 
পাঁরণত, তখন তার নাম মঙ্গলকাব্য। মঙ্গল কাব্যকাহনীর প্রভাব বাঙালী সমাজে 
ফল্গুস্রোতের মতো অন্তঃসাললা ছিল পঞ্চদশ শতকের আগে উীনশ শতকে এদেশে 
ইংরেজি সভ্যতার প্রসারের পরে তার পাঁরণাম হয়েছে ক্ষীয়মাণ। মধ্যবতাঁ কালে 
(পণ্চদশ-অষ্টাদশ শতকে ) মঙ্গলকাব্য রচনা ও পাঠের বিশেষ উৎসাহ দেখা দেয় 
বাঙালী সমাজে । 

কোমবদ্ধ আদিম জীবনধারায় বাঙালী কাঁষ, গৃহাশহপ ও শিক্ষা_এই তিনের 
উপরই নির্ভরশধল ছিল । ভয়, ভীন্ত, বিস্ময়ে সে দেবতার কল্পনা করেছে এবং তারই 
মাহাত্ম্য বর্ণনায় রচনা করেছে ব্রতকথা । গাহ“স্থ্য জীবনে জন্ম বিবাহ, শ্রাদ্ধ, শান্ত" 
স্বচ্ত্যয়ন ও গৃহদেবতার প্রাত্যাহক পুজা এবং সামাজিক জীবনে ফসল বোনা, ফসল 
তোলা, খত্‌উৎসব, গ্রামদেবতার বাৎসাঁরক পুজা ইত্যাদকে উপলক্ষ করে এইসব গান 
রাঁচিত হয়েছিল । গুপ্তযুগে ও পরবতাঁকালে আধসৎস্কৃতি ও ধর্মের বঙ্গদেশে " 
প্রসারের ফলে এবং সমাজে বৈদিক ক্রিয়ানুরন্ত অভিজাত সম্প্রদায়ের সৃষ্টতে লোকায়ত 
এই চিরন্তন প্রথা আর্যেতর অনাঁভজাত অশিক্ষিত জনসাধারণ, বিশেষ মাঁহলাক্দলের 
আশ্রয়ে লালিত হয়োছল । তুক্ আমলে উচ্চবর্ণের ধর্ম, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ' 
ধরংসস্তূপের মধ্যেও এই ধারা ছিল বহমান । অবশেষে পঞ্চদশ শতকে ও 
পরবর্তী তিন শতকে উচ্চনগচ ভেদাভেদে সকল শ্রেণীর বাঙালীর সাহিত্যচেতনা 
ব্রতকথা-ছড়া-পাঁচালীর চরায়ত কাঠামোকে শিল্প সুষমামাণ্ডত করে রচনা করেছে 
মঙ্গল কাব্য। i 

'মঙ্গল' শব্দটির অর্থ গৃহকল্যাণ। মঙ্গলদেবদেবীরা মুখ্যত বাস্ত্ত ও গ্রাম- 
দেবতা । মহামারী, সর্প, ব্যাঘু; বন), দুভিক্ষি ইত্যাদি জাগাঁতক অকল্যাণের হাত . 
থেকে তাঁরা ভন্তকে রক্ষা করেন । বসন্ত রোগ নিরাময়ের দেবী শীতলা, চর্মরোগের 
ধর্মঠাকুর | সর্প" ও ব্যাঘুভয় দুর হয় যথাক্রমে মনসা ও দাক্ষণ রায়ের পুজায় | 
এইভাবে এক একাটি বিঘ্যনাশের জন্য কল্পিত হয়েছেন এক একাঁট দেবতা অথবা 
দেব । বাংলার গ্রামকেন্দ্রিক সমাজে ভয়-ভন্তির মিশ্রণে এ সকল দেবদেবী আপন: 
প্রভাব অক্ষুগ্র রেখেছিলেন জৈন, বৌদ্ধ ও আধ ধর্মের প্রভাবের পাশাপাশি । 
ত্বরণ আক্রমণের ফলস্বরূপ আর্ধধর্ম যখন [িধবদ্ত, বৌদ্ধধমিলম্বী নিরক্ষর ও 
অন্ত্যজ গ্রেণণী আত্মরক্ষায় ও সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবার লোভে যখন দলে দলে ইসলাম 
ধর্মগ্রহণে তৎপর, ক্ষায়ষ্ হিন্দু সমাজ দিশাহারা ও আত্মবিশ্বাসহান হয়ে কামনা 
করেছে এমন দেবদেবীর আবিভবি, যান এই সার্বিক দুরবস্থার হাত থেকে বাঙালীকে 
উদ্ধার করতে পারেন। এ বিষয়ে মঙ্গলদেবদেবীরা আদর্শস্থানীয়। কারণ, ভন্তকে 
তাঁরা শুধু রক্ষা করেন না, ভন্তের জন্য উাঁচত-অন:ঁচত সর্বকর্মেই তাঁরা দড়। 
সুতরাং নিম্নকোটির দেবদেবী তুকর্ণ আক্রমণের ফলশ্রহততে উচ্চকোটিরও উপাস্য 


36 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


হয়ে উঠলেন-_সমগ্র হিন্দসমাজ মুক্তি ও শান্তির আশায় লোকায়ত দেবদেবীর ৷ 
আরাধনায় আত্মনিয়োগ করল। [মিলন ঘটল পৌরাণিক ও লোকায়ত দেবদেবীর | 
ব্যাধের দেবা চণ্ডী ব্রাহ্মণেরও পূজা পেল। যা-ছিল একসময়ে অনুচিত কর্ম, তা-ই । 
অপ্ররিহাষ* হয়ে উঠল সামাজিক পারাস্থাততে ৷ | 

"কিনতু এইসব দেবদেবীর মধ্যে আর্যেতর প্রভাবে রুক্ষতা,করুরতা, ছটা নগঁচতারও । 
নিদর্শন ছিল। সেগ্‌লি যথাসন্তব মাজত হল । সেই সঙ্গে পৌরাণিক দেবদেবীর 
সঙ্গে একটি আত্মীয়তা কল্পনা করে তাঁদের আর্যে'তর ভাবটুকুকেও যথাসম্ভব দর 
করা হল। এভাবে মনসা হলেন মহাদেবের মানসকন্যা, চণ্ডী শিবের পত্নী, 
ধমঠাকংর বিষদু অবতার ; কখনো বৃদ্ধ, শিবও সূ্ষের সঙ্গেও যৃত্ত। আর্ঘেতর 
দেবদেবীর এই কৌলীন্যলাভে তাঁদের মাহায্া বর্ণনে ব্রাহ্মণ্রেও আগ্রহ দেখা দিল। 
সংস্কতন্ ব্রাহ্মণ কাঁবরাও রচনা করলেন মঙ্গলকাব্য ॥ চণ্ডীমঙ্গলের কাব মৃকদন্দরাম 
চকরবতাঁ, ধৰ্মমঙ্গলের কাঁব রুপরাম চকবতর ও ঘনরাম চকবতর সকলেই ছিলেন ব্রাহ্মণ ৷ 
সংতরাৎ একটি বিশেষ সামাজিক পটভূমিকায়, সমাজের দুঃসময়ে বাঙালীর শান্তি | 
বাসনায় ব্রতকথা, ছড়া, পাঁচালশর আখ্যানঅংশের মানা ও সম্প্রসারণের দ্বারা মঙ্গল | 
কাধাধারার উত্তব ও বিকাশ সম্ভব হয়েছিল এবং মঙ্গলকাব্য সেইসব দেবদেবার | 
মাহাত্ম্যসচেক কাহিনী যাঁদের স্থান সংস্কৃত পুরাণে ছিল না। ৃ 


মঙ্গলকাব্যে তৎকালীন সমাজজীবন 
₹ মঙ্গলকাব্য কাহিনীর সুত্র প্রাচীন ব্রতকথা, ছড়া ও পাঁচালী । ফলত প্রাচীন: 
বঙ্গসংস্কৃতির পরিচয়ই তার কাহিনী অংশে বিবৃত । মনসা মঙ্গলের নায়ক চাঁদ বেনে 


সওদাগর, চণ্ডামঙ্গলের নায়ক কালকেত; ব্যাধ, ধর্মমঙঞ্গলের নায়ক সামন্তরাঞ্জ 
লাউসেন। তাদেরই ভাগ্যাবপর্যয় ও দেবদেবার প্রসাদে বিপন্মহান্তর ইতিহাস তিন 
মঙ্গলকাব্যের কাহিনী । অথচ বাণকবাত্ত, শিকার উপজশীবিকা ও স্বাধীন রাজত্বভোগ 
তখন বাঙালীর কাছে স্মৃতমান্র, বাস্তবে তার কোনো পাঁরচয় নাই। তব? এই 
কাহিনী ও দেবদেবী মাহাত্ময প্রকাশের অবসরে কবিরা জমকালশন সমাজের যেটুক? 
তথ্য তুলে ধরেছেন বাঙালীর সামাজিক ইতিহাসে তার মূল্যও কম নয় এবং মূলত 
তার উপর নিভ“র করেই মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাস রচিত । 


“ চতদর্শ শতক থেকে বাংলার সংস্কাঁতিতে দুটি ধর্মেরপ্রভাব-_হিন্দও মুদলমান 
ধর্ম। পণ্দশ শতকেও এই দুই ধমবিলম্বীরা পরস্পরের থেকে বিছিন্ন । সে 
আছে বিদ্যাপাঁতির কশীর্তলতায়_-ইন্দয-তুরকে মিলল বাস। একক ধন্মে অর্ক 
উপহাস’_হন্দ-তুরকের বাস নিকটে, কিন্তু একের ধর্মকে অন্যে উপহাস করে! 


মধ্যযুগ " 37 


.এই বাচ্ছন্নতাবোধ দূর হয়েছে ষোড়শ শতকের কাঁব মুকন্দরামের চণ্ডীমঙ্গলে ৷ 
কালকেতুর রাজ্যের পাশ্চম অংশ হাসনহাটি-_-মংসলমান-প্রধান অগ্চল। সেখানে: 
পাঠান বাঁসল নানা জাত ৷ 
বাঁসল অনেক মিঞা আপন টবর নিঞা 
কেহ নিকা কেহ করে বিয়া । 
খুব ভোরে উঠে তারা নমাজ পড়ে, হাতে নেয় সোলেমান মালা, পীরের মোকামে 
সন্ধ্যায় জ্বালায় বাতি। তারা কোরান পড়ে. হাটে বলায় পারের শরাঁন ৷ প্রাণ 
গেলেও রোজা ছাড়ে না। 'কম্বোজ-বেশ'ধারী এদের মাথা মুড়োন, বুক-ঢাকা 
দাঁড় । এদের সঙ্গে কিন্তু হিন্দ্‌দের কোনো বিরোধ নাই। 
পাঠান সুলতানদের আমলে হিন্দুরাও উচ্চ রাজকার্ষেনষস্ত হতেন । [ চতুৰ্দশ 
শতকের স:লতান জালালুদ-দিনের মহামন্ত্রী-সেনাপাঁত ছিলেন হিন্দ । সুলতান 
পাঁণ্ডতপ্রবর বৃহস্পাঁত মিশ্রকে বিশেষ সম্মান দিতেন । হুসেন শাহর দুই মন্ত্রী রুপ 
ও সনাতন ছিলেন হিন্দু ৷] রাজস্ব আদায় ও এই সংক্রান্ত ব্যাপারে ও ‘জাঁমদারী 
পাঁরচালনায় কায়স্থদের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বোঁশ। রুকনুন্দিন বারবক শাহের 
অন্যতম প্রধান কর্মচারী ছিলেন মালাধর বস ৷ পুরুষানুকমে এই পরিবার রাজকার্য 
করে গেছেন। কায়স্থদের রাজকর্মের উল্লেখ করে সপ্তদশ শতকের ধর্মমঙ্গলের 
কাব রপরাম লখেছেন : ‘কায়স্থ কারকন যত করে লেখাপড়া ' হোসেন শাহের 
এক সেনাপাঁত রামচন্দ্র খান ছিলেন কায়স্থ। কায়স্থের বৃদ্ধি ও প্রতাপে রাজারাও 
তাঁদের সমীহ করে চলতেন। মধ্যে মধ্যে তাঁরা তার সুযোগও গ্রহণ করতেন । 
1 সগ্তগ্রাম মূলুকের চৌধুরীদের বার্ধক {বশ লাখ টাকা আদায়ের সম্পাত্ত আঁধকার 
করোছলেন গোবর্ধন দাস।] বৈদ্য ও বাণকরাও উচ্চ রাজকার্ষে [নয্ত হত। 
বাঁণকেরা যারা ‘লেখা জোখা করে টাকাকাঁড়' তাদের লোকঠকানোর সকৌতুক 
ইতিহাস আছে চণ্ডীমঙ্গল কাবো। তবু মুসলমান রাজা ও জাঁমদারদের হাতে হিন্দু 
প্রজারা নিযাঁতত হত না তা নয়। মাম্দদ শরীফের নির্যতিনেই মুকবন্দরামকে 
গৃহত্যাগ করে বাঁকুড়া রায়ের আশ্রয়ে জীবন আঁতবাঁহিত করতে হয়। তাঁর কাব্যে 
উীল্লাখত হয়েছে । 'নেউাগ চৌধুরী নই, না রাখি তালুক 1” রাজস্ব আদায় 
জাঁমর মাপ ধারণ সব ব্যাপারেই কিছুটা আবিচার প্রশ্রয় পেত এবং মুখাত ঠকত 
সাধারণ মানুষরাই ৷ 
ব্রাহ্মণেরা মুসাঁলম নীতি-পৃদ্ধীতকে শ্লেচ্ছ আগার বলে সধত্রে পাঁরহার করতেন । 
কিন্তু এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যোড়শ শতকেই একটা প্রীতির সম্পর্কে গড়ে উঠে। 
রুদ্ধ শ্রীচৈতন্য কাজির বাঁড় দলবলসহ হাজির হলে তানি চৈতন্যের মাতামহের সঙ্গে 
তাঁর মধুর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেনঃ 
গ্রাম সম্বন্ধে চক্ব্তাঁ হয় মোর চাচা । 
দেহ সম্বন্ধে হইতে হয় গ্রাম সম্বন্ধ সাঁচা ॥ 


38 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 

_ মুসলমানরাও হিন্দু আচার পছন্দ করতেন না। তাঁরা মনে করতেন হিন্দু 

আচার গ্রহণে শাসকজাতির মধাদা হানি হয়। সুৃতরাৎ যবন হরিদাস যেহেতু 
হইয়া করে হিন্দুর আচার' তার জন্য ব্যবগ্থা হয় ‘ভালমতে তারে আনি করহ 


মনে করত। হিন্দুর পক্ষে চরম শাস্তি ছিল 'জাতিনাশ'। কোধ ও প্রতিহিৎসার 
বশে তা করা হত। কখনো লোভের বশে হিন্দুরা স্বেচ্ছায় ধমস্তির গ্রহণ করত ৷ 

দারিদ্য ও মৃত্য অপেক্ষা ধমেনর স্থান ছিল উচ্চে। ব্রাহ্মণ্যবণে'র লোকের কাছে 
দারিদ্য ছিল তচচ্ছ। কৃত্তিবাস লিখেছেন ‘ভাই মত্যঞজয় বড়রান্র উপবাসে’ । 
মংকুন্দরাম_ 

তৈল বিনা কৈ'ল; স্নান কারল£* উদক পান 
শিশু কাঁদে ওদনের তরে। 

তব; ধর্মকে সহায় জেনে তাঁরা দারিদ্যকে বরণ করেছিলেন। 

বাত্তীবভাগ মোটামুটিভাবে মেনে চলা হত এবং 'মশ্রবর্ণের হিন্দ; ও 
মংসলমানদের মধ্যে কতকগুলি বৃত্ত ছিল একচোটয়া। 'গীবাসের বস্ত্র সি'য়ে দরজণ 
যবন'। বাস্তব প্রয়োজনে উভয় সম্প্রদারই পরস্পরের উপর [কিছুটা ?নভ'রশীল 
ছিল। 

পঞ্গাদশ শতকের শেষভাগ থেকে নবদবীপ-শাস্তপুর অণ্চল 'ইন্দু সংস্কৃতির 
প্রধান বেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। বৃন্দাবন দাসের বর্ণনায় 


নবদ্বীপ সম্পত্তি কে বার্ণবারে পারে । 
এক গঙ্গা ঘাটে লক্ষ লোক স্নান করে ॥ 
ন্রিবিধ বসয়ে এক জাতি লক্ষ লক্ষ। 
সরস্বতা দ.ঝ্টিপাতে সবে মহাদক্ষ || 


ন্যায় ও স্মৃতির চ্চ ছিল ব্রাহ্মণের একচেটিয়া । 
করতে পারত। উচ্চশিক্ষার জন্য ছিল চত; 
দরিদ্র কায়স্থও প্রাথমিক ভাষা ও গণিত শি 
সাধারণ পূজারী ব্রাহ্মণ ব্যাকরণ, কাব্য 
গাঠে ক্ষান্ত হতেন। উচ্চ বণের মাহ 
দ'-একজন কাব্যও রচনা করেছেন। 


ব্যাকরণ-কাব্য-পরাণপাঠ অন্রা্গাণেও 
হ্পাঠী, সাধারণ শিক্ষার জন্য টোল। 
ক্ষা দিয়ে জীবিকা উপাজন করত। 
’ ছন্দ, অলংকার, স্মৃতি, পুরাণ পাঠ করেই 
গারাও পড়াশোনা করতেন। এমন; কি তাঁদের 
চাকুরির আশায় ব্ৰাহ্মণ, বৈদ্য ও কায়স্থরা 
বাংলা ও সংস্কৃতের সঙ্গে ফারসাঁও শিক্ষা করত। বিশেষ তহশিলের কাজের জন্য 
কায়দ্থকে শিখতে হত অঙ্ক। বেনেরা তেজারাঁতি কারবারও করত। 


দেশের প্রধান সম্পদ ছিল ধান। এছাড়া ছিল কুটির শিল্প, যার মধ্যে প্রধান 
বদ্রশব্প। ব্যবসা-বাণিজ্য চলত অবাধে। খেয়াঘাট ছাড়া শুক আদায় তেমন 


মধ্যযুগ 35 


হত না। পাঠান আমলে দেশের অবস্থা সচ্ছল থাকলেও মোগল আমলে আর 
অবস্থার অবনত ঘটে । ‘আঁঠু ঢাঁকি বস্তু দিহ পেট ভার ভাত’ অথবা ই, 
যেন থাকে দঃধে ভাতে"_এটাই তখন হরে' উঠেছিল সাধারণ বাঙালীর ভরি 
EL MB ২ রি এবং বাংলার অর্থ দিল্লিতে ও বাংলার 

ত্বক অভিযানের রী ফল ৮০৪ শ্দিরগং 
এবং সেইসঙ্গে মসাঁজদ নিমাণ । এর ফলো হিন্দুদের MELEE 
তারা মনে করতে থাকে এই পরিণাম ঈশ্বরেরই দান এবং স্বীয় অনাচারের ফল । 
ফলে ধর্ম হৈলা যবনরুপন' ভাবতে তাদের কণ্ট হয়নি । এরই প্রতিক্রিয়ায় 
মুসলমানের আরাধ্য পীর হিন্দুর দেবতা সত্নারায়ণ রুপে পৃজিত হয়েছেন 
_ ধমচিরণে হিন্দু হয়েছে কয়েকক্ষেত্রে মুসলমানের অনুসারী ; যেমন ভোগ হিসাবে 
দেবতাকে শিরান দান। অবশ্য চৈতন্যের আবিভাবে (১৪৮৬--১৫৩৩ খত্ীঃ) নবচেতনায় 
উদ্বুদ্ধ হয়োছল বাঙালী হিন্দু__জাতাঁবচারের নির্মমতাও দর হয়েছিল । কিন্তু 
কোল'ন্যপ্রথার প্রভাব পরবর্তাঁকালে হিন্দুর এই সমন্বয় সাধনাকে অনেকাংশে 
বিপর্যস্ত করে সামাজিক নানা অশান্তির কারণ হয়ে উঠোঁছল । মধ্যযুগীয় বাংলাদেশে 
বৈষ্ণব ধর্মের মত ব্যাপকতা লাভ না করলেও শৈবধৰ্মও যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। 
[ অষ্টাদশ শতকে রচিত শান্ত সাহিত্যে আছে তার পরিচয়। ] 

মুসলমান শাসকেরা বিদ্বান না হলেও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন । পরাগল খাঁ, ছাট 
খাঁ মহাভারত অনুবাদে, রুকনুদ্দিন বারবক সাহ শ্রীকফাঁবজয়' রচনায় প্রত্যক্ষভাবে 
উৎসাহিত করেন। সুতরাং মধ্যযুগের বাংলায় সং্কৃত, বাংলা গ্রন্থরচনা ও সাহত্য ' 
চর্চা শাসকশ্রেণীর পৃষ্ঠপোষকতায় বাধাহীনভাবে এগোতে পেরেছে। ধর্মসাধনা ও 
অবসরাবিনোদন উভয়েরই উপায় ছিল রামায়ণ-মহাভারত ইত্যাদ পুরাণপাঠ ও শ্রবণ, 
মঙ্গলবার থেকে মঙ্গলবার মঙ্গলকাব্য শ্রবণ, পাঁচালী কথকতায় সময়-যাপন এবং, 


বৈষ্ণবদের পক্ষে নামসথকীতননি । এই ধর্মপরিমণ্ডলে বাস করে বাঙাল অল্পেতুণ্ট,, 
[টি জাতিতে পরিণত হয়োছিল যার: 


নিরাভমানী, বিনয়ী, সংযমী ও দারিদ্রাসহ এক 
আদর্শ“ চারত্র রাম ও সীতা দুঃখের বহতা ধারায় যাঁদের জীবন আঁতবাহত ৷ 


পঞ্৪ম অন্যান 
মনসা মঙ্গল 
'মনসামঙ্গলের কাহিনী ৪ 


মনসামঙ্গলের কাহিনীটি দুটি ভাগে বিভন্ত £ দেবখণ্ড ও নরখণ্ড। 
বের মনে সংষ্টিবাসনা জাগায় কালিয়দহের পুশপবনে জন্ম হল এক সুন্দর 


সবশেষে মনসার আগ্রহে নিয়ে আসতে বাধ্য হলেন। সেখানে মা-মেয়েতে লাগল: 

বাধ। মলসার কোপ দৃষ্টিতে চেতনা হারালেন চণ্ডা, চপ্ডীর আক্রমণে এক চোখ: 
হারিয়ে 'চ্যাং ময় কানী' হলেন মনসা। অতঃপর তাঁর কৈলাপবাসের বাসনা দরে 
হল। জরৎকারু মনির সঙ্গে তাঁর বিবাহ হল কন্তু সে বিবাহও দীঘ্থায়ী হল 
শা। পন্র্লাভের বরপ্রাপ্ত হয়েই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটল । জয়ন্তী নগরে পুরী নিমণি 
! এখানেই 'দেবখশ্ডে'র সমাপ্তি। 


[শিব ও চণ্ডী পূজা পান মতে, মনসার পৃজা কেউ বরে না। মনসা চাইলেন 


চন্দ্রধর মস্ত ধনী । স্বী সনকা গুণবতণী। তাঁদের ছয় ছেলে ছয় পড্রবধূ । সগ্ত 
ডিঙা ভাসিয়ে চাঁদ বাণিজ্য করেন। তিনি শিবভ্ত। শিবকে আরাধনায় তুষ্ট করে 
লাভ করেছেন ‘মহাজ্ঞান’, যা দিয়ে মৃতকেও বাঁচি 


্ য়ে তোলা যায়। সাপ তাঁর আজন্ম 
শত, সাপ দেখলেই হে'তালের বাড়ি দিয়ে তান তাকে 
বতা 


রেন। তাঁর চম্পক নগরে ধল 
সংতরাং মনসা একটি দঃসাধ্য কমেই নিয়োজিত হলেন। 


সনকাকে দিয়ে মনসাপুজা করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় 
চম্্রধরের সরাসাঁর সংঘাত। চাঁদের চারিত্রিক দয় 


চাঁদের চোদ্দ ডিঙা । তব? 


রি, শঙ্খ প্রমুখ বিখ্যাত সাপের ওঝাও আছেন । 


মধ্যয্গ। পা 


| বৃদ্ধ বয়সে চাঁদের লখান্দর নামে এক পত্র জন্মাল । আসলে সে আভিশস্ভ 
| আনরদ্ধ। যথাসময়ে সর্বসৃলক্ষণা বেহুলার সঙ্গে তার বিবাহ হল। কিন্তু চাঁদ 
৷ জানলেন {বিবাহের রাতেই পত্রের মৃত্যযোগ আছে॥ তার জীবনরক্ষায় রচিত হল: 
| লোহার বাদরঘর। কিন্তু মনসার কৌশলে তাতে ছিল একটি সক্ষ্যা ছদ্র। মনসারা 
৷ নির্দেশে সেই ছিদ্ুপথে প্রবেশ করে কালনাগিনী দংশন করল লখীন্দরকে। পরদিন: 
৷ সকালে লখাপ্দরের সপর্ঘাতে মৃতযর খবর ছড়িয়ে পড়ল। নগরীতে ব্ইল 
শোকের ঝড়। 
|. মৃত স্বামীর দেহ সঙ্গে নিয়ে দঢ়প্র তিজ্ঞ বেহুলা কলার ভেলায় ভেসে চললেন: 
| অজানা নদীপথে । তাঁর প্রতিজ্ঞা স্বামীকে তান পুনজাীবত করবেনই । নানা. 
প্রলোভন ও বিপদ তুচ্ছ করে ভেসে চললেন বেহুলা । এঁদকে লখিন্দরের দেহাবশেষ, 
[্থ। তাকেই কাপড়ে বেধে নিয়েছেন বেহুলা । অবশেষে 


ই বলতে তখন কয়েকটি অ 
ছ'মাস পরে বেহুলার ভেলা এসে পেণছল স্বর্গে নেতা ধোবানর ঘাটে । শিবের 


অশ্রুজাত বলে তার নাম নেত্রবতী বা নেতা ৷ সে স্বর্গের দেবতাদের কাপড় কাচে'। 
অলোক ক্ষমতার আঁধকারিণী সে। তা লক্ষ্য করে বেহ-লা তার শরণ [িলেন। 
আসলে নেতা ছিল মনসার সহচরী। তার সাহায্যে বেহহলা দেবসভায় যেতে, 
পারলেন । সেখানে নত্যগ্রীতের মাধ্যমে তান দেবতাদের মন জয় করলেন.।' 
দেবতারা তাঁকে বর দিতে চাইলে [তানি চাইলেন স্বামীর জীবন ভিক্ষা। শিবের 
আদেশে মনসা. তা দিতে স্বীকার করলেন, তবে একটি শর্তে । চাঁদকে করতে হবে 
মনসাপৃজা। বেহুলা *বশনরকে রাজ করাবেন এই অঙ্গীকার করে স্বামীকে ফিরে 
পেলেন। সেইসঙ্গে খুশি হয়ে মনসা চাঁদের ছয় পরের জীবন দান করলেন এবং 
ফিরিয়ে দিলেন নিমাঞ্জত ভিঙাগীল । সব নিয়ে বেহুলা মর্তে ফিরে এলেন । 
বেহ্‌লার গাঁতব্ত্য ও সতীত্বের কথা রাষ্ট্র হল চম্পকনগরে । সনকার মাত্হদয় অস্থির: 
হল পত্রমুখ দর্শনে । তান ছুটে এলেন ঘাটে। বেহুলা নিবেদন করলেন শর্তের: 
কথা, হয় চাঁদকে মনসাপুজা করতে হবে, নতুবা সব য়ে বেহৃলাকে ফিরে যেতে হবে. 
দেবপুরীতে ৷ প:ুরুষকারে অটল চাঁদ এখনো নারাজ । যে হাতে শিবের পুজা করেন: 
তান, সে-হাতে কেমন করে করবেন মনসার পুজ্বা। সকলে দেখল সমূহ বিপদ, 
শাঙকত হলেন মনসাও। অবশেষে সান্ধ হল। চাঁদ বাম হাতে ?পছন ফিরে মনসার! 
উদ্দেশে পুজার পৃদ্প নিবেদন করবেন, যেখানে দেবীর ঘটের উপরে থাকবে 
চাঁদোয়া'। এতেই ত্ট মনসা ॥ এভাবেই চাঁদের মনসাপজো সমাধা হল এবং সেই- 
সঙ্গে মতে মনসা পুজো ব্যাপকভাবে প্রচালত হল । 414 আঁনরুদ্ধ ও উষা. 
(লখান্দর বেহুলা) কিছুকাল পরে ফিরে এলেন: “বগ রাজ্যে । এখানেই কাব্যটির, 


নিরধণ্ডে'র সমাপ্তি । 


42 খলা সাহিত্যের ইতিহাস 


মনসামঙ্গলের কৰি 
কাব বিজয়গুপ্ত 


“ণসামঙ্গলের সবক খ্যাত কাঁব ববজয়গুপ্তের কাব্যের নাম ‘পদ্মাপুরাণ’। 
[তান ছিলেন বরিশাল জেলার ফুল্লশ্রী গ্রামের অধিবাসী । তাঁর পিতার নাম সনাতন, 
'মাতার নাম রুকিযণী। কাবির জীবন-ইতিহাস সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কিছু জানা, 
যায় না। তাঁর কাব্যরচনাকাল সম্ভবত ১৪৯৪ খসঃ £ খতংশন্য বেদ শশী পারামত। 
'শক।' তাছাড়া তাঁর কাব্যে আছে হোসেন শাহের নাম। সুতরাং বাংলার 
সংলতান হোসেন শাহের আমলেই কাব্যটি রচিত হয়েছিল বোঝা যায়। তাঁর কাব্য 
খলাদেশের পৃবণ্চিলে বিশেষ জনপ্রিয় ছিল । 


কাব্যকথা £ 

1বজয়গৃপ্তের কবপ্রাতভা বিচার কাণ্চিং দুরূহ । অত্যধিক জনপ্রিয়তার ফলে 

] র করেছেন বোঁশ। ফলত তাদের হাতে 
শন পারমাণে পরিবর্তন ঘটেছে। কাহিনখও কতটা 


| 
অলভ্য হওয়াতে কাঁবর মৌলিক রচনা- 
ক্লীতি সম্পর্কে কোনো ধারণা পোষণ করা কাঠন। 


কাহনী বয়নে বিজয়গুগ্ত বিশেষ প্রাতভার পরিচয় দিতে পারেননি । 
“বেনামিতে তিনি মানুষের চাঁরত্র এ'কেছেন এবং তাঁর চিত্রিত স্বর 
গুচ্জবল্যপ্রাগ্ত হয়েছে। মনসার  ঈষা্কাতর 
মাতংহাদয়ের ব্যথাবেদনা, বেহ:লার দৃশ্র সাধনা তিনি 


কাতর সঙ্গে ফুটিয়ে 
'তুলেছেন। 
মনসার ঈধকাতর স্বভাবের একটা বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছেন কবিঃ 
জনম দর্বখনী আমি দুঃখে গেল কাল। 
যেই ডাল ধার আমি ভাঙ্গে সেই ডাল ॥ 
কারে কি বলিব মোর নিজ কর্মফল। 


দেবকন্যা হইয়া স্বর্গে না হইল স্থল ॥ 


“দেবার অন্তরের হাহাকারই তাহলে তাঁকে এমন ঈাকাতর ও জেদশ করে তুলেছিল! 
বাস্তবধমা চরিত্রচিন্রণ বিজয়গ-প্তের অন্যতম কৃতিত্ব 


তরল হাস্যরস সৃষ্টিতেও তাঁর 


দক্ষতা প্রকাশিত। তাঁর কাব্যে তৎকালগন 
সমাজ ও রাজনৈতিক অবস্থার কিছু 


পরিচয় মেলে। ছন্দ-নিমাণেও কাব কোথাও ৷ 


| 
দেবতার 
রিত্রগৃালই যা কিছুটা 
কোগন-স্বভাব, সনকার 


| 


মধ্যযুগ 43 


কোথাও প্রশংসনীয় কূশলতার পরিচয় দিয়েছেন । শিব সম্পকে রুদ্ধ চণ্ডার উত্তিতে 
তার নিদর্শন মেলে £ 

প্রেতের সনে শ্মশানে থাকে মাথায় ধরে নারী । 

সবে বলে পাগল পাগল কত সৈতে পারি ॥ 

দনজে ভাবিতে প্রাণে বড় লাজ লাগে । 

চড়ে বেড়ায় দুষ্ট বলদে তারে খাউক বাঘে।। 


লখসন্দরের মৃত্যর পর পুত্রহারা সনকার প্রতি চাঁদের উপদেশ তাঁর এক স্মরণীয় 
কবিকাত £ 


শগতল চন্দন যেন আভের ছায়া । 

কার জন্য কান্দ প্রিয়া সব মিছা মায়া ॥ 
{মছাঁমিছি বাল কেন ডোকর আমার । 
যে দিছিল লখীন্দরে সে নিল আরবার ॥ 


তবে কাঁবক্ষমতা অপেক্ষা কাঁবখ্যাঁতি লাভে বিজয়গুপ্ত ভাগ্যবান। ছাপাখানার 
কল্যাণে সমগ্র বাংলা দেশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও তাঁর প্রাতভা ও 


রচনা-শান্ত অনুরূপ খ্যাঁতলাভের যোগ্য ছিল না। 


কাব নারায়ণ দেব 
মনসামঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কাঁব নারায়ণ দেব । তাঁর কাব্য বাংলা ও আসামে সুপরিচিত 
থাকলেও দঘকাল মুদ্রণ সৌভাগ্য না পাওয়ায় পরবর্তীকালে ততটা প্রচারলাভ করে- 
দন'। তাঁর কাব্যের আত্মবিবরণী সংবাঁলত দ্‌-চারটি প্রাচীন পথি পাওয়া গেছে । 
তা থেকে জানা যায় তান ছিলেন ময়মনসিংহের বোরগ্রামের আঁধবাসী। তাঁর 
[বৃদ্ধ পিতামহ উদ্ধারণ দেব কোনো কারণে রাড়দেশ ছেড়ে এখানে এসে বসাতস্থাপন 
করেন। তাঁর পিতার নাম নরাঁসংহ, মাতা রুকিমণ ৪ 
দপতামহ উদ্ধব নরাসংহ পিতা । 
মাতামহ প্রভাকর রুক্মিণী মোর মাতা ॥ 
পূর্বপুরুষ মোর আঁত শুদ্ধ মাত ৷ 
রাঢ় ত্যজয়া মোর বোরগ্রামে বসাঁত ॥ 


তান পঞ্চদশ শতকের শেষভাগে অথবা ষোড়গ শতকের প্রারন্তে তাঁর “পদ্মাপুরাণ* 
লিখে থাকবেন । দেবীকে স্ব্নে দর্শনই তাঁকে কাব্য রচনায় অনুপ্রাণিত করে বলে 


[তান উল্লেখ করেছেন । 


44 খলা সাহিত্যের ইতিহাস 


জিলা নিয়ে পূণাঙ্গি সংদীর্ঘ কাব্য রচনা করেছেন নারায়ণ দেব ৷ 
কিন্তু এই বিশালতাই তার কাব্য 'পন্মাপুরাণে'র একমান্র গৌরব নয়, কাঁত্বণান্তর ' 
পারচয্ হিসাবেও তা মনসামঙ্গল কাব্যগঁলর মধ্যে অনন্য। পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম 
উভয় প্রদেশেই তাঁর কাব্য ছিল সুপাঁরাচিত। তিনটি বৈশিষ্টো তাঁর রচনা ভাস্বর 
পোঁরাণিক প্রভাব, আশ্চর্য চাঁরত্রনিমণিকুশলতা ও কর*ণরসের স্মরণীয় প্রকাশ । 
নারায়ণদেব সংস্কৃত সাইহত্যে সুপাণ্ডিত ছিলেন ৷ কান! রচনায় তানি মহাভারত, 
শিবপুরাণ, কালিকাপ;ুরাণ ইত্যাদি পত্রাণগ্রন্থ ও কালিদাসের ‘কুমারসম্ভব’ দ্বারা, 
প্রভাবিত হয়েছেন। ফলত, মর্তলগলা অপেক্ষা পৌরাঁণক কাঁহনগ বর্ণনাতে 
তাঁর অনুরাগ দেখা গেছে। দেব খণ্ডে এই পৌরাণক প্রভাব বিশেষভাবে 
পারস্ফুট । কুমারসন্তবের কিছু অংশ তিনি সেখানে “আবকল গ্রহণ’ করেছেন । 
তবু তারই অবসরে যথার্থ কাবিতবশান্তর প্রমাণ রেখেছেন কাঁব। ক:মারসম্ভব দ্বারা, 
প্রভাবিত 'রাঁতাবলাপে' তারই পরিচয় £ 
পাঁত শোকে রাত কান্দে লোটাইয়া ধরণ । 
কেন হেন কর্ম কৈলা দেব শৃলপাণ ॥ 
দেবের দেবতা তুমি ভূবনের পাঁত। 
স্তী বধ? দিব আজি গলায় দিব কাতি ॥ 
চারন্রচিত্রণেও নারায়ণ দেব বিশেষ দক্ষতা দৌখয়েছেন। তাঁর কৃতিত্ব বিশেষভাবে: 
ফুটে উঠেছে মুখ্য দুই চারতর চাঁদসদাগর ও বেহ*লা চাঁরত্র নিমাণে । 
নিজ বিশ্বাসে অটল, ধমপ্রাণ, পুরুষকারে বলীয়ান । 
যখন সকলেই শোকগ্রস্ত তার অবিস্মরণীয় মনোভাব £ 


কি কারবে পুতে মোর কি করিবে ধনে। 

না পূজিব পদ্মাবতা দূঢ় কৈল মনে ॥ 
তার চারিত্রিক দঢতারই পরিচয় দেয়। কাহিনী শেষে যখন বে 
ভাসুর, জা, ও হারানো সম্পদ সহ ফিরে এসেছে এই শতে টে 
করবে, সকলের অনুরোধে তাতে রাজ হয়েও সে শত“ আরোপ ক 

পিচ দিআ বাম হাতে তোমারে পাঁজব। 


নারায়ণ দেবের পতিগতপ্রাণা বেহুলা আদশৎ বঙ্গনারী । 


কিন্তু তার চাঁররেও আছে 
কোমল-কঠোরের সম্মিলন। স্বামীর মৃত্খতে অন্তরে অনন্ত হাহাকার নিয়েও 
সে চেয়েছে 


চাঁদ অনমনগয়, 
পত্র লখীন্দরের মৃত্যুতে: 


হংলা মুত স্বামণ,. 
য চাঁদ মনসার পুজা, 
রেছে 


শাপ দিয়া বিধাতারে করো ভস্মরাশ। 
১. স্মীলোক হত্যার পাপ 


মধ্যযুগ 45 


যে বিধাতা অকারণে লখশন্দরের প্রাণ নিয়েছে, অসহায় নারী বেহুলা আঁভশাপকেই 
তার যোগ্য প্রত্যন্ত ভেবে নিয়েছে। 

নারায়ণ দেবের 'পদ্মাপুরাণে করুণ রস মৃত" হয়েছে স্ত্রী চরিন্রগবীলর মধ্য দিয়ে । 
মদনভস্মের পরে রাঁতাবলাপে, লখীন্দরের মৃত্যর পর সনকা ও বেহদলার আত ক্রন্দনে 
করুণরসের সবাধক প্রকাশ ঘটেছে । মৃত স্বামীর উদ্দেশে বেহলার উন্তি ঃ 


| 


উত্তর না দেহ প্রভ্‌ নাহি কর রাও । 
মুঞ্খ অভাগিনীর দিকে চক্ষু মেলি চাও ॥ 


সত্যই মর্মস্পশর্শ । স্বামীর মৃতদেহ [নিয়ে অক্‌লে ভেসে চলেছে বেহুলা । তখন: 
তার বলাপ ৪ 


প্রভুরে তুমি আম দুইজন । 

জানে তবে সর্বজন ॥ 

তুমি যে আমার প্রভু আমি যে তোমার 
মড়া প্রভ্‌ নহ রে তাঁম গলার হার ॥ 


প্রেম ও পাঁতভান্তর আদর্শ নিদর্শন ; কর;ণরস প্রকাশেও সার্থক । 


নারায়ণ দেব 'পণ্মপুরাণে' সংস্কৃত সাহত্য দ্বারা প্রভাবত হওয়ায় তাঁর রচনায় 
চমৎকার ভাষার বাঁধন দেখা দিয়েছে । ভাষার গান্তীর্য ও লালিত্য যেমন এতে 
রাক্ষিত হয়েছে, তেমান স্থানীয় শব্দের কুশলী প্রয়োগেও রচনার প্রসাদগুণ অটনট 
থেকেছে । নারায়ণদেবের অন্যতম গণ সহজ কথাও অনবদ্য ভাঙ্গতে প্রকাশ ৪ 


বাপু ধারে যাও পথ নিরীক্ষয়া । 
পাষাণ লাগিবে পদে পাষাণ ঠোঁকয়া ৷ 


সহজ উপদেশটিও ভাষার গৃণে হয়ে উঠেছে কাব্যগুণাম্বিত। 


হাস্যরসের প্রকাশেও নারায়ণদেবের দক্ষতা ছিল । 


করুণরসের অনুরূপ না হলেও | 
চিৎ অমা্জত মনে হতে পারে বস্তু যঃগাঁবচারৈ 


সে হাস্যরস আধুনিক কালে হয়ত কি 
অসঙ্গত নয়। 
নারায়ণ দেব মনসামঙ্লের শ্রেষ্ঠ কবি, মধ্যযুগের বিশিষ্ট কাঁব। তাঁর পবা 


কাঁবরা শুধু মনসামাহাত্ম্য প্রগারেই নাব্ট ছিলেন, নারায়ণ দেব তারই অবসরে 
তাঁর রচনায় কারংণ্যবর্ণনা প্রথার আগ্রয় 


জীবনরসের প্লাবন ঘটিয়েছেন কাব্যে। টা 
করোনি, হয়ে উঠেছে জীবনচৈতন্যে উজ্জল, একান্ত চ্বাভাবক। এখানেই তাঁর 
রচনার মহন্তৰ এবং তাঁর 'সুকাবিকলভ' উপাধির যথার্থ সার্থকতা । 


বাং. সা. 1.4 


46 বাংলা সাহত্যের ইতিহাস 


কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ 
কাঁবপরিচয় £ 


মনসা বাকেতকার দাস হসাবে কাব ক্ষেমানন্দ নিজেকে কেতকাদাস ?বশেষণে 
বিশিষ্ট করেছেন। কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝ সময়ে জন্ম 
গ্রহণ করেন এবং সন্তবত এই শতকের শেষভাগে তাঁর কাব্য রচনা করেন। দেবীর 
নির্দেশেই তিনি কাব্যরচনায় ব্যাপ্ত হন এমন উল্লেখ তাঁর আত্মীববরণীতে আছে । 
কবির আত্মাববরণনীট বেশ দীঘণ কিন্তু তাতে সন-তারিখের কোন উল্লেখ নাই। 


কাঁবরা ছিলেন কায়স্থ ও বর্ধমানের সেলিমাবাদের আঁধবাসণ। তাঁর পিতা 
কর বারা খাঁ নামে এক সং ফৌজদারের অধীনে চাকরি করতেন। বারা 
খাঁ নিহত হওয়ার পর শংকর সপারবারে ভারমল্ল নামে এক জমিদারের আশ্রয়ে 
বাস করতে থাকেন। 
মনসামঙ্গলের পাঁশ্মবঙ্গীর কাব ক্ষেমানন্দের কাব্যে সমকালণন ইতিহাসও স্থান 
পেয়েছে। আত্মপারচয় অংশে বারা খাঁর হত্যার পর স্থানগয় অরাজকতার চিত্র বার্ণত 
হয়েছে এবং চাঁদ সদাগরের বাণিজ্যপথযান্রায় পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় অণ্ুলের বাস্তব 
ভোঁগোলিক তথ্য নিপুণভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। 


কাব্যকথা £ 


ক্ষেমানন্দ খুব প্রতিভাবান কাঁব ছিলেন না, যাঁদও তাঁর কাঁবখ্যাতি বহতপ্রসারত 
হয়োছিল। তাঁর কাব্যের অনেকগীল পথ পাওয়া গেছে, প্রথম মুদ্রণ সৌভাগ্যেও 
কবি ভাগ্যবান। [তান পাঁণ্ডিত ব্যান্ত ছিলেন । তাঁর পাণ্ডিত্য প্রকাশের আগ্রহও 
গোপন থাকেনি। মুকুন্দরামকে তিনি কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রায় “হুবহু নকল করেছেন’ 
যেমন নৌকাড্বাবর সময় মাঝদের বিলাপ অংশে । মনসার কোপন ও প্রাতাহৎসা- 
পরায়ণ চরিত্র ও বেহ-লার চরিত্র অৎ্কনে কিছুটা সফল হলেও চাঁদের চাঁরত্রচিত্রণে কাঁব 
ংশত ব্যৰ্থ । 


‘যে চাঁদ 'মনদ্তাপ পায় তবু না নোয়ায় মাথা’ কাহিনীর শেষাংশে তার সম্পর্কেই 
কবির উত্তি £ 


গলায় কাপড় দয়া সদাগর দণ্ডাইয়া 
মনসারে বলে স্তৃতবানী। 

তুমি দেবদেবতা তুমি হরদুহিতা 
তম দেবী ঈশাননান্দনী ॥ 


পৌরুযদঞ্ত চাঁদ সদাগরের পক্ষে মনসার এ বন্দনা তার চারতকে [ছটা ম্লান করে 
দিয়েছে। 


মধ্যযুগগ 41 


করুণ ও হাস্যরস সৃষ্টিতে কবি কিছুটা পট:তা দেখিয়েছেন । বিশেষ, করুণরসের 
প্রকাশে তাঁর রচনারপীত যথেষ্ট সহজ, সাবলীল ও স্বাভাবিক ৪ 

প্রাণনাথ কোলে কান্দে বেহুলা নাচন । 

ঘরে হৈতে শোনে তাহা সোনকা বান্যানী un 

ক্রন্দন শহীনয়া তার শুকাইল হিয়া । 

পন্রবধ্‌ দেখিবারে চলিল ধাইয়া | 
পাশ্চমবঙ্গের মনসা-উপাসনার বৈশিষ্ট্য জানায় ক্ষেমানন্দের কাব্য সহায়তা করে ॥ 


ষ্ঠ অপ্যাল্স 
সাহিত্যে ও সমাজজীবনে চৈতন্যদেব 
(চৈতন্যজীবন কথা অষ্টম অধ্যায়ে ) 
বাঙালী সমাজজীবনে চৈতন্যের প্রভাব 


ঘনঘটা দেখা দেয়ান। তবু যাীকছু ঘটেছে তার সবই বাঙালীর কাছে বিশেষ, 
তাৎপর্যময়__বাঙালীর সংস্কাঁতি, বাংলা ভাবা ও সাহত্য-_বাঙালীর সকল মানস- 
সম্পদের উপরই তার প্রভাব চিরকালঈন। একক ব্যান্তিত্বে একটি জাতির সংস্কণতকে 
এতথাঁন প্রভাবিত করা পাঁথবীর ইতহাসে খুব কম মনীধার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। 
নবান্যায় চার পাঠস্ধান নবক্বীপে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম। 
প্রথম জীবনে তিনিও ছিলেন শিক্ষক। তেইশ বছর বয়সে গয়াধামে পিতকত্যে 
করতে গিয়ে বিফুপাদপদ্ম দর্শনে তাঁর মনে দেখা দিল অপর ভাবমাধুর্য'। 
ভন্ত-সন্ন্যাসী ঈশ্বর পুরীর কাছে তান গোপাল মন্তে দশীক্ষত হলেন। ভাবোন্মন্ত 
কফপ্রেম-পাগল নমাই ফিরে এলেন নকদ্কীপে । মধুময় কফপ্রেম শ্রীবাসের 
অঙ্গন ছাঁড়য়ে নগরের পথে পথে ধানত হল তাঁরই উৎসাহে ৷ নগরীর কোলাহলময় 
জীবনে একে আঁভশাপ রুপেই গ্রহণ করল শাসকশ্রেণী । কিন্তু নিমাই-এর' 
চেষ্টায় প্রকাশ্য নামসংকাঁত'নে স্বাধীনতা পেল বৈষ্ণব সমাজ ৷ অতঃপর চ্বণ 
বছর বয়সে কাটোয়ায় কেশব-ভারতার কাছে মন্রদীক্ষা 'নিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন 
নিমাই। সন্ন্যাসজীবনে তাঁর হল শ্রণীকফটৈতনা, সংক্ষেপে শ্রীচৈতন্য। 
পরিব্রাজক বেশে সারা ভারত প' ও | র তাঁর কাটল, 
পারলে | সেখানেই তান ইহলীলান ানরদশেষ ০০৮ 


আর ছিন্দুধর্ম হয়ে উঠোঁহল আচার ও মনন প্রধান ধর্ম। বৌদ্ধ ও তান্ত্রিক আচার 


গা! 
দেবগততও ও পদ্জা' 
ক ও দাম 
তির জাগরণে ( মানাসি জিক ) দৈবাশাস্তর আরাধনায় তন্দোস্ত আচারের 


VE 


মধ্যযুগ 49 


আঁভধায় আখ্যাত করেছেন। বস্তৃত উনিশ শতকীয় নবজাগরণের আগে বাঙালী 
সমাজ জীবনে চৈতন্যই রেনেসাঁস বা নবজাগরণের বীজ বপনে সমর্থ হন। 

চৈতন্য ্রবার্তত ধর্মের নাম গোঁড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম । বাংলাদেশ, উাঁড়ষ্যা, মণিপুর, 
দাঁহ্মণ ভারত ও পশ্চিমে বন্দাবন পর্যন্ত এই ধর্মমতের বিস্তার ঘটে । উড়িষ্যার রাজা 
প্রতাপরুদ্র, বিজয়নগরের মহামন্ত্রী রামানন্দ, চৈতন্য প্রবাঁতত ধর্মের প্রীত অনুরন্ত 


. হন। গোঁড়রাজ হ:সেন শাহের দুই মন্ত্রী রুপ ও সনাতন চৈতন্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ 


করেন। ফলে চৈতন্যের আবিভবি ভারতীয় সমাজজীবনে একাট নূতন ধমণমতের 
উদ্ভব ও বিকাশ ঘটায় যে ধর্মের মুল কথা, 'কাঁলযুগে ধর্ম হয় নামসৎকীর্তন', এবং 
প্রেমধন আর্তি বিনে না পাই কৃফেরে'। এই প্রেমধর্মের প্রাবনে বাঙাল সমাজ- 
জীবনে জমা ক্রেদ দীর্ঘাদন পরে ধুয়ে মুছে যায়। 

্রা্সণ্যধর্মের সংকীর্ণতা ও অহমিকায় আঁভমানী তথাকাঁথত অন্তযজ শ্রেণী 
আত্মরক্ষা ও সামাজিক শ্রাতষ্ঠায় দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করাঁছল ৷ বৌদ্ধরাও 
অনেকে ব্রাহ্মণদের নিপাঁড়নে উত্তনত হয়ে একই পন্থা অনুসরণ করে। চৈতন্যপপ্রবার্ত ত 
ধর্ম তাদের জন্য একটি নৃতন ধর্মের সন্ধান দিল, যে-ধর্মে জাঁতভেদ নাই, জাতি- 
খৃবদ্বেষ নাই, মানুষে মানহষে ভেদ নাই, আছে পারস্পাঁরক প্রণীতবোধ এবং অহমিকার 
পরিবর্তে বিনয়। এই বিকল্প ব্যবস্থাই গ্রহণনয় হয়োছল সর্বস্তরের বাঙালীর 
কাছে। ফলে নতন ভাবাদর্শে নব সমাজ সংগঠনে প্ৰাণত হয়োছিল বাঙালী । 

শাসক মৃসলমানের কাছে সাধায়ণ হিন্দ ছিল উপোক্ষত নাগাঁরক ৷ তাদের ধমচিরণে 
নানা বাধা-বিপান্ত ছিল। প্রাণের ভয়ে বাঙালীও এই ব্যবস্থাকে মেনে নিয়োছল ৷ 
এমনকি একাংশের ধারণা ছিল, ধহন্দুর পাপের যোলকলা পর্ণ হতেই আল্লারূপে 
দেখা দিয়েছেন ভগবান, সুতরাৎ সামাজিক আঁবচার পাপের ্রায়ান্চন্ত__বিধাতারই 
শবধান। বাঙালীর এই বাঁচত্র সহনশীল মানাঁসকতায় মনব্যযত্বের পৃতবারধারা 
দসণ্টন করলেন শ্রাচৈতন্য, উৎপণীড়তের রক্ষাকবচ॥ নবদ্বীপের একদল নাগারকের 
আবেদনে কাঁজ যখন প্রকাশ্যে নামসংকীর্তন বন্ধ করার আদেশ দিলেন, শ্রীচৈতন্যের 
ক্ষোভ ও ব্যান্তত্বের প্রভাবে সে আদেশ প্রত্যাহার করতে হল কাজকে । শাসকের 
রন্তচঞ্ু পরাজিত হল দেবোপম পৌরুষের কাছে। বাঙালী জানল সহ্য নয়, 
প্রীতবাদই প্রাতকারের একমাত্র অন্ম। বাঙালীর নীর্জত জীবনে ভয়ীবহবলতার 
পাঁরবর্তে দেখা দিল প্রাণচাগল্য ॥ 

শাসককুলের অনুকরণে আভজাত বাঙালীজীবনে তখন ইসলামী রশীতর প্রত 
আনুগত্য প্রবল । আঁভজাত্যের চিহ্ন হয়েই তা দেখা দিয়েছে । এর ফলে বাঙালণ 
আীতহ্য ও সংদ্কাত তখন ধবপর্যয়ের মুখে । এই সংকটের দিনে হিন্দুর সৎস্কৃতি- 
চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে বাঙালী সংস্কৃতিকে স্বক্ষেত্রে প্রাতাণ্ঠত করলেন শ্রীচৈতন্য 
_ জগাই-মাধাই-এর মতো দুব্ত্ত রাজকর্মচারীও দশীক্ষত হল তাঁর নবমন্দে। 
সাংস্কৃতিক নবজাগরণ শ্রীচৈতন্যের স্মরণীয় অবদান । 


11... 


50 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


তারই. প্রভাব বাঙালীর প্রাত্যাহক সমাজ-জীবনে, তার আচারে-ব্যবহারে' 
বৈষঃবগয় বিনয়, তুলসীর গলবন্ঠী, পুরোহিতের-নামারাল, দেহে গঙ্গামত্তকায় নাম 
ও পদাঙ্ক ধারণ, গৃহসম্মখে তুলসাকুঞ্জ স্থাপন, গাহস্থ্য অনুষ্ঠানে ও মৃতের 
সংকার যাত্রায় নামসথবঈর্তন ইত্যাদ রীতিগবালর বহল প্রসার তাঁর গ্রবার্তত বৈষ্ণব 
ধর্মেরই ফলশ্রদীত। 


গতানুগাঁতকায় বুদ্ধত্রোত সাহত্যও পেল' গতির সন্ধান। মঙ্গলকাব্য ইত্যাদি 
প্রচাঁলত সাঁহত্যধারা যেমন সঞ্জাবিত হল, তেমনই নবীন একাধিক ধারা সংয-ন্ত হল ! 
সঙ্গঘতমূখর সমাজে আঁবিভবি ঘটল শতকাবর-_রচক শুধু. হিন্দু নয় মসলমানও, 
গারকের ও শ্রোতার দলেও তাদের স্থান ৷ জঙ্গীতপ্রেমে মহাসীম্মলন ঘটল হিন্দ 
মুসলমান দুটি সপ্প্রদায়ের। সাহত্যের পরোক্ষ, প্রভাবে সমাজ-জীবনেও বিবর্তন 
দেখা দিল । এইভাবে বাঙালসর চিন্তা-ভাবনা-কম্পনায়, কর্ম সাধনায় ও জীবনচর্থায় 
শ্রীচেতন্য হয়ে থাকলেন এক শাশ্বত প্রাণপ্‌রুব ৷ 


বাংল। সাহিত্যে চৈতন্যদেবের প্রভাব 


বাঙালীর ধর্মে-কর্মে-মননে চৈতন্য এনেছিলেন নবজাগরণ ৷ একটি শানা্জভি 
জাতি তার কাঁ্ক্ষি প্রেরণা লাভ করল চৈতন্যের আবিভাবে। জীবনাচরণে ও ধর্মে” 
আচারসর্ব্বতার পাঁরবর্তে দেখা দিল হদয়ানূভাত। অনুভবের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ 


চিরকালই তো স্াহত্য। বাংলা সাহিত্য তাই চৈতন্য জীবনী ও বাণীতে নবরসে! 
উজ্জীবিত হল। 


মঙ্গলকাব্যগণীলর গতানহগাঁতক ধারায়, ক:ফপ্রেম-আখ্যানে অথবা রামায়ণ-মহাভারত 
ইত্যাদি পুরাণ-অনুবাদে উন্নত সাহাত্যক গুণাবলীর অভাব ছল চৈতন্যপ্ব“ যুগে । 
চৈতন্যের সমকালে এবং পরবর্তী ভিনণ' বছরে পণ্ডিত ও রসক্জ ব্যা্তিরা সাহিত্য- 
সেবায় অগ্রসর হলে ভাষার গান্তার্য ও প্রকাশলাবণ্যে পূর্ববর্তী সাহিভ্য-উপাদান 
শ্রেষ্ঠ সাহিত্যে উন্নীত হল ৷ চৈতন্য চীরণের প্রভাৰ তখন নায়ক চাঁরন্রে, চৈতন্যধর্মের 
প্রভাব ঘটনা সান্নবেশে। কত্তিবাস, ম:কন্দরাম অথবা নারায়ণদেব, মধ্যযগের সব 
শ্রেষ্ঠ কবিই বৈবধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে চার্-নিাণ করেছেন, ঘটনা সনবোৌশত 
করেছেন তাঁদের কাব্যে, যা ভা্তর প্রকাশ বা বৈফবীয় চিন্তারই নামান্তর । কাত্তবাস 
চিত্রিত তরণীসেন রামভন্ত, কিন্তু তার ভাস্তির প্রকাশ বৈষব-রীতিরই অনুগামী ৷ 
সবেপিরি, টৈতন্য-অনুসারীদের চেষ্টায় তৎসম শব্দবহুল বাংলাভাষা তখন শ্রেষ্ঠ 
সাহিত্য রচনার উপযোগণী। বৈষ্ণব কারা শ্রীমন্ভাগবত অনুবাদ করেছেন, সংস্কতে 
সাহিত্যের অনুসরণে বাংলার কাব্য রচনা করতে গিয়ে তৎসম শব্দবাহল্যে 
প্রচীলত সাহিত্যধারাকে তরা যথেষ্ট সমদ্ধ করেছেন। ধর্মমঙ্গল কাব্য তে? 


জল MRE. GEE 


মধ্যযুগ 5] 


ভাগবতের আদশেই রচিত। রামচন্দ্র ও কফ, বিষ্ণুর অবতার রুপে পরিচিত 
হওয়ায় রামায়ণ-মহাভারত ও 1বঞ্চুপহুরাণের সঙ্গে বাঙালীর একাটি অচ্ছেদ্য সম্বন্ধও 
স্থাপিত হয়। 


চৈতন্যের বাণী, 'কলিষুগে ধর্ম হয় নাম-সংকার্তন।' [তান ও তাঁর অনুচরবূন্দ 
নাম-সৎবধর্তনকে সাধনা রূপে গ্রহণ করায় বৈষ্ণব পদাবলী সাহত্যের {বকাশ সম্ভব 
হল । চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস প্রমুখ শ্ৰেষ্ঠ পদরচাঁয়তারা চৈতন্যধর্মকে 
আশ্রয় করেই বাংলা সাহিত্যের শ্রীবাদ্ধ ঘাঁটয়েছেন। যোড়ণ থেকে অষ্টাদশ 
এই িনশ' বছর ধরে বাংলা সাহিত্যের একটি মুখ্য ধারা বৈষবপদাবলী 
সাহত্য ৷ 

এতাঁদন দেবতাই ছিলেন বাংলা সাহিত্যে উপজীব্য । চৈতন্যের দেবোপম 
চীরত্রকে উপলক্ষ করে মানব দেবতার আসন গ্রহণ করল। রাঁচত হল “গৌরচান্দ্রকা'__ 
রাধাক্‌ফণ প্রণয়লগলার অনুসরণে গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ । 


গোবিন্দ দাসের অনবদ্য পদাবলীর অনেকগাঁলই গৌরাঙ্গ বিষয়ক অথবা 
‘“গোরচণ্দ্রিকা'র [পদ । চৈতন্য যেহেত; 'অন্তঃক্ণ বাঁহগোঁর’, রুপে ভাবত হয়ে? 
একই অঙ্গে রাধা ও ক্‌ফরুপে কাঁলপত হয়েছেন রাধাক্ণ 'লীলানহসরণে গোৌরচীন্দ্রকায় 
টৈতন্যের অনুরূপভাবের পদ রাঁচত হয়ে বাংলা সাহিত্যে নব পদধারার সূচনা 
করল। 

টৈতন্য-জীবন-মহিমা প্রচারে তাঁর জীবনী অবলম্বনে চঁরিত-সাহত্যও রাঁচত হল । 
দেখা দিলেন বাংলা সাঁহত্যেরচাঁরত-সাহত্য রচায়তা বৃন্দাবন দাস, কাস কাঁবরাজ, 
জয়ানন্দ, লোচন দাস প্রমুখ কাঁবগণ । মানুষের জীবনীও যে শ্রেষ্ঠ কাব্য-সাহত্যে 
রূপায়িত করা সম্ভব তারই {দৰ্শন উপহার দিলেন তাঁরা । শুধু চৈতন্য জীবনী নয়, 
তাঁর অনূচর অদ্বৈত, নিত্যানন্দ প্রমুখের জীবনী অবলম্বনেও সাহিত্য রচিত হয়েছে 
এ-সবই টৈতন্যের প্রভাবের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ফল । 


প্রাচীন ও মধ্য যুগের বাঙালী হীতহাস সম্পকে উদাসীন । তাই এই কালপর্বে 
কাব্য যত রচিত হোক, ইতিহাস নিষ্ঠার পরিচয় তেমন পাওয়া যায় না । কাব্যের মধ্যে 
প্রসঙ্গত ইতিহাস আলোচনা যত্টুক আছে তা-ই আমাদের সম্বল । চৈতন্য, 
নিত্যানন্দ, অদ্বৈত অথবা তাঁর পত্নী সীতাদেবীর জশবনশ নিয়ে যে চাঁরতসাহত্য 
রচিত হয়, তাতে শুধু ব্যক্তিগত জীবন কথাই নাই, আছে সমসামায়ক ইতিহাস । সে 
ইতিহাস যেমন সমকালীন বৈষ্ণব সমাজের, তেমাঁন বাঙাল সমাজেরও ৷ চৈতন্যের 
আ'বভাবের ফলশ্রীততেই তা লাভ করা 1গয়োছিল। 

প্রাক-চৈতন্যযগের কাঁবদের রচনায় বাংলাভাষার বাশণ্ট রূপটি ফুটে উঠোছল, 
কিন্তু তার সাহায্যে মহৎ কাব্যসঘ্টি সম্ভব হয়ান । তাকে ন্ট সাঁহত্যের উপযোগী 


52 ংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


করা গেল চৈতন্যের আবিভাবের ফলে । বস্তুত যা ছিল গ্রামীণ সাহিত্যে সীমাবদ্ধ, 
টৈতনোর প্রভাবে তা চিরকালীন সাহিত্যে রপোন্তারত হল । পুরাতন স্বাহত্যশরীরে 
নব লাবণ্য, বান চিরায়ত সাহত্যসন্টি, সাহিত্যের নানা শাখার উদ্বোধন ও বিকাশ, 
চৈতন্যের অনুপম চাঁর্র ও তাঁর প্রবর্তিত ধর্মকে আশ্রয় করেই দেখা দিয়েছিল । 

চৈতন্যের আবিভবি ও প্রভাবে বাংলা ভাষারই শব্ধ শ্রীবাদ্ধি ঘটেনি, ব্রজবুলি 
নামক একটি কৃত্রিম সুলালত ভাষারও বিকাশ ঘটেছে । মিথিলা প্রত্যাগত শিক্ষিত 
বাঙালীর দ্বারাই তার স:ষ্টি হয়োছল। কিন্তু চৈতন্য-পরবতাঁ বৈষ্ণব কবিদের হাতে 
ঘটে তার বিকাশ । 


সপ্তম জধ্যাল্জ 
চণ্ডীমঙ্গল কাব্য 


-দেবপ চণ্ডীর আখ্যান সক কাব্য চণ্ডীমঙ্গল কাব্য । বাংলা সাহত্যে চ'ডীমঙ্গল 
কাব্যের আঁবভবি মনদামঙ্গলের পরে, কিন্তু বাংলা দেশে চণ্ডী আত প্রাচীন দেবী । 
আর্য আগমনের আগে থেকেই চণ্ডী অস্তাজ শ্রেণী দ্বারা পূজিত হয়েছেন । মাক'চ্ডেয় 
পুরাণেও (খতীঃ ৩য় শতক ) দেবা চণ্ডর বিস্তৃত পরিচয় আছে। ইনি অসরদলনী, 
মাহধাসুরাবনাশিনী। ইনি শিবপত্ী, ?শব-শান্তও । অপোঁরাণিক ও পৌরাণক 
এই দই ধারার মিলন ঘটেছে চণ্ডামঙ্গল কাব্যে । 


"চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কান 


দেবা চণ্ডীর মাহাত্মযমুলক কাব্য চণ্ডীমঙ্গল কাব্য । এই কাব্যের দুটি কাহনী 
'যথারুমে “আখোটক খণ্ড' ও ‘বণিক খণ্ডে বিবৃত হয়েছে । আখেটিক অর্থ ব্যাধ । 
এতে প্রমাণ পাওয়া যায়, দেবী চণ্ডীর পুজা প্রথমে আেতর সমাজে প্রচালত 
হয় এবং পরে অভিজাত শ্রেণীর (বাণক ) মাধ্যমে এই পুজার প্রচলন সমাজের 
সর্বস্তরে ঘটে । 


চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের প্রথমে আছে হর-পার্বতীর লীলা । এই বর্ণনার পরে শুরু 
হয়েছে যথাক্রমে 'আখেটিক খণ্ড ও ‘বণিক খণ্ড'। 


আখেোঁটক খণ্ডঃ দেবী চণ্ডীর অভাবের সংসার । তাঁর স্বামী শিব আত্মভোলা, 
এমশানবাসী ভিক্ষোপজীবী | স্বামী-্ত্রী সুখের মুখ দেখেন না, নিত্য করেন 
ঝগড়া । সহচর পদ্মা দেবীকে উপদেশ দিলেন মর্তে পুজা প্রচালত হলেই তাঁর 
দুঃখ ঘুচবে। চণ্ডী চাইলেন ইন্দ্রের পত্র নগলাম্বরকে দিয়ে মতে তাঁর পুজার 
প্রচলন । এ ব্যাপারে তান শিবের সাহায্যও চাইলেন ৷ কিন্তু নিরপরাধ নীলাম্বরকে 


শিব মর্তে পাঠান কি করে! 


দেবী নিলেন ছলনার আশ্রয় । ইন্দ্র শিবোপাসক। পূজার ফুল তোলার ভার 
নীলাদ্বরের উপর। একদিন দেবীর মায়ায় স্বর্গের উদ্যানে কোনো ফুল দেখতে 
না পেয়ে নীলাদ্বর মর্তে এল পন্পসংগ্রহে। সে দেখতে পেল ব্যাধের মত্ত জীবন । 
কামনা করল সেই স্বাধীন জীবন। এদিকে তার অন্যমনস্কতার অবসরে ফুলের 
মধ্যে চণ্ডী কীট রুপে আশ্রয় নিলেন এবং ইন্দ্র যখন শিবের উদ্দেশে পুজার ফল 
ধনবেদন করছিলেন, তিনি শবকে দংশন করলেন। বিষে কাতর শিব বরন হয়ে 


আঁভশাপ দিতে চাইলেন ইন্দ্রকে। অবশেষে নীলাম্বরের ভুলেই ফুলে কীট থেকেছে 


54 বাংলা সাহিত্যের ইীতহাস 


এবং ফল তোলার সময় সে ব্যাধের জীবন কামনা করেছিল জেনে শিব তাকে মতে 
ব্যাধরংপে জন্মাবার অভিশাপ দিলেন। ধর্মকেতুর পত্র কালকেতু রূপে জন্ম নিল 
নীলাম্বর, আর সপ্টয়কেতুর কন্যা ফুল্লরা রুপে তার পত্নী ছায়া । 
এগার বছর বয়সে রূপবান কালকেতুর সঙ্গে বিয়ে হল ফুজ্লরার। পিতামাতার 
বার্ধক্য সংসারের ভার পড়ল তাদের উপর ৷. কালকেত্‌ যেমন সাহসণ তেমান 
অব্য্থলক্ষ্য। নিয়ামত সে পণ শিকার করে আনে আর ফুজলরা হাটে-বাজারে 
সেই মাংস বাকি করে। অনটন জত্তেৰও তাদের সুখী জীবন। এঁদকে কালকেতুর 
পরাব্রমে কাতর কলিঙ্গ দেশের বন্য পশুর দল প্রাণের দায়ে দেব চণ্ডীর শরণাপন্ন 
হল। দেবাঁও তাদের অভয় দিলেন। [তান একদিন সোনালি গোসাপের রূপ ধরে 
বনের পথে পড়ে রইলেন আর মায়া বিস্তার করে অদশ্য করে দিলেন সমস্ত পশ:- 
28 যাত্রাপথে স্বর্ণ গোধিকা দর্শন অমঙ্গলসূচক | কালকেত তা দেখে রন্তু 
বু গশ*র সাক্ষাৎ না পেয়ে তাকেই বেধে আনল । উদ্দেশ্য, সেদিন 
রি টু রা নত দিনটি বিষণ করল ফুজ্লরাকে। কারণ, তারা 
সা ৪ চলল সইয়ের বাঁড় থেকে খুদ ধার করতে, আর 
চন হা ু য়েবাজারে। উভয়ের অনুপাঁস্থাততে বন্দঘ চণ্ড 
দেখে স্বামীর চরহ সম্পকে নদ ১781 
তা তি হল, কালকেতু হল 'বাঁস্মত। পরিশেষে 
দর রি ডি এ রি he নে দেবী সন্তুষ্ট হয়ে তাকে দিলেন 
নগর বি টি Ll নানি ৪ প্রাতষ্ঠত হল গুজরাট 
সেইসঙ্গে 'এল ভাি খে বসাতিস্থাপন করল। কিন্তু 
রা নামে এক শঠ ব্যান্ত। তার বাঁধ ও বাকচাত্‌্যে” মধ 
৮ থ বধা 
জাল, 515৭ দিল, কিন্তু তারই সুযোগে সে নানা অন্যায়ভাবে 
EEE ৮১, গ কালকেতু তাকে নিবাঁসিত করল 
নাসা টি a পাশ্ববর্তী রাজ্য কলিঙ্গের রাজাকে উত্তোঁজত 'করে 
আত্মরক্ষার চেষ্টা করছিল, ভি টি নি নাত বক্তারা নু 
রিল ke লি সে বন্দী হল কালঙ্গরাজের হাতে এবং 
দেবা চ্ডার স্বন্নাদেশে কলিঙ্গরাজ কালকেত:কে মুত 
দিলেন। তার রাজ্যও 'ফাঁরয়ে দিলেন। দেবীর কৃপায় তার মৃত সৈন্যরাও 
পুনজাঁবিত হল । কালকেতু সানন্দে ফিরল নিজ রাজ্যে । উপায়ান্তর না দেখে 
ভাঁড় এবার কালকেতকে তুষ্ট করতে মনোযোগ হল। কিন্তু তার সে চেষ্টা ব্যর্থ 
হল। কালকেত; তার সব সম্পীত্ত বাজেয়াপ্ত করল । অবশ্য পরে তার সীমাহধন 
দুঃখকথ্ট দেখে তাকে ক্ষমাও করল। কালকেতু দেবা চাণ্ডকার মন্দির বানিয়ে মর্তে 
দেবীর পূজা প্রচারের যথাযোগ্য ব্যবস্থা করল। কিছুকাল সুখে রাজত্ব করল 
কালকেত: ৷ ইতিমধ্যে তাদের অভিশাপের দন শেষ হল, দেবীর উদ্দেশ্য হয়েছে 
গন্ধ ৷ পান্রের হাতে রাজ্যপাট অর্পণ করে স্বগে“ {ফরে গেল নীলাম্বর ও ছায়া?। 
আখোঁটিক খণ্ডের এখানেই সমাপ্তি । 


মধ্যযুগ 55 


বাঁণক খণ্ড ই - 
বাঁণক খণ্ডে আভজাত বাঁণক পরিবার দ্বারা মতে চণ্ডীপৃজা প্রচলনের কথ 


বলা হয়েছে। 
স্বর অপ্সরা রর্রমালা । চণ্ডী চাইলেন তাকে দিয়ে মর্তে নিজ পুজো প্রচলিত 


করতে । সুতরাৎ সুরসভায় নৃত্যের সময়ে তালভঙ্গ হল রত্রমালার । চণ্ডী তাকে 
অভিশাপ দিলেন । লক্ষপাঁত বাঁণকের ঘরে জন্ম নিল রত্বমালা। নাম খুলনা ৷ 

উজান” নগরের বাঁণক-প্রধান ধনপাঁত সদাগর ৷ পায়রা ওড়ানো তাঁর এক শখ । 
একদিন তাঁর এক পায়রা আশ্রয় ননল খুজলনার অণ্ডলে। পায়রার খোঁজে এসে 
ধনপাঁত দেখলেন খ:ুজ্লনার অতুলনীয় রুপ। ধনপতি [বিবাহিত এবৎ তাঁর পড়ী 
লহনা বন্ধ্যা । ধনপাঁতর আগ্রহে খব্লনার সঙ্গে বিবাহ হল তাঁর। লহনার তীব্র 
আপাঁত্ত দূর হল একটি পর্টবস্ত ও পাঁচ তোলা সোনা অলৎকারের জন্য দিয়ে ৷ 

রাজার প্রিয় পাঁখ শুক-সার । তাদের জন্য চাই সোনার খাঁচা । রাজা 
ধনপাঁতকে ডেকে আদেশ দিলেন সোনার পিঞ্জরের জনা £ ‘ধনপাঁত যাও ভায়া গৌড় 
নগরে'। ধনপতি যখন বাণিজ্যযান্রায়, দূর্কলা দাসীর প্ররোচনায় লহনা অসাম কষ্ট 
দল খুলনাকে । একটি জালপন্র দেখিয়ে সে খুলনাকে বনে বনে ছাগল চরাতে 
পাঠাল, শুতে দিল ঢৈ“কশালে, খেতে দল এক বেলা আধপেটা, পরতে দিল 'খুঞা' 
কাপড় । এই চরম লাণনার দিনে চণ্ডীর সহচরীরা তাকে শিখিয়ে দিল মঙ্গলচণ্ডীর 
ব্রত পালন করতে । খুলনা ব্রত পালন করে দেবীর কৃপা লাভ করল । দেবীর 
স্বনাদেশে লহনা খুলনার প্রীত সপ্রীতি আচরণও করল | ধনপাঁত দেশে ফিরে ! 
এলে খুলনার সুখের দিন ফিরে এল । কিন্তু ধনপাঁতর সঙ্গে আত্মীয়দের বিরোধ 
বাধল॥ তারা ধনপাঁতিকে জব্দ করার জন্য জানাল ধনপাঁতর অনংপাস্থাততে খক্লনা 
বোঁড়য়েছেন বনেজঙ্গলে ; হয় [তান তাঁর সতীত্বের পরীক্ষা দিন অথবা ধনপাঁত 
জরিমানা হিসাবে দেবেন এক লক্ষ টাকা । ধনপাঁত অর্থদণ্ড দেওয়া সমীচীন মনে 
করলেও খুলনা আপন সতাত্বের পরীক্ষা দেওয়াই স্থির করলেন । সসন্মানে [তান 
উত্তীর্ণ হলেন কিন পরীক্ষাগুলি । লোকে ধন্য ধন্য করল । 

খুলনার সুখের দিন দীর্ঘস্থায়ী হল না৷ রাজার এবার দরকার নীলা, পলা, 
লবঙ্গ, চন্দন, চামরাদ । সেজন্যে ধনপাঁতকে যেতে হবে সংহলে । যাত্রালগ্নে [চান্ডত 
খুলনা স্বামীর মঙ্গলকামনায় ঘট গেতে চণ্ডর পূজায় বসল। ধনপাঁতি শিবভন্ত,. 
স্তর চণ'ডীপৃজা তাঁর সহ্য হল না । চণ্ডার ঘট তান পায়ে ঠেললেন ক্ণীপতা 
হলেন চণ্ডী । সিংহলের পথে ঝড়ে ধনপাঁত দেবীর কোপে হারালেন তাঁর ছাট 
নৌকা | একমাত্র “মধুকর' রক্ষা পাওয়ায় {তনিও প্রাণে বাঁচলেন । সিংহলের পথে 
কালশীদহ ৷ দেবী সেখানে সুন্দরী নারীর বেশে পদ্মের উপর বসে একাঁট হাতি 
গিলে পরক্ষণেই তাকে উগাঁরয়ে ফেলতে লাগলেন ॥ এই অন্তত দ্য দেবীর মায়ায় 
দেখতে পেলেন কেবল খনপাঁত। ধনপাঁতির উপচৌকনে সন্তুষ্ট ?সংহলরাজ তাঁর 


56 ংলা সাহত্যের ইতিহাস 


মুখে 'কমলে কামিনীর কাঁহনী শুনে বিশ্বাস করতে পারলেন না। রাজা তাঁকে 
মিথ্যাবাদী ভাবায় ধনপাঁতর রোখ চেপে গেল। স্থির হল ‘কমলে কামিনী' দেখাতে 
পারলে রাজা দেবেন “অর্ধ রাজ্য, অর্ধ সিংহাসন’ ; না দেখাতে পারলে ধনপাঁতর ভিঙার 
সব সমপাঁত্ত হবে রাজার, আর তাঁকে কাটাতে হবে বন্দীজীবন। ধনপাঁত কিনতু তাঁর 
প্রীত দেবীর অসন্তোষে সেই অভতপূ্ব দৃশ্য দেখাতে ব্যর্থ হলেন। সুতরাং 
কারাগারে নীক্ষগ্ত হলেন তান । 2 
এদিকে খুজ্লনা হয়েছেন পত্রবতস । তাঁর পনর শ্রীমন্ত অভিণাপগ্র্ত গন্ধব 
মালাধর ৷ মায়ের অশেষ যত্নে সে লালিতপালিত । মেধাবী শ্রীমন্ত বর দনাই-এর কাছে 
ববদ্যাচচা করে। একাঁদন গুরু তার নিরাদ্দিষ্ট িতাপ্রসঙ্গ তুলে একটা কটহান্ত 
করলে ক্ষন শ্রীমন্ত মায়ের আদেশ নিয়ে যাত্রা করল [সৎহলে পিতার খোঁজে। একই 
ভাবে কালীদহে দেবীর মায়ায় সে দেখল ‘কমলে কামিনী মুর্তি এবং [সংহলরাজের 
"কাছে প্রাঁতজ্ঞাবন্ধ হল যে এই আশ্চর্য দূশ্য দেখাতে না পারলে 'দক্ষিণ মশানে মোর 
বাধ জীবন’ রাজাও পর্ব প্রীতভ্ঞা করলেন । দেবীর অসন্তোষে একইভাবে ব্যর্থ 
“হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হল শ্রীমন্ত । সেখানে িতাপতত্রের মিলন ঘটল। শ্রীম্তের 
মনে পড়ল দেবীপুজার কথা । একাগ্রমনে সে দেবীর স্তব করল । এদিকে পত্রের 
কল্যাণকামনায় খংব্লনাও চাঁণ্ডকার থারশীত সেবা করছেন ফলে তুণ্টা দেবী 
“মানে বহ্ধা ব্রাহ্মণীর বেশে শ্রীমন্তকে মৃত্যর হাত থেকে রক্ষা করলেন। তাঁরই 
আজ্ঞায় ধনপাঁত ও শ্রীমন্ত পেল মন্ত, সিংহলরাজবন্যা সুশীলার সঙ্গে বিবাহ হল 
শ্মন্তের। চণ্ডী ধনপাঁতর সমুদ্রেডোবা ডিঙা ও ধনরত্বও ফারয়ে 1দলেন। প্রচুর 
'দব্যসন্তার নিয়ে দেশে ফিরল পিতা ও পৃত, সঙ্গে বধু । দেশে রে শ্রীমন্ত রাজা 
'বিক্রমকেশরীকেও কমলে কামনা মুর্তি দেখাল। ফলে লাভ করল রাজকন্যা 
রূপবতীকে । 
এতদিন ধনপাঁত চ'ডীপহজা করেনানি। একদিন [শবপ্‌জায় বসে তান দেখলেন 
শিবের অধঙ্গি জংড়ে চণ্ডী শোভা পাচ্ছেন; বুঝলেন "দুইজনে একতন? 
-মহেশপার্কতী' । ফলে [তিনিও চাঁণ্ডকার সেবায় ব্রত হলেন। 
ধনগাঁতর পাঁরবারদ্বারা মতে প্রচালত হল চণ্ডীপুজা। চণ্ডীর উদ্দেশ্য সিদ্ধ 
-হল। শাগান্তে স্বর্গে ফিরে গেল খুক্লনা ( রত্বমালা ) ও ্রীমন্ত ( মালাধর ) I 


কাঁবপাঁরচয় £ কৰি দ্বিজমাধব 


দ্বিজমাধব বা মাধবাচার্য চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের এক বিখ্যাত কবি। তাঁর কাব্যের 
নাম “সারদামঙ্গল' বা 'সারদাচারত' এবং কাব্যের রচনাকাল ১৫০১ শক বা ১৫৭৯ 


তীঃ। 
le ইন্দ, বন্দু বাণ ধাতা শক নিয়োজিত ৷ 


ধব গায়ে সারদা চরিত ॥ 


মধ্যযুগ 57 


কাঁব সম্রাট আকবরের নামও করেছেন, ‘একাব্বর নামে রাজা অজন অবতার’ । সৃতরাং 
তান ছিলেন আকবরের সমসাময়িক । 

কবির পিতার নাম পরাশর ৷ ত্রিবেণীর কাছে সপ্তগ্রামে তাঁর জন্মঃ পশ্চিম 
বঙ্গে জন্মালে€ কবির কাব্য কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে পাঁরচিত ছিল না ৷ চট্টগ্রাম, নোয়াখালি 
ও রংপ;ুরেই তাঁর কাব্যের বিশেষ প্রচার ছিল । সম্ভবত আণ্টালক অরাজকতার ফলেই. 
কাঁব জন্মভমি ত্যাগ করে চট্টগ্রামে গিয়ে বসাতস্থাপন করেন। তবে তার পূর্বেই 
সম্ভবত তাঁর কাব্য রচিত হয়; কারণ পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক বিবরণ ও নদনদর: 
নামই সেখানে পাওয়া যায়, পূর্ববঙ্গের স্থানের নাম প্রায় অন:ল্লেখিত । 


কাব্যকথা £ 

দ্বিজমাধব উচ্চ কবিপ্রাতভার অধিকারী ছিলেন না । তাঁর যথার্থ কত্ত 
বাস্তব বর্ণনায় ও চাঁরন্রীনমাণে । তাঁর কাব্যে কালকেত,র সংসারের দারিদ্রাচিত্র একান্ত 
বাস্তবধম, ধনপাঁতির কাহিনীও তাই । দ্বিজমাধবের কালকেত; যথার্থ বার, 
মূকন্দরামের কালকেতুর ভশরুতা তার চাঁরন্রে অনংপাঁস্থত। কালঙ্গরাজ্গের- যুদ্ধ সজ্জা: 
দেখে ভয়ে ফুজলরা স্বামীকে যুদ্ধে নিবৃত্ত করতে চাইলে 


শুনিয়া যে বীরবর কোপে কাঁপে থরথর 
শুন বামা আমার উত্তর ৷ 
করে লৈয়া শর গাণ্ডী পৃজিব মঙ্গলচণ্ডী 


বাল দিব কাঁলঙ্গ-ঈশ্বর ॥ 


বন্দী কালকেতু কলিঙ্গরাজের সম্মুখে নীত হলে “বীর প্রণাম না করে) 
বীরত্বের প্রবাদপুর্ষ পুর;কে স্মরণ করায় তার আচরণ । শঠ ভাঁড় দত্তের চার 
অঞ্কনেও দ্বিজমাধব কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, 'মাধুর ভাঁড় দত্ত কবিকঙ্কণের ভাঁড়, দত্ত 
হইতে শঠতায় প্রবীণ ৷ খুলনা, ফণ্জ্লরার চাঁরন্রনিমণেও কাব দক্ষতার পাঁরচয়. 
দিয়েছেন ৷ দ্বিজমাধবের কাব্য সরল, অনাড়ম্বর ও বাস্তবধমর্ণ, এটাই তাঁর কাব্যের, 
বৈশিষ্ট্য । বাঙালী জীবনের নানা শ্যু"টিনাটি পাঁরচয় একান্ত বাস্তবতায় রুপ পেয়েছে 
[দবজমাধবের কাব্যে । খুলনা ও লহনা খেতে বসেছে। বাঙালীর প্রিয় মাছের 
মূড়াটি কে খাবে তাই নিয়ে দ-সতানে পরস্পরকে সাধাসাধি করছে ॥ এই সংযোগে 
মূড়াটি গেল বিড়ালের পেটে । এ ঘটনার বর্ণনা সহজ সরল ভাষায় বর্ণনা করেছেন 


[দ্বজমাধব ৪ 
মুড়া লইয়া পেলাপোঁল বেহ নাহি খায়ে 
উভার উপরে থাকি বিড়াল আড় চোখে চায়ে ॥ 
ধরে ধীরে আড়ে আড়ে গেল পাতের কাছে 
মুড়া লইয়া বিড়াল গেল বাড়ী পিছে ৷ 


58 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


কুদ্বজমাধবের কৌতুক রস পরিবেশনে দক্ষতা, বাস্তবতার প্রতি অনুরাগ এবং 
বাঙালীগরীবনের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলায় দক্ষতা প্রকাশিত হয়েছে উল্লিখিত 
উদ্ধ্শাতাটতে। 

সমকালীন অনন্য প্রাতিভাধর কাব মুকুন্দরামের আঁবভাবে স্বভাবতই 
“তাঁর কাঁব-পাঁরাচাত খুব বেশ প্রসারলাভ করোনি । 


কৰি যুকুন্দরাম 


কাঁবকগ্কন মুক্মন্দরাম চক্রবতর্শ কেবলমাত্র চণ্ডীমঙ্গল কাব্যেরই নয়, সমগ্র 
মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কাঁব। ভাষাপ্রয়োগে ?নপৃণতায় ভারতচন্দ্র অবশ্যই তাঁকে ছাড়িয়ে 
‘গেছেন, কিন্তু কাব্যের অন্যাবধ গুণাবলীর বিচারে মুকুন্দরাম নিঃসন্দেহে শ্রেয়। 
কাহিনী-রুপায়ণ, চারন্র-চত্রণও জীবনরস প্রকাশে মুকুন্দরাম প্রাক-আধীনক বাংলা 
সাঁহত্যে অনন্য । [তান জীবনের হলাহল পানে বিষগ্ন হলেও শুধু করুণরসে সিন্ত 
করেননি কাহিনী । আবার দেবামাহাত্্য বর্ণনা করতে গিয়েও ভোলেনান মানুষ ও 
এসমসামাঁয়ক সমাজের কথা। জীবনানরাগ তাঁর কাব্যের স্মরণীয় সম্পদ ৷ 


কাঁবপাঁরচয় ৪ 


মুকন্দরামের সংবেদনশীল মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল ব্যান্তগত ও 
“তৎকালীন সামাঁপ্রক দুঃখময় স্মতি। প্রৌটি বয়সে কাব্যরচনাকালে সুখের মধ্যেও 
সমানভাবে জাগরুক ছিল তাঁর যৌবনের দঃখস্মীতজবালা । “'আত্মপারচয় অংশের 
“প্রত ছত্রে তারই বেদনানিধাস । 

বর্ধমান জেলার রত্না নদীতীরে দামুন্যা (দাঁমন্যা) গ্রামে ছিল কাঁবর আদি 
এনবাস ৷ ছ-সাত পুরুষের ভিটায় “চাষ চাঁষ’ তান জীবিকা নির্বাহ করতেন । 
দামুন্যা ছিল সেলিমাবাজ অপ্চলের অধীন ৷ তালুকদার গোপানাথ নন্দীর আশ্রয়ে 
সপরিবারে কাঁব ভালই ছিলেন। রাজ্যব্যাপী অরাজকতার সুযোগে গোপানাথ 
হলেন বিনাকারণে বন্দী, তাঁর সম্পান্ত বাজেয়াপ্ত হল । 'প্রজার পাপের ফলে’ মামুদ- 
শরীফ আধকর্তা হয়ে বগল | রাজ্য জুড়ে তখন মাৎসন্যায়। প্রজার আর্থিক অবস্থা 
শোচনীয়, তায় খাজনার পরিমাণ বহ্‌গৃণিত। “ধান্য গরু কেহ নাহ কিনে'; এক 
টাকার 'জানস বিকোয় দশ আনায় । রাজকর্মচারী ও মহাজন দুই শোবকের হাত 
থেকে নিক্কাতি পেতে প্রজারা পালাতেও পারে না, চৌকিদার টহল দিচ্ছে। এই 
শোচনীয় দুঃসময়ে শরীমন্ত খাঁর সাহায্যে ও গন্তীর খাঁর পরামর্শ নিয়ে মুকক্দরাম 
পরী, শিশুপত্র, ভাই ও অন:চর দোমোদর নন্দা) সহ সাতপ:র:বের ভিটা ছাড়লেন 
মাত্র ক্লোশ দেড়েক দূরের গ্রাম ভালিঞায় রূপ রায় তাঁর সর্বস্ব লু্ঠন করল॥ নিঃস্ব 

হলেন কাঁব। অবশ্য কাব আশ্রয় পেলেন যদ: কুণ্ড তৌলর বাড়তে ৷ যদ রী 
শঁতন দিবসের দিল ভিক্ষাণ ৷ এর পর মুড়াই নদী (মুণ্ডেশ্বরী) পার হয়ে ভেঙদাওর 


মধ্যযুগ 59 


গ্রাম ; সেখান থেকে দারিকেশ্বর ও পরাশর নদপার হয়েগোচাড়য়ায়পেশছুলেন তান । 
তাঁর দুর্দশা তখন চরমে । তৈলহান স্নান করে, শাল্‌ক ফুলে গ্‌হদেবতার পুজা 
করে, জলপান করে ক্ষুন্নি-বৃত্তিতেও কবির দুঃখের পরিসমাপ্তি ঘটল না, কারণ, 
শশহ কান্দে ওদনের তরে ।' (“তৈল বিনা কৈল'্‌ স্নান করিল? উদক পান। শিশু 
কান্দে ওদনের তরে') ক্ষুধার্ত শিশ: তো বাবার দ:ঃখ বোঝে না। সেখানে 
ঠকছ;ক্ষণ বিশ্রামের পর শুরু হল পুনরায় পথ চলা । শিলাই নদী পার হয়ে কবি 
এলেন মেদিনীপুরের আড়রা গ্রামে। রাজা বাঁকুড়া রায় সচ্জন। তাঁরই আশ্রয়ে 
সুখের মুখ দেখতে পেলেন কবি, জীবন কাটালেন তাঁরই আশ্রয়ে থেকে । 
বাঁকুড়া রায় তাঁকে পুত্র রঘুনাথ রায়ের গৃহশিক্ষক নিফুন্ত করলেন ঃ 
সংধন্য বাঁকুড়া রায় ভাঙ্গিল সকল দায় 
শিশুপাশে কৈল নিয়োজিত ৷ 

বাঁকুড়া রায়ের মৃত্যঃর পর রাজা হলেন রঘুনাথ। তাঁরই অনুরোধে মুকুন্দরাম 
{লিখলেন অভয়ামঙ্গল । 

কালজয়ী কবিকৃতিত্বের অধিকার কবকশকণ মুকুন্দরাম মধ্যযুগের বাংলা 
সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কাঁব। তাঁর রচিত চ'্ডাঁমঙ্গল কাহিনীর নাম 'অভয়ামঙ্গল” ॥ 
মুক্ন্দরাম কবিকগকন উপাধি লাভ করেন । সেই অনুসারে ‘কবিকগকন চণ্ডী, 
নামে তাঁর কাব্যটি বিশেষ পরিচিত। কাব্যের রচনাকাল সম্পকে সঠিক কিছু 
জানা না গেলেও ষোড়শ শতকের শেষ দিকে কাব্যটি রচিত হয় বলে অনুমানের 
সপক্ষে অনেক যুক্তি আছে। সমসামায়ক হীতহাস সমাজ ও সাহিত্য অপুর্ব 
প্রাতভায় সাঁম্মলিত হয়েছে 'অভয়ামঙ্গলে' । প্রায় চারশ’ কবিতা ও বিশ হাজার ছত্রের 
এই বিপৃলারতন কাব্যটিতে 'মহাকাব্যের গুণ কিছু কিছু আছে।” ব্যন্তিক অনুভতি 
ও ইতিহাসের সমন্বিত রুপ কাব্যাটিতে । চারব্রানমণিকৃশলতারও এক অনন্য দৃষ্টান্ত 
কাব্যটি। 


কবি মনুকন্দরামের কাব্যে সমসামাঁয়ক সমাজ £ 


'অভয়ামঙগলে র রচনাকাল ষোড়শ শতকের শেষভাগ । বাংলার শাসন তখন পাঠান 
থেকে মোগলের হাতে হস্তান্তরিত হওয়ার কাল। পাঠানক্ষমতা নিঃশেযিত, দিল্লির 
শাসনেরও সূচনা হয়নি । এই সময় দেশে চলছিল চরম মাৎসন্যায়। স্থানীয় 
ভ্‌স্বামীরা বিনাকারণে বন্দী হতেন, তাঁদের সম্পত্তি হত বাজেয়াপ্ত। ধনী-নির্ধন 
নির্বিশেষে সকলেই ছিল এই অরাজকতার শিকার। তারই সুন্দর চিত্র এ'কেছেন 
টস উজির হল্য রায়জাদা বেপারে দেয় খেদা 

ব্রাহ্মণ বৈষবের হল্য আর । 
মাপে কোণে দিয়া দড়া পনর কাঠায় কুড়া 
নাহি শুনে প্রজার গোহারি ৷ 


60 খলা সাহিত্যের ইতিহাস 


সরকার হইল কাল খিলভূমি লিখে লাল" 
বিনা উপকারে চায় ধৃত ৷ 
পোতদার হইল যম টাকায় আড়াই আনা কম: 
পাই লভ্য লয় দন প্রতি ৷ 
মন্ত্রী হল রাজা, ব্যবসায়ীরও চরম দ্ার্দন, ধর্মীয় শত্রুতাও ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ" 
করল। কোনাক:নি মেপে পনের কাঠা জাঁমর পাঁরমাণকে এক বিঘা ধরে নেই 
অনুসারে খাজনা বসল ৷ রাজকর্মচারীরা আনাবাদ (খিল) জাঁমকেও উর্বর 
(লাল) জাম রূপে গণ্য করে খাজনা ধার্য করল। উৎকোচ গ্রহণও চশল। 
মহাজনেরা টাকা-প্রাত আড়াই আনা কম দেয়, আবার নেয় চড়া সুদ । এ দ:রবস্থায়; 
প্রজার প্রাণ ওষ্ঠাগত । অথচ তারা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য নজরদার বসল £ 
প্রজা হৈল ব্যাকুল বেচে ঘরের কুড়াল 
টাকার দ্রব্য বেচে দশ আনা । 
উপায়ান্তর নাই দেখে অপাঁরহার্য বস্ভও প্রজারা বাঁক করে দিতে লাগল । 
তাতেও পেল অপ্রত্যাশিত কম দাম ৷ দেশে চোর-ডাকাতের উপদ্ুবও বাড়ল ৷ 
আত্মপারচয় অংশে সামাজিক হীতহাসের এই সব মূল্যবান তথ্য উপহার দিয়েছেন 
কাঁব। 
কৌলীন্যপ্রথার দ-ঃখকর পরিণাম কাব্যটিতে চিত্রিত হয়েছে সাঁবস্তারে, দেবদেবগর 
জাঁবন-কাহিনীর নামাস্তরে । পণগ্রথা চালত থাকার ইতিহাসও জানা যায় মেনকার; 
প্রীত পার্বতীর ডীন্ততে । এবং সেই সঙ্গে তৎকালান কৃষিজ সম্পদের কথাও £ 
জামাতারে বাপ মোর দলা ভূমিদান । 
তাঁথ ফলে মসুর কাপাস মাষ ধান ॥ 


কোলা ন্য প্রথার মতোই ঘণ্য ঘরজামাই প্রথারও বর্ণনা দিয়েছেন কাঁব ৪ 
রাঁন্ধ বাঁড় আমার কাঁকাল্যে হইল বাত। 
ঘরে জামাই রাখিয়া জোগাব কত ভাত | 


ন্কর্মা জামাই পরিবারের শুধু অস্বাবধাই করত না, ছিল সমাজের আভশাপ-চ্বরপে 17 


মুকুন্দরাম সম্ভ্রান্ত, ভদ্র, নিষ্ঠাবান, দাঁরদু হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের 

সঙ্গেই পাঠককে পরিচিত কাঁরয়েছেন। কালকেত.-প্রাতিষ্ঠত গুজরাট নগরের 
মুসলমান প্রজাদের বিবরণ থেকে সমসামাঁয়ক মুসলমানদের নানা বিভাগ সম্পকে 
জানা যায়। মুকুন্দরাম মুসলমানদের জীবনচর্থরিও সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন ৪ 

ফজর সময়ে উঠি {বায়ে লোহিত পাটা 

পাঁচ বেরি করয়ে নমাজ। 
ছোলেমানি মালা পরে জপে পীর পেগম্বরে 
পারের মোকামে দেয় সাঁঝ ॥ 


মধ্যযুগ tl 


বৃত্তির বর্ণনাতে ?তান তুলে ধরেছেন তৎকালগন নানা বৃত্তির পরিচয় সে ইতিহাস 
এত পুঙ্খানুপুজ্খ যে অন্য কোথাও লভ্য নয়। “মুক্যন্দরাম যেটুকু বাঁলয়াছেন 
তাহাতে***দেশের ও সমাজের চিত্রই ( বিক্ষিগ্ত হইলেও ) সমধিক পরিস্ফুট ।” 


কাব্যকথা £ 


“অভয়ামঙ্গলে'র কাঁহনী-অৎ্ণ মুকহন্দরামের স্বকৃত নয় |. পূর্ববর্তী কবি মানিক, 
দত্তের চণ্ডীমঙ্গলের কাঠামোয় তিনি কাব্যসরস্বতীর প্রাত মা-নিমণি ও তাতে প্রাণ- 
প্রাতণ্ঠা করেন । ইতিহাসনিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর আর এক বৈশিষ্ট্য চারন্রনিমিদক্ষতায়;। 
কালকেতু বা ফুঞ্লরা তাঁর কলমে নিছক ব্যাধ_ মানুষ দুবলতা দিয়েই, তাদের, চার 
অঙ্কিত । পুবজন্মের দেবদেবীরূপে কোথাও তারা চিত্রিত হয়ান:। : দেবী চঠিডকা 
দত্ত সাতঘড়া ধনের ছ'ণট ঘড়া বহনের ব্যবস্থা করে কালকেত্ অর্লেশে দেরীকেই 
এক ঘড়া ধন বয়ে দিতে বলেছে এবং বইবার সময়ে বারে বারে সে লক্ষ্য রেখেছে: 


দেবী যেন ধন নিয়ে না পালান। 


পশ্চাতে চাণ্ডকা যান আগে কাল; যায়। 
ফার ফির কালকেতু পাছুপানে চায় ॥ 
মনে মনে কালকেতু করেন যুকতি । 
ধন ঘড়া নিয়া পাছে পালায় পার্বতী ॥ 


তার সরলতা ও মানুষ দহ্বলতাই প্রকাশিত হয়েছে তার কাজে । কলিঙ্গরাজের 
সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয় সম্ভাবনা জেনে সে আত্মরক্ষায় লাঁকয়েছে_বরত্ব প্রকাশের চেষ্টা 
করোনি । দান্রীকে দিয়ে কাজ করানো, তাঁকেই অহেতৃক সন্দেহ, আত্মীবসর্জন দিয়ে 
বীর আখ্যালাভ অপেক্ষা লঙ্জাকর আত্মরক্ষার চেষ্টা, কালকেত্‌-চরিন্নকে সরল গ্রাম্য 
ব্যাধরূপেই উপস্থিত করেছে। গৃহে প্রত্যাগতা ফুল্লরা আকস্মিকভাবে সুন্দরী 
নারীর্‌পে দেবীকে দেখে তৎক্ষণাৎ সন্দেহ করেছে স্বামীকে, 'বারমাস্যা'র বর্ণনায় 
তুলে ধরেছে তার অসাম দারিদ্রের ছাব। সে যে সামান্য ব্যাধরমণণমান্র কবি কখনো 


তা ভোলেনান। 


“বান্যা” মুরারি শাল তার শঠতার চাতু্যে” এক স্মরণীয় চরিত্র । ধার শোধের 
চিন্তায় কালকেতুর সঙ্গে সে দেখা করতে চায়নি; অথচ যখন শুনল আংটি বেচার 
জন্য কালকেত্‌ এসেছে, ধার মেটাবার তাগিদ দিতে নয়, এসেই অনুযোগ করেছে 
কালকেত্‌ তার বাবার মতো আর তার বাড়ি আসে না, এ বড় অন্যায় €'ধর্মকেত; 
দাদা সনে ছিল লেনা-দেনা । তাহা হইতে ভাইপো হয্যাছ সেয়ানা' ॥)। কাল- 
কেতুকে নির্মমভাবে তকানোই ছিল তার উদ্দেশ্য। মুক্দন্দরাম-চান্রিত শ্রেষ্ঠ চাঁন 
ভাঁড় দত্ত। সে বাক্‌পটহ, খল স্বভাব, স্বাথ পপরচূড়ামাণ ৷ 
| বাং. সা. 1.5 


82 খলা সাহিত্যের ইতিহাস 


তার বাক্পটুতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ কালকেতুর দ্বারা অপমানিত হয়ে যখন সে 
কালকেতুর অতত জীবনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে ৪ 


[তিন খানা শর ছিল একখান বাঁশ । 
হাটে হাটে ফুজ্লরা পণরা দিত মাস ॥ 
ভাগ্য দোষে যদি আম ছিলাম কাঙাল ৷ 
দেখিয়াছি খুড়া হে তোমার ঠাকুরাল ॥ 


কথায় সে কালকেতুর মন ভীঁজিয়েছে, তারপর করেছে স্বার্থাসাদ্ধ। তারই" পারণামে 
রাজ্য থেকে বহিচ্কতে হয়ে কলিঙ্গরাজকে উত্তেজিত করেছে সে কালকেতুর রাজ্য 
আক্রমণে । অবশেষে যখন দেখেছে দেবীক্‌পার কালকেত ফিরে পেয়েছে: তার রাজ্য, 
অবলণলাক্রমে তাকে তোয়াজ করতে গেছে । 
কাঁলঙ্গরাজের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের ভয়ে কালকেতু যখন ল:কিয়েছে “ধান্যঘরে', 

ফুল্লরাকে তৃষ্ট করে সে-ই আঁকার করেছে ল্‌কানর জায়গা । তারপর ক্তগরাশ্রু 
বর্ধণ করেছে ৪ 

খুড়া তম হৈলে বন্দী 

অনুক্ষণ আম কান্দি 

বহু তোমার নাহি খায় ভাত । 


তার ক:টকোঁশলেই কালকেত্‌ কণিঙ্গরাজের হাতে বন্দী হয়। ভাঁড়, বাংলা 
সাঁহত্যের এক অবিস্মরণীয় চরিত্র । দুবলা দাসীর খল স্বভাব মন্থরারই অনুরুপ । 
তার একটি উান্ত স্মরণযোগ্য £ 


যেই ঘরে দু সতীনে না হয় কোন্দল । 
সেই ঘরে যে দাসী থাকে সে বড় পাগল || 


এমনাক দেবদেবারাও ম.ক্ন্দরামের কাব্যে বাস্তব জীবনরস থেকে বাত হননি । 
হর-পার্কতীর জীবনচিত্র রূপে অভয়ামঙ্গলে' যা চান্ত, তা বস্তুত বাঙালী' পাঁরবারেই 
ছাবি। মুকুন্দরামের চিত্রিত চারত্রে তৎকালীন সমাজাচত্রেরই প্রাতফলন দেখা যায় । 

মুকুন্দরামকে অনেকে বলেন দুঃখের কাঁবি। গ্রন্থারন্তে শিবপার্বতীর দুঃস্থ 
জীবন-হাতহাস, আত্মপারচয়ে আপন দখময় জীবনকথা, ফর্লরার বারমাস্যায় 
ব্যধজীবনের দারিদ্রের উচ্জবল ছাঁব, এমনাঁক আতঙ্কিত পশুদের মুখেও দুঃখ 
নিবেদনের প্রসঙ্গ, 'আখেটিক খণ্ডের কাহিনপকে দঃখময় করে তুলেছে । বণিক 
খণ্ডে'ও ধনগাঁতখলনা-্রীম্ত বৃত্ত ঘিরে মূলত দ:ঃখেরই সাধনা। বস্ত্তত যুগ- 
প্রভাবিত-কাবি চার বা কাঁহন' রচনার কালে আপন দ:ঃখময় অভিজ্ঞতাকে ভুলতে 
পারেননি। তরি মতো আত্মসচেতন ও সমাজসচেতন কাঁবর পক্ষে তা সম্ভবও ছিল 
না। তাই করুণরসের প্রাধান্য তাঁর কাব্যে । তবু শিল্পী হিসেবে তিনি মহত্তম, 
সকল রসই সমান দক্ষতায় পাঁরবোশত তাঁর কাব্যে, যাঁদও সেখানে করুণ ছাড়া 
‘অন্যরসের স্থান সণকু/চত ॥ 


অষ্টম অন্যান 
চৈতন্য জীবনী ও জীবনচরিত-কাব্য 


শ্রীচৈতন্যের জীৰন-কথা £ 

কাঁব বলেছেন বাঙালীর হৃদয়-অমৃত মন্থন করে “নমাই ধরেছে কায়া? বস্ত্ত- 
পক্ষে, চৈতন্যের হদয়-অমৃতেই বাঙালী-জীবন নবরুপে গঠিত হয়েছে ; বাঙালীর 
চিন্তা, কর্মণ ধর্ম, সাহত্য সবাঁকছ; নিয়ান্তিত হয়েছে চৈতন্য-জীবন ও বাণীর অপুর্ব 
মাধ্রীতে । শ্রীচৈতন্য জীবদ্দশাতেই অবতার রুপে পৃজিত হয়েছেন, তাঁর মানবলীলার 
মধ্যে ভন্ত ও শিষ্যব্ন্দ খুজে পেয়েছেন দৈবীলীলার প্রাতচ্ছায়া। মানবতা উত্তীর্ণ“ 
হয়েছে দেবত্বে, দেবতার লালা-আখ্যান ছেড়ে কবি দেবোপম মনবব্যজীবনী নিয়ে 
জীবনীসাহত্য রচনা করতো গয়ে মানবজীবন ও দেবমাহমাকে একাকার করে দেখেছেন । 


টৈতন্যের মর্তজীবনলালার শুভ সূচনা ১৪৮৬ খীঃ ২৭ শে ফেব্রুয়ারী দোল- 
গণর্ণমার দিন। পিতা জগন্নাথ মিশ্র শ্রীহট্রের আদি নিবাস ত্যাগ করে নবদ্বীপে 
এসে বসবাস করেন। এখানেই নীলাম্বর চক্রবতাঁর কন্যা শচী দেবীর সঙ্গে তাঁর 
বিবাহ হয়। জগন্নাথ ও শচী দেবী ছিলেন কয়েক সন্তানের জনকজননী। জ্যেষ্ঠ 
বি*বরূপ শৈশবে সন্ন্যাস গ্রহণ করে গৃহত্যাগ করেন। কনিষ্ঠ পুত্র নিমাই ছাড়া 
বাকি সকলেই শৈশবে মারা যান । 
নিমাই শৈশবে ছিলেন দুরন্ত অথচ মেধাবী। স্বপকালেই ব্যাকরণ, কাব্য, 
ন্যায় ইত্যাদি শাস্বে সুপাণ্ডিত হয়ে উঠলেন তানি । সংস্কৃত শাস্ত্র চচরি পাঁঠল্থান 
নবদ্বীপে একটি টোলও খ.ললেন। তখন তাঁর বয়স আনুমানিক কাঁড় বছর ৷ 
শিক্ষক হিসেবে খ্যাতিমান নিমাই দিঁগ্বিজয়ী পণ্ডিত কেশব কাম্মীরীকে তক যুদ্ধ 
পরাজিত করে আপন পাণ্ডিত্যের খ্যাত প্রসারিত করলেন । পিতৃভাম শ্রহট্র 
দর্শনের পর গে ফিরে প্রিয়তমা পত্নী লক্ষীদেবীর স্পদংশনে মৃত্যর দুঃসংবাদ 
হসার-বৈরাগ্যের প্রথম স্বাদ আনল তাঁর জীবনে । তব মাতইচ্ছার় দ্বিতীয় বার 
তান দার পরিগ্রহ করলেন। বিষ্াপ্রয়া তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী । ১৫০৮ খুটঃ এর কাছা- 
কাছি সময়ে গয়ায় পত্পণ্ড দান কালে বিষ্ণুপাদপদয় দর্শনে তাঁর মনে দিব্যভাবের 
উন্মেষ হল, লোকক সংসারের মায়াবন্ধন হয়ে গেল ক্ষীণ ; ঈশ্বর পুরীর কাছে গোপাল 
মন্তে দীক্ষিত হয়ে গৃহে ফিরলেন তিনি। শিক্ষাভিমানী নিমাই তখন কৃষ্ণকথায় 
কাল কাটান। তান টোল তুলে দিলেন। তাঁকে কেন্দ্র করে শ্রীবাস, অদ্বৈতাচার্য? 
নিত্যানন্দ, মরার, মৃক্ন্দ, গদাধর প্রমূখকে নিয়ে গড়ে উঠল এক কষ্ণভন্তগোষ্ঠী । 
প্রীবাসের অঙ্গন মুখারত হল সংবীর্তনে, নবদ্বীপের রাজপথও। কাঁত নে 'ঁবরন্ত 
প্রাতবেশশ ও নগরবাসী অভিযোগ ঝরল কাজির কাছে। নিমাই পেলেন কাঁজর 
সমর্থন । অবশেষে সন্ন্যাস গ্রহণই সমহাচত বিবেচনা করে কাটোয়ায় কেশব্ভারতঈর 


64 বাংলা সাহিত্যের ইত্হাস 


শিষ্যত্ব বরণ করলেন তিন । তাঁর নবনামকরণ হল 'ীকৃফচৈতন্য' সংক্ষেপে 
শ্রীচৈতন্য ৷ তাঁর বয়স তখন পূর্ণ চাঁব্বশ (১৫১০/খঃ মাঘ মাস )। 

এবার যাত্রা নীলাচলে । ভীঁড়ষ্যার রাজা প্রতাপরন্্র দেব, প্রগাঢ় পণ্ডিত বাসঃদেক 
সার্বভৌম, বৈষ্ণব মতে অনুরন্ত হলেন। পৃরীতে আঠারো দিন কাটিয়ে শ্রচৈতন্য 
চললেন দাঁক্ষণ ভারতভ্রমণে, সঙ্গে অন্চর কৃফদাস। এক বছরেরও অধিককাল ধরে 
দাশ্মিণ ও পশ্চিম ভারত ভ্রমণে তাঁর ধর্ম বিভন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচারিত হল, 
ঘাঁনণ্ঠতা জন্মাল রায় রামানন্দের সঙ্গে, দ্বমতে আনলেন পাঁণ্ডতপ্রবর বেঙ্কটভট্রকে। 
নীলাচলে তাঁর দ্বারা এবং বাংলায় নিত্যানন্দ ও অদ্বৈত আচারের দ্বারা তাঁর 
প্রবর্তিত ধর্ম বিশেষ প্রসারলাভ করল । 


শ্রীচৈতন্য চললেন বৃন্দাবন পাঁরক্রমায় ( ১৫১৩ খকীঃ)। পথে শেষবারের 
মতো এলেন বাংলাদেশে ; মাতদর্শনও ঘটল । রামকেলিতে রাজা হ:সেন শাহের 
দুই মন্ত্রী রুপ ও সনাতনকে স্বমতে আনলেন। সঙ্গী ভন্ত-অনুরন্তের বিশাল 
দলকে নিয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারত পরিক্রমা সমীচীন নয় বলে তাঁদের রেখে যেতে 
ফিরলেন নীলাচলে । পর বংসর (১৫১৪ খঢ়ীঁঃ ) মাত্র দুজন সঙ্গীসহ যাত্রা করলেন 
বারাণসী, প্রয়াগ, মরা, বক্দাবন। পরবর্তাঁকালে বট্‌গোস্বামীর সহায়তায় 
বৃন্দাবনেও তাঁর ধর্মের একটি কেন্দ্র গড়ে উঠছিল । 

১৫১৫ থেকে ১৫৩৩ খঠীঃ জীবনের শেষ-আঠারো বছর তাঁর কাটল নঈলাচলে 
কাশী*্বর মিশ্রের আশ্রমে দিব্যভাবে বিভোর হয়ে ॥ শ্রাীঁক্ষেত্র ও শ্রীচৈতন্য দট নাম 
আভন্নরুপ পেল বাঙালগ জীবনে । আটচাল্লিশ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই (১৫৩৩, 
খনীঃ) রহস্যাবৃতভাবে ঘটল তাঁর মর্তলীলার অবসান । 


বৃন্দাবন দাস ও চৈতন্যভাগবত 
'শ্রীসৈতন্যভাগবত' বাংলাভাষায় রাঁচত প্রথম চৈতন্যভগবনপকাব্য । কাব্যটির নাম 
নাকি প্রথমে দেওয়া হয় ‘চৈতন্যমঙ্গল’, পরে এই নাম পরিবার্তত হয়।১ দ:টি কারণ 
এ সম্পকে উল্লিখিত হয় £ সমসময়ে লোচনদাসও একই নামে একটি টৈতন্যজীবনণী- 
কাব্য রচনা করেন: তাই বৃন্দাবনের মাতা নারায়ণ এই নাম পরিবর্তনের নির্দেশ 
দেন। অন্যমতে চৈতনযভাগবতে শ্রীমন্ভাগবতের কৃষ্লীলার ধারা অনুসৃত হয়েছে বলে 
বন্দাবনের গোস্বামীরা চৈতন্যভাগবত' নাম পছন্দ করেন ।২ 


১. বৃন্দাবন দাস কৈল চৈতন্যমঙ্গলা 
যাহার শ্রবণে নাশে সর্ব অমঙ্গল ॥॥ ( চৈতন্যমঙ্গল ) 
ভাগৱতে কৃষ্লাঁলা বৰ্ণি লা বেদব্যাস। 
চৈতন্যমঈলে ব্যাস বৃন্দাবন দাস ॥ (এ) 
২. চৈতন্যভাগবতের নাম ঠৈতন্যমঙ্গল ছিল। 
বন্দোবনের মহান্তেরা ভাগবত আখ্যা দিল ॥ (প্রেমবিলাস ) 


চি উরি, 


মধ্যযুগ 65 


এই জীবনীকাব্যটির রচায়তা বন্দাবন দাস। তিনি শ্রবাসের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা 
নালনার কন্যা নারায়ণীর পু । “বন্দাবন দাস নারায়ণার নন্দন’ বলেছেন কফদাস 
কাবিরাজ। ব্দাবনের জন্ম ১৫১৯ খনীঃর কাছাকাছি সময়ে । সন্তবত ১৫৪২ খক্রঃর 
পরে এবং ১৫৭৬ খনীণ্টাব্দের লাগে কাঁব তাঁর কাব্যরচনা সম্পূর্ণ করেন। তাঁর 
“শেষজাবন কাটে দেনড় গ্রামে। ১৫৮০-র কাছাকাছি সময়ে তাঁর মৃত্য হয়। 
কব ছিলেন চিরকুমার । 


শ্রীবাসের অঙ্গন ছিল চৈতনোর সংকীর্তন-দ্থান, মাতা নারায়ণীও বৈষ্বভাবে 
‘ভাবিত। সৃতরাং বৈষ্ণব 'পারিমণ্ডলেই বুন্দাবনের জন্ম ও লালন-পালন । অল্প 
বয়সেই তিনি নিত্যানন্দের সঙ্গলাভ ‘করেন, তাঁর শিষ্যত্বও গ্রহণ করেন। গুরুর 
কাছে বন্দাবন পান দীক্ষা ছাড়াও চৈতন্য-জীবনীর ‘অধিকাংশ উপাদান ৷৷ গদাধর 
ও অদ্বৈতাচার্বও তাঁকে এ-বিষয়ে সাহায্যকরে থাকবেন । ফলে টৈতন্যজীবনশীর উপকরণ 
গ্রহের ক্ষেত্রে বৃন্দাবন বিশেষ ভাগ্যবান ছিলেন এবৎ তাঁর সংগৃহীত তথ্যও 
অনল্যবান । 


গর ও গৃরুভৃল্য ব্যক্তিদের সাহায্য ছাড়া বুষ্দাবনের সম্মুখে আদর্শ হিসাবে 
{ছল মুরারি গুস্তের কড়চা ও শ্রীমন্তাথবতের কৃষ্চলশলা । শ্রচৈতন্যের নবদ্বীপ- 
জীবনকে তিনি ভাগবতের কৃষ্ণলীলার দ্বার৷ প্রভাবিত হয়েই বর্ণনা করেছেন । তাঁর 
বণ্টিতে চৈতনাশনত্যানন্দ কৃষ-বলরাম । সেই বিশ্বাস ও প্রগাঢ় ভক্তি নিয়ে তান 
কাব্যটি রচনা করেছেন। ফলত অলোঁককত্ব এসে জণবনীর বাস্তবতাকে গ্রাস 
করেছে, যদিও রচনার প্রাণবেগ তাতে ব্যাহত হয়নি ৷ 

চৈতন্যভাগবত তিন খণ্ডে ও একান্ন অধ্যায়ে বিভক্ত সংব্‌হং জীবনীকাব্য। 
ছন্রসহখ্যা প্রায় প'চশ হাজার। আদি খণ্ডে (পনেরাঁট অধ্যায় ) গয়া থেকে 
প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত কাঁহনী স্থান পেয়েছে; মধ্য খণ্ডে (সাতাশটি অধ্যায়) সন্ন্যাসগ্রহণ 
পর্যন্ত এবং অন্ত্যখণ্ডে (দশটি অধ্যায়) গৃণ্ডচাযাত্রা পযন্ত আখ্যান বিকৃত। 
চৈতন্যের অন্তালীলা অজ্ঞাত কারণে বন্দাবন অতি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন । 
চৈতন্যের সহচরেরা অনেকেই তখন জীবিত, কবিও তাঁদের ঘানষ্ঠ। তবু 
'চৈতন্যাঁতরোধান সম্পকে তাঁর নীরবতা বিস্মিত করে । 


বন্দাবন সহজ সরল অনাড়ম্বর অথচ মর্মস্পশী ভাষায় তাঁর জীবনীকাব্যটিকে 
রূপ দিয়েছেন । 
বেদগৃহ্য চৈতন্যচারত কেবা জানে । 
তাহা লিখি যাহা শুনিয়াছি ভক্ত স্থানে ॥ 


সংস্কৃত ভাষায় তাঁর ব্যৎপত্তি ছিল, ভাগবতে ছিল স্মরণীয় অধিকার । 
তবু বৃন্দাবনের ভাষা জাঁটল নয়, প্রাঞ্জল । সুর ও তালে আবাত্ত এবং অংশত 


66 লা, সাহিত্যের হীতহাস 


গানের উদ্দেশ্যে কাব্যটি রচিত। তাই মাঝে মাঝে রাগরাগিণীরও উল্লেখ 
আছে। 


চৈতন্য কবির মতে ভগবান । স্বাভাবিকভাবে এ কার্যে দেবলালা মানবীয় 
মহত্তরকে ক্ষ; করেছে, কিন্তু তবু নিপুণ বাস্তব বর্ণনায় বন্দাবন অপ্রাতিদ্বন্দবী ৮ 
বিশেষ, চৈতন্যের বাল্যলগলায় বাস্তবতা প্রশংসনীয় দক্ষতায় বাণত হয়েছে । ষোড়শ. 
শতকের সামাজিক ও রাজনোঁতক দাঁলল হিসাবেও কাব্যাঁটর মূল্য অপাঁরসাম। কাব্যটির 
রুটি চৈতন্যের শেষ জীবন সম্পর্কে ফাবর নীরবতা এবং নিত্যানন্দীবরোধাদের প্রাত 
আতাঁরন্ত অসহিফুতা । কিন্তু চৈতন্যের, দিব্যজীবনলীলাকে বড় আস্তীরকতার' 
বর্ণনা করায় জীবনীকাব্যটি বৈধবদের কাছে সবপিক্ষা প্রিয় গ্রন্থ । কষ্দাস 
কাঁবরাজের 'ীচৈতন্যচারতামৃতে” আছে জীবনীর সঙ্গে দর্শনের প্রাধান্য । ফলে সাধারণ' 
বৈষবের কাছে তা যতটা পুজ্য ততটা প্রিয় নয়। ভাষার সরলতায় ও ভান্তীবগাঁলত 
আবেগের প্রবাহে 'চৈতন্যভাগবত' সর্বলোকসাধারণের চিন্তজয় করোছিল। এখানেই 
বৃন্দাবনের কাতত্ব। তাঁকে বলা হয় 'চৈতন্যলনলার ব্যাস'_ প্রথম বাংলা জীবনশকার, 
গহসাবে ও জনীপ্রয়তায় কারণে এ গৌরব তাঁর অবশ্যই প্রাপ্য ॥ 


জগবকে উদ্ধারের জন্য অবতার রুপে চৈতন্যের মতে” আগমন-_-এ ভাবেই চৈতন্য 
জীবনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন কাব । কিন্তু শুধু চৈতন্যজীবনাচত্রণে ও ব্যাখ্যায়, 
বন্দাবনের শ্রম নিঃশেষিত হয়ান। তিন সমকালীন সমাজেরও নানা তথ্যপর্ণ 
বর্ণনা দিয়েছেন। সেকালের হিন্দহ, বৈফব ও মুসলমান সমাজের কথা জানা যায় 
তাঁর কাব্য থেকে। চৈতন্য পাঁরকর ও ভন্তদের কথাও বৃন্দাবন সাবস্তারে বর্ণনা 
করেছেন । সমকালে নবদ্বীপ ছিল সমন্ধ নগরণ। সেখানে চলত নানাভাবে ধমাচিরণ, ॥ 
এমন কি প্রভূত ব্যয়ে ম্তনমাণ করেও পুজা হত £ 


ধর্ম কর্ম লোক সভে এই মাত্র জানে। 
মঙ্গলচণ্ডীর গীত ঝরে জাগরণে ॥ 
দন্ত কর বিষহরি পৃজে কোন জন । 
পুভ্তুলি করয়ে কেহ দিয়া বহু ধন ॥ 


বন্দাবনের কাব্যে বৈষ্ণব সমাজ ছাড়াও সব ধর্মের কথা, বাঙালীর লোকাচার। 


কুৃসৎকার, আচার, বিশ্বাস, অবসর যাপনের উপায় বার্ণ হয়েছে। সমকালীন, 
ইতিহাসের আবর গ্রন্ছরঃপেও তাই চৈতন্যভাগবতের মূল্য অপাঁরসীম । 


৮ 


চে 


te 


৩ £ লোচন দাস ও চৈতন্য মঙ্গল 


লোচনানন্দ দাস বা লোচন দাস বিরচিত চৈতন্যজীবনীকাব্যের নাম ‘চৈতন্যমঙ্গল ৷ - 
কাব্যটি 'চৈতন্যভাগবতে'র মতো অংশত গেয় নয়, সবধিশে গেয়। সেইজন্য আদ্যত্ত 
রাগরাগণাীরও উচ্লেখ আছে । ৈতন্যমঙ্গল' পণ্ডিতের জন্য লিখিত নয়, জন- 
মনোরঞ্জনের জন্য গাঁত হিসাবেই রচিত এবং জনসমাজে কাব্যাট যথেষ্ট সমাদূত হয় । 

_ লোচনের পিতা কমলাকর দাস এবং মাতা সদানন্দী। বর্ধমান জেলার কোগ্রামে 
ছিল কবির নিবাস। পিত; ও মাতামহ বংশের একমাত্র পুত্রসন্তান হিসাবে লোচন 
ছিলেন খুব আদুরে ৷ মাতামহের চাপে বাধ্য হয়েই তাঁকে পড়াশুনায় মন দিতে হয় । 
লোচন নাকি নিত্যানন্দের আদেশে বিবাহ করেন। তাঁর পত্নীর নাম কাণচনা । তানি 
শ্রীথণ্ড গ্রামের প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব ও চৈতন্য-অন:চর নরহরি সরকারের শিষ্য ছিলেন। . 
লোচনের 'চৈতন্যমঙ্গল' ১৫৫০ থেকে ১৫৬৬ খ্রীঃর মধ্যে কোনো এক সময়ে রচিত হয় । 

লোচনের কাব্য আকারে অন্য জীবনী গ্রন্থের তুলনায় ক্ষণকায়, ছত্রসৎখ্যা প্রায় 
এগার হাজার | কাব্যাট চারটি খন্ডে িভন্ত__'সূত্র খণ্ডে অবতার বর্ণনা, “আদ 
খণ্ডে' গয়াগমন পর্যন্ত বর্ণনা, ‘মধ্য খণ্ডে বাসুদেব সার্বভৌমের প্রতি কৃপা পর্যন্ত 
বর্ণনা এবং শেষ খণ্ডে দৃক্ষিণ ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাঁর্থযান্রার কথা স্থান 
পেয়েছে । “সূত্র খণ্ডাট অভিনবত্বে এবং চৈতন্য-বিষ্ণৃপ্রিয়ার দাম্পত্য জীবনের বিদ্তারিত 
পরিচয়ে বিশিষ্ট । কিন্তু ‘চৈতন্যমঙ্গলের' এঁতিহাসিকতা সম্পর্কে অনেকেই সান্দিহান। 
মহাপ্রভূর তিরোধান সম্পকে লোচনের উীন্ত-_তিনি জগন্নাথদেবের শরীরে লীন হন £ 


তৃতীয় প্রহর বেলা রবিবার দিনে । 
জগন্নাথে লীন প্রভ্‌ হইলা আপনে ॥ 


_ প্রমাণ অপেক্ষা লোকশ্রীতর ওপর নির্ভর করেই লিখিত । 

চৈতন্যমঙ্গল ইাঁতহাস-নির্ভ'র জীবনীকাব্য না হলেও যথেষ্ট পারমাণে জনাঁচন্ত জয় 
করতে সমর্থ হয়েছিল । কারণ, লোচনের কবিপ্রাতভা । গানের লক্ষ্য হীতহ।স 
অথবা বিশ্বস্ত জীবনচিত্র নয়, শ্রোতার মনোরঞ্জন । অন্তত সেটুকু কৃতিত্ব লোচনের 
প্রাপ্য । তবে বৈষ্ণব ধমেতর শাখাবিশেষের মতামত ও সাধনপ্রণালী উল্লিখিত হওয়ায় 
এীতিহাসকের কাছেও কাব্যটির মূল্য আছে । 


কৰি জয়ানন্দ ও তার চৈতন্যমঙ্গল 


জয়ানন্দের চৈতন্যজীবনী 'চৈতন্যমঙ্গল' বৈষ্ণব সমাজে অনাদ্‌ত হয়ে দীর্ঘকাল 
লোকচক্ষুর । অন্তরালে ছিল। কাবাটি গেয়, তাই রাগরাগিণীয,ন্ত। অলৌকিক 


68 হলা সাহিত্যের ইতিহাস 


বর্ণনার আধিক্য ও অপ্রামাণিক ইতিহাসের বিস্তার কাব্যটিতে পাওয়া যায়। কাঁব 
“চৈতন্যমঙ্গল’ রচনায় চৈতন্যজীবনীকে মঙ্গল কাব্যের ধাঁচে সাজিয়েছেন. 
জয়ানন্দের জন্ম বর্ধমান জেলার আমপণীরয়া গ্রামে । তাঁর পিতার নাম সুবা্ধি 
মিএ,'মাতার নাম রোদনী। চৈতন্য পুরী থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় সবদদ্ধ 
মিশ্রের আঁতিথ্য গ্রহণ করেন। জয়ানন্দ নামাঁট নাকি চৈতন্যদত্ত। ১৫৬০ খতীস্টাব্দের 
কাছাকাছি সময়ে কাব্যটি রচিত হওয়া সম্ভব 
.. নবীখণ্ডে বিভন্ত ‘চৈতন্যমঙ্গল’ মঙ্গলকাব্যের প্রচালত রীতিতে স্াত্টতত্তৰ দিয়ে 
শুর হয়েছে। নদীয়া খণ্ডে' সমসামাঁয়ক সামাজিক ইতিহাসের কিছ: পাঁরচয় দিলেও 
কাব স:লতানের অন্যায়-প্রতকাবে দেবী ক্যালকার অবাস্তব হস্তক্ষেপ বর্ণনা করেছেন । 
চৈতন্য-তিরোধান সম্পর্কে কাঁবর বন্তব্য রথযাত্রার দিন রথের অগ্রভাগে নাচতে নাচতে 
ইটের ট.করায় আহত চৈতন্য অসুস্থ হন এবং ষণ্ঠ দিবসে ইহলগলা সংবরণ করেন ঃ 


ইটল বাজল বাম পাএ আচাণ্বিতে ॥ 
চরণ বেদনা বড় বজ্খীর দিবসে । 
1161 সেই লক্ষ্যে টোটায় শরণ অবশেষে ৷৷ 


এ, কাহিনী হয়ত যাক্তিগ্রাহা, কিন্ত প্রামাণিক কি না নিঃসংশয়ে জানা যায়ান ৷ 
বৈষবরাও এ কাহিনী বিশ্বাস করতেন না-_টৈতন্যমঙ্গলে'র অনাদরের অন্যতম কারণ 
চৈতন্যজীবনের এই আস্তম কাহিনী বর্ণনা । 


' জয়ানণ্দের নাশছল কাঁবত্বশান্ত, না ইতিহাস-নষ্ঠা। এমন ক গদাধরের কাছে 
দীক্ষিত হয়ে তান চৈতন্যতত্তৰ ও বৈষ্ণব সাধনা সম্পকে তাঁর কাব্যে কিছ; বলেননি । 
পরন্তু দেবদেবীর বর্ণনা ও শান্তদেবীর (কালী ) মাহমা-প্রচার করে স্বধমণদেরও 
তিনি বরাগভাজন হয়েছেন । ফলত চতন্যমন্গল” একাঁট অসার্থ'ক টৈতন্যজীবনপীকাব্য। 


রুষ্খাঁস কবিরাজ 


. কফদাস কবিরাজের 'জটৈতনাচারতামৃত' বাংলা সাহতেঃর এক অসামান্য 
সম্পদ । জগবনশ ও ইতিহাস, দর্শন ও বৈষ্ণবতন্তৰ, যৃদ্ডি ও ভান্ত, বিদ্যা ও বিনয়, 
কবিত্বশন্তি ও পাঁরশ্রমের অপরূর্ব মহাসন্মিলন ঘটেছে এই অমূল্য গ্রন্থটিতে । ভন্ত ও 
জিগণঘ; সকলেরই আকাগ্ফা আশাতাতভাবে পুরণ করেছেন কফ্দাস কবিরাজ । 


কাবপাঁরচয় £ 


বর্ধমান জেলার ঝামটপর গ্রামে কবির নিবাস হিল। মোটামুটি সচ্ছল ও 
ধমনিয়াগন- পাঁরবারে তাঁর জন্ম। গ'হদেবীর নিয়মিত পুজা ও মাঝে মাঝে 


মধ্যযুগ J 69 


-সংকীর্তনাূর ব্যবস্থা করেছিলেন কষ্তদাস। তখন বৈষ্ণব সমাজের একাংশ 
শীনত্যানন্দের প্রাত নানা কারণে শ্রন্ধাভান্ত পোষণ করতেন না। কষ্চরাসের ভ্রাতাও 


এই দলভুন্ত ছিলেন £ 


চৈতনা প্রভূতে তাঁর স:দড় বিশ্বাস 
নিত্যানন্দ বিষয়ে কিছু বিধ্বাস-আভাস ৷ * 


একবার বাড়িতে অহোরান্র সংকাঁতনের সময় তাঁর ভ্রাতা নিত্যানন্দ-ভন্ত রামদাসের 
"প্রত কট:ন্তি করাতে কৃষ্দদাস ব্যথিত হন ৷. সেদিন-ই রান্রে তান স্বপ্নে দেখলেন 
নিত্যানন্দকে, ‘নিজ পাদপদ্ম প্রভ্‌ দিলা মোর মাথে ।' সেইসঙ্গে পেলেন 
স্বাপ্নাদেশ £ 


বৃন্দাবনে যাহ তাঁহা সর্ব লভ্য হয়। Cli 


সেই অন;সারে অকৃতদার ক্ষানাস গৃহত্যাগ করে বৃন্দাবন যাত্রা করলেন । এই 
স্বগ্নাদেশ তাঁকে এত অভিভূত করোছল যে নিত্যানন্দকে তান গরুর মতোই 
শ্রন্ধা করতেন। বন্দাবনের গোস্বামীদের কাছে বৈষ্বশাস্তে পণ্ডিত হয়ে তাঁদের 
অন[রোধে কষ্দাস 'চৈতন্যচারতামৃত' রচনায় মনোনিবেশ করেন । কাঁব তখন বদ্ধ, 
জরাগ্রস্ত £ 

নানা রোগগ্রস্ত চালতে বলিতে না পারি। 

পণ) কোগের পাড়ায় ব্যাকুল রাত্রি দিনে মার ॥ 


তব? অসীম সাহসে ভক্তির প্রাবল্যে তিনি এই পরিশ্রমসাধ্য কাজ অকুস্ঠিতাঁচিত্তে 
কাঁধে তলে নেন। কবির দীর্ঘ ন'বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফনল কাব্যটি। যোড়ণ 
শতকের একেবারে শেষ দিকে কাব্যটি রচিত হয়। 


কাব্যকথা 

“চৈতন্যভাগবতে' চৈতন্যজীবনের অন্তলীলা অনুস্ত ; আবার বন্দাবনের গোস্বামী- 
দের প্রচারিত গৌড়ীয় বৈষ্ণবতত্তৰ শুধুমাত্র সংস্কৃত গ্রন্থেই সান্নবেশিত। সংস্কৃত- 
ভাবাজ্ঞানহীনের তাতে অধিকার নাই । এই দুই অভাব পৃরণের উদ্দেশ্য কৃষ্তদাস 
কাব্যরচনায় ব্রতী হন। 'চৈতন্যজাবনের গভাঁর তাংপর্যয, উদ্দেশ্য ও পরিণাম, আর 
তারই সঙ্গে ভক্তিশাস্ত্, দর্শন ও গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মে'র মল তত্তরকথার পুঙ্খানৃপুঙ্খ 
'বর্ণনাই ছিল তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ' কবি চৈতন্যভাগবতে বাঁণণ্ত চৈতন্যজীবনী 
স্‌ব্রাক্জারে লাপবদ্ধ করে অজ্তযলীলার বিদ্ত্ত বর্ণনর সুযোগ নিরেছেন। তবু 
'কাব্যাট হয়েছে বিশালায়তন । 


ণ0 বাংলা সাহত্যের হীতহাস 


কাব্যাটর অন্যতর বৈশিষ্ট্য কৃ্ণদাসের বৈষ্ণবীয় বিনয় ও বৃন্দাবন দাসের 
প্রাতি শ্রন্ধাভাব। প্রগাঢ় পাঁডত কৃষদাস চৈতন্যচীরতামূতের শ্রোতার উদ্দেশে 
শ্রদ্ধা নিবেদন করে জানিয়েছেন £ E 


চৈতন্য চারতামৃত যেই জন শুনে । 
তাঁহার চরণ ধুঞা করি মুই পানে ॥ 


আর বৃন্দাবন দাসকে তান বলেছেন 'চৈতন্যলীলার ব্যাস’ 2 


কষ্ণলীলা ভাগবতে কহে বেদব্যাস। 
চৈবন্যলীলার ব্যাস বৃন্দাবন দাস ॥। 


তথাপি চৈতন্যভাগবত রচনার পরেও যে তান কাব্য রচনায় ব্রতী হন তার কারণ' 
চৈতন্যভাগবতে নাই চৈতন্যের অন্ত্যলীলার ?ববরণ। চৈতন্যের "দব্যোন্মাদ অবস্থার 
তাৎপর্য বৈষবের কাছে মহামূল্যবান |বষয়। এই অসূল্য তথ্যের পাঁরবেশনের 


জন্যই বৃন্দাবনের গোস্বামীগণ “বৃদ্ধজরাতুর' ক্‌ফদাসকে কাব্য রচনায় অনু রোধ 
করেন । 


“চৈতন্যভাগবতে'র মতো “চেতন্যচারতামৃত'ও তন খণ্ডে বিভন্ত। তবে এখানে 
‘বণ্ডে'র পাঁরবর্তে লীলা" শব্দ ব্যবহত হয়েছে । আঁদলশলায় সতেরটি, 'মধ্যলগলায় 
পণীচশাঁট এবং ‘অন্ত্যলীলা'য় িশাঁট পাঁরচ্ছেদ । 'আঁদলীলা'য় চৈতন্যের যৌবন 
পর্যন্ত, মধ্যলীলায় সন্ন্যাস গ্রহণের পরের ছ' বছরের কাহনশ এবং অন্তালগলায় 
পরবতাঁ ঘটনা বার্ণত। কাব্যটির কোনো অংশই গানের উদ্দেশ্যে {লিখিত নয়। 
চৈতন্যচারতামৃত বাঙ্গালা সাহত্যে প্রথম পঠনীয় অর্থাৎ অগেয় গ্রন্থ ৷ সঙ্গীতের 


আবেশ ও মর্ঘনা এবং দেবী আখ্যানের ভাবালুতা ছেড়ে যান্তীনষ্ঠায় বাঙালীর প্রথম 
উত্তরণ চৈতন্যচাঁরতামৃতে' । 


ক্‌ফদাসের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বৈষ্ণবতত্ত প্রকাশ। এপ্রসঙ্গে তাঁর উপলান্ধি 
শান্তির প্রগাঢ়তাও কাঁবত্বশান্তর চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ বলোছলেন ‘সহজ 
কথা যায় না কহা সহজে ।” কিন্তু কুফদাস প্রমাণ করেছেন কাঠন তত্তরকথাও£কত 
সহজে ব্যাখ্যা করা যায়। 


আত্মোন্রপ্রণীত-ইচ্ছা তারে বলে কাম। 
কফোন্দিয় প্রীতি ইচ্ছা ধরে প্রেম নাম ॥ 


সি * = 


অতএব কাম প্রেমে বহুত অন্তর ৷ 
কাম অন্ধতম, প্রেম নিৰ্মল ভাস্বর ॥ 


মধ্যযুগ TL 

বৈষবীয় মতের এমন সরল অথচ গৃঢ় উপস্থাপনা অন্যত্র দুর্লভ । প্রায় প্রবচন: 
রূপে পাঁরচিত ওপরের পথীন্তগযাল সহাক্ষপ্ত পরিসরে বৈষ্ণব-লক্ষ্য-ব্যাখ্যার শ্রেষ্ঠ 
দঙ্টাস্ত । 

বাঙাল'-মনাষার এক অনন্য প্রকাশ 'ৈতন্যচারতামৃত।” কষ্ণদাস ঘটনার 
পঢুবপিরতা সর্বত্র রক্ষা করতে পারেননি, কখনো-বা আপন অনুভবকে চৈতন্যের মুখে 
স্থান দিয়েছেন । এইসব সামান্য হট থাকা সত্তেবও চৈতন্যের অন্তজাঁবন ও বাঁহজীর্বনের 
সুযমামাণ্ডত প্রকাশে, 'নগুঢ় তত্তেৰর মনীষা-দীপ্ত ব্যাখ্যায় এবং মানবরপী 
দেবোপম চৈতন্যের অমতচারতকথায় চৈতন্যচারতামৃত অনন্য গ্রন্থ । কৃষদাস কোনো, 
ব্যান্তীবশেষের ধর্ম উপলান্ধকে পয়ারে আবদ্ধ করেননি, একটি ধর্মাঁয়-গোষ্ঠী বা 
সমাজের অথবা বলা শ্রেয় ষোড়শ শতকের শ্রে্ঠ, বাঙালপ মনীধিগণের দশনাচিন্তাকে 
সরস উপমাশ্রিত ভাষায় সুবোধ্য করে তুলেছেন। একটি গ্রন্থে এতটা প্রাপ্তি 
নিঃসন্দেহে অপ্রত্যাশত ৷ জীবনী গ্রন্থ হিসেবে চৈতন্যচারতামৃত চির-অন্লান, 


গ্রন্থ। 


নবম অধ্যাস 


বৈষ্ণব পদাবলী 
বাঙালী প্রাণের একতারাতে সর্বপেক্ষা বৌশ ঝংকার তুলেছে বৈষ্ণব পদসঙ্গীত। 
চৈতন্যান:সারী বৈষাৰ ধর্মকথার জঙ্গীতরপই বৈষ্ণব পদাবলি । কিন্তু বাঙালীর 
[রোম্যান্টিক অনুভবের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে এরই মাধ্যমে । যে-কোন সাহত্যের 
মুখ্য উপজীব্য প্রেম। প্রেমের বাঁচন্র লীলা, রহস্য ও জবালা বৈষ্ণব প্দাবলীতে যত 
শনখখুতভাবে ান্রত, এমনাট অন্যত্ৰ দহলভ । 
রাধাকফলাীলা বিষয় হিসাবে বাংলা সাহ্যত্যে স্হান পেয়োছল চৈতন্য 
-আবভাবের আগেই। বড়ু চন্ডীদাসের আখ্যান কাব্যে, মালাধন বসুর ভাগবতের 
অনুবাদে, িছ্যাপাঁতি-চণ্ডীদাসের পদে রাধাকষের প্রেমই উপজীব্য । শীকন্তু বড়, 
ভণডগদাসের গ্রক্কীর্তনে বৈষ্ণবদর্শনের কথা নাই, শ্রীকব্ষীবজয়েও নাই রাগান,গা 
সাধনার কথা ৷ বিদ্যাপাঁত চণ্ডীদাস বৈষ্ণব ধর্মমতে ীব*বাসী হয়ে কাব্য" রচনায় 
ব্রতী হন নি । কিন্তু বৈষ্ণব পদাবলীতে দেখা গেল একটি ধর্মগোষ্ঠীর সাধনার কথা, 
অর্থধ এই সব কাঁবরা আগে বৈষ্ণব, পরে কাঁব ; বৈষ্ণব তশুকথাকে সঙ্গীতে রগ 
দেওয়াতেই তাঁরা মনোযোগী । ‘বৈষ্ণব ধর্ম লইয়াই বৈষ্ণব সাহিত্য ।' 
বৈষ্ণব ধর্ম যেমন ষোড়ণ শতকে বাঙালী সমাজজীবনে নব জাগরণের সত্রপাত 
ঘাঁটয়োছল, সঙ্গীতের ক্ষেত্রে বৈষ্ণব পদাবলীর ভ্ামকাও অনুরূপ | বৈষণবপদাবলীর 
রসধারায় শিক্ষিত-আশক্ষিত বাঙাল মারেই শুধু আনন্দাপ্রুৃত হয়ান, পরবর্তকালে 
রচিত সব সঙ্গীতেই আছে বৈষ্ণব পদের প্রভাব । এই “সর্বগ্রাসী আবেগবাদী 
প্রেমধর্মের' প্রভাব থেকে মযান্ত পায়ীন শান্তসঙ্গীত। কাবগণের মার্জত অথণটুকুতে 
“বৈষ্ণব পদাবলীরই অনুরণন । এমন কি রবীন্দুনাথ, নব্ররুল, অতুলপ্রসাদের মতো 
সঙ্গীত রচাঁয়তারাও বৈষাবপদাবলীর কথা ও স:র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন । 
বৈষ্ণব পদসাহিত্য বাংলার সাহত্যাকাশে ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি সমকালীন 
[ মঙ্গলকাব্য কল্পনার দুরাভিসারে সমদ্ধে নয়; একান্তভাবে গ্রামীণ সাহত্য ; অনুবাদ 
,সাছত্য প:নরাব্যান্ত-ভারাক্ান্ত। ‘একমাত্র বৈষ্ণব পদাবলীই দেশকালের সীমা 
-ছাড়াইয়া নিল মানবাঁচত্তের মধ্যে ঠাই পাইয়াছে। বৈষ্ণব পদসাহত্য সণ? 
! রবীন্দ্রনাথের মন্তব্যই যথার্থ এবং স্মরণীয় ৪ 


‘তাহার ভাষা, ছন্দ, ভাব, তুলনা, উপমা ও আবেগের প্রবলতা সমদ্তই দবাচন্র ও 
নৃূতন। তাহার পূর্ববতর্ণ বঙ্গভাষা ও বঙ্গ সাঁহত্যের সমস্ত দীনতা কেমন 
করিয়া একমৃহুতে দুর হইল, অলংকার শাস্তের পাষাণবন্ধনসকল কেমন 
কাঁরয়া একমুহতৃর্তে বিদারণ" হইল, ভাষা এত শান্ত পাইল কোথার, ছন্দ 
এত সঙ্গত কোথা হইতে আহরণ কাঁরল £ {বেদশাী সাহিত্যের অনুকরণে নহে, 


মধ্যযুগ 73: 


প্রাচীন সমালোচকের অনুশাসনে নহে, দেশ আপনার বাঁণায় আপনি সুর 
বাঁধয়া আপনার গান ধাঁরল । প্রকাণ করিবার আনন্দ এত, আবেগ এত যে, 
তখনকার উন্নত মাজত কালোয়াতি সঙ্গীত থই পাইল না । দেখিতে 
দেখতে দশে মায়া এক অপূর্ব সঙ্গীত প্রণালী তোর করিল, আর কোন, 
সঙ্গীতের সাঁহত তাহার সম্পূর্ণ সাদশ্যে পাওয়া শন্ত ।' 
বৈষ্ণব পদাবলী প্রধানত সঙ্গীত। তার প্রকাশ কণর্তন গানে । কানের একাঁট; 
বাশণ্ট ভঙ্গি পালা কীর্তন; একই পষয়ি বা ভাবের পদগুলিকে ক্রমানুসারে সাজিয়ে 
গাওয়াই পালাবীর্তন। চৈতন্য তিরোধানের পর খেতুরীর মহোৎসবে নরোত্তম দাস: 


পালাকগত“নের রণীতটেকে নতুনভাবে ঢেলে সাজান । 
গোরচান্ড্রকা ৪ বৈষ্ণব পদাবলী শুধুমাত্র রাধাকঃ [বিষয়ক পদ নয় । এর দুটি; 


ধারা-একটি রাধাকৃষণ বিষয়ক, অন্যটি চৈতন্যবিষয়ক । পদকতরা যাঁরা 'মহাজন?' 
আভিধাতেও আঁভাঁবন্ত, রাধাকফষ্ণ লীলার অনুসরণে চৈতন্য বিষয়ক পদরচনাও করেন ।' 
চৈতনোর রাধাভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে যে-সব পদ রচিত হয় এবং রাধাকফ্ণ- 
বিষয়ক পালাকীততনের সময়ে চৈতন্যপ্রাসাগক অনরপভাবের যে-সব পদ প্রারন্তে, 
গত হত এবং এখনও হয়, তার সাধারণ নাম 'গোৌরচান্দরক”॥ বলাবাহংল/, চৈতন্য-- 
বিষয়ক সব পদই ‘গোঁরচান্দ্রকা’ নয়। গোঁরচান্দুকার বাইরে চৈতন্যজীবনণ ও চৈতন্য-- 
পারকরদের নিয়েও নানা চৈতন্য বিষয়ক পদ আছে। 

ব্রজবূলি £ বৈষ্ণব পদাবলণ বাংলা ও ব্রজবৃলি দুটি ভাষায় রচিত। বিদ্যাপত 
ছিলেন মাখলার কাঁব। ৈথিল? ভাষায় তান রাধাকষ্ণ বিষয়ক অপূর্ব পদ রচনা 
করেন। সাঁথলা প্রত্যাগত বাঙাল? ছাত্রেরা এই সব পদ কণ্ঠস্থ করে এনে বাখলা- 
দেশে প্রচার করেন ৷ কিন্তু ইতিমধ্যে পদগহাঁলর ভাষাগত বিকাত ঘটে । এই কৃত্রিম 
ভাষাই পরবতণকালে 'ব্রজব্দাল' ভাষা নামে পরিচিত হয় । সংতরাং রজবাীল একাটি 
কানরিম মিশ্র সাঁহাঁত্যক ভাষা, যার মূল মৌথলা । চৈতন্যের সমসময়ে বাংলাদেশে 
প্রথম ব্রজব্‌লি ভাষায় পদরচনা শুরু হয়। ব্রজবাঁল ভাষার শ্রেষ্ঠ পদকার গোঁবল্দ 
দাস। এই মধুর কৃিম ভাষায় রবীন্দ্রনাথ রচনা বরেন 'ভানযীসংহ ঠাকুরের 
পদাবলন' । 

চৈতন্যোতর যুগের তিন প্রধান পদকতাঁ বলরাম দাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দদাস 
কাবরাজ। 


বলরাম দাস 
বলরাম দাস নামে একাধক বৈষ্ণব পদকৰ্তা ছিলেন । এদের মধ্যে ষোড়শ 
শতকে আবির্ভৃত 'নত্যানন্দ-শিষ্য বলরামই সমধিক প্রাসদ্ধ । কষণনগরের দোগা1ছয়া 
গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। ব্রজবুলি ও বাংলা উভয়ভাষায় তান পদরচনা করেন 
তবে তাঁর বাংলায় রচিত পদই যথার্থ কাব্যগুণান্বিত । টি 


টির নার 


শ4 খলা সাহত্যের হীতহাস 


বাৎসল্য-ভাবের পদেই বলরামের সাধক কাঁতত্ব। যশোদার কষ্টের প্রত 
দ্নেহব্যাকুলতা এ-ধরনের পদের বৈশিষ্ট্য । 
শ্রঁদাম সুদাম দাম শুন ওরে বলরাম 
মিনাত করিয়ে তো সভারে ৷ 
বন কত আঁত দূর নবত্ণ-কৃশাওক্‌র 
গোপাল লইয়া না যাইহ দুরে ।। 
ইত্যার্দ যশোদা-উপদেশে পুত্রের জন্য মাতার দুশ্চিন্তা ও স্নেহপরায়ণতারই প্রীতচ্ছাব 
দেখা যায়। বাৎসল্যভাবের অববীন্রমতা বলরামের ভাষার সরলতা সুন্দরভাবে 
ফুটে উঠেছে । 
রাধার আক্ষেপানুরাগের পর ও চৈতন্য-নিত্যানন্দ {বিষয়ে পদরচনাতেও বলরাম 
কাতিত্ব দৌখয়েছেন। তবে তাঁর নীত-উপদেশমূলক বৈরাগ্যের পদ তেমন প্রাণতা 
লাভ করোন : রবীন্দ্রনাথ বলরাম-রচিত পদের অনুরন্ত পাঠক ছিলেন । “দোখবারে 
আঁখি পাখি ধায়, ‘আমার [হয়ার ভিতর হৈতে তোমা কে কৈল বাঁহর' ইত্যাঁদ পদের 
সপ্রশংস উল্লেখ করেছেন "তাঁন। 
অরুণ অধর মদ মন্দ মন্দ হাসে 
চণল নয়নকোণে জ্াঁতকূল নাশে । 
বলরামের রূপানুরাগের পদের দণ্টান্ত । সহজ সরল অব্যান্রম ভাষায় পদরচনায় 
বলরাম শ্রেণ্ঠ বৈষ্ণব কাঁবদের অন্যতম । 


জ্ঞানদাস 
হলা বৈষ্ণবপদসাহিত্যে চণ্ডীদাসের পরেই সমজাতীয় পদে জ্ঞানদাসের 

স্থান । কাঁবতার ভাব ও রুপাবচারে উভগ্লেই সমধমর্দ । তাই জ্ঞানদাসকে বলা যায় 
চণ্ডীদাসের 'ভাবাশব্য” অথবা উত্তরসাধক। বদ্যাপাতর অনুসরণে ব্রজবহীলতে 
পদরচনায় তান অন:করণের সামা উত্তীর্ণ হতে পারেনান । কন্তু চণ্ডীদাসের মতো 
সহজ ভাষায় ভাবগভীরতার প্রকাশে জ্ঞানদাসের স্বকীয়তা ভাস্বর হয়ে উঠেছে । 

কাবপাঁরচয় 

যোড়শ শতকে কাটোয়ার নিকটবতঁ কাঁদড়া গ্রামে কবির জন্ম । তিন ছিলেন 
নিত্যানন্দের কনিষ্ঠা পত্নী ও বৈষ্ণন সমাজের অন্যতম নেত্রী জাহবী দেবার শিষ্য! 
খেতৃরির বৈষ্ণব মহোৎসবে তাঁনও উপস্থিত ছিলেন । তাঁর ভাঁণতা যন ০৮ 
প্রায় চারণ? । 

কাঁবপ্রাতভার পাঁরচয় তাঁর 

চৈতন্যোত্তর কালে জ্ঞানদাসের জন্ম । চৈতন্য প্রবাত'ত ধর্মের অনুরণন তাই তব 


ল বা 
পদাবলশতে শ্রুত। এই ধর্মসচেতনতাতেই চণ্ডীদাস থেকে জ্ঞানদাস সভা 
প্রেমব্যাকৃলতা, প্রণয়-গভীরতা, বিরহের মঙ্গ দাহ, পননার্ম লনের আনন্দঘন 


মধ্যযুগ 75 


এককথায় এগৃলির নানা স্তর ও বৈচিত্র্যের প্রকাশে চণ্ডাঁদাস ও জ্ঞানদাসপ্রায় অভিন্ন । 
"উভয়ের পদের এই আত্ম সাদৃশ্যে একই পদ উভয়ের নামে প্রচালত হয়ে এক 
শবভ্রান্তর সৃণ্টি করেছে । 
সখের লাগিয়া এঘর বাঁধন; 
আনলে প:ড়িয়া গেল । 
অমিয় সাগরে সিনান করিতে 
সকলি গরল ভেল ॥ 
বৈষ্ণব পদাবলীর এই আঁনন্দ্য রত্ন উভয়ের ভাণতাতেই লভ্য, কিন্তু কার রচনা সে 
ংশয়ের নিরসন আজও সম্ভব হয়ান। অবশ্য এ-ও সত্য যে, আবেগের দুরবগাহ 
গভীরতায় চণ্ডীদাসের কাঁবচেতনা অতলস্পশরঁ, শিল্পমনস্কতা সত্তেও জ্ঞানদাস তত 
বড় কাঁব নন। তাঁর স্থান চণ্ডীদাসের পাশে নয়, পরে । 


পুর্বরাগ, আক্ষেপানুরাগ, মান, নিবেদন, মুরলশীশক্ষা,:রসোদ্গার প্রভৃতি [বিষয়ক 
পদে জ্ঞানদাসের স্মরণীয় অধিকার এবং তার আঁবিস্মরণীয় পদগাঁলর অনেকগাঁলই 
রসোল্গার পর্যায়ের £ 


১. রূপ লাগ আঁখ ঝ্‌রে গুণে মন ভোর । 
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রীত অঙ্গ মোর । 
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে। 
পরাণ পীরতি লাগ থর নাহি বাদ্ধে॥ 
২ গগনে ভুবনে দশ দিগ্‌গণে 
তোমারে দেখিতে পাই । 
আক্ষেপানুরাগ ও ভাবসাম্মিলনের পদেও তাঁর কৃতিত্ব স্মরণযোগ্য ৪ 
১. তোমার গরবে গরাবনণ হাম রূপসা তোমারি:রূপে । 
হেন মনে লয় ও দুটি চরণ সদা লয়্যা রাখি বুকে ॥ 
২. তোমায় আমায় একই পরাণ 
ভালে সে জানিয়ে আমি। 
হিয়ার হইতে বাহির হইয়া 
কির্‌পে আছিলা তুমি ॥ 
ইত্যাদি জ্ঞানদাসের পদাংশ সহজকথায় গভীর ভাব-প্রকাণে কৃতিত্বের উজ্জল নিদর্শন । 


গোবিন্দদাস 


টৈতন্যোত্তর যুগে বাংলায় রচিত বৈষবপদে জ্ঞানদাস যেমন দ্বিতীয়রাহত 
ব্রজব্লিতে রচিত পদে গোবিন্দদাস তেমনি আঁদ্বতীয়। জ্ঞান ও কীবপ্রাতভার 


76 টু ংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


“যুগল সাঁম্মলন' তাঁর কাঁবতায় ৷ 'বদ্যাপাতির একান্ত অনুগামী ও অনেকাংশে অনুরুপ' 
কাঁববণী্তর. অধিকারণ বলে “দ্বিতাঁয় 'বদ্যাপতি' রূপেও তাঁর বিশিষ্ট পাঁরাঁচাত ।- 
খলায় রচিত পদে অবশ্য তাঁর প্রতিভা ম্লান । 


কাঁবপাঁরচয় ৪ 

গোঁবিন্দের পিতা চিরঞ্জীব সেন, মাতা সুনন্দা । পৈত্রিক নিবাস কমারনগর। 
মাতামহ দামোদর সেন শ্রশখস্ডের অন্যতম প্রধান পণ্ডিত ও প্রভাবশালণ ব্যন্ত ছিলেন। 
অল্পবয়সে পিতৃহারা গোঁবন্দের বাল্যকাল কাটে শ্রীথণ্ডে ৷ বৈষ্ধবিরোধী রক্ষণশীল 
সমাজের সংস্পর্শ এড়াতে পাঁরণত বয়সে কুমারনগরের বাস উঠিয়ে কবি চলে 
আসেন খেতরির কাছে তোলয়াবুধুরী গ্রামে। গোবিলোর পত্রী মহামায়া, পন 
দিব্যাসংহ । তান সপারবারে গ্রীনিবাস আচার্যের শি্য্ব গ্রহণ করেন । শ্রীনিবাস' 
তাঁর রচনা বন্দাবনে শ্রীজীব গোস্বামীর কাছে পাঠিয়ে দিতেন । গোঁবন্দের কাব- 
প্রীতভায় মুগ্ধ হয়ে শ্রীজীব তাঁকে 'কাবরাজ' উপাধিতে ভাত করেন। যোড়ণ 
শতকের শেষভাগে জন্মে কাঁব সন্বত সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত জীবিত 
ছিলেন। তাঁর পদসংখ্যা প্রায় আটশ'। খেতুরির মহোৎসবে তান তাঁর রাঁচত পদের' 
জন্য অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করেন । 


কাঁবপ্রাতভার পরিচয় ঃ 
গোবিন্দদাস জ্ঞানদাসের মতো প্রাণের একতারাকে আশ্রয় করে কবিতানিমাঁণ 
করেননি । তাঁর রচনা ভাষাভাঁঙগমা ও ছন্দের মুছ“নার একতান-_প্রাতভা ও মন্যার 
সূত্রহারে এগুলির সঙ্গতবন্ধনে বিদ্যাপাঁত-চণ্ডীদাসের পরেই বৈষ্ণব পদসাহিত্যে 
তাঁর স্থান। 
গোবিন্দ রাঁচত পদের তিনটি বোশগ্ট্য £ ব্রজবুল ভাষার অপুর্ব মাধুর্য ; পূর্বরাগ, 
অভিনার, বাসকগজ্জা, বিপ্রলন্ধা, খাঁণডতা, কলহান্তারতা, মাথুর ইত্যাদ বৈষ্ণব রসশাস্ক 
অনযযায়ী পারম্পর্য রক্ষা করে রাধাকুফলীলার বিন্যাস-দক্ষতা এবং গোর ঙ্গাবষয়ক 
অনন্য পদ। রাধাক্ষঃলীলা বিষয়ক কোনো 1বশেষ পথয়ি বা পালা গাইতে হলে 
চৈতন্য বিষয়ক অনুরূপ ভাবের পদ প্রথমে গাওয়াই রপাত। এই পদকে বলে 
'গৌরচান্দ্িকা' । এ-জাতীয় পদরচনায় গোবিন্দদাস অপ্রাতদ্বন্দৰী । পালাকীর্তনের 
ক্ষেত্রে এই তিন কারণে গোঁবিন্দদাসের পদ গাওয়া প্রায় অপরিহার্য । 
বহ: বিচিত্র ভাবের পদ লিখে গোবিন্দদাস বণীর্তমান। তবে গোঁরচান্দ্রকা, 
রুূপানুরাগ ও অভিসারের পদরচনাতেই তাঁর কৃতিত্ব যেন একট. বেশি । অন্তার্নীহত 
ভাব ও বাঁহরঙ্গ ভাষা অপুর্ব সৌন্দর্ধলোক সৃষ্ট করেছে এ-জাতীয় পদগদীলতে 


নীরদ নয়নে নগর ঘন গুনে 
পুলক-মুকদল-অবলছ্ব ॥ 


মধ্যযুগ 77 


স্বেদ-মকরন্দ বন্দু বিন্দু চুয়ত 
বিকাশত ভাববদম্ব ৷ 
কি পেখল: নটবর গৌর-কিশোর ৷ 
গো?বন্দের এক অনন্য গোঁরাঙ্গরূপ বর্ণনার নিদর্শন আঁভসারের পদেও এমনি 
ধবানমাধূর্ব ও কল্পনাকুশলতার পাঁরচয় £ s 


কণ্টক গাড়ি কমলসম পদতল 
মাঞ্জর চীরাহ ঝাঁপ। 


গাগার বারি ঢাঁর করি পাঁছল্‌ 
চলতাঁহ অঙ্গুলি চাপি । 


গোবিন্দদাসের রূপ।নুরাগের পদে চান্রত রাধা চণ্ডীদাসের রাধার মতো অবোধ 
বালিকা নয়, অপরিণত বয়সেই পারণত-মনস্কা । প্রেম যে যুক্তি মানে না, ধমভিয়কেও 
তুচ্ছ করে সে-বিষয়ে সে-পূর্ণ সচেতন £ 


সজাঁন, অব ক করবি উপদেশ । 
কানু অনুরাগে মোর তনুমন মাতল 

না শুনে ধরমভয় লেশ । 
গো!ঁবন্দদাস সংস্কতজ্ঞ, অলংকার শাস্ত্রে ব্যৎপন্ন, বৈষ্ণব দর্শন ও রসশাস্তে সপাণ্ডত । 
তিনি 'মঞ্জরণ' সাধনায় অনুরন্ত ছিলেন অর্থাৎ রাধাকৃষসেবাকে জীবনে পরম কাম্য 
মনে করতেন কিন্তু তবু পদরচনাকালে কাব হিসেবে তাঁর জ্ঞান, আভজ্ঞতা ও প্রাতভাকে 
চূড়ান্ত প্রকাশ-অভিমুখী করেছেন। তাঁর পাণ্ডিত্য ও কাবত্ব শান্ত সযত্র পরিচযায় 
যাগ্মভাবে কাবতার ফসল ফলিয়েছে । বদ্ুত, বিদ্যাপাঁতর মতোই ভাষার সৃদড় ইমারত 
রচনা করেছেন গোঁবন্দদাস, মধুনিষ্যদ্ধী ছন্দে যেখানে ভাবের অমরলোক প্রাতাঙ্ঠিত । 


বাৎ. সা. 1.6 


দশম অন্যাক্ 
- ধর্মমঙ্গল 

ধর্মঠাকুরের মাহাত্মাবযয়ক কাব্য ধর্মমন্গল কাব্য । ধর্মঠাকুর পুরুষদেবতা, তবে 
{নিরাকার । শিলামনার্ত তে এবং বিভিন্ন গ্রামে ভিন্ন ভিন্ন নামে হীন পাঁজত হন । 
এ'র পূজা পাণ্চমবঙ্গেই সাঁমাবন্ধ । কিন্তু মনসা ও চণ্ডীর পৃজা সারা বাংলায় এক 
সময়ে প্রসারত থাকলেও তা ক্রমে লুপ্ত অথবা বল:গ্তপ্রায়, গ্রামদেবী হিসাবে 
তাঁদের তেমন প্রভাব আর নাই । অন্যপক্ষে, শুধ্‌ পাঁ্চমবঙ্গে পাঁজত ধর্ম ঠাকবরের 
প্রভাব আজও অম্লান । এখনও তাঁর উপাসনা ও পুজা হয় । 

. আস্ট্রক ‘দড়ম্‌’ শব্দ থেকে (অর্থ কুর্ম“ ) ধর্ম নামের উৎপত্তি অনুমান করেছেন 
ভাষাচার্য সুনশীতকুমার চট্টোপাধ্যায় । পাঁণ্ডতেরা, সৃতরাৎ, আর্েতর দেবতা 
হিসাবেই ধর্ম ঠাকুরকে গ্রহণ করেন । ডোম সমাজে এই পুজার বিশেষ প্রচলন আজও 
দেখা যায়। এই ঘটনা থেকেও বোঝা যায়, ধর্মঠাকুর আদিতে ভিলেন আর্যেতর 
দেবতা । কিন্তু মধ্যযুগ থেকে তান এক মিশ্র দেবতা । প্রাগার্যণ ইরাণীয়, আর্য, 
বৌদ্ধ, হিন্দ? মুসলমান সব ধর্মের প্রভাব পড়েছে তাঁর বোশগ্ট্যকত্পনায়। তবে 
ম্গলকাব্যে পৌরাণিক নারায়ণের সঙ্গে তাঁর বিশেষ সাদ্য দেখা যায়। 

ধর্মনঙ্গলেরও দুটি কাঁহনী। তবে লাউসেন-রঞ্জাবতী কাহনপই বোশ জনাপ্রয় 
কাঁহননী £ 

. ধমণ্ঠাকুর চান মতে" নিজ পূজা প্রচার । দেবসভায় ইন্দ্রের নর্তকী জাদ্ববতীর 
তাল কেটে গেলে মতে জন্মাবার আভশাপ পেল সে। ধর্মের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হওয়ার 
সন্তাবনা দেখা দিল। রমাত নগরে বেণু রায়ের কন্যা রঞ্জাবতী হয়ে জন্মাল 
জাম্ববতী। তার দিদি গৌঁড়ের রাণী ; দাদা মহামদ, গৌড়েবরের মন্ত্রী । 

গোঁড়েশ্বর তখন ধমণ্পালের পান্র। তাঁর রাজ্যে সুখ শান্ত বিরাজিত। শহ্ধ, 
মন্দ মহামদ স্বেচ্ছাচারী ও হঠকারী । তারই চক্রান্তে সম্ভ্রান্ত প্রজা সোম ঘোষ বন্দী । 
রাজা তাঁকে মুক্তি দিলেন, পাঠিয়ে দিলেন ত্রিষণ্ঠী বা ঢেক:র গড়ে সামন্তরাজ 
কর্ণসেনের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে । কর্ণসেন রাজার দর সম্পকাঁয় ভাই ৷ 

সোম ঘোষের প্র ইছাই ঘোষ ৷ সে ক্রমে পরাক্লান্ত হয়ে উঠল। দেবী চণ্ডীর 
অন্যগ্রহ তার উপর । কর্ণ সেনকে তাড়িয়ে সে-ই হল গড়ের মালিক । গোঁড়েম্বরকে 
খাজনা দেওয়াও সে বন্ধ করল । ফলে গোঁড়রাজের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধল। যুদ্ধে 
ইছাইর অসামান্য পরাক্রমে কর্ণ সেনের ছয় পন্তর নিহত হল । তাদের পত্নীরা 
সহমূতা। কর্ণ" দেন-পত্নীও শোকে আত্মবাতিনী হলেন। কর্ণ সেনের দুঃখে কার 
গৌড়ে্বর তাঁকে সংসারী করার জন্য তাঁর সঙ্গে বিবাহ দিলেন শ্যালিকা বুজাব 
তাঁকে ময়না গড়ের রাজা করেও পাঠিয়ে দিলেন । বৃদ্ধ রাজার সঙ্গে রা বতীর নিবা 


মধ্যযংগ 79 


সায় ছিল না মহামদের ৷ রাজার প্রত তার ক্রোধ সে প্রকাশ করল ভাগনীর উপর । 
তাকে প্রকাশ্যে বন্ধ্যা বলে গালি দিল। অপমানিতা রঞ্জাবতী পাত্রলাভে ধর্মের 
তুন্টাবধানে ‘শালে ভর’ অর্থতি কণ্টকশধ্যা গ্রহণ করল। তার কডচচ্ছ সাধনায় তুষ্ট 
হয়ে ধর্ম তাকে পত্র বর দান করলেন ॥ এই পত্রের নাম হল লাউসেন । 

রঞ্জাবতাঁর পত্রলাভে সকলেই খুশি, এক মহামদ বাদে। সে ঈ্ষার জৰালায় 
লাউসেনকে চ:রি করল; কিন্তু ধর্ম ঠাকুরের চেলা হনুমান অপহৃত শিশুকে উদ্ধার 
করে মায়ের কোল ভরাল। 

ক্রমে লাউসেন আঁদ্বিতীয় বার হয়ে উঠল ৷ যেমন তার বীরত্ব, যেমীন নিৎ্কলঙ্ক 
চারিত্র। দেবা পার্বতী তার সংযম পরীক্ষা করে খাঁশ হয়ে তাকে দান করলেন 
আপনার অজেয় খড়া। গৌঁড়েবরের সঙ্গে দেখা করতে এসে লাউসেন পড়ল 
মহাবিপদে। মহামদের চক্রান্তে সে নিক্ষিপ্ত হল গৌড়ে্বরেরই কারাগারে । রাজা 
তার মন্ত্রবিদ্যার পাঁরচয় পেয়ে তাকে মহন্ত দিলেন আর তার পরিচয় পেয়ে প্রভত 
সমাদর করলেন ময়নাগড়ের তালহকও ইজারা দিলেন তাকে । বাড়ি ফেরার পথে . 
লাউসেনের সঙ্গে পাঁরচয় হল কালু ডোমের ৷ স্ত্রী ও অন:চরাদি সহ কাল, ডোম 
চলল লাউসেনের সঙ্গে ময়না গড়ে । কালু হল লাউসেনের সেনাপতি । 

ঈর্ধাকাতর মহামদ রাজাকে কৃবদ্ধি দিল লাউসেনকে পাঠিয়ে কামরনপের রাজাকে 
দমন করে রাজস্ব আদায় করতে । তার গোপন ইছা যুদ্ধে লাউসেন নিহত হোক। 
কিন্তু লাউসেন কামরপরাজকে পরাজিত করল; লাভ করল রাজকন্যা কিঙ্গাকে । 
1সমূলার রাজা হারপালের কন্যা কানাড়া অপর্ব সুন্দরী ৷ গৌড়াধপাঁত তাঁকে 
[ববাহ করতে চাইলেন কিন্তু ব্যর্থমনোরথ হলেন । তখন রাজা সিমলা রাজ্য আক্রমণ 
করলেন। কানাড়া চণ্ডীর সোবিকা, দেবীর কাছ থেকে সে একটি লোহার গণ্ডার 
পেয়েছিল। সে ঘোষণা করল যে এক কোপে এই গণ্ডারের মাথা কাটতে পারবে 
তাকেই সে বিবাহ করবে। রাজা ব্যর্থ হলেন, কিন্তু লাউসেন সফল হয়ে বয়ে করল 
কানাড়াকে । এতে রাজা একট; অসন্তুষ্ট হলেন তার উপর । এতকাল মহামদের 
লাউসেন-নধনের সব চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। এবার সে রাজাকে উত্তোজত করল 
লাউসেনকে দিয়ে ইছাই ঘোষকে দমন করতে | অসাম পরাক্রমে চণ্ডীর সেবক ইছাই 
ও ধর্মঠাক:রের সেবক লাউসেন পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল । যুদ্ধে 
ইছাই দিল প্রাণ, বিজয়ী হল লাউসেন ৷ মহামদ ধর্/ঠাকুরের অসীম মাহমায় আকৃষ্ট 
হয়ে তাঁর পুজার আয়োজন করল ৷ ধর্ম কিন্তু সে-পুজা গ্রহণ করলেন না! উপরন্তু, 
প্রবল ব:ষ্টতে ভাসিয়ে দিলেন গোঁড়রাজ্য ৷ আতাঁঙ্কত রাজা লাউসেনকে ডাকালেন। 
সে এসে প্লাবন বন্ধ করল ৷ 

লাউসেনকে কিছুতেই দমন করতে না পেরে মরীয়াহয়ে মহামদ রাজাকে প্রস্তাব দিল 
যে লাউসেন যাঁদ প্রকৃতই ধর্মের সেবক হয়, ধর্মঠাকুরের কৃপায় সে পশ্চিমে সযেদিয় 
দেখাক । রাজা চিরকালই মন্ত্রীর কুমন্দ্রণার দ্বারা চালিত । তিনিও লাউসেনকে 


80 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস: 


সে-আদেশ দলেন। হাকন্দে দুশ্চর তপস্যায় লাউসেন নিমগ্ন । সেই সংযোগে 
মহামদ ময়না আক্রমণ করল । কিন্তু কানাড়ার বীরত্বে পরাঁজত হল সে। এদিকে 
ধর্মঠাক:র কিছুতেই প্রসন্ন হচ্ছেন না দেখে লাউসেন নিজের' মাথা কেটে যজ্ঞানলে 
নিক্ষেপ করল ৷ ধর্ম আর স্থির থাকতে পারলেন না। তাঁর আদেশে অমবস্যার 
রাত্রিতে পাশচমে হল সযেদিয়॥ উপায়ান্তর না দেখে মহামদ এই দৃশ্যের সাক্ষী 
হারহর বাইতিকে ঘুষ দিয়ে মিথ্যা কথা বলাতে চাইল । কন্তু তার সে চেণ্টাও ব্যর্থ 
হল। এত পাপের ফলে ধর্মঠাকুরের অভিশাপে তার দেহে কৃঙ্খরোগের স্টার হল । 
লাউসেনের দয়ায় অবশ্য তার রোগমাঁন্ত ঘটল। লাউসেনের চেষ্টায় পৃথিবীতে 
' ধর্মঠাকুরের মাহাত্ম্য প্রচারিত হল। পূ চিত্রসেনফে সিংহাসনে বাঁসিয়ে মাতাসহ 
লাউসেন ফিরে গেলেন স্বগে। 


রূপরাম 
কাঁবপাঁরচয় 


রুপরাম চক্রবতাঁ লেন ধর্মমঙ্গল কাব্যের স্বনামধন্য কবি। তাঁর রাচত কাব্যের 
নাম 'অনাদ্যমঙগল' ৷ প্রসঙ্গত স্মরণীয়, ধর্মঠাকুর কোথাও কোথাও 'অনাদ্য”, ‘নিরঞ্জন’ 


ইত্যাদি নামেও পারচিত। রূপরাম ষোড়শ শতকে জীবিত দিলেন এবং সম্ভবত এই 
শতকের দ্বিতীয়ভাগে তাঁর কাব্য রচনা করেন । 


রূপরামের কাব্যে আত্মপরিচয় আছে বর্ধমান জেলার কাইাতি জ্ররামপুরে তাঁর 
জন্ম। ব্ৰাহ্মণ পণ্ডিতের পরিবারে জন্মালেও বাল্যে রূপরামের 'বদ্যাশিক্ষায় আগ্রহ, 
ছিল না। জ্যেষ্ঠ ভাতার দ্বারা সেজন্য তিনি ভর্খীসত হতেন। তারই পাঁরণামে 
তান গৃহত্যাগ করেন। অবশেষে গোপভংমের রাজা গণেশ কাঁবকে আশ্রয় দেন। 
একটি গানের দলও বেধে দেন। “সেই হত্যে গাঁত গাই ধর্মের আসরে’ বলেছেন: 
রূপরাম। ব্রাহ্মণের পক্ষে এই বৃত্তি সেকালে সমীচীন ছিল না। সম্ভবত সেইকারণে' 
তিনি জাতিচতও হন । 


কাব্যকথা 


রূপরামের কাব্য সরল, প্রাঞ্জল । গুরুগৃহে পাঠ সমাগ্ত করতে না পারলেও 
তিনি যে কিছুটা 1শক্ষাপ্রা্ত হয়োছলেন তাঁর কাব্যে তার পাঁরচয় আছে £ 


কপালে 1সন্দুর পরে তপন-উদয় । 
চন্দন-চা্দ্রমা তার কাছে কাছে রয় ॥ 
চন্দ্রকোলে শোভা যেন করে তারাগণ । 
ঈষৎ কাঁরয়া দিল বিন্দু বিচক্ষণ ৷ 


মধ্যযুগ 81 


বূপরামই হয়ত প্রথম কাঁব যিনি লাউসেন কাঁহনীকে ‘ছড়া পাঁচালী ও ব্রতকথার 

হকণৰ্ণ সীমা থেকে উদ্ধার করে মঙ্গল কাব্যের আকার দিয়েছেন।' দেবতার কাহিনী 
বলতে গিয়ে তিন মর্ত সীমা আঁতক্রম করেননি, বাস্তবতাকে স্থান 1দয়েছেন কাব্যে, 
এ-ও তাঁর ক্‌তত্ব। সহজ বর্ণনায় তাঁর আগ্রহ ছিল। তাই যথেষ্ট প্রতিভার 
অধিকার" না হওয়া সত্তেও তাঁর কাব্য বাশশ্ট ও বিশেষ জনপ্রিয় । করুণ ও হাস্যরস 
পাঁরবেশনে তিনি বেশ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন । খর্মমঙ্গল কাব্যের পরবর্তী 
কাবরা অনেকেই তাঁকে অনুসরণ করেছেন । পশ্চিমবঙ্গের বহুস্থানে রুপরামের 
কাব্যের পুথি পাওয়া গেছে 


ঘনরাম 


ধর্মমঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কাঁব ঘনরাম চক্রবশ। [তান অষ্টাদশ শতাব্দীর 
কবি এবং ১৭১১ খ্রীঃ তাঁর কাব্যরচনা সমাপ্ত করেন । 


কাবপরিচয় ৪ 


ঘনরাম বর্ধমান জেলার কৃষ্পুর গ্রামের অধিবাসী ছিলেন । তাঁর পিতার নাম 
গৌরপকান্ত মাতা সীতাদেবী। টোলে তিনি বিদ্যাভ্যাস করেন এবং অজ্পবয়সে 
কবিত্বশান্তর পরিচয় দেন। কাব্যরচনায় তান সম্ভবত বর্ধমানরাজ কশীর্তিচন্দ্রের 
পঙ্যপোষকতা লাভ করোছিলেন। ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনা করলেও কাব ছিলেন 


প্ামভন্ত। 


কাব্যকথা £ 

ঘনরামের ধর্মমঙ্গল সব্ধ গ্রন্থ, চব্বিশাটি অধ্যায়ে বিভন্ত। ধমঠাকৃর সম্পার্ত 
দুটি কাহিনীকেই (হারিশ্চন্দ্র লুইচন্দের কাহিনী ও লাউসেন কাঁহনী ) [তান কাব্যে 
স্থান দিয়েছেন প্রায় মহাকাব্যের আকারে রচিত হলেও মহাকাঁবসূলভ প্রাতভার 
অভাবে কব পাঁচালীর আদর্শে“ কাব্যটি রচনা করেছেন । 

ধর্মমঙ্গলের কাহিনী ধর্মঠাকৃুরের কৃপায় সেবকের অসাধ্যসাধনের কাহনগ । 
যেহেতু সেবককে চাপে গড়ে বারবার অসম্ভব কর্ম করতে হয়েছে, সন্তাব্যতার মান্রাও 
কবিকে পার হতে হয়েছে বারবার। সুতরাং অবাস্তবতা ধর্মমঙ্গল কাহিনীর সাধারণ 
বৈশিষ্ট্য । তবু তারই অবকাশে সমাজ ও ইতিহাস ক্ষণে ক্ষণে এ’ কাব্যে উকি 
দিয়েছে। রাঢ়ের সমসাময়িক সমাজ ও ইতিহাস স্থান গেয়েছে ঘনরামের কাব্যে। 
সন মুকদরামের মতো সে যুগের জাতাবন্যাসের বিস্তৃত 


বর্ণনা দিয়েছেন । সে সময়ে মুশিদকৃলি খান বাংলার দেওয়ান হয়ে ইজরাদার 
নিযযাস্তর ব্যবস্থা করেন ৷ ঘনরামের কাব্যে এই ইজারারউল্লেখ আছে । তাছাড়া সাধারণ 


82 খলা সাঁহত্যের ইতহাস 


লোক এমনকি ক্ষমতাবান জামদাররা যে রাজরোষে দুর্দশা ভোগ করত সে পাঁরচয়ও 
ধর্মমঙ্গলে পাওয়া যায় ঃ ‘মহতের দায় মিছা দিবে রায়।' ধর্মপালনের নামাস্তরে 
তখন ব্যাভিচার স্থান পেয়েছিল সমাজে ৪ 


না বৃঝয়ে তত্তৰ পরদারে মত্ত 
মজাইবে মাংস মদে'। 


ঘনরামের কাব্যে একটি স্মরণীয় মূল্যবান তথ্য সেকালের বিদ্যান্গীলন বিষয়ে । 
যে-রমটি সেকালে বিদ্যাভাসে অন:সৃত হত তার একটি সুন্দর বর্ণনা পাওয়া যায়: 
তাঁর রচনায় £ 
অ-কারাঁদ ক-কারান্ত জানা হইল স্বর ॥ 
ক-কারাদি ক্ষ-কারান্ত হল বণপির ॥ 
অভিলাষে আঙ্ক আসক ফলাদি বানান ৷ 
তারপর, 
অন্টধাতু অণ্টার্সাদ্ধ সুবন্ত অমর । 
পাঁড়ল অণ্কের ভেদ বন্ধে কার ভর ॥ 
ধাতুনাম শব্দভেদ পাঁড়ল অপর । 
অবশেষে, 
বেদবাণী জানিতে পাঁণান পড়ে রায় । 
* bd bd 
কাব্য অলংকার কোষ আগম নিগম ৷ 
ভীন্তযোগ সার যার ঘুচে মনোভ্রম ॥ 
স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, যা্তাক্ষর ও বানান, ব্যাকরণ-অত্ক, ধাতুরুপ, শব্দরপ তারপর 
পাণানর “অপ্টাধ্যায়ী' পাঠের পর কাব্য-অলৎকার ইত্যাদি শিক্ষা-_একান্ত বাস্তব- 
নিষ্ঠা দিয়েই কাব এই পাঠক্রমের ক্রমাট আমাদের উপহার দিয়েছেন। হয়ত 
ব্ান্তগত জীবনের প্রাতচ্ছায়াতেই তা সম্ভব হয়েছে। 


ঘনরাম নানা শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন, কবিত্ব শান্তরও অধিকারী ছিলেন । 
অলংকার রচনাতেও কাব ছিলেন নিপূণ ভারতচন্দ্রের মতো শব্দালৎকারের প্রাত 
তাঁর আন্তারক আকর্ষণ ছিল £ 
বিপদ দৌখয়া বড় নদে বাড়ে বান । 
কলকল করব কমল কানে কান ॥ 
ঘনরামের রুচি মাজত, গ্রাম্য-স্থুলতা থেকে প্রায় মুত । তাঁর পর্যবেদ্সণক্ষমতা তাক 
ছিল-_ইাতহাস ও সামাজিক ঘটনার বর্ণনায় তার প্রমাণ। ভাষার প্রাঞ্জলতায় এবং 


মধ্যযুগ 83 


সরল সাবলশল গাঁততে তাঁর বাণত কাঁহনী এগয়ে গেছে। চাঁরব্রগঃলৈ অগকনে 
বশেষ পারদর্শিতা দেখাতে না পারলেও ঘনরামের "চান্রত অপ্রধান চরিন্রগুলি 
প্রাণবন্ত । বাঙালশ নারীর বে বীরত্ব ও সাহাঁসকতার পারচয় তিন দিয়েছেন তাতে 
ভার; বাঙালী একটু গৌরববোধই করতে পারে । ঘনরামের নারী চারন্রগযীল নিজেরা 
শুধু বীরই নয়, সাহস ও প্রেরণার দান্রীও বটে। কানাড়ার স্বজন হারানোর দ*ঃখে 
অশ্রপাতে দমখা তাকে ধিক্কার দিয়ে জানিয়েছে £ 


শোকের সময় নয় শণ্ আসে পুরে । 
সংহার সংগ্রামে সাজ শোক ত্যজ দুরে ॥ p 
ঘনরাম হয়ত বিরাট প্রাতভার অধিকারী ছিলেন না, তবু তাঁর রচিত গ্রন্থ নানা 
উপাদানের গৌরবে বাংলা সাহত্যের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অবদান ॥ 


এক্কাদশ অন্যান 
মহাভারত 


‘অত দৰ্পে হতা লঙ্কা আঁত মানেচ কৌরবাঃ-_রাবণের দর্পের কারণে ধংস 
হয়েছিল সোনার পুরী লঙ্কা; আর দুযোধনের দর্পের পাঁরণামে শতদ্রাতা ও 
অগণিত আত্মীয় বন্ধ-সহ নিহত হয়োছল সে, ক:রুক্ষেত্রের যুদ্ধে। প্রথম কাহিনী 
রামায়ণে বা্ণত, দ্বিতীয়াট মহাভারতে ৷ 

মহাকাব্য মহাভারতের আদি কবি বেদব্যাস আট হাজার আটশ’ ষ্লোকে তাঁর 
অমর গ্রন্থ রচনা করেন। নানা কাঁবর সংযোজনে তার বর্তমান শ্লোক সংখ্যা 
চাব্বশ হাজার । 

মহাভারত প্রাচীন ভারতীয় জীবনের কঃপনামাপ্রত ইতিহাস । ভারতীয় জন- 
জীবন, রাঞ্জারাজড়ার ইতিহাস, ধর্ম, যংদ্ধাবগ্রহ, আচার-আচরণ, সমাজ পাঁরচয়ের 
আকর মহাভারত। মধ্যযুগে এই মহাগ্রন্থ প্রথম বাংলাভাষায় অন:দত হয়। তবে 
সেকালে কোনো কবিই গ্রন্থটির আক্ষরিক অনুবাদে উৎসাহিত হননি । 


কবান্দ পরমেশ্বর বাংলার সংলতান হুসেন শাহের সেনাপতি (লস্কর ) পরাগল 
খাঁর সভাকবি ছিলেন। 'ববীন্দ্র' সম্ভবত তাঁর উপাধি । পরাগল চট্টগ্রাম জয় করেন 
ও সেখানকার শাসনকর্তা নিযুন্ত হন। তিনি ছিলেন বিদ্যোৎসাহদ; তাছাড়া 
সমসামায়ককালে হিন্দ মুসলমানের পারস্পারিক বিরোধিতা ্তাঁমত হয়ে একটি 
প্রীতির ভাব সমাজে সণ্টারত হয়েছিল। এই পাঁরবেশে মুসলমান শাসকেরাও 
কেউ কেউ হিন্দুর মহত্তম পুরাণগ্রন্থ সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করাছলেন । 


পরাগল পরমে*বরকে এমনভাবে মহাভারতকথা অনুবাদ করতে বলেন যাতে মাত্র 
একদিনেই তিনি সমগ্র মহাভারত কাহিনীটি শুনতে পারেন। ফলত পরমেশ্বরের 
রচিত 'পাণ্ডব বিজয়' যা 'গরগলস মহাভারত’ নামেও খ্যাত, মহাভারতের একটি আঁত 
সর্ধক্ষপ্ত অন:বাদগ্রল্থ। তবে আতিসবাক্ষাপ্ত সত্তেও কাঁ প্রধান প্রায় সমস্ত ঘটনাকেই 
অনুবাদে স্থান দিয়েছেন । তত্তরকথায় মুসলমান শাসনকতরি আসক্তি থাকবে না 
ধরে নিয়ে তিনি অবশ্য কাহিনী অংশেরই অনুবাদ করেছেন, তত্তবকথা সম্পন্প 
অনহন্তথেকেছে। 


মধ্যযুগ 85 


যতদুর জানা-যায়, পরমেশ্বরই মহাভারতের প্রথম অনুবাদক । তিনি সম্ভবত 
-যোড়শ শতকের গোড়ার দিকে তাঁর অনুবাদ সমাপ্ত করেন। প্রথম অনুবাদকের 
কৃতিত্ব ছাড়া পরমেশ্বর প্রাপ্য কোনো কবিত্বগৌরব আছে কিনা সন্দেহ। মহত্তম 
মহাকাব্য থেকে কাঁবপ্রেরণা লাভের পরিচয় রাখাও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। সরল 
ভাষাভাঁঙ্গই তাঁর রচনার আশ্রয় ও বৈশিষ্ট্য । 


পরিধান পীতবাস কুসুম বসন । 
নবমেঘ শ্যাম অঙ্গ কমললোচন ॥ 


‘তাঁর অনুবাদের আংশিক নমুনা । 


পরিকর নন্দী মহাভারতের অন্যতম অন:বাদক। তিনি জোঁমান-সর্থহতা 
অবলম্বনে শুধু অশ্বমেধ পর্ব অনুবাদ করেন । তাঁর কাব্যের রচনাকাল সম্ভবত ষোড়শ 
শতকের তৃতীয় দশক । হুসেন শাহের পুত্র নসরৎ শাহ তখন বাংলার সংলতান ৷ 

পরাগল খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ছুটি খাঁ চট্টগ্রামের শাসনকতাঁ নিযুন্ত হন। 
তানও ছিলেন পিতার মতো বিদ্যানুরাগী ও হিন্দপুরাণকথায় আগ্রহী । 
হন্দরাজাদের প্রাচীন এ*বর্য ও যজ্ঞাদির বিষয়ে জানার ছিল তাঁর একান্ত অনুরাগ । 
ফলত, তিনি তাঁর সভাকাঁৰ ও আশ্রিত শ্রীকর নন্দীকে শ:ধং অশ্বমেধ পর্ব অনুবাদের 
নির্দেশ দেন। কাঁবও সে-আদেশ পালন করেন এবং সেইসঙ্গে ছৃটি খাঁর কৃতত্বকেও 
কাব্যে স্থান দেন॥ ছুটি খাঁর কীর্তি ত্রিপুরা রাজ্য জয় । এ-সম্পর্কে শ্রকর নন্দী 


লিখেছেন ও 


ব্রিপুরা-ন:পাঁত যার ডরে এড়ে দেশ। 
পর্বত গহবরে গয়া করল প্রবেশ ॥ 
গজ বাজী কর দিয়া করিল সম্মান । 
মহাবন মধ্যে তার পুরীর নিমণি ॥ 
সুতরাং তাঁর অনুবাদে শুধু প:রাণকথাই স্থান পায়নি, ইতিহাসের সংকেতও আছে । , 


গ্রীক নন্দীর অনুবাদ পরমে*বরের অনুবাদ অপেক্ষা শ্রেয়, যাঁদও উৎকৃষ্ট কাব্য- 


গণাম্বিত নয়! হাস্যরসের প্রকাশে অবশ্য তাঁর কিছুটা দক্ষতা ছিল এবং সেইজন্য 


তাঁর কাব্য সুখগাঠ্য ॥ 
কামীরাম দাগ 
হাভারতের শ্রেষ্ঠ অন*বাদক কাশীরাম দাস। তাঁর ‘ভারত 


খলাভাষায় ম 
পাঁচালণ' সপ্তদশ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে রাঁচত হয়। 


86 ংলা সাহিত্যের ইতিহাস 
কাঁবপাঁরচয় 


বর্ধমান জেলার সিক্গিগ্রামে কবির জম্ম । তাঁর পিতার নাম কমলাকান্ত । তাঁদের 
কোঁলিক পদব) দেব। কাঁব সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন এবং তাঁর গুর্‌ অভিরাম। 
মূখোটির নির্দেশে কাব্যরচনায় ব্রতী হন। অবশ্য সমগ্র মহাভারত অনুবাদ কাঁবর' 
পক্ষে সম্ভব হয়ান। আদি, সভা, বনও বিরাট পর্বের ছু অংশ রচনা করার পর: 
কাঁবর ?তরোধান ঘটে 


আদ সভা বন বিরাটের কতদূর । 

ইহা রচি কাশীদাস গেলা স্বর্গপুর | 
কাঁবর ভ্রাতুৎ্পুত্র নন্দরাম, অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ও অন্য কবিরা ক্রমান্বয়ে অন্য 
পর্বগৃলির অনুবাদ করে কাশীরামের আরন্ধ কাজের সম্পূণণতা দান করেন । 


কাব্কথা | 


কৃত্তিবাসী রামায়ণের মতোই কাশীদাসী মহাভারতের জনপ্রিয়তা । বাংলার ঘরে 
ঘরে এগ্রন্থ পঠিত হয়েছে, আজও তার জনপ্রিয়তা লুপ্ত হয়ান । বাঙালগর 
ধর্মচেতনা ও নীতিবোধ যে দুটি গ্রন্থ দ্বারা মূলত নিয়ান্দরত হয়েছে, তার একাট 
ক্‌ত্তিবাস রামায়ণ, অপরটি কাশনদাসী মহাভারত । সামাঁজক একতার ভিত্তিভূমি | 
রুপেও গ্রন্থ দুটি মূল্যবান । সমবেত ধর্মচচা ও অবসর বিনোদনের মাধ্যম সঙ্গীত ও | 
পাঁচালী গানের মুখ্য বিষয় ছিল রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনী__গাহ্হ্য ও সামাজিক | 
অনহজ্ঠানেও এ দুটি গ্রন্থ ছিল পরম আদরণীয়। নিত্য পাঠ্য গ্রন্থরূপে মধ্যযুগে, 
গ্রন্থ দুটি সম্মান পেয়েছে । আজও সে সম্মান অংলানধারায় প্রবাহিত । 


বেদব্যাস বরাচত সংস্কৃত মহাভারতের অনুবাদ করেছেন কাশীরাম। কিন্তু 
আক্ষারক অন:বাদে তদ্তে না হয়ে তান মূলত ভাবানুবাদেই মনোযোগণ হয়েছেন । | 
যে চারাট পর্ব কাশীরামের অনুবাদরূপে স্বীকৃত, তাতে দেখা যায়, কবি | 
মুল কাহনীকে সংক্ষিপ্ত করেছেন, মাঝে দু-একটি স্বকৃত আখ্যান সন্নিবোশতও 
করেছেন । কিন্তু এমন নিপুণ ভাষারীতি সর্বত্র অন: সূত হয়েছে যে সংক্ষিপ্ত আখ্যান ) | 
যে মল মহাভারতে নাই (যেমন শ্রীবৎস-চিন্তার উপাখ্যান পারিজাত হরণ, 
সত্যভামার তুলাব্রত, রাজসুয় যজ্ঞে বিভীষণের অপমান ) অন:ধাবন করা যায় না। 
প্‌বপির সঙ্গতি ও একই ভাষারীতি সর্বত্র অনুসৃত হয়েছে। অন্যপক্ষে, পরব 
ংশের টি, নানা অসঙ্গতি, ভাষাগত দুর্বলতা, প্রমাণ করে যে, অপরের হস্তক্ষেপ | 
সেখানে থাকা সম্ভব । নানা ভণিতা থেকে অবশ্য জানা যায় যে নানা কবির হস্তক্ষেপ 4 
এগ্রন্হে রয়েছে । 


পান্রপান্ীর রপবর্ণনাতে কাঁবর অনুবাদ মূলানুগ। নীতি ও তত্তকথার 


মধ্যযুগ ৪7 


অন:বাদেও কাশপরাম সাধ্যমতো মলের অনুসরণ করেছেন। অথচ সে অনুবাদ 
ঘস্কতেগন্ধী না হয়ে হয়ে উঠেছে খাঁটি বাংলা ৪ 
উপাজনে যত কণ্ট ততেক পালনে ৷, 
ব্যয়ে হয় যত দ:ঃখ ক্ষয়েতে দ্বিগুণে ॥ 
অথথ যার থাকে তার সদা ভীত মন। 
তার বৈরি রাজা-আঁগ্ন-চোর-বক্ষুগণ ৷ 
এই অনুবাদে কাশীরাম অনুবাদরীতির একটি আদর্শ স্হাপন করেছেন । 
ভন্ত বংশে কাশীরামের জন্ম । বৈষ্ণব ধর্ম তখন বাংলাদেশে বিশেষ প্রভাব 
বস্তার করেছে । কবি নিজেও ছিলেন বৈষ্ণব । মহাভারতের যুদ্ধবিগ্রহ, রাজবংশের 
কলহ ইত্যাদি বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে কবর এই বৈষ্ণবভাব প্রকাশিত হয়েছে । 


কাশণরাম অশিক্ষিত ও স্ব্পশিক্ষিত বাঙালীর কথা মনে রেখে কাব্যরচনার ব্ৰতী 
হন। অনুবাদ যেক্ষেত্রে গুরংভার হওয়ার সম্ভাবনা, কবি আত যত্নে সে অংশ 
অনুবাদ থেকে বিরত থেকেছেন। এইজন্যই ভীঘ্ম পর্বের গণতা-অধ্যায়কে তান! 
গ্রন্থে স্থান দেননি । তবে উপদেশাত্মক অংশগুলিকে লোকশিক্ষার অপরিহার্য 
উপকরণ হিসাবে তিনি গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন £ 


ল:কাইয়া যেই জন করে পাপকর্ম। 

লোকে তা না জানলেও জানেন তা ধর্ম ॥ 

চন্দ্র সূর্য“ বায়ু অগ্নি মহী আর জল । 

আকাশ শমন ধর্ম জানয়ে সকল ॥ 

কাশশীরাম নিজে ছিলেন সংস্কৃতজ্ঞ ; তাছাড়া চৈতন্য পরবর্তী বাংলা সাহত্যে 

তৎসম শব্দের আধক্যও দেখা যায়। এই সকল কারণে কাঁবর অনুবাদ তৎসম 
শব্দবাহ:ল্যে ও সমাস-সাহ্ধর জটাজালে কখনো কখনো কিছুটা সাবলীলতা 
হারিয়েছে । অন্যপক্ষে, চৈতন্যোত্তর ভীন্তভাবাঁসন্ভ কাঁবমনের রচনা বলে মহাভারত, 
রূপ মহাকাব্যের অন বাদে কাঁবর ভান্তমানাঁসকতা অকপটে প্রকাশিত হয়েছে। ফলে" 
ভাবানুবাদ হয়েও কাশীদাসী মহাভারত যথার্থ ধমগ্রন্থরুপে গৃহীত হতে পেরেছে ।' 
ভান্ত, নাত ও ধর্ম বোধের 'ভীত্ররপে কাশীদাসী মহাভারত পাঁজত আর কবির, 
প্রাঞ্জল, পাঁরচ্ছন, ললিতভাষার জন্য গ্রন্থাট আদরণীয় । কাঁবকৃত মন্তব্ই তাঁর 


মহাভারত সম্পকে বাঙালীর মনের কথা £ 


মহাভারতের কথা অমত সমান। 
কাশীরাম দাস কহে শননে গণ্যবান ॥ 


দ্ৰাদশা অনন্যা 
আরাকান রাজসভার কাব 


আরাকান বাংলার পূ্বসীমান্তবত ব্রহ্মদেশের একটি বিভাগ । আরাকানের 
প্রজাও রাজারা জাতিতে মগ ( বম), ধর্মে বৌদ্ধ ছিলেন । রাজ অমাত্যরা অনেকেই 
আবার জাঁততে মুসলমান ৷ চট্টগ্রামের সান্নীহত অণ্চল বলে এখানে বাংলা ভাষারও 
প্রসার "হল । রাজা ও অমাত্যদের উৎসাহে মুসলমান কাঁবদের দ্বারা সপ্তদশ শতকে 
আরাকান রাজসভায় বাংলাভাষায় কাব্য রাঁচত হয়। এই কাব্াযগন্লতে প্রচালত 
হিন্দুধমর্পর আখ্যানকে স্হান না য়ে ইসলাম ধর্মতন্তৰ ও লৌকক প্রেমকাহিনীকে 
‘স্হান দেওয়া হয়োছল । বাংলা ভাষায় লৌকিক প্রেমগাথার অনবপ্রবেশ ঘটেছিল 
এদেরই দ্বারা । অবশ্য এগাল ছিল অনুবাদ সাহত্য । 


যোড়ণ শতকে চট্টগ্রামের বদ্যোৎসাহপ শাসন কর্তারা গেরাগল খাঁ ও ছাট 
খাঁ) মহাভারত অনুবাদে উৎসাহ ?দিয়ে বাঙালশীর একটি:জাতায় কাব্যরচনার পথ সৃণ্ট 
করোছলেন, আর সপ্তদশ শতকে আরাকানরাজের পশ্ঠপোষকতায় রচিত হল বাংলা 
সাহত্যে মানবীয় প্রেম-আখ্যানের প্রথম কাব্য । দৈবীমাহমার একচ্ছত সাম্রাজ্যে 


মানবপ্রম ফল্গুধারার মতো সংগুস্ত ছিল, কাব দৌলত কাজীর চেণ্টায় বাংলা 
সাহত্যে তা এক স্বতন্ত্র অধিকার স্হাপন করল । 


দৌলত কাজী 


কবিপাঁরচয় 


দৌলত কাজী রচিত বাংলা সাহত্যের প্রথম রোমাপ্টক কাব্যের নাম “লোর 
[চন্দ্রনী' বা 'সতাময়না। কাব্যাটর আখ্যান মৌলিক নয়, দিয়া সাধনের হিন্দী 
কাব্য 'মৈনা কো সত থেকেই কাঁহনণীটির উপাদান গৃহীত । আরাকানের সমরসাচব 


আশরাফ খানের আগ্রহ ও উৎসাহে ৯৬২১ থেকে ১৬৩৮ খনস্টাব্দের মধ্যে কোনো এক 
"সময়ে কাব্যাট রচিত হয় । 


চট্টগ্রামের রাউজান থানার অন্তর্গত সুলতানপুর গ্রামে দৌলত কাজীর জন্ম ৷ 
অল্পবয়সেই [তান নানা বিদ্যার আঁধকারী হন। আরাকানরাজ থার-খৃ-ধনমা অর্থাৎ 
শ্রীধমরি তান ছিলেন রাজসভাকাব। দৌলত কাজী তাঁর কাব্যাট সম্পূণ' রচনা 
করতে পারেননি, দুই-তৃতীয়াংশ রচনার পরই তান ইহলোক ত্যাগ করেন। ১১৫৯ 
*খএঃ আরাকানরাজ সান্দ-থু-ধম্মা অথাৎ চন্দ্র সুধমরি নির্দেশে সপ্তদশ শতকের শ্রেষ্ঠ 
মুসলমান কাব আলাওল কাব্যটি সম্পূর্ণ করেন । 


অণ্চনভেদে কাব্যটির আধখ্যানে 'কিণ্িং পার্থক্য থাকলেও মল কাহিনীটি মোটা- 
মুটি এক ॥ 


মধ্যযুগ 89: 


কাব্যকথা 

গোহারী দেশের রাজা মোহরার পরমাস্ুল্দরাী কন্যা চন্দ্রানীর স্বামশ- 
ছিলেন বামন । মহাবীর লোরক ও চন্দ্রানী পরস্পরের প্রাত আকৃষ্ট হন এবং এই 
প্রেমের পারণামে লোরক তাঁর প্রথমা পত্নী সতী ময়নামতীকে ত্যাগ করে চন্দ্রানীকে- 
সঙ্গে নিয়ে পলায়ন করেন ও তাঁকে বিবাহ করেন। বিরহের দুঃখে কাটে সত ময়নার 
কাল। কাহিনশর এ পর্যন্ত দৌলত কাজীর রচনা । পরবর্তী অংশ সৈয়দ 
আলাওলের। ময়নার বিরহকাতরতা দুর করতে তাঁর এক সখপ একটি গল্প রচনা, 
করেন; ধর্মবতীর রাজা উপেন্দ্রদেব তাঁর অন্তঃসন্তবা পত্নী রতনকালিকাকে ত্যাগ 
করেন। ব্রাহ্মণের আশ্রয়ে রতনকলিকার একাট পত্র জন্মে। তার নাম আনন্দ। 
আনন্দ বড় হয়ে বিপদ-আপদ তুচ্ছ করে উপেন্দ্রদেবের নিকট উপস্থিত হন। তাঁরই 
চেষ্টায় স্বামীর সঙ্গে রতনকলিকার মিলন ঘটে । এই কাহিনী শুনে সতী ময়নার 
বিরহশোক দ্বিগৃণিত হয়। তান এক ব্রাহ্মণকে লোরকের কাছে দূত হিসাবে 
পাঠান । লোরক চন্দ্রানীসহ সত ময়নার কাছে ফিরে আসেন । দুই সতীনে মিলে 
গরমানন্দে পাঁতসেবা করতে থাকেন । সুখে কাটে তাঁদের কাল। 

দৌলত কাজী অপেক্ষা আলাওল বড় কবিরূপে খ্যাত। কিন্তু ‘লোর চন্দ্রান'র 
উপাখ্যানে ময়নার সতীত্ব, সর্বপ্রলোভন জয়, পলাতক স্বামীর প্রতি ময়নার শ্রদ্ধা ও 
প্রেমে আব্চল নিষ্ঠা সবেপিরি চন্দ্রানীর প্রেমের মধ্য দিয়ে প্রেমের নানা রহস্য প্রকাশ 
দৌলত কাজা যত সুন্দরভাবে পরিস্কুট করেছেন, আলাওল তা পারেননি। দৌলত 
কাজধর মতো আন্তীরকতা না থাকাতেই বোধ হয় তা সম্ভব হয়নি । দৌলত কাজী 
সংদ্কৃত পুরাণ ও ইতিহাসে অভিজ্ঞ ছিলেন । তাঁর কাব্যের ভাষা প্রাঞ্জল. মার্জিত, ছন্দও- 
নখ্'ত। দৌলত কাজার কবিপ্রাতভার ভাস্বর স্বাক্ষর “লোর চন্দ্রানী' কাব্য । 

সপ্তদশ শতকের বাংলা সাহিত্য হিন্দহদেবদেবীর লীলা-আখ্যানে পর্ণ“ থাকায়" 
মুসলমান সমাজের কাছে তা সাধারণভাবে পরম আদরে গ্রহণায় হয়ে ওঠোঁন। সে- 
অভাব পূর্ণ হয়েছিল 'লোর চন্দ্রানীর’ মতো কাব্যের দ্বারা । অন্যপক্ষে, এই মানাবক 
প্রেম-আখ্যানে দেবদেবণর লীলা মাহাত্ম্য না থাকায় কাব্যিক উৎকর্ষ সত্তেও [হন্দ্‌-- 
সমাজে লোরচন্দ্রানী বিশেষ পাঁরচিতি লাভ করতে পারেনি । তব, স্বামী পারত্যন্ত 
রতনকালিকাকে ব্রাহ্মণের আশ্রয় দান, সতা ময়নার ৱান্মণকে স্বামীর কাছে দত 
হিসাবে প্রেরণ ইত্যাদি ঘটনার মধ্য দিয়ে যে ধায় সম্প্রীতর আভাস পাওয়া যায় তার 
মল্যও কম নয়। সবোপার, 'লোর চন্দ্রানীর' মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে একটি নূতন: 
ধারার সুচনা হয়োছল, এজন্যও কাব্যটি িরস্মরণীয়। 

আলাওল 

রসর্বাধক পরিচিত মুসলমান কাব সৈয়দ আলাওল ।' 


য় বাংলাসাহিত্যে 
মধ্যযুগীয় থেকে হিন্দমুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের: 


তাঁর কাব্য সম্প্রদার়বিশেষের মধ্যে আবদ্ধ না 


90 খলা সাহত্যের হীতহাস 


কাছেই সমাদূত হয়েছিল । মৌলিক রচনায় তান হস্তক্ষেপ করেননি, মহৎ কাঁব- 
প্রাতভারও সাক্ষ্য রাখতে পারেনান ; তবু রচনার ব্যাপকতায় তাঁর খ্যাতি অম্লান 
হয়ে বিরাজ করছে। 


কাঁবপাঁরচয় ৪ 


সৈয়দ আলাওলের পিতা ছিলেন ফতেয়াবাদের শাসনকতাঁ মজলিস কৃতহবের 
অমাতা। ভাগ্যাবপর্যয়ের ফলে ও সৌভাগ্যের সন্ধানে তান বঙ্গদেশে আসেন । 
কাবি চট্টগ্রামে ( মতান্তরে ফরিদপুরে ) ষোড়শ শতকের শেষভাগে জন্মগ্রহণ করেন এবং 
১৬৭৩ খন্ঃ পরলোক গমন করেন। গিপতহীন কাব প্রথম জীবনে মগরাজের 
সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কবিত্বশান্তি ও সঙ্গীত পারদার্শতার জন্য তান 
আরাকানের আভজাত মুসলমান সমাজে পাঁরচিত হন এবং তাঁদেরই উৎসাহে ও 
আনূকুল্যে আরবী, ফারসী ও হিন্দী কাব্য ও গ্রন্থ অনুবাদে মনোযোগ হন। তাঁর 
উৎসাহদাতাদের মধ্যে ছিলেন আরাকান রাজ চন্দ্রসুধর্মা প্রধানমন্ত্রী মগনঠাকুর, 
"অর্থমন্ত্রী সুলেমান, প্রাথতযণা পাণ্ডত সৈয়দ মুসা প্রমুখ । 


কাব্যকথা £ 


তাঁর রচনাকে দুটি শ্রেণীতে বিভন্ত করা যেতে পারে ১. আরবী ফারসী থেকে 
অনুদিত এ*লামিক ধর্মতত্তৰ ও কাহিনী । মুসলমান সমাজে এগাল যথেণ্ট সমাদূত 
হলেও হিন্দসমাজে অজ্ঞাত থেকে গেছে । 'সয়ফুলমূলুক বাঁদউজ্জমাল+, “সপ্ত 
গয়কর”, 'তোহ্‌ফা”, ‘সেকে'দার নামা এই শ্রেণীতে পড়ে । ২. হিন্দী থেকে অনুদিত 
কাব্য । সম্প্রদায়ানার্বশেষে বাঙালীর কাছে ছিল এর আবেদন ও পাঁরাচাত । 


আহম্মদ জায়সীর 'পদুমাবৎ, কাব্য অবলম্বনে রাঁচত 'প“মাবতণ' এই শ্রেণীর অন্তত । 


চিতোরের রাণী পাপ্মলর রূপে মুগ্ধ দিল্লির সুলতান আলাউীদ্দিনের চিতোর 
আক্রমণ কাহিনী সর্বজনশ্রত। এই কাঁহনীর সুলতানের [তোর আরুমণ-অথ্ণ 
এঁতহাসিক । কিন্তু কারণস্বর্‌প বলা হয়েছে ষুলতানের রূপলোলহপতা । তিনি নাকি 
পাঁদ্মনর রূপে মুগ্ধ হয়ে চিতোর আক্রমণ করেন । এ-ঘটনা এঁত্হাসক সত্য নয় । 
এই কাল্পানক অংশের প্রাতিই গুরুত্ব দিয়ে রাঁচত হয়েছে জায়সীর 'পদুমাবৎ কাব্য 
(১৫৪০ খটঃ) তথা আলাগলের 'পদ্মাবতী' (সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগ ), ৷ 
দূতরাৎ উভয় কাঁহনীতেই রোম্যাণ্টিক প্রেমের প্রাধান্য। কিন্তু আলাওল জায়সীকে 
পুরোপযার অনুসরণ করেন ন, স্বকৃত কিছু ঘটনাকে কাব্যে স্হান "দিয়েছেন ; 
শেষাংণে পারবর্তনও ঘটিয়েছেন । বাংলার সমাজ ও পরিবেশের প্রভাবও তাঁর কাব্যে 
পাওয়া যায়। দু-একটি চারন্রের বিন্যাসের ক্ষেত্রেও উভয় কাব্যে পার্থক্য আছে । 
তাছাড়া, জায়সী সৃফী সাধনার জীবাত্মা-পরমাত্মার রূপক হিসাবেই কাহিনাটি 


মধ্যযুগ 91 


পরিবেশন করেছেন, আলাওল সংফী মতাবলম্বাী হওয়া সত্তেও প্রেমকাহিন'রপে 
কাহিনীটি উপস্হিত করেছেন। 

পদ্মাবতী'র জন্যই সৈয়দ আলাওলের বিশেষ খ্যাতি অথচ খ্যাতি অনুযায়ী 
প্রাতভার পরিচয় দিতে পারেননি কবি। যে আন্তরিকতা ও গভীরতা দৌলত কাজীর 
রচনায় পাওয়া যায় 'পদ্মাবতী'তে তারও অভাব । প্রসঙ্গকরমে স্মরণীয় যে আলাগুল 
দৌলত কাজীর 'দতা ময়নামতা'র শেষাংশ রচনা করেন। সেখানেও উভয়ের মধ্যে 
তুলনামুলক বিচারে দৌলত কাজটর র$নাই অধিক কবিত্বগণণ সমৃদ্ধ । অবশ্য 
আলাওলের শ্রেষ্ঠ রচনা সতগ ময়নার অংশ নর, 'পদ্মাবতণ, কাব্য । এবং কবিস্ব 
শত্তিতে যাই হোক, পরার-ন্রিপদী রচনার নিপুণতার তিনি সেখানে তাঁর কবিত্ব- 
দক্ষতা প্রমাণ করেছেন । 

'পদ্মাবতী'র কাহিনীর আবেদন হিন্দ-মৃসলমান উভয় সম্প্রদায়ের বাঙালীর 
হৃদয়ই আলোড়িত করেছিল । সেজন্য তিনি খ্যাতকাীর্তি। কিন্তু আরও একটি 
কারণে বাংলা সাহিত্যে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। চিতোরের রানা রত্বসিংহ 
এবং সংলতান আলাউদ্দিন এত্হাসিক ব্যন্তি, সুলতান কতক চিতোর আক্রমণও 
এঁতিহাসিক ঘটনা। 'পদ্মাবতা'তে ইতিহাস ক্ষাণভাবে বাবহত হলেও বলা যায় 
বাংলা সাঁহত্যে এতিহাঁসক কাব্যরচনার সূচনা করেন কাঁব সৈয়দ আলাওল । 


ভ্রন্জৌদশ্শ অন্যান 
কবি ভাঁরতচন্দ্র 


দেব-দেবীর মাহাত্মযবর্ণনই ছিল প্রাক-অণ্টাদশ শতকের মঙ্গলকাব্যগলর' 
বৌশঞ্ট্য। লোকজীবন সেখানে গৌণ । কন্তু অণ্টাদশ শতকে ভারতচন্দের 
'অনদামঙ্গলে' প্রথান:গাঁতক মঙ্গলকাবাধারার সঙ্গে সংগতি রক্ষা করে সমাজজীবনকে - 
আঁধক গুরুত্ব দেওয়া হল। স্বপ্নাদেশ ও ধমপয় প্রেরণ ছিল পূব্ব্তরণ কাঁবদের 
কাব্যরচনার মুখ্য কারণ। আশ্রয়দাতার অনুরোধ অবশ্য কখনো কখনো উৎসাহ 
জুগয়েছে । কিন্তু ভারতচন্দের অন্নদামগ্গল রচনায় দৈবগপ্রেরণা বিন্দুমাত্র ছিল না ।- 
আগ্রয়দাতার অনুরোধ এবং কাঁবত্বশীন্ত প্রকাশের ব্যান্তগত বাসনাই তাঁঙ্কে লেখনী 
ধারণে প্রেরণা জুনগয়েছে। স্বভাবতই, 'অননদামঙ্গলে' দৈবীমাহমা মর্তসীমায় 


আবদ্ধ হয়ে গেছে, দেবকাহনাঁর নামান্তরে লোকজবন কাব্যের {বষয় হয়ে 
উঠেছে £ 


মধ্যযুগীয় চেতনার অবসান ও আধুনিক মানাসকতার সম্চনার কাব 
ভারতচন্দ্র। তান অষ্টাদশ শতকের কাব লেন এবং এই শতকীয় বাঙাল? 
মানাঁসকতা ও সমাজজীবন তাঁর রচনাতেই সর্বাধিক পারস্ফুট ॥ 


কাঁবপারচয় 


বর্ধমানের অন্তর্গত ভুরসূট পরগণার পে'ড়ো গ্রামে ১৭১২ খনীস্টাব্দে কাঁবর জন্ম 
হয়। ধনাঢ্য পিতা নরেন্দ্নারায়ণ রায়ের তান চতুর্থ ও কনিষ্ঠ পুত্র বর্ধমান রাজার 
রোষে নবেন্দরনারায়ণ সর্বস্বান্ত হন। ভারতচন্দ্র গাঁজপুরের কাছে নওয়াপাড়ায় 
মাতুলালয়ে দবদ্যাভাস শুরু করেন। সংস্কৃত বিদ্যায় ব্যুংপন্ন হওয়ার কালেই 
স্বেচ্াপ্রণোদিত হয়ে তান 'িবাহ করেন ও সকলের বরাগভাজন হন। আভিমানে 
গৃহত্যাগ করে তান রামচন্দু মুনাঁশর আশ্রয়ে ফারসী ভাষা আয়ত্ত করেন। এখানেই 
তাঁর কাঁবত্বশত্ডির প্রথম প্রকাশ । অতঃপর গৃহে প্রত্যাবর্তন । কিন্তু পৈত্রিক সম্পীন্তর 
ব্যাপারে স্ব্চারের আশায় বর্ধমানরাজের দরবারে গিয়ে কর্মচারীর চক্রান্তে কারার 
হন। জেল থেকে পালিয়ে তান যান পুরীধামে । বৈষ্ণব গ্রন্থ পাঠের সুযোগ 
আসে সেখানে । তারপর বৈধব সন্ন্যাসীর বেশে বৃন্দাবনে যাওয়ার পথে বাংলাদেশে 
এসে আত্মীয়দের দ্বারা অনুরংদ্ধ হয়ে কাঁব সংসারাশ্রমে ফিরে আসেন । ফরাস-ডাঙায় 
ফরাসাদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর আন.কুল্ে তান মহারাজ কৃচন্দের সঙ্গে 


মধ্যযুগ 93 


পাঁরাচত হন. এবং মানিক চাঁঞ্লশ টাকা বৃত্তিতে মহারাজের সভাকাবির পদ পান। 
মহারাজের দেশেই রাঁচত হয় তাঁর অমর কাব্য ‘অন্নদা মঙ্গল? কবির ইচ্ছানযায়ী 
কৃষচন্দর বার্ধক ছণ টাকা রাজস্বের বিনিময়ে মুলাজোড় অণ্ুল তাঁকে পত্তন দেন। 
তাঁর মূলাজোড় বাস সুখের হয়নি । ১৭৬০ খনীঃ, তিনি পরলোক গমন করেন । 


জীবন ও জগৎ সম্পর্কে ভারতচন্দ্র বহ্যাবাচত্র আভজ্ঞতা লাভ করোছিলেন। 
ধনীর দুলাল দুভা্গের দ্বারে বারবার দ:ঃখাঁভক্ষা লাভ করেছেন কিন্তু নীলকণ্ঠের 
মতো সমস্ত দ:ঃখ আপনার অন্তরে সাণ্টিত রেখে পাঠককে "উপহার দিয়েছেন তাঁক্ষয 
সরস ব্যঙ্গ ও হাস্যরস ৷ বিড়দ্বিত জীবনে অনেক ঘুরে বেড়াতে হয়েছে তাঁকে । 
*কন্তু যেখানেই গেছেন সেখান থেকেই তিনি সংগ্রহ করেছেন বিদ্যাসম্পদ । আপন, 
অধ্যয়ন-পাঁরাঁধ সম্পকেতিনি নিজেই জানয়েছেন 


ব্যাকরণ আঁভধান সাহত্য নাটক। 
কার সঙ্গীতশাস্তের অধ্যাপক ॥ 
পুরাণ আগম বেত্তা নাগরী ফারসী । 


বিদ্যার এই সর্কব্যাপকতার গুণে ভারতচন্দ্রের ভাষা শাঁণত, শব্দসম্পদে গরাঁয়ান ৷ 
শব্দসীমিতির কল্যাণে তাঁর ‘অনেক কথা তো আজ প্রবাদবাক্য। 'বড়র পীরাঁত 
বালির বাঁধ/ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণেকে চাঁদ’, ‘সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর", 
শমছা কথা ‘চা জল কতক্ষণ রয়', ‘এক ভদ্ম আর ছার দোষগুণ কব কার', “মন্দের 
সাধন কিংবা শরীর পাতন’ ইত্যাদি উদ্ধাতগ্লি তাঁর জীবন-অভিজ্ঞতায় রাঞ্জত 
বলে শুধু সত্য নয়, মিতভাষিত হওয়ায় হদয়গ্রাহী ৷ 


কাব্যকথা 
ভারতচন্দ্র সর্বশেষ মঙ্গলকাব্য রচাঁয়তা। সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার অধিকার মুকন্দ- ' 
রামেরই প্রাপ্য ৷ তবে মণ্ডনকলা, অলংকরণ নিপুণতা, ভাষাবিন্যাস ও ছন্দক্শলতায় 
নিঃসন্দেহে ভারতচন্দর শ্রেষ্ঠ । বিদগ্ধ কবি দরবারে বসে বিলাসী রাজার মনোরঞ্জনে 


কাব্য রচনা করেছেন একথা ভারতচন্দ্র কখনো ভুলতে গারেনান। সুতরাং তাঁর 


কাঁবচেতনা মগ্ন থেকেছে ধবশ্বকমবিত্তিতে, কবিতার গভীরে প্রাণসণ্টারে ততটা 


নয়। রপদক্ষতায় তিনি অনন্য, জয়দেবের সঙ্গেই তুলনীয় । অন্নদামঙ্গল, তাঁর 
কাঁবকাৃতিত্ের শ্রেষ্ঠ নিদৰ্শন । 

[তিনটি বিচ্ছির কাঁহনী নিয়ে কাব্যাট রচিত £ অন্নদামঙ্গল’, 'কালিকামঙ্গল' বা 
“বদ্যাসুন্দর’ এবং 'মানাঁসংহ' বা ‘অন্নপণমিঙ্গল’ ॥ 
‘অন্নদামঙ্গল’ রচিত। তবু এঁতিহাসিক 


মঙ্গলকাব্যধারার সঙ্গে সঙ্গাত রেখেই 
আলিবার্দর দ্বারা ক.ফচন্দুকে কারাগারে 


প্রসঙ্গ দিয়েই শুরু হয়েছে এ মঙ্গলকাব্য ৷ 
বাং. সা. 1.1 


94 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


নিক্ষেপের প্রসঙ্গে তৎকালীন বাস্তব ঘটনার কিছু ছারাপাত ঘটেছে । তারপর উমার 
জন্ম, শিবের সঙ্গে বিবাহ, কৃবেরের অনুচরের হরি হোড় নাম নিয়ে মর্তে জন্ম, দেবীর 
কপার হারি ছোড়ের ধনলাভ, কুবেরপাত্র নলকুবেরের ভবানন্দ মজুমদার নামে মর্তে 
(ক্ফচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ) আগমন ও দেবীর ভবানন্দ ভবনে যাত্রা ‘অন্নদামঙ্গল’ 
হণে স্থান পেয়েছে । দ্বিতীয় অংশের সূচনাও এঁতহাঁসক ইঙ্গিত বহন করে। 
খলার বিদ্রোহী রাজা প্রতাপাদিত্যকে দমনের জন্য জাহাঙ্গীরের আদেশে মানাসংহের 
বঙ্দদেশে আগমন এীতহািক ঘটনা । তারপরই 'বদ্যা ও সুন্দরের কাল্পনিক প্রণয় 
কাহিনী সাবস্তারে বার্ণত। 'অন্নদামঙ্গলে সুরুচির অভাবের আঁভযোগ এই 
কাহনপাটকে কেন্দ্র করেই দেখা দিয়েছে । তৃতীয় খণ্ড 'মানাসংহ' কাহনীতে 
অন্নপূণার কপায় ভবানন্দের এশ্বর্ধলাভের কানা বার্ণত। ইতিহাসের ইঙ্গিত 
এখানেও বতমান, তবে তা কত এবং আঁতরাঞ্জত । 


মঙ্গলকাব্য প্রধানত গ্রামীণ জীবনের প্রাতচ্ছাবতেই সমদ্ধ। কিন্তু ভারতচন্দ 
তাতে প্রবাহত করলেন নাগরিক জীবনের এম্বর্যপূর্ণ আবিল স্রোত । ভারতচন্দ্রের 
প্রশৎসা-ীনন্দা সবাকছুই এই বোঁশঘ্ট্যকে ঘিরে । ভারত্চন্দ্রের সমলোচনায় প্রমথ 
চৌধুরীর কথাই কিছুটা রূপান্তারত হয়ে প্রাতধ্বানত হয়েছে অনেক সমালোচকের ভাষায় 
_1590%11৩৫8০ এবং art উভয়ই তাঁর সম্পূর্ণ করায়ত্ত ছিল” এবং ‘পরের মনোরঞ্জন 
করতে গেলে সরস্বতীর বরপবন্রও যে নটাবিটের দলভুন্ত হয়ে পড়েন তার জাজবলামান 
প্রমাণ স্বয়ং ভারতচন্দ্র ' অবশ্য “অন্নদামঙ্গলে' ভারতচন্দ্র 'নটাবট' অপেক্ষা “সরস্বতীর 
বরপনত্' রুপেই নিজেকে প্রাতঙ্ঠিত করেছেন বোঁশ। মন্গলকাব্যের লৌকিক ও 
অনোতহাসক কাঁহনার প্রথাগত [বরণের মধ্যে ভারতচন্দু নতুনত্বের সন্ধান দিয়েছেন 
_তৎংকালীন নাগারক জীবন ও এীতহাসিক ঘটনাকে অবলম্বন করায় ইতিহাস 


মঙ্গলকাব্যে তথা বাৎলাসাহিত্যে প্রত্যক্ষত প্রবেশ লাভ করল প্রথম তাঁর 
কাব্যে। 


ইাতহাসের ইঙ্গিতদান ও নাগরিক বিলাস বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে ভারতচন্দু 
নিরন্নের কন্ঠধবীনকে রুপ দিয়েছেন অপুর্ব চাতুর্ষে। কখনো £বা ব্যঙ্গ 
পাঁরহাসে 


ঘরে নাহ অন্ন যার মরণ মঙ্গল তার 
তার কেন বলাসের সাদ । 


কখনো পান্নপান্রীর একান্ত কামনায় প্রাতফাঁলত হয়েছে দারিপ্র্যানাষ্পষ্ট বাঙালীর বাসনা 
_ আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে ৷ তখন কাঁব আর কৃষচন্দ্রের সভাকাবি মান 
থাাকন না, হয়ে ওঠেন সমগ্র বাঙালীজাতির কাব ॥ শব্দ-ছন্দ-অলংকারসম্পর্দে 


মধ্যযুগ 95 


“ভারত ভারতখ্যাত'। তবে সমকালীন শব্দালংকারপ্রণীতর প্রচালত বাঁধকে কাঁবও 
আতক্রম করতে পরেননি, বয়ং একট: বেশি প্রশ্রয় দিয়েছেন £ 


বিননিয়া বিনোদিয়া বেণীর শোভায় 
সাপিনী তাঁপনী তাপে বিবরে লুকায় । 
তাতে তাঁর খ্যাত বেড়েছে, কিন্তু কবিত্বশন্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। 


অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধের সমাজ ও অন্নদামঙ্গলে চিত্রিত সমাজ 


অষ্টাদশ শতকে গ্রামকেন্দ্রিক বাঙালী জীবন নাগরিক জীবন ও গ্রামীণ জীবন 
প্াঁটভাগে বিভন্ত হয়ে গেল। এতাবং নগর ছিল বধধিষছ্‌ গ্রাম, তার সঙ্গে গ্রাম ও 
গ্রামীণ মানুষের নিবিড় সংযোগ ছিল । এই সংযোগ কিছুটা বিচ্ছিন্ন হল অষ্টাদশ 
আতকে । 


নাগরিক! জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য মোগল সম্রাটদের অনুকরণে বিলাস-ব্যসন। 
মুসলমান শাসকেরাই শুধু তার দ্বারা প্রভাবিত হননি, হিন্দু ধনীদের মধ্যেও এ 
রোগ সংক্রামিত হয়েছিল। কারণ, তা-ই ছিল সেযুগে আভিজাত্যের লক্ষণ । 
মশ্দক্ীল খাঁর রাজদ্ৰ আদায়ের নতুন পদ্ধতিতে পুরনো জমিদাররা আস্তে আস্তে 
নিশ্চিহ্ন হল, তাদের স্থান দখল করল, ইজারাদাররা_যারাই আবার পরবতাঁকালে হয়ে 
গেল জামদার । এই 'হঠাৎ নবাবের' দল সংস্কৃতি চচ্ট অপেক্ষা ধনাজনে পটু, 
এতিহ্যহীন বলে অনুকরণে আগ্রহী । স্বভাবত, শাসককৃলের জাবনযাপনরণাতর 
অনুকরণ হল তাদের স্বভাব । নগরজীবনে বিলাস আর গ্রামীণ জীবনে দারিদ্র্য 
এটাই অষ্টাদশ শতকে বাংলার সামাজিক চিত্র ৷ 
সুখ বা শুঙ্খলা নগরজীবনেও ছিল না। বিনা কারণে অথবা সামান্য কারণে 
রাজরোষে জমিদার বা ধনী আকা্মিক ভাবে হয়েছে নিঃস্ব । ভারতচন্দ্রের পিতা 
বর্ধমানের রাজার উদ্দেশে কটুক্তি করে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন, কবি নিজেও বিনাকারণে 
রাজকারাগারে নিক্ষিপ্ত হন । 
তা ছিল আরও একটি কারণে-_বার্গর আক্রমণ। ১৭৪২-৫১ 
ই ৯11 তারা শোষণ করেছে, নিপাঁড়ন চালিয়েছে সার্বক- 
nt ধনী ও নির্ধন উভয়েই তাদের শিকার হয়েছে--সমাজজাবন হয়ে গেছে 


বিপর্যস্ত । 
এই সামাজিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে র 08:10 ন 
জীবনের সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ যোগ না থাকলেও তার 02107 
র : সুদক্ষ আলিবাঁদ“ খাঁকে মার 
ও রণনীতি উভয় ক্ষেত্রে সং 
টি 9: {লপ্ত হতে হয়। বধের ব্যয় হিসাবে যেমন রোজকোষে 


টার হলা সাহিত্যের হীতহাস 


টান পড়ে, তেমান সাঁন্ধর শর্ত পালন করতেও অনেক ব্যয় হয়। (মারাঠাদের সঙ্গে 
চ্ান্ত অনুসারে ১৭৪৩ খটীঃ এককালীন বাইশ লক্ষ টাকা দিতে হয় এবং ১৭৫১, 
খনপ্টাব্দ থেকে বার্ষিক দেয় হয় বার লক্ষ টাকা )। রাজ কোষাগারের অবস্থা তাতে 
শোচনীয় হয় । ব্ঠান্তগত সম্পদ লহষ্ইন করেও বাঙালীর অর্থনোতক অবস্থারে 
দুরবস্থায় পারণত করোছল বগর্পরা। এদিকে এই সামাজিক আঁনশ্চয়তার মধ্যে 
বাঙালীজীবন যখন বিপন্ন, দেশে শস্য-উৎপাদনের দ্বারা জাতীয় আয় বাদ্ধর চেণ্টাও 
ব্যাহত হয়। 

বাঙালপর অর্থ অষ্টাদশ শতকে শুধু বাংলার বাইরেই যায় ন, বিদেশ বাঁণকদের 
দ্বারা ভারতের বাইরেও গেছে। বর্গাঁর হাঙ্জামা থেকে কলকাতা ছল পূর্ণ মত্ত ৷ 
সুতরাৎ অর্থবান ও ব্যবসায়ী বাঙালীরা প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় কলকাতা ও তার 
উপকণ্ঠে আশ্রয় নিয়োছল ৷ তার ফলে শুধু কলকাতা নগরীর শ্রীবাদ্ধ ঘটে নি 
ইংরেজদের ব্যবসাও জমে উঠোঁছল আশাতীতভাবে । সেই সূত্রে মুষ্টিমেয় বাঙাল’: 
ব্যবসায়শরও অর্থাগমের দ্বার খুলে 1গয়েছিল | 

সামাজিক সার্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাঙালীর নৈতিক জীবন এই সময়ে দ্রুত 
নিম্নমুখী হয়। রাজকুলে বড়যন্ত ও হঠকারিতা তো ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার ৷ 
রাজকর্মচারী আলবার্দ নবাব সরফরাজকে যুদ্ধে নিহত করে মসনদ অধিকার করেন; 
ভাদকরপাঁণ্ডতকে ছলনাদ্বারা বধ করেন? আপন সেনাপাঁত আফগান প্রধান গোলাম 
মোস্তাফাকে প্রবণ্ণিত করেন। আবার তাঁর রণদক্ষ সেনাপাঁত মীর হাবিব আলবদর 
সঙ্গেই হঠকারিতা করেন। প্রকৃতপক্ষে মীর হাবিবের আলবাঁদ*-বোরতা ও বগণদের 
সহযোগিতার কারণেই বগাঁ লণ্ডন বাংলাদেশে এতকাল স্থায়ী হতে পেরোছল। 
পলাশীর যুদ্ধে (১৭৫৭) সিরাজের পরাজয় তো ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতারই 
পারণাঁত। মীরজাফর একাই একাজে লিস্ত ছিলেন না। বরং বলা যায়, লিপ্ত 
[ছল না এমন উচ্চ রাজকর্মচারীই সম্ভবত ছিল না । 

সজাউদ্দিন, সরফরাজ ও সিরাজ সকলেই ছিলেন চারন্রহীন উচ্ছৃঙ্খল ও, 
বিলাসী । নবাবকুলের এই বৈশিষ্ট্য সাধারণভাবে, অভিজাত বাঙালগী মান্রেরই 
বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়রোছল। এইসঙ্গে হিন্দুদের ধর্মের প্রতি উদাসীনতা এবং 
বালাবিবাহ, বহণীববাহ, কৌলীন্যপ্রথা ইত্যাদি সামাজিক ত্রুটি অণ্টাদশ শতকের 
বাঙালী জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল । 

ভারতচন্দ্র (১৭১২০) অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে জন্মান। নিজ জীবনের 
অভিজ্ঞতাকে কখনো সোজাসুজি, কখনো একটু বাঁৎকমভাবে তিনি সাহিত্যে রূপ 
দিয়েছেন। তবে তাঁর মুল উদ্দেশ্য ছিল আশ্রয়দাতা কফেচন্দ্রের মনোরঞ্জন । ফলত, 
সমাজচিন্রণ সেখানে কবির প্রাথমিক উদ্দেশ্যও নয়, এমনকি প্রয়োজনীয় গুরুত্বও 
পায়নি । তবু বিক্ষিগ্তভাবে তীনও তৎকালীন সমাজের কিছ: প্রসঙ্গ উত্থাপন 
করেছেন। 


মধ্যযুগ 97 


আিবার্দ কর্তৃক মহারাজ কষে্ন্দ্রকে কারারহদ্ধ করা, জাহাঙ্গীরের প্রতাপাদিত্য 
তথা বারভু'ইঞা দমনে মানসিংহকে বাংলায় প্রেরণ ॥ইতিহাসেরই অনুসরণ । 
বালবিবাহ ও বহ্‌ বিবাহের পয়িণাতকে রুপ দিতে গয়ে বাস্তবতাই স্থান ক 
জামাতার বর্ণনা প্রসঙ্গে £ | 


সভাজন শুন জামাতার গণ 
বয়সে বাপের বড় 
কোন গুণ নাই যেথা সেথা ঠাঁই 
সিদ্ধিতে নিপুণ দড় ৷ 
এছাড়াও আছে নানা প্রসঙ্গ $ 
বগা হাঙ্গামার প্রসঙ্গ £ 'লুঠি বাঙ্গালার লোক করিল কাঙ্গাল । 
‘গঙ্গা পার হইল বাঁধ নৌকার জাঙ্গাল ॥ 
বহযাববাহ প্রসঙ্গ ঃ এ সুখে বণ্টিত কবি রায় গ্ণাকর ৷ 
'দুই নারী বিনা নাহ পতির আদর ॥ 
€কৌলনন্য প্রথা ঃ যেখানে কূলঈন জাতি সেখানে কোন্দল । 
বৃদ্ধ স্বামী ও তার নৈতিক শৈথিল্য ঃ অতি বড় বদ্ধ পাত সিদ্ধিতে নিপুণ 
'তৎকালন বাণিজ্যে উন্নাত ও বাণিজ্যে লক্ষ্মীর বাস তাহার অর্ধেক চাষ 
ব্বাজসেবায় অনিশ্চিত অবস্থা :$ রাজসেবা কত খচনচ। 


ভারতচন্দ্র সমসাময়িক সমাজাঁচন্রণে বেশি গুরুত্ব দেননি, তবু তাঁর অভিজ্ঞতা, 
তাঁক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ “শান্ত এবং কবিপ্রতিভা স্বলপায়াসে স্বল্প পা'রসরেই তৎকালীন 
সমাজের প্রধান লক্ষণগুলিকে অমর তুলিকায় চিত্রিত করেছে। 


চতুর্দশ অন্ধ্যা্স 
শান্ত পদাবলী 


সৃষ্টির অন্তরালে বিরাজিতা সবশভিময়ী আদ্যাশান্ত । তিনি ভীষণা, ভয়ংকর ; 
আবার মাতরুপিণী ; মঙ্গল ও কল্যাণময়ী। বাঙালীর কাছে তান দ্বরূপেই 
পারচিতা। মুলত তিনি শন্ত__শবশক্তি, শিবপত্রী । কখনো তাঁর রূপ কালী বা 
শ্যামা, কখনো গোর বা উমা । শ্যামারূপে {তান জগঙ্জননী, উমারুপে হিমালয়- 
তনয়া ও শিবজায়া ৷ আদ্যাশান্তর শ্যামা ও উমারুপকে অবলম্বন করে অণ্টাদশ 
শতকে বৈষবপদাবলীর অনুসরণে যে ক্ষুদ্র অথচ অপূর্ব সঙ্গখতগল রাঁচত হয়েছিল 
তারই সাধারণ পরিচয় শান্তপদাবল। শান্তি থেকেই শান্ত শব্দের উৎপত্তি । 


নারী ত্রির্পা & কন্যা, প্রেয়সী, জননী । রাধাকে কের প্রেয়পীরূপে কল্পনা 
করে রচিত হয়োছল বৈষ্ণব গ্রেমসঙ্গীত। হিন্দসমাজের আঁভজাত-অনাভজাত 
শ্রেণী-বিভাগ, অন্তযজ শ্রেণীর অভিমান ও উচ্চবর্ণের অহংকার এবং হিন্দু-মুসলমানের 
পারস্পারক অসন্ভাবে পণদশ শতকের শেষভাগে প্রেমধর্ম তথা গ্রীচৈতন্যের আবিভবি 
অনিবার্য হয়ে উঠোঁছল। বাঙালীকে প্রেমধর্মে দশীক্ষত করেছিলেন শ্রিচৈতন্য। 
আর অধ্টাদশ শাসকের অপশাসন, আঁভঙ্জাত বাঙালণর বিলাসব্যসন এবং সামাজিক 
ও রাষ্টনৈতক আঁনশ্চয়তা দুঃসহ ভগরুতায় বাঙালপজশবন 'বপর্যস্ত করে 
দয়োছল। তাতে কাজ্ষত হয়োছল এক বরাভয়প্রদা দেবীর-__শান্ত ও কল্যাণের 
প্রতীকরুপে যান এই অসহনীয় অবস্থা থেকে বাঙালগকে উদ্ধার করবেন। সে 
শত্তিই কালী। তাঁরই পরিচয়, মাহাত্মযবর্পনা ও আরাধনা শান্তসঙ্গগতে ৷ 

তন্দোন্ত কালী অণ্টাদশ শতকের সুষ্ট নয়। আবহমানকাল তান একাটি 
গোম্টীর দ্বারা পূজিতা । আদ্যাশীন্তর উল্লেখ খগ্‌বেদের সৃন্তেও পাওয়া যায়। 
গপরবতাঁকালে হানি চণ্ডী নামে পার্বতীর সঙ্গে অভিন্না হয়ে যান। পৌরাণিক ও 
লৌকিক চণ্ডীর আঁভন্নরূপ মধ্যযুগের চণ্ডীমঙ্গল কাব্যগুলিতে। সুতরাং এক 
অর্থে চণ্ডীমাহাত্যও শান্তসাহত্য। কিন্তু শান্তপদাবলী বলতে বোঝায় বৈষ্ণব 
গদাবলাীর আকারে রচিত ক্ষুদ্রক্ষুদ্র গাঁত, যাতে শান্তসাধকের নিগ অনুভূত ও 
সাধনপ্রক্রিয়া রুপাঁয়ত। শান্তসাহত্য মূলত ধর্মসঙ্গীত। 


শান্তসঙ্গীতের দুটি ধারা__-একটির মধ্যাদয়ে মাত্র্াঁপণণ শ্যামার প্রকাশ ( শ্যামা 
সঙ্গীত) অন্যটি কন্যারূপা উমা-বিষয়ক। একটিতে ভন্তিরসের প্রাধান্য, অন্যটিতে 
বাংসল্যরস মুর্ত। একটিতে সাধনতত্তেবর কথা, অন্যটিতে বাঙালগর গাহ*“স্থ্যজীবন । 
একাটর সাধারণ পরিচয় শ্যামাসঙ্গীত, অন্যটির আগমনী-িজয়া গান বা উম।সৎগীত ! 


মধ্যযুগ d 09 


৯৬৭ ইতিহাস বি*বাসঘাতকতা, অত্যাচার, আমতাচার, অরাজকতা ও 
বাস তহাস। আলিবার্দ সৃশাসক হয়েও বিশ্বাসঘাতক ৷ সরফরাজ খাঁর 
নি তাঁকে নিহত করে তিনি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন। মারাঠা 
টার x ভাস্কর পাণ্ডিত সন্ধির শর্তভঙ্গ করে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ লবন করেন। 
রি রাজের পরাজয়ের মূলে তো আমাীর-ওমরাহদের চক্রান্ত ও বিশ্বাসঘাতকতা_ 
048 তো তাদের প্রাতানীধ। অন্যেরাও সম-অপরাধে অপরাধী । ১৭৪২ 
১৭৫১ এই প্রায় দশ বছর ধরে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে গেছে বগণ অর্থাৎ 
মারাঠা সেনার বর্বর আক্রমণ ও ল:ণ্ঠনের ঝড় । আবাদ রাজস্বের এক-চত:থত্পি 
সাঁ্ধর শত“ অনুসারে দিয়েও বাংলাদেশকে তাদের অত্যাচারের হাত থেকে মদ্ড করতে 
পারেনান। পরবছরই দ্বিগুণ উৎসাহে বাংলাদেশের বিস্তীর্প অপ্চল জবড়ে চলোছিল 
তাদের বীভৎস অত্যাচার ॥ এছাড়া তৎকালীন প্রায় সমস্ত শাসকরাই অত্যাচার 
ও অর্থলোলুপতার কলঙ্কিত ইতিহাস রচনা করে গেছেন। আঁলবার্দর 
জামাতা সুজাউদ্দিন, তাঁর পৃর সরফরাজ এবং সিরাজ (আলবার্দর দৌহি) 
বাংলার মসনদে বসে বিলাসব্যাসনেই গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। অমিতাচার ও 
উচ্ছঙ্খলতা তাঁদের জীবনের মুল লক্ষ্য হয়ে উঠোঁছল ॥ দেশব্যাপী অনিশ্চয়তার 
সুযোগও নিয়েছিল স্বার্থপরের দল । [বিলাসী জমিদারের সম্পত্তি নিলামে কিনেছে 
তাঁরই কমণ্চারী, রাজা হয়েছে ফাঁকর, শয়তান শাসক; তাদেরই সহচর হিসাবে দেখা 
[দিয়েছে ষড়যন্ত্র দল ৷ ইংরেজ বানিয়া কখনো শক্তির সাহায্যে, কখনো রাজ- 
কর্মচারীদের সঙ্গে চক্রান্তে লিপ্ত থেকে সামাজিক ও রাষ্ট্নৈতিক আস্থিরতাকে তাঁর 
বরে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়েছে অবাধে। তাদের কৌশল ও চত্তা্ত এবং বাঙালনর 
ব্যবসা-বাণিজ্যে অদুরদার্শতা ও হঠকারিতার পারণামই পলাশগর যুদ্ধে প্রাতকলিত । 
নতুন গজানো জামদার, নিত্য চালানো অত্যাচার, নিম্নগাম জীবনযান্না আর বাংলার 
অর্থ বাংলার বাইরে ও বিদেশে চলে যাওয়ায় বাঙালগর অর্থনৈতিক জীবন অষ্টাদশ 
শতকে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল__নিঃস্ব্তার প্রান্তদেশে এসে পেশছেছিল সাধারণ 
বাঙালী । 
লোকসাধারণ যখন এই দর্ার্দন, এই অনিশ্চয়তার হাত থেকে নিৎকাতি পেতে 
এক শান্তিমতা মাতকোশন্তির আশিস ও বরাভয় চেয়েছে, তন্রোন্ত ভয়ঙ্কর কালা তাদের 
মানস-আসনে আপনার স্থান সংগ্রহ করে নিয়েছে । শান্তপদাবলীর জন্ম সম্ভব হয়েছে 
এভাবে ৷ রামপ্রসাদ ও কমলাকান্ডের সুমধুর সঙ্গীতে বাঙাল পেয়েছে শান্ত ও শা 
» জীবন ধারণের প্রেরণা । 
অন্য দিকে হৃতসর্বস্ব 
মানসক শান্ত খুঁজে পেতে 
রচনা করেছেন শ্যামাসঙ্গীত। 
তেমাঁন এই ‘হঠাৎ নবাবের দল । 


,জামদার বা রাজকুমার অথবা রাজ-অমাত্য আপনার 
এই দেবীরই আশ্রয় নিয়েছেন,_হদয়ের বেদনা দিয়ে 


আবার সে সঙ্গীতের সমঝাদার যেমন সাধারণ বাঙালী 


মা-কালীর ‘কারণ বারি’ তাঁদের শা্তপু্জায় আকঙ্ট 


100 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


করেছে আর শান্তসঙ্গীতের মধৃরতা পঙ্ঠপোবকতায় প্রেরণা জুগিয়েছে। অশ্টাদশ 


শতকের প্রথম দশক থেকে উনিশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত শান্তসঙ্গীতের রচনা ও 
বিকাশে এ'দের সাহায্যও কম ছিল না । 


বাঙালীর এক-একটি প্রথা বা আচার এক একসময়ে বাঙালী জীবনকে বিপ্যপ্ত 
করে [দিয়েছে । এমনই একাঁট প্রথা কৌলান্য প্রথা । কুলীন সন্তানের শতাধিক 
বিবাহে, পরলোকের যাত্রীর সঙ্গে বালিকার বিবাহে, এবং 'গৌরগদানে'র পূণ্য অর্জনে 
সাত বৎসরের বালিকার সঙ্গে বৃদ্ধের বিবাহ প্রথায় অণ্টাদশ শতকে উচ্চবণের পরিবারে 
ও সমাজে একটি শোচনীয় পারাস্থাতর উদ্ভব হয়োছল । বিবাহিতা কন্যার জন্য ?িতা- 
মাতার আর্তি ও বেদনা সমাজের কাছে কোনো সমবেদনা পায়নি, রূপ পেয়েছে 
আগমনী ও বিজয়া গানে । হমালয়-মেনকা-উমা বাঙালী পিতা-মাতা-কন্যারই 
প্রাতরপ । আগমনী-ীবজয়া গানে বাঙালী সমাজেরই প্রাতিচ্ছবি । মেনকা যখন বলেন 


যাঁদ এসে মৃত্যুঞ্জয় উমা নেবার কথা কয় 
এবার মায়ে ঝিয়ে করব ঝগড়া, 
জামাই বলে মানব না। 


সাদ্ধিতে নিপুণ' আত বড়ব্দ্ধ'জামাতার প্রত বাঙাল" শাশাঁড়র ক্ষোভ অনাবৃতভাবে 
হয়। 


রামপ্রসাদ 
কাঁবপাঁরচয় 


শান্তগাঁতির আদি ও শ্রেষ্ঠ কাবি রামপ্রসাদ সেন । প্রসাদ সুর’ তাঁরই দ্ম্ত 
বহন করে। নিরাভরণ কাঁব যে হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশে সবাধিক আলোড়ন সৃষ্টি 
করতে পারে, তার প্রমাণ চণ্ডাঁদাস ও রামপ্রসাদের রচনা । আনুমানিক ১৭২০-২১ 
খন, চব্বিশ পরগণা জেলার হালিশহরে তাঁর জন্ম, তিরোধান ১৭৮১ খনী.। পিতা 
ব্রামরাম সেনের দুই বিবাহ । দ্বিতীয়া স্ত্রীর তৃতীয় সন্তান রামপ্রসাদ । পিতার 
মত্তে যৌবনের প্রারন্তেই জীবিকা সংগ্রহে রামপ্রসাদ কলকাতায় এক ধনীর গহে 
মুহঃরীর কাজে যোগ দেন। তিনি বাংলা, সংস্কৃত, ফারসী ও হন্দীভাষায় 
ইতিপূর্বে কিছুটা ব্যৎপাত্ত অর্জন করোছিলেন। হিসাব লেখায় তাঁর মন ছিল না, 
হিসাবের খাতায় গান লিখতেন (“আমায় দে মা তাঁবলদারণ, আমি নিমকহারাম নই, 
মা শখকরা, ইত্যাদি)। এই অপরাধে চাকুরি যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু 
ধর্মপ্রাণ জমিদার দিলেন চাকুরি থেকে মান্ত আর মাসিক ত্রিশ টাকা বৃত্তি । সাধন 


2 REG. — 3 


মধ্যধুগ 101 
ভজন. ও সঙ্গীতরচনার জন্য অফুরন্ত সময় মিলল । তিন সে-কাজে সিদ্ধকামও 
হলেন । 


রচাঁয়তা ও গায়ক দু-হিসাবেই তাঁর খ্যাতি । সে, সুনাম মহারাজ কফেচন্দ্রের 
কানেও গেল । তিনি চাইলেন রামপ্রসাদ তাঁর সভাকবি হোন। এ প্রস্তাব 
প্রত্যাখ্যান করেলেন রামপ্রসাদ । কফচন্দ্র কিন্তু ক্ষুব্ধ হলেন না, আনন্দিত মনেই 
একশ’ বিঘা নিথ্কর জমি দান করলেন তাঁকে । তবু দারিদ্রাকে জয় করতে পারেননি 
রামপ্রসাদ। যাঁর ‘হংকমলে মণ্চদোলে করাল-বদনী শ্যামা/মন-পবনে দোলাইছে 
দিবন রজনী ও মা" তিনি আজীবন সাংসারিক হিসাব-নিকাশের উধের্ব থেকে 


খেলেন । 


কাঁবপ্রতিভার পরিচয় £ 

রামপ্রসাদ প্রায় তিনশ" গান রচনা করেন। তাঁর সঙ্গীতগুলিকে চারটি বিভাগে 
ভাগ করা যায-_-১. আগমন’ ও বিজয়া গান ২. তন্দোন্ত সাধন সংক্রান্ত ৩. দেবীর 
মাহিথা বিষয়ক এবং তত্তৰও নীতাবষয়ক। 


আগমনের সম্ভাবনা এবং আগমন হেতু আনন্দ জ্ঞাপক যে গান তা-ই আগমনী 
গান। আর প্রস্থানজানত বেদনার সুর যে গানের মধ্যে ধানত তা-ই বিজয়া-সঙ্গীত॥ 
কল্পিত হয়েছে, হিমালর-কন্যা উমা সপন্র-কন্যা শারদ বষ্ঠীতে মাত্র তিন দিনের জন্য 
কৈলাশ ত্যাগ করে পিত্‌গূহে আসেন । দশমীতে ফিরে যান কৈলাশে । তাঁর আগমন- 
সম্ভাবনায় মাতা মেনকার মনে আশা জাগে, আগমনে হৃদয় হয় আনন্দেপূ্ণণ। কিন্তু 
নবমীতেই বিষাদের ছায়া নামে, মাত্হদয় উদ্বেল হয় আসন্ন কন্যা বিচ্ছেদের 
সম্ভাবনায় । অতঃপর দশমণতে শুধুই হাহাকার, বৎসরাস্তে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা 
নিয়ে উমা মাতাকে কাঁদিয়ে ফিরে যান কৈলাশে । এই কাহিনীর পটভূমিতেই রচিত 
হয়েছে আগমনীবজয়া গান। ণগরি এবার উমা এলে আর উমা পাঠাব না” 


ইত্যাদি উমাসঙ্গীত। এ সঙ্গীতের আদি রচয়িতা রামপ্রসাদ। 


তন্বের নিগ:ড় সাধনাকে রামগ্রিসাদ সরল গ্রামীণ ভাষায় রূপ দিয়েছেন £ 


তীর্ঘে গমন, মিথ্যা ভ্রমণ, 
মন উচাটন করো না রে। 

ও মন-ন্রিবেণীর ঘাটেতে বৈস 
শগতল হবে অন্তঃপন্রে ॥ 


704 খলা সাহিত্যের ইতিহাস 


ব্রুপায়িত। মঙ্গলকাব্যে চিত্রিত শিবপার্বতীর আখ্যান এখানে কাণৎ পারবাতিত। 

_ মেনকার একমাত্র কন্যা উমা, বড় আদরে লালিতা-পালিতা। বালিকা বয়সেই 
"তার সঙ্গে বিবাহ হয়েছে জাতিতে কৃলীন বয়োবৃদ্ধ শিবের সঙ্গে । দারদ্র শিবের ঘরে 
উমার সতীনের সংসার ৷ তাঁর পুব্নকন্যাও অনেকগৃলি। ততোধিক, শিব সংসারে 
উদাসীন। সুতরাৎ দারিদ্র্যে জর্জ'র হরগোরার পাঁরবারে সুখের আশা অস্তামত। 
বড় আদরের দুলালী উমার কণ্টের কথা ভেবে মেনকার মন সদাভারাক্রান্ত। স্বগ্নে 
+তান দেখেন সাধের কন্যা এসেছেন তাঁর কাছে। তাঁর দ:ভবিনা বাড়ে। এদিকে 
কন্যার বিষয়ে গিরিরাজও তেমন খোঁজ খবর নেন নি । তাঁর সে উদাসীনতা কঠোর 
হয়ে বাজে মেনকার বুকে । তাঁর আতন্রন্দন অনুরোধে রূপান্তরত হয়-_-যাও যাও 
গার আনতে গৌরী, উমা আমার বড় কেদেছে।” তাঁর ক্ষোভ স্বামণ ও কন্যার 
উপর। কুলীন বলে বৃদ্ধ ভাঙড় শিবকে স্যপান্র বিবেচনা করেছেন স্বামী । উমাও 


তো বোঝে না মায়ের দুঃখ । অবশেষে শরৎ আসে পিত্‌গ্‌হে কন্যার আগমন 
সম্ভাবনা নিয়ে ঃ 


আম দেখোছ স্বপন যেন উমাধন 
আশাপথ চেয়ে রয়েছে। 


বগাররাজকে তিনি বলেনঃ 


আছে কন্যাসন্তান যার, দেখতে হয়, আনতে হয়, 
সদাই দয়া মায়া ভাবতে হয় হে অন্তরে । 


“পত্নীর অনুরোধে গাররাজ আনেন সপুত্ৰ কন্যা উমাকে__'গাররাণী এই নাও তোমার 
উমারে। ধর ধর হরের জীবনধন।” প্রাতবেশীরা সবাই বলে 


আজ শুভ নিশি পোহাইল তোমার 

এই যে নন্দিনী আইল, বরণ করিয়া আন ঘরে। 
ম:খশশা দেখ আস, দুরে যাবে দ:ঃখরাশি, 

ও চাঁদমুখের হাঁস, সুধারাশি ক্গরে। 


হাঁতমধ্যে মেনকা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন: 


গিরি এবার আমার উমা এলে আর উমা পাঠাব না। 
"বলে বলবে লোকে মন্দ, কারো কথা শুনব না। 
যদি এসে মৃত্যাঞ্জয় উমা নেবার কথা কয় 

এবার মায়ে ঝিয়ে করব ঝগড়া, 

জামাই বলে মানব না। 


মধ্যযুগ 105 


শরতের আকাশে মেঘের স্থায়িত্বের মতন মা-মেয়ের মিলনও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। 
নবমী নিশি পোহালেই উমা ফিরে যাবেন স্বামীর ঘরে । কন্যার জন্য মায়ের দুঃখ- 
কাতরতা প্রকাশের অভিনব পন্থা মূর্ত হয় মেনকার কথায় ৪ 


বুঝাব মায়ের ব্যথা গণেশকে তোর আটকে রেখে । 
মায়ের প্রাণে বাজে কেমন, বুঝব তখন আপাঁন ঠেকে ॥ 


মেনকার অশান্তকামনা উপেক্ষা করে নৈসার্গক নিয়মে নবমী নাশ গত হয়। এবার! 
উমার প্রস্থানের পালা । দুঃখের বাঁধভাঙা আর্তনাদে মেনকা বলে ওঠেন £ 


ফিরে চাও গো উমা তোমার বিধৃমুখ হেরি 

অভাগনী মায়েরে বধিয়া কোথা যাও গো । 

এইখানে দাঁড়াও উমা বারেক দাঁড়াও মা: 
তাপের তাপিত তন: ক্ষণেক জুড়াও গো। 


মাতৃহদয়ের হাহাকার ও শ:ন্যতা প্রকাশ পায় বিজয়া সঙ্গীতে। 


আগমনী-বিজয়ার গানে শ্যামাসঙ্গীতের মতো আধ্যাত্মিক তত অথবা জগজ্জননণীরা' 
মহিমা প্রক,শের চেণ্টা নাই । শ্যামাসঙ্গীত মূলত সাধনসঙ্গীত, উমাসঙ্গীত সাধনা- 
নিরপেক্ষ মানবীয় ভাবগোরবে সমদ্ধ। তবু উভয়েই শান্তপদাবলীর অন্তর্ভুক্ত ৷, 
কারণ শক্তিউপাদকের দৃণ্টিতে শ্যামা-উমা এক ও অঁভন্ন । 


অপত্যস্নেহের অপর্বদঙ্গীত উমাসঙ্গীত। বাঙালীর অনুভৃতিপ্রবণ মনের শ্রেষ্ঠ 
প্রকাশ। কিন্তু ক্পনার দূরাভসারে এর জন্ম নয় । বাল্যাববাহ ও কৌলীন্যপ্রথার, 
এক বিযাদঘন পরিণতি বাঙালণ সমাজের প্রাতচ্ছবিরপে ফুটে উঠেছে উমাসঙ্গীতে। 
সামাজিক প্রতিষ্ঠার লোভে ‘আঁত বড় বৃদ্ধে'র সঙ্গে বালিকার বিবাহ, কলন স্বামীর? 
শতাধিক বিবাহ এবং 'গৌরীদানে'র পঃণ্য অর্জনের জন্য বালবিবাহ তৎকালীন: 
সমাজে যে দুরুহ সমস্যার সৃণ্টি করোঁছল তারই এক করুণ চিত্র গানগৃলিতে ।' 
ারিদ্যভস্মলোপত কুলীনের ঘরে চরম অনটনে 


নাবালিকা কন্যার সপত্নী জথালা, দ 
দিনযাপন, মায়ের প্রাণে যে দুভবিনার সৃষ্টি করত তারই প্রতিফলন মেনকা চরিন্রের 
গিরিরাজ যেন বাঙালী পরিবারের কর্তা, অদ্ঘ্ট ও সামাজিক 


বহবলতায়। 
রি 1৬, নিশ্েষ্ট পুরুষ ৷ দুগে্সবের তিন দিনব্যাপী সমারোহ ও 
দাশ পাঁরবেশ মিশে গেছে বিবাহিত বাঙালী-কন্যার বৎসারান্তে তিন দিনের 


পিত্গৃছে আগমনের বাস্তব ঘটনার সঙ্গে । আর কন্যার 
যুগ-নিরপেক্ষ চিরকালীন সত্য। বিজয়া গানে 
[বিচিত্র মিলনে উমাসঙ্গীত বাঙালী জীবনের 


( অথবা স্কগ দিনের জন্য ) 
বিচ্ছেদে মাতৃহদয়ের আর্ত সে-তো 
তারই পরিচয় । ঘটনা ও কল্পনার 
অপরূপ ছবি ॥ 


বাউল সঙ্গীত 

বাউল নামক ধর্ম সম্প্রদায় রাঁচিত সাধনসঙ্গীতের নাম বাউল সঙ্গীত । লোকসঙ্গীত 
হিসাবেই তা চিহ্নিত । বাউলরা নিজেদের সাধনতত্ত ও পন্ধাত রূপকের মধ্য দিয়ে 
গানে প্রকাশ করেন। রপকের আবরণের উদ্দেশ্য যাতে নিজ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় 
ছাড়া অন্যের কাছে৷ তা গোপন থাকে। একতারা, ডগি, কখনো দোতারা, খমক, 
খঞ্জন সহযোগে এই গান গাঁত হয়। গানে নত্যসহযোগে পরিবোশত হয় বলে 
গায়কের পায়ে থাকে ঘুঙর। বাংলার লোকসঙ্গীতধারায় বাউলসঙ্গাত একটি 
'বাশিম্ট সংযোজন । 


দশম শতকের কাছাকাঁছ সময়ে বাংলা দেশে তান্ত্রিক বোদ্ধধর্মে'র প্রসার ঘটে । তারই 
একাট শাখা সহজযান। সহাজিয়া বোঁদ্ধধমবিলম্বাঁরাই চঘগিণীতির রচাঁয়তা । সহজিয়া 
বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে বৈষ্ণব সহজিয়ামতের উদ্তব। এই ধর্মমতের সঙ্গে যুক্ত হয় সুফী 
মতবাদ । চৈতন্যের ধর্মমত দ্বারা আবার পঢবেন্তি ধর্মমত প্রভাবিত হয়। এরই 
পরিণামে সপ্তদশ শতক নাগাদ বাউল নামক একটি স্বতন্ত্র ধর্মমত এর 
ধর্মসম্প্রদায় দেখা দেয়। বাউল জঙ্গীত এদেরই অধ্যত্মসাধনার বথা। 
শহন্দ, ও মুসলমান উভয় ধনাবলদ্বী বাঙালীরাই বাউল সম্প্দায়ে যোগ দিয়ে 
খাকেন। 


বাউলদের জাতিভেদের বালাই নাই £ 


তাই তো বাউল হইন; ভাই 
এখন বেদের ভেদ-বিভেদের 
আর তো দাবিদাওয়া নাই। 


বাউলরা বিশ্বাস করেন মানংষের 'দেহভাপ্ডই বিশ্বরক্গাণ্ডের ক্র প্রতীক, “মনের 
মান:ষ’ ‘সাঁই’ (স্বামী ) আছেন দেহের অভ্যন্তরে খাঁচার ভিতর অচিন পাখির” 
তাঁকে জানা, তাঁর উদ্দেশ্যে নিবোদতপ্রেম হওয়াতেই জীবনের পরম সাথ 
গহো বা সন্ন্যাসী যে-কোনভাবেই এই সাধনা 
যাওয়াও অপ্রেয়োজনীয় ঃ 


আছে আদ মক্কা এই মানবদেহে 
দেখ নারে মন চেয়ে, 


দেশ-দেশান্তর দৌড়ে আবার 
মারস কেন হাঁপিয়ে । 


সা - 107 


আসলে কায়াসাধনাই বাউলের উন্দেশ্য। অন্যকিহ্‌তে তাঁরা বিশ্বাসী ননঃ 


তোর নাই জ্ঞান নয়ন, 
ওরে অবোধ মন 

সে মানুষ রতন 
তুই চিনাব কিসে । 


কারণ, মনের মানুষের অবস্থান যে এই দেহের মধ্যেই ৪ 
করে স্থান স্থাত এই মানৃষেতে 
পলকেতে যায় পলকেতে আসে ৷ 


প্রচালত ধর্মমতে বাউলদের পূর্ণ অবিশ্বাস । তাঁরা মনে করেন প্রেমহণন আচার, 
প্রথা বা শিক্ষা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ৪ 


বেদে কি তার মর্ম জানে 
যে রূপ সাঁই এর লগলা খেলা 
আছে এই দেহ ভুবনে ৷ 


আসলে প্রেমের পরাকাচ্ঠাই বাউলের আকাতিক্ষিত। বাউল অথ“ ব্যাকুল বা 
মাতোয়ারা হওয়াই হোক অথবা ঈশ্বরের সেবকই হোক [আউল (আরবী ) অর্থ" 
ঈশ্বরের একাপ্র সেবক ] তাদের মূল উদ্দেশ্য পার্থব কামনা-বাসনাকে তুচ্ছ 
করে দেহে নিহিত “নরাকার' 'প্রাণপাখাঁর' প্রেমে মগ্ন হওয়া ও তার স্বরূপ জানা । 


বাউল সঙ্গীতে বাউলদের এই ধর্মমত এবং সাধনার উপায়ই ব্যন্ত। কিন্তু 
বাঙালী সমাজে বাউলগানের প্রভাব আরও সংদ:রপ্রসারী । পাশাপাশি থাকিলেও 
হিন্দ:-মৃসলমান দুই দলের পণ্ডিত চেণ্টা করিয়া কিছুতেই দুই ধারাকে মিলাইতে 
পারিলেন না। তখন নিরক্ষর সাধকের দল উভয় সাধনার মানরক্ষা কাঁরলেন ৷” 
(ক্ষিতিমোহন সেন__বাৎলার বাউল ) সাম্প্রদায়িকতা ও জাতিভেদের উচ্ছেদে 
বাউলগান একটি স্মরণীয় ভূমিকা নিয়েছে । লালন বলেছেন 


সব লোকে. কয় লালন কি জাত সংসারে 
লালন বলে জাতের কিরূপ দেখলাম না এ নজরে । 


বাউলগানে মুগ্ধ সাক্ষর-নিরক্ষর বাঙালী লালনের সে কবিচেতনার দ্বারা প্রভাবিত 
হয়েছে, ছন্দ মুসলমান সম্প্রীতির সঞ্জীবনীমন্ত্র পেয়েছে সে-জাতীয় গানের মধ্যে। 
সাধনপন্ধতির অতিরিক্ত এই লাভই বাউলগানের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ । 


108 খলা সাহত্যের ইীতহাস 


বাউল গান প্রধানত নিরক্ষর বাউলের রচনা । গুরু, বা নিজ গোষ্ঠী অথবা স্বরচিত: 
গানের মাধ্যমে সাধনা, বাউলের লক্ষ্য। গুরু-ীশষ্য উভয়েই নিরক্ষর সৃতরাং গানের 
রূপক বেদপনরাণ থেকে সংগৃহীত হয়নি, গোষ্ঠীর রুপক অথবা লোকজীবন থেকে 
আহত হয়েছে । এই আহরণ অনেক সময় কৌতৃহলোদ্দীপকও বটে ঃ 


যাচ্ছে গোর প্রেমের রেলগাড়ী। 
অথবা, মন যাঁদ চড়াব রে সাইকেল 


বাস্তব জীবন থেকে আহত উপমান। প্রচলিত ধমমতের বিরুদ্ধে একটা জেহাদ 
বাউল গান। এই ধর্মগোষ্ঠী জনসংখ্যায় যত কম হোক না কেন, সমাজের বিস্তীর্ণ“ 
ক্ষেত্রে তাদের গানের প্রভাব প্রসারত। এই গানগঁল থেকে বাঙালপ সংগ্রহ করেছে 
রূপক, বাঙালী কাব অন:প্রেরা । ভাষায় মার্জনার অভাব সত্তেও বাঙালসপ্রাণে 
তা সাহত্যের স্বাদ দিতে পেরেছে__এইখানেই বাউলগানের প্রকৃত সার্থকতা !" 
রবীন্দ্রনাথও বাউল গানের প্রভাবের দ্বারা খণী এবং তাঁর দ্বারাই এই গানগুলির প্রাত. 
আধীনকমনা বাঙালীর দ:ণ্ট আকষ্ট হয়েছিল । এবং সেই সূত্রে বিশ্ববাসীর গোচরে 
এসোঁছল এই সমৃদ্ধ লোকসঙ্গীতের কথা। বাউলগান সম্পকে তাঁর ধারণাই 
সবাগ্রে গ্রহণায়, ‘বাংলা দেশের গ্রামের গভীর চিত্তে উট সভ্যতার প্রেরণা ইস্কুল 
কলেজের অগোচরে আপনা-আপনি কি রকম কাজ করে এসেছে, ? 


হন্দ,-মুসলমানের: 
জন্য এক আসন রচনার চেষ্টা করচে” বাউল গানে আছে তার পরিচয় । 


লালন ফকির 


বাউল কবিদের মধ্যে সবগ্রিগণ্য লালন ফাঁকর। ভন্তি, কাঁবত্ব ও অসাম্প্রদায়িক 
মনোভাবের অপুর্ব সমাবেশ ঘটেছে তাঁর গানে, যেগ্লি কাঁবতা [হিসাবেও গ্রহণায় ॥ 
রবীন্দ্রনাথ এ'র গানের ভাব ও ভাষায় বিশেষ মুগ্ধ হয়োছলেন এবং বিদ্ব্জনের কাছে 
তাঁকে পরিচিত করিয়েছিলেন। 


কাঁৰ পরিচয় £ 

লালন ফাঁকরের ব্যান্তগত জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তাঁর 
আন:মানিক জন্মসাল ১৭৭৪ খনরীঃ। ১৮৯০ খনীস্টান্দে তান ইহলখলা সংবরণ 
করেন। তিনি দাঘ্জীবিত ছিলেন । কিন্তু সঠিক জন্মসালের অভাবে জানা যায় না, 
এত দীর্ঘজীবন লাভ করোছলেন কিনা । তান হিন্দ; না মুসলমান দি 
ছিলেন তাও সঠিকভাবে জানা যায় না। একটি প্রচলিত অপ্রমাণিত কাহিনণ কায়চ্ছ 
শীয় কবি বিবাহিত জীবনে তাঁথযাত্রায় বেরিয়ে বসন্ত রোগাক্রান্ত হয়ে পথের মধ্যে 
সঙ্গীদের দ্বারা পরিত্যন্ত হন। এক সদর মুসলমান দম্পতির সেবায় সুস্হ হয়ে 
তান গৃহে প্রত্যাগমন করেন। কিন্তু তাঁর চেহারার বিকঁত এবং তাঁর সম্পান্তিতে, 
আত্মীয়দের লোভ পূুরবপারচয়ে তাঁকে প্রাতণ্ঠিত হতে দেয়নি । তাঁ্থ“যান্ী তাঁর 


মধ্যযুগ 109 


সঙ্গীরাও তান মৃত বলেই ঘোষণা করোছল। নিরুপায় লালন সিরাজ সাঁই-এর 
কাছে ফাঁকরী ধর্ম গ্রহণ করেন এবং লালন শাহ ফকির নামে পাঁরাচিত হন॥ 
ক্তৃণ্টয়ার সেউড়িয়া গ্রামে আশ্রম নিমণি করে তান সেখানেই সাধনভজন করতে 
থাকেন। মুসলমান মোমন সম্প্রদায়ের মাঁহলা মাঁতজান বাবর সঙ্গে তিনি 
পাঁরণয়সূত্রে আবন্ধ হন। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের'লোকই তাঁর শিষ্যত্ব 
গ্রহণ করেন। / 


কাঁবপ্রতভার পাঁরচয় ই 


হিন্দু বৈষ্ণব ও ইসলাম সুফী, উভয় মতবাদ দ্বারা তিনি প্রভাবিত হন । তাঁর 
গানেও আছে উভয় ধর্মের কথা £ 


১.  আত্মরূপে কতা হার 
মনে নিষ্ঠা হলে মিলবে তাঁর ঠিকানা । 
বেদবেদান্ত পড়বে যত বাড়বে তত লক্ষণা ॥ 


২. তার মনে সুমাঁত দিলে, কুমাঁত তার গেল দ:রে, 
আউীলয়া নাম খাতায় লিখিলে, জানা গেল এ রহমি ॥ 


কাঁবত্ব ও ধর্মতত্তেবর অপব মিশ্রণ ঘটেছে তাঁর রচিত সঙ্গীতে £ 


১, কথা কয়রে 
দেখা দেয় না। 
নড়ে চড়ে হাতের কাছে 
খ'জলে জনমভর মেলে না। 


২. খাঁচার ভিতর অচিন পাখ কেমনে সে যায়) 
ধরতে পারলে মনবোঁড় দিতাম তার পায়। 


সর্ব সাম্প্রদায়িকতার উধের্ব তাঁর মতবাদ £ 


ভান্তি দ্বারে বাঁধা আছেন সাই । 
{হন্দ; কি যবন বলে’ 
তার কাছে জাতের বচার নাই । 


তাঁর রচিত প্রায় পাঁচশ গানের সন্ধান পাওয়া গেছে। “লালন গাঁঁতকা* সংগ্রহ 
গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ৪৬২টি গান । রবীন্দ্রনাথ প্রথম এ'র গান সংগ্রহে 
বাং. সা. 1.8 


110 খলা সাহত্যের ইতিহাস 


মনোনিবেশ করেন এবং ২৯৮টি গান সংগ্রহ করেন। প্রবাসী পত্রিকায় (১৩২২ 
'সাল ) ২০টি গান প্রকাশের মাধ্যমে তান লালনের অমর সঙ্গীতের সঙ্গে পরিচয় 
ঘটান সুধীমণ্ডলীর । 

1 


॥ বাউল. কাব হিসাবে লালনের লক্ষ্য ছিল জীবাত্া পরমাত্মা সম্পকে" বাউল 
সম্প্রদায়ের মত-প্রকাশ। কিন্তু সরল অথচ ব্যঞ্জনাময় ভাষায় লালন সেই তত্তরকথাকেই 
উৎকন্টে কাবতা-সঙ্গীতের রূপ দিতে সমর্থ হয়েছেন । তাঁর ব্যবহৃত উপমা-প্রতণক- 
রুপক লোকায়ত জীবনধারা থেকে আহত বলে আঁশাক্ষত জনের কাছেও তা অন্তত 
আর্থশক বোধগম্য । তাঁর গানে আঁশাক্ষতজন পায় ধর্মকথা, পায় 


কবাব্যসৃষমা। মুক্তমনা কবি গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বাইরেও বাঙালীর একান্ত আপনজন 
হয়ে ওঠেন। 


শে 


@ অন্তুচৰ্ডা 
প্রথম অধ্যায় lb 
১. বাঙাল? জাতির উদ্তবের ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর । 
২. বাংলাদেশে আর্য-আগমন কবে থেকে ও কিভাবে শুর: হয়েছিল ? তার 
আগে এখানে যে সব জনগোষ্ঠী বাস করত তাদের পরিচয় 'দিয়ে বাঙালী জাতি গঠনে 


এইসব জনগোষ্ঠী কতটা সাহায্য করোঁছল আলোচনা কর। 
৩. বাংলা ভাষার উদ্ভবের ইতিহাস সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 
৪. বাংলা সাহতাকে কটি যুগে ভাগ করা যায়? প্রাতিটি যুগের সংাক্ষপ্ত 


পরিচয় দাও । 
দ্বিতীয় অধ্যায় 
১. বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 
২. চযপিদ কি? এই পদগ্ীল কারা রচনা করেছেন? এই পদগুলির 
সাধারণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর । 


৩. চযপিদে চিঁ্রত সমাজজীবন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 
৪. চযপিদের সাহিত্যমূল্য সম্পকে সংক্ষেপে আলোচনা কর ॥ 


মধ্যযুগ 
প্রথম অধ্যায় 
শে তক আগমনের ফলগ্রৃত সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 


১. বাংলা দে 
সমাজীবনে ও সাহত্যে যে পাঁরবর্তন দেখা 


২. তুকাঁ আক্রমণের পরে বাঙালীর 


দিয়োছল তার সথাক্প্ত পরিচয় দাও ৷ 
দ্বিতীয় অধ্যায় 


বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শ্রীকৃফকীর্তন কাব্যের গুরুত্ব দেখাও । 
(উ. মা. ৮৩) 


২. 'শ্রীকৃফকীতন' কাব্যখানি কার লেখা? কাব্যখানার সথক্ষণ্ত পরিচয় 
দাও! বাংলা ভাষায় এই কাব্যখানার বিশেষ মূল্য আছে কেন £ কাব্যখানার অন্য 


কোনো নাম ছিল কি? (উ. মা- ৮১) 
৩. বড় চণ্ডীদাস কে? তাঁর রচিত কাব্যখানির নাম ক? কাব্যাঁট সম্পর্কে 


আলোচনা কর । 


৯. 


112 ংলা সাহিত্যের ইতিহাস 
8. বিদ্যাপাঁতির পদাবলন কোন: ভাষায় রচিত? তাঁর জীবন ও কবিপ্রাতভার 


পরিচয় দাও । (উ. মা. '5৮) 

6. বিদ্যাপাতর পদাবলীর রচনাবৈশিষ্ট্য নির্ণয় কর। €উ. মা. ৮২) 

৬. বিদ্যাপাঁতর কবিপ্রতিভার সর্থক্ষপ্ত পরিচয় দাও। বাংলাদেশে তাঁর 

পদাবলীর সমাদরের কারণ কি? (উ. মা. 9) 
৭. বৈষ্ণব পদাবলনপাহত্যে চন্ডীদাসের অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর । 

€উ. মা. ৮৩) 

৮. চন্ডীদাসের পদাবলীর রচনাবৈশিষ্ট্য নির্ণয় কর ৷ €উ. মা. ৮২) 


৯. বিদ্যাপাতি ও চন্ডীদাসের রচনাবৈশিণ্ট্যের তুলনামূলক আলোচনা কর। 

১০. ব্রজবুলি ভাষার বৈশিষ্ট্য ক? এই ভাষার সৃষ্টি কিভাবে হয়োছল £ 
বিদ্যাপাঁত কি এই ভাবায় পদ রচনা করেন ? তাঁর রচিত পদের দু-একাঁট পংক্তি উদ্ধৃত 
করে তাঁর রচনার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর । 


তৃতীয় অধ্যায় 
চি কাত্তিবাস কে ছিলেন ? তাঁর রামায়ণের জনপ্রিয়তার কারণ লেখ । 
(উ. মা. +৭৮) 
২: ক্যাত্তিবাসের জীবনও তাঁর কাব্যরচনা সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ । 


(উ. মা. ৮৪) 
৩. ব্যাত্তবাস কার লেখা কোন: কাব্যের অনুবাদ করেছিলেন? কাতিবাসের 
ক্থাত্তবাসের ব্যান্তগত পরিচয় সংক্ষেপে লেখ । তাঁর কাব্যের জনপ্রিয়তার কারণ কি 


সংক্ষেপে বল । (উ. মা. '৮২) 
8৪. বাংলা রামায়ণের আদি কবি কে? কবির পাঁরচয় ও কাব্যরচনাকাল 
সম্পর্কে“ যেসব উল্লেখ এ রামায়ণে রয়েছে তা বিবৃত কর। বাঙালী জীবনে এ 
কাব্যের প্রভাব কতখানি নির্ণয় কর। (উ. মা. ৮০) 
৫. ভাগবতপদরাণের প্রথম বাংলা অন*্বাদ কে করেছিলেন তার উল্লেখ কর। 
তাঁর'জীবন ও কাব্য সম্পর্কে যা জান, তা লিখ। €উ. মা. ৭৯) 
৬. আীকফাঁবজয়' কাব্যখানির রচয়িতা কে? তাঁর জীবনী ও কাব্যের সথক্ষণ্ত 
পরিচয় দাও। 
৭. কবান্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দী সম্পকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 


চতুর্থ অধ্যায় 
১: কোন সামাজিক পরিবেশে মঙ্গলকাব্য রচনা সম্ভব হয়োছল তার পরিচয় দাও । 
২. মঙ্গলকাব্যগলিতে তৎকালখন সমাজজীবনের কি পরিচয় পাওয়া যায়? 
৩. মঙ্গল শব্দটির অর্থ কি? মঙঈ্গলকাব্যের সাধারণ বৈশিণ্ট্যগুলি ক ? 
(উ. মা. ৮২) 


অনন্চ্চা 113 


পঞ্চম অধ্যায়, 
১. মনমামঙ্গল কাব্য মঙ্গলকাব্যের মধ্যে কোন্‌ কোন্‌ গুণে শ্রেষ্ঠ ? এই কাব্যে 


'চাঁদসদাগরের চরিত্র কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে তা লেখ। (উ. মা. ৭৯) 
২. মনগামঙ্গল কাব্যের যে কোনো একজন শ্রেণ্ঠ কবির কাব্যপ্রতিভার পরিচয় 
(উ. মা. '৮২) 


৩. মনসামঙ্গল রচাঁয়তা যে-কোনো একজন বিশিষ্ট কবির সাহিত্যিক কৃতিত্ব 


“সম্পকে একটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ রচনা কর । (উ. মা- ৮৪) 
৪. কবি বিজয় গুপ্ত অথবা নারায়ণ দেবের জীবন ও কাব্য সম্পকে সংক্ষেপে 


আলোচনা কর। 


'দাও। 


ষ্ঠ অধ্যায় 


১. খ্ীষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে চৈতন্যদেব ও তাঁর প্রবর্তিত 

খর্মমতের কি প্রভাব অনুভব করা যায়, তা আলোচনা কর ৷ (উ. মা. 1৭৯) 

২. বৈষ্ণব সাহিত্যে শ্রচৈতনোর প্রভাব নিয়ে আলোচনা কর। বাংলা সাহত্যের 

অন্যান্য শাখায় শ্রীচৈতন্র প্রভাব কতটা পড়েছিল লেখ । (উ. মা- ৮১১৮৩) 

৩. বাঙাল? সমাজজীবনে চৈতন্যদেবের প্রভাব সম্পকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 
সপ্তম অধ্যায় 


১, চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের পাঁরচয় দিয়ে মুকনন্দরামের শ্রেষ্ঠত্ব কোথায়, তা দেখাও । 
€উ. মা- 1৮) 


২. কাঁব মুকদ্দরাম চক্রবতঁর দ:ঃখপূর্ণ ব্যন্তিজীবনের পরিচয় দাও। 
চাঁরন্রা্কনে ও করুণরস সৃষ্টিতে তাঁর দক্ষতা সংক্ষেপে আলোচনা কর । 
(উ. মা. ৮০) 


৩. চন্ডীমঙ্গল কাব্যের যে কোনো একজন শ্রেণ্ঠ কবর কবিপ্রাতভার পরিচয় 


দাও। €উ. মা. ৮২) 

৪. চন্ডীমঙ্গল রচাঁয়তা যে কোনো একজন বিশিষ্ট কবির সাহিত্যিক কৃতিত্ব 

সম্পকে" একটি সংক্ষগ্ত প্রবন্ধ রচনা কর। (উ. মা. ৮৪) 
অষ্টম অধ্যায় 


ও. শ্রীঠৈতন্যের বাংলাভাষায় রচিত মৃখ্য চীরতগ্রন্থগ্ীলর উল্লেখ করে কোন 


খানিকে তুমি গ্রেঠ মনে কর, কারণসহ তা আলোচনা কর । (উ. মা. *৭৮, ’৪০ ) 
২. দ:টি প্রধান চৈতনয-চাঁরত কাব্য নিয়ে সংক্ষেপ লেখ। (নউ, মা. ’৮৩) 


৩. বাংলাভাষায় রচিত শ্রেষ্ঠ চৈতন্যচারতকাব্য কোনটি? কাব্যটির বোশষ্ট্য 
সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 


114 ॥ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


৪. বন্দাবন দাসকে চৈতন্য চাঁরতকাব্যের 'ব্যাস বলার কারণ কি? এই কাব্যের 
জনপ্রিয়তার কারণ সংক্ষেপে বিবৃত কর। 

৫. জয়ানন্দ ও লোচন দাসের চৈতন্য চাঁরতকাব্য সম্পকে সংক্ষেপে আলোচনা? 
কর। 


নবম অধ্যায় 


১. চৈতন্য-পরবতাঁ দুই বিখ্যাত পদকতরি কবিকৃতিত্ব লেখ । (উ. মা. ৮৩) 
২. বৈষবকবি গোবিন্দ দাসের বিশেষত্ব কি? তাঁকে “দ্বিতায় বিদ্যাপাঁত' বলে 
উল্লেখ করবার কারণ কি তা আলোচনা কর। (উ, মা. :৭৯) 
৩. কোন্‌ ধরনের পদরচনায় গোবিন্দদাসের দক্ষতা লক্ষ্য করা যায়? তাঁর 
কাব্যপ্রাতভার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও । (উ. মা. ৮২) 
৪. জ্ঞানদাসের কবিকাতত্বের পরিচয় দিয়ে তাঁকে চণ্ডদাসের ভাবশিষ্য বলা, 
হয় কেন তা আলোচনা কর। 
&. জ্ঞানদাস কোনজাতায় পদরচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, তাঁর রচিত পদ 
আলোচনা করে তা দেখাও । 


৬. কোন. ধরনের পদ রচনায় বলরাম দাস বৌশ কৃতিত্ব দৌখয়েছেন। তাঁর 
রাঁচত পদ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 


দশম অধ্যায় 


ধমমিঙ্গল কাব্যের কাহিনশীট সংক্ষেপে লাপবদ্ধ কর । 

কব রুপরাম চক্রবতাঁ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা কর । 

কবি ঘনরাম চক্রবতাঁর কাবকৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 

“ ধ্মমিঙ্গল কারোর গ্রেন্ঠ কাব কে? তাঁর কাঁবপ্রতিভা সম্পকে সংক্ষেপে 
আলোচনা কর। =" 


2৩ % ৬ 


একাদশ অধ্যায় 
১: মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কেঃ তিনি কোন: 
করেন? তাঁর জনপ্রিয়তার.কারণগুলির উল্লেখ কর । 


২. কাশীরাম দাস কৃত মহাভারতকে জাতপয় কাব্য আখ্যা দেওয়া যায় কেন? 
তাঁর রচনার বোঁশষ্ট্যগলি আলোচনা কর । 

৩. সমগ্র মহাভারত অনুবাদ না করলেও অনুদিত মহাভারতের রচায়তা হিসাবে 
কাশীরাম দাসের নাম উল্লেখ করা হয় কেন? তাঁর সথাক্ষপ্ত জীবনপাঁরচয় দাও ॥ 

8. কবীন্দ্র পরমে*বর ও শ্রীকর নন্দী সম্পকে সংক্ষেপে আলোচনা কর ॥ 


কোন্‌ পর্ব অনুবাদ 


অনচচর্চা 115 


দ্বাদশ অধ্যায় 
আরাকান রাজসভার দুই কাঁব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর । 


3 
২. দৌলত কাজীর কবিপ্রাতভা সম্পকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 
৩. কাব আলাওলের জীবন ও কবিপ্রাতভার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও । 


ত্রয়োদশ অধ্যায় 
১. কোন: সামাজিক পটভমিতে অন্নদামঙ্গল কাব্য রাঁচত হয়? অন্নদামঙ্গলে 


শৃচা্রত সমাজজীবনের সথাক্ষপ্ত পরিচয় দাও । 
২. কাঁব ভারতচন্দ্রের জীবন? ও কবিপ্রাতভা সম্পকে সংক্ষেপে আলোচনা কর । 


চতদদশ অব্যয় 
কোন: সামাজিক পরিবেশে শান্তপদাবলী রচিত হয়েছিল সংক্ষেপে আলোচনা 


১. 
কর। 
ই. শান্ত গদাবল বলতে কোন্‌ জাতীয় সঙ্গীতকে বোঝায়? এই জাতীয় 
সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ আলোচনা কর। 

৩. রামপ্রসাদ সেন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। 

৪. কাব কমলাকান্তের জীবনী ও কাঁবপ্রাতভা সম্পর্কে আলোচনা কর । 

6. বাউল গান কি? এই জাতীয় সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্য নিরূপণ কর । 

৬. বাউল কা লালন ফাঁকরের জীবনী ও কাঁবপ্রতিভার পরিচয় দাও । 


খু উজ 
৮ ৯৪৪ 
Y° 1085৭ (4 


উই, 


Lx 
শক, 


১৯৭৭ কি 


২ 
2 
রি